Skip to main content

নান্দনিক প্রকাশ - বিশেষ সংখ্যা ‘মোহনা’


অনেকটা দেরি করেই হাতে এল সাবেক করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত এবং বনানী চৌধুরী সম্পাদিত ‘মোহনা’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি। ৬৮ পৃষ্ঠার পেপারব্যাক সংখ্যাটি হাতে নিতেই এক ভালোলাগার পরশ অনুভূত হল। কারণ মানস ভট্টাচার্যের অনবদ্য প্রচ্ছদ। বিশেষ সংখ্যা কেন তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবৃতি রয়েছে দুই পৃষ্ঠা জোড়া খোলামেলা সম্পাদকীয়তে - ‘মোহনা ছোটপত্রিকার জগতে একেবারেই নবীন। ২০২২ থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে। যাত্রাপথের শুরুতেই আমন্ত্রণ এসেছে ‘৯ম উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় লিটল ম্যাগাজিন সম্মেলন’ থেকে… কিন্তু এই বিশাল মঞ্চে শূন্য হাতে উপস্থিত হওয়াটা অন্তরে সাড়া দিচ্ছিল না…তাই নতুন সংখ্যা প্রকাশ করার ভাবনা থেকে সরে এসে ‘বিষয় ভিত্তিক’ একটি কবিতা সংকলনের ভাবনা শুরু হল। …বরাকের সাহিত্য ক্ষেত্রটিও ভীষণ উর্বর। সেই উর্বর ভূমিকে অক্ষর চাষে আরও উর্বর করে তুলেছেন শব্দচাষীরা। ‘মোহনা’তে এসে একত্রিত হয়েছে সব কবিদের মনের তরী। আর এই তরীটিতে যাঁরা বইঠা চালিয়েছেন, তাঁদের জন্যই তরীটি কবিতা সংকলন রূপে ‘মোহনা’ হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে…।’ - এক অকপট, অনবদ্য সম্পাদকীয়।
সংখ্যাটিতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট ৫১ জন কবির ৫৩টি কবিতা। ‘বরাক-বিষয়ক’ অনন্য স্মৃতিমেদুর, নস্টালজিক সব কবিতা। কবিতায় উদ্ভাসিত হয়েছে মোহনীয় বরাকের অনবদ্য রূপকল্প। এসেছে বরাকের অন্তরে-অন্দরে লুকিয়ে থাকা রূপ-সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি, মান অভিমানের প্রকাশ, ইতিহাস ও গৌরব-গাথা। এসেছে উনিশের আর্তনাদ ও প্রত্যয়। বর্তমানে বরাকের বাসিন্দা এবং জন্মসূত্রে বরাকবাসী হলেও বহির্বরাকের বাসিন্দা সব কবিদের কবিতায় উঠে এসেছে শান্তির উপত্যকা বরাকের প্রতি অচ্ছেদ্য শিকড়ের টান।
যাঁদের কবিতায় সেজে উঠেছে এই সমৃদ্ধ সংখ্যাটি সেইসব কবিরা হলেন - মহুয়া চৌধুরী, কস্তুরী হোমচৌধুরী, জয়ন্তী দত্ত, শিবানী গুপ্ত, গৌতম চৌধুরী, কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য, কল্লোল চৌধুরী, সুশান্ত ভট্টাচার্য, অখিল চন্দ্র পাল, সুদীপ্তা বিশ্বাস, আশুতোষ দাস, লীনা নাথ, চন্দ্রিমা দত্ত, ঋতা চন্দ, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়, হাসনা আরা শেলী, আদিমা মজুমদার, স্মৃতি দাস, রফি আহমেদ মজুমদার, সুপ্রদীপ দত্তরায়, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, অনুপ কুমার বনিক, সুদীপ্তা দে চৌধুরী, প্রতিমা পাল, কুন্তলা দে, যূথিকা দাস, শিপ্রা দাস, মমতা চক্রবর্তী, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, দেবযানী ভট্টাচার্য, বনানী চৌধুরী, দোলনচাঁপা দাসপাল, পিঙ্কু চন্দ, শর্মিলী দেব কানুনগো, দেবাশীষ গুহঠাকুরতা, সুচরিতা সিংহ, মৃদুলা ভট্টাচার্য, বর্ণশ্রী বক্সী, গীতশ্রী ভট্টাচার্য, শতদল আচার্য, শিখা রায়, দীপাঞ্জলি চৌধুরী, অভিজিৎ পাল, নিরুপম শর্মা চৌধুরী, টিংকু রায়, ছন্দা দাম, সুমিতা গোস্বামী, গোপাল চক্রবর্তী, জয়ন্তী নাথ, পিয়ালী ঘোষ চৌধুরী ও পুস্পিতা রায়।    
স্পষ্ট ঝরঝরে ছাপা, উন্নত মানের কাগজ, যথাযথ অক্ষর বিন্যাস। কবিদের পাঠানো বানান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বলে স্পষ্টীকরণ থাকলেও কিছু বানান শুদ্ধ করে নিলে ভালো হতো। শেষ পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি সহ সব মিলিয়ে ‘বরাকের সকল অগ্রজ কবিদের উদ্দেশে’ উৎসর্গিত দলিলসম এক নান্দনিক উপহার - ‘মোহনা’ কবিতা সংকলন।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ১৫০ টাকা, যোগাযোগ - ৯৪৭৬৭৬৩২৫১

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...