Skip to main content

ভাষার গরজে মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতির হার্দিক প্রয়াস - ‘স্মরণ’


বরাক উপত্যকা মাতৃভাষা সুরক্ষা সমিতির তরফে সাবেক করিমগঞ্জ (অধুনা শ্রীভূমি) থেকে প্রতি বছর ১৯শে মে তারিখে প্রকাশিত হয়ে আসছে পত্রিকা/ক্রোড়পত্র ‘স্মরণ’। ড. গীতা সাহা সম্পাদিত ২০২৪-এর এই দিনে প্রকাশিত ক্রোড়পত্র থেকে জানা যায় সুরক্ষা সমিতির পথ চলা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সাল থেকে। প্রথম পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ সম্পাদকীয় আক্ষরিক অর্থেই এক বিস্তৃত, লক্ষ্যপূর্ণ সম্পাদকীয়। একুশ ও উনিশের প্রাসঙ্গিক উল্লেখের মধ্য দিয়ে এক দিকে বাংলা ভাষার চর্চা ও পঠনের নিম্নগামিতা ও অন্যদিকে উপত্যকার ভষা ও মানুষের উপর নিরবধি চলে আসা আগ্রাসনের যে প্রয়াস তার পরিপ্রেক্ষিতে শঙ্কা প্রকাশ করে জানানো হয়েছে একাধারে প্রতিবাদ ও এর থেকে উত্তরণের কিছু নিদান। এ-৪ সাইজের ক্রোড়পত্রের প্রায় দেড় পৃষ্ঠাজোড়া সুচিন্তিত এই সম্পাদকীয় নিশ্চিতভাবেই পত্রিকাটির অন্যতম সম্পদ।
সংখ্যাটি বহুভাষিক হওয়ার সুবাদে বাংলার বাইরেও বিভিন্ন ভাষার রচনা রয়েছে এখানে যেমন - বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি, হিন্দি, অসমিয়া ও সংস্কৃত১৬ পৃষ্ঠার এই ক্রোড়পত্রে রয়েছে গদ্য ও পদ্যে একাধিক রচনা। রচনাসমূহে একুশ, উনিশ সহ ফুটে উঠেছে ভাষা বিষয়ক এবং অন্যান্য নানাবিধ বিষয়ের উপর আলোকপাতকবি রঞ্জিতা চক্রবর্তী যেখানে লিখছেন -
হলুদ বসন্ত সেদিন রক্ত দেখেছিল
দখিনা হাওয়ার আলিঙ্গনে,
নতুন গল্প লিখেছিল।
শিমূল বনে শেষ বিকেলে,
ঝরেছিল কত নয়নবারি -
সেদিন ছিল, ফাগুন-রাঙা ২১শে ফেব্রুয়ারি...
(কবিতা - ২১শে ফেব্রুয়ারি)
সেখানে কবি প্রতিমা শুক্লবৈদ্যের কবিতায় পাই -
...মে মাস জানে কত রক্তের দাগ
তার বুকের উপর
ফুল হয়ে ফোটে কৃষ্ণচূড়া
আগুন ঢালা স্টেশন চত্বর...
(কবিতা - খুলে ঝিনুকের আগল)
আছে উনিশ, একুশে একাত্ম হয়ে যাওয়া কবিতা -
উনিশের বুকে আজ ছলকায় খুন
পাঁজরে দুরারোগ্য ব্যাধি,
একুশ আজ হাতছানিতে ডাকে
রুখে দাঁড়া, বলে, এল বরবাদি...
(ছন্দা দামের কবিতা - অশনি সংকেত)।
ধর্ম ও ভাষার বিড়ম্বনায় যাপিত উদ্‌বাস্তু জীবনের শোকগাথা উঠে এসেছে একাধিক কবিতায়। প্রতিটি কবিতাই যেন হৃদয় নিংড়ে উঠে আসা কঠোর বাস্তব। প্রতিটি কবিতাই সুপাঠ্য, সুরচিত। রয়েছে সুচরিতা সিনহার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি কবিতা ‘মোর ইমাঠার’, শিপ্রা পুরকায়স্থের অসমিয়া কবিতা ‘ঘাতক নি:সঙ্গতা’, কুসুমলতা জৈনের হিন্দি কবিতামেরে প্যারে বচপন’, . গীতা সাহার সংস্কৃত কবিতাপুস্পার্ঘ্যম্‌’ এবং প্রথমোক্ত তিনজন কবির বাইরে রয়েছে যাঁদের বাংলা কবিতা তাঁরা হলেন - সুদীপ ভট্টাচার্য, নারায়ণ মোদক, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী দেব, সুমি দাস, মৃত্যুঞ্জয় নাথ, বনানী চৌধুরী, সপ্তর্ষি বিশ্বাস, সুমিতা গোস্বামী, শিবানী গুপ্ত, শিখা দাশগুপ্ত ও গৌতম চৌধুরীভিন্ন ধারার কবিতা সপ্তর্ষি বিশ্বাসেরমাতামহ 
সীমিত আয়োজনে পদ্যের পাশাপাশি গদ্য বিভাগেও অনুভব করা যায় উৎকর্ষ ও গরজের ছাপ সুচয়িত গদ্য হিসেবে স্থানলাভ করেছে শিবানী বিশ্বাসেরভগিনী নিবেদিতা শিরোনাম অনুযায়ী সার্ধ শতবর্ষে এক সংক্ষিপ্ত অথচ সুলিখিত শ্রদ্ধাঞ্জলি তত্ত্ব ও তথ্যের উল্লেখে ড. গীতা সাহার নিবন্ধঅতিথি ভগবান / নর নারায়ণএকটি উৎকৃষ্ট ও সুখপাঠ্য রচনা শ্রীমতী পিকলু দাস দে-র নিবন্ধবীরাঙ্গনা কনকলতা বরুয়া জন্ম শতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ্য’ - একটি প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ     
সবার শেষে সংখ্যাটির উৎকর্ষ বৃদ্ধি করেছে৮ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখের দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকার একটি পেপার কাটিং থেকে সংগৃহীত একটি প্রতিবেদনবাংলা ভাষার অগ্রগমন’-এর পুনর্মুদ্রণ এই প্রতিবেদনে পরিসংখ্যান সহ দেখানো হয়েছে কীভাবে বাংলা ভাষা বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত ও ব্যবহৃত এও এক গরজের, এক অন্তরাত্মার জাগরণের ভাষ্য
কয়েকটি ক্ষেত্রে পুরোনো বানানের প্রয়োগ ব্যতীত সাদাকালো হলেও প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ চিত্র, স্পষ্ট ছাপা, যথাযথ অক্ষর-শব্দ বিন্যাস সংখ্যাটির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে সব মিলিয়ে ভারে না হলেও ধারে অতুলনীয় তথা সংগ্রহযোগ্য একটি সংখ্যাস্মরণ ভবিষ্যতে ক্রোড়পত্র থেকে পত্রিকার পথেস্মরণ’-এর উত্তরণ শুধু সময়ের অপেক্ষা এবং পাঠকের প্রতীক্ষা

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগাযোগ - ৯৬১৩৫০৪৮৪১ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...