Skip to main content

সাহিত্য সম্ভারে পরিপূর্ণ শারদ সংখ্যা ১৪৩১ - ‘ত্রিপুরা দর্পণ’


বিজ্ঞাপন ছাড়া মোট ৩১২ পৃষ্ঠার একটি পূর্ণাঙ্গ শারদীয় পত্রিকা। বাংলা সাহিত্যের সম্ভারস্বরূপ শারদীয় সংখ্যাসমূহের কথা উঠলেই ঈশান বাংলার পাঠকমহলের চোখ ও মন নিমেষেই পাড়ি দেয় কলকাতায়। যুগ যুগ ধরেই এমন চলে আসছে। এ নিয়ে এক চাপা কৌলিন্যও প্রদর্শন করে থাকেন কিছুসংখ্যক পাঠক - ‘আমি এবার ক-খ-গ-ঘ এই চারটি কিংবা তিনটি কিংবা দুটি শারদীয় সংখ্যা আনিয়েছি কিংবা পড়েছি জাতীয় আত্মশ্লাঘা প্রায়শই কর্ণগোচর হয় আমাদের। বলাই বাহুল্য এইসব কখগঘ হচ্ছে কলকাতা থেকে যুগ যুগ ধরে প্রকাশিত হয়ে আসা তথাকথিত নামিদামি কিছু পত্রিকার নাম - সে তার নাম কিংবা দাম যাই হোক না কেন, কবি-লেখকের তালিকায় এই ঈশান বাংলার প্রতিনিধিত্ব চিরবর্জিত হোক না কেন। অথচ ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ - ত্রিপুরা থেকে যে একই মানের একই ওজনের একাধিক শারদীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে আসছে সে খবর ত্রিপুরা রাজ্যের বাইরে এই উত্তর-পূর্বের ক’জন পাঠক জানেন সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অবশ্য এর পিছনে একাধিক কারণও রয়েছে। মূলত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব এবং কিছুটা হলেও ত্রিপুরার বাইরে উত্তরপূর্বের কবি-লেখকদের সেভাবে স্থান না পাওয়াটাও অন্যতম। এবছর ১৪৩১ বাংলা শারদীয় একটি সংখ্যা অসম থেকেও প্রকাশিত হয়েছে তার খবরও অনেকেরই জানা নেই। কারণ সেই যোগাযোগের অভাব।  আবার এই সংখ্যাটিতে উত্তর-পূর্বের সবচাইতে বেশি বাংলা লেখালেখি যেখানে হয় সেই ত্রিপুরার প্রতিনিধিত্ব না থাকাটাও এক বিস্ময়কর ঘটনা বইকী। এই বিভ্রাটগুলি কাটিয়ে উঠলে আরশিনগরের আয়নায় যে এই অঞ্চলের পাঠক নিজেদের মুখ খুঁজে পাবেন তাতে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
সম্প্রতি হাতে এসেছে ‘ত্রিপুরা দর্পণ’ পত্রিকার শারদ সংখ্যা ১৪৩১ ধারে ও ভারে কোনো অংশেই কম নয় বলে মনে হল তথাকথিত সেইসব ‘নামিদামি’ পত্রিকাসমূহ থেকে। লেখায় লেখায় গুণগত বিচারে কিছু তারতম্য থাকা স্বাভাবিক। সার্বিক বিচারেও এমন প্রতীয়মান হতেই পারে। তবু কেমন একটা আপনত্ব খুঁজে পাওয়া যায় এসব ওজনদার পত্রিকা হাতে নিলে। শরতের আনমনা পাঠে সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠে পঠনমুখর দিনযাপন। আলোচ্য সংখ্যার সূচিপত্র ধরে এগোলে দেখা যায় বিষয়বৈচিত্রে যথেষ্ট সমৃদ্ধ এই পত্রিকা। নান্দনিক সাহিত্যগুণসম্পন্ন সম্পাদকীয়তে দেবীর আগমনের প্রেক্ষিতে উঠে এসেছে একদিকে শরতের স্নিগ্ধতা অন্যদিকে চারপাশের বিধ্বস্ত সামাজিক নৃশংসতার ছবি। প্রতিবেশী দেশের নামোল্লেখ না থাকলেও রয়েছে প্রতিবেশী রাজ্যের নৃশংস ঘটনার উল্লেখ, নিজ রাজ্য তথা আঞ্চলিক অব্যবস্থার কথা। বিন্যস্ত সূচিপত্রের প্রথমেই রয়েছে প্রবন্ধ বিভাগ। সন্নিবিষ্ট হয়েছে মোট ১১টি নিবন্ধ। বিকচ চৌধুরীর ‘উত্তর-পূর্ব ভারতে রবীন্দ্র-সান্নিধ্যের প্রেক্ষাপট’ বিশেষত অসম ও ত্রিপুরার প্রেক্ষাপটে চিন্তাপ্রসূত, তথ্যভিত্তিক একটি সুলিখিত বিষয়ভিত্তিক নিবন্ধ। ‘আইনস্টাইন ও ইন্দুবালা এবং বিভূতিভূষণ’। লিখেছেন মিলনকান্তি দত্ত। একটি ব্যতিক্রমী বিষয়ভিত্তিক নিবন্ধ। উন্মোচিত হয়েছে বিভূতিভূষণের লেখালেখির প্রেক্ষিতে এক অনালোচিত দিক। এই বিভাগে উপস্থিতির কারণেই সম্ভবত কবিতায় অনুপস্থিত কবি মিলনকান্তি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ‘বিপ্লব’-এর বিষয় নিয়ে বিমান ধর লিখেছেন নিবন্ধ ‘বাংলাদেশ এখন...’। ‘কবির জন্মদিন ঘিরে ঘটনার ঘনঘটা’, লিখেছেন পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় - একটি নান্দনিক তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ। অধুনা প্রতিবেশী দেশে ঘটে যাওয়া বা ঘটতে থাকা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাবলি ও ভারতের উদ্‌বেগ নিয়ে সমাজ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা নিবন্ধ - ‘আগামীদিন এবং বাংলাদেশ’। নিবন্ধকার মিহির দেব। ‘শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় বীরবিক্রম’ শিরোনামের নিবন্ধে ত্রিপুরার রাজা তথা রবীন্দ্রানুরাগী বীরবিক্রম কিশোর মানিক্যের জীবন ও সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক অবদানের বিস্তৃত বর্ণনা লিখেছেন পান্নালাল রায়। অনিলকুমার নাথের নিবন্ধ ‘মহাত্মা রামমোহন : বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত’ শিরোনামভিত্তিক একটি সুলিখিত রচনা। উদ্দীপন ও উজ্জীবনের মহাকাব্য ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ ও নবজাগরণের প্রেক্ষিত নিয়ে অত্যন্ত মূল্যবান ও সুলিখিত নিবন্ধ - ‘অসম্পূর্ণ নবজাগরণ ও মেঘনাদবধ কাব্য’ লিখেছেন দিব্যেন্দুশেখর দত্ত। রয়েছে জ্যোতির্ময় দাসের শিরোনাম অনুযায়ী একটি তথ্যপূর্ণ নিবন্ধ ‘ত্রিপুর নারী স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী ও মহারাণী কাঞ্চনপ্রভা দেবী’। ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিশ্বম্ভর মন্ডল-এর নিবন্ধ ‘আবোল-তাবোল আবোলতাবোল নয়’। সুকুমার রায়ের রচনা ও বিশেষ করে খেয়াল-রসের বই ‘আবোল-তাবোল’ নিয়ে একটি তথ্যভিত্তিক নান্দনিক রচনা। সূচিপত্রে এই নিবন্ধের পৃষ্ঠাসংখ্যায় ভুল রয়েছে। এই বিভাগের শেষ নিবন্ধ সুস্মিতা দাসের ‘অন্ত:পুরিকা’সমাজে নারীর অবস্থান বিষয়ক সংক্ষিপ্ত একটি প্রতিবেদনমূলক নিবন্ধ।
গল্প বা ছোটগল্প বিভাগে রয়েছে মোট ৩৯টি গল্প। প্রতিটি গল্পের আলাদা করে আলোচনায় বৃহৎ পরিসরের প্রয়োজন। তবে একথা বলাই যায় একটি গল্পও পাঠের অনুপযুক্ত কিংবা নিম্নমানের হয়নি। অধিকাংশ গল্পের মধ্যেই রয়েছে এক একটি বার্তা। বিচিত্র সব বিষয়ের উপর গড়ে উঠেছে গল্পগুলি যা পাঠকের কাছে সুপাঠ্য ও সুখপাঠ্য হয়ে উঠবে। সমাজ, ইতিহাস ঘেঁটে তুলে আনা স্থান-কাল নির্নায়ক ঘটনাবলি, ত্রিপুরার পার্বত্য প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক শন্দ ও বাক্যের সংযোজন ঘটেছে বহু গল্পে। তবে কিছু গল্পের আরও বিস্তার ঘটতে পারত। নির্মল দাস-এর গল্প ‘মোহিনী বৃক্ষ’ একটি চমৎকার গল্প হলেও মুদ্রণ বিভ্রাটে একাধিক প্যারাগ্রাফের সংস্থাপন এলোমেলো হয়ে পড়ায় সরল পঠন ব্যাহত হয়েছে। কিশোর রঞ্জন দে, সৌম্যদীপ দেব-এর গল্প সুখপাঠ্য। লিটন আচার্যের গল্প পুরোটাই সংলাপভিত্তিক আঞ্চলিক ভাষায় লেখা। পাঠে অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন। সব মিলিয়ে একগুচ্ছ গল্প পাঠক মন আন্দোলিত করতে সক্ষম। উপর্যুক্ত গল্পকারদের বাইরে যাঁদের গল্প সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁরা হলেন - দেবব্রত দেব, সুমন মহান্তি, পুলক চক্রবর্তী, অলক দাসগুপ্ত, নিলিপ পোদ্দার, নির্মল দাস, পারিজাত দত্ত, শ্যামাপদ চক্রবর্তী, মহুয়া আচার্য, রাধা দত্ত, দেবাশ্রিতা চৌধুরী, মিতা রায়, সমিত রায়চৌধুরী, চিরশ্রী দেবনাথ, তপনকুমার দাস, অর্পিতা আচার্য, নন্দিতা ভট্টাচার্য (শর্মা), নির্মল অধিকারী, নন্দিতা দত্ত, পুলকেন্দু চক্রবর্তী, স্বর্ণকমলিকা চক্রবর্তী, গোপা চট্টোপাধ্যায়, সুমনা রায়, স্বপনকুমার খাসনবীশ, সোমা গঙ্গোপাধ্যায়, সত্যজিৎ দত্ত, জহর দেবনাথ, সুস্মিতা ধর, সেবিকা ধর, দিব্যেন্দু নাথ, সুস্মিতা দেবনাথ, নিধির রায়, নন্দিতা ভট্টাচার্য, রাজকুমার শেখ, স্বরূপা দত্ত ও মৌসুমী গোয়ালা।
গৌরী বর্মণ-এর বড় গল্প ‘ঐ জোনাক জ্বলে’ সাহিত্যগুণে, চলনে উৎকৃষ্ট একটি গল্প। তবে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে প্যারাগ্যাপ-এর প্রয়োজন ছিল। গল্প এতটাই ‘বড়’ যে অনায়াসে একে উপন্যাস বা নিদেনপক্ষে উপন্যাসিকা বিভাগে স্থাপন করা যেত। সংখ্যায় সন্নিবিষ্ট দুটি উপন্যাসের চেয়েও বড় এই গল্পটি।
উপন্যাস বিভাগে রয়েছে মোট তিনটি উপন্যাস। সাংসারিক চাপানউতোরের মধ্যে এক বৃদ্ধার বেড়ে ওঠার সরলরৈখিক কাহিনি - সুনন্দা ভট্টাচার্যের মন-বসন। কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা পরিণতির পথে পাঠোৎসাহ সৃষ্টির প্রয়াস অনুভূত হয়নি। উদ্‌বাস্তু জীবনের অন্দরমহলের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের বর্ণনা। দ্বিতীয় উপন্যাস সুজয় রায় লিখিত ‘সেই সময়’। এক রাজনৈতিক যুগসন্ধিক্ষণের প্রেক্ষাপটে একটি মেয়ের জীবন-যাপনের কাহিনি। প্রেম, বাস্তব, শিক্ষা, রাজনীতি সবকিছুর মিশেলে একটি সুপাঠ্য উপন্যাস যদিও অগুনতি ছাপা/বানান বিভ্রাটে সুখপাঠ্য হয়ে ওঠেনি। তাপস রায়ের থ্রিলার উপন্যাস ‘ঢাঙিকুসুমের ঢঙি’ মাওবাদী কার্যকলাপের উপর আধারিত একটি জমজমাট উপস্থাপনা। এই লেখকের অপরাপর উপন্যাসসমূহের মতোই আগাগোড়া নিমগ্ন পাঠের উপযোগী।
এছাড়াও রয়েছে সুভাস দাসের সুলিখিত ভ্রমণকাহিনি ‘সেই মেকঙের মোহনায় একদিন’ এবং জ্যোতির্ময় রায়ের সুচিন্তিত পথনাটিকা ‘ক্রমবিবর্তনে আমরা’। নাটক বিভাগে বিভাগিত হলেও নারায়ণ দেব-এর রচনা ‘ত্রিপুরার নাট্যাকাশের পাঁচ উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক’ আসলে একটি প্রতিবেদনধর্মী নিবন্ধ যেখানে নাট্য ব্যক্তিত্ব ত্রিপুরেশ মজুমদার, শক্তি হালদার, শিবদাস ব্যানার্জী, হীরালাল সেনগুপ্ত ও মানস গাঙ্গুলীর জীবন ও নাট্যকর্ম তথা ত্রিপুরার নাট্যজগতে তাঁদের অবদানের কথা লেখা হয়েছে। রয়েছে ‘থ্রিলার’ বিভাগে অমলকুমার ঘোষের রচনা ‘মহারাজ তোমারে সেলাম’। সংক্ষিপ্ত হলেও সুপাঠ্য।
কবিতা বিভাগে তিনটি পর্যায়ে নানা স্বাদের কবিতায় খ্যাতনামা কিংবা স্বল্পখ্যাত কবি যাঁরা রয়েছেন ক্রমানুসারে তাঁরা হলেন - কল্যাণব্রত চক্রবর্তী, পীযূষ রাউত, সেলিম মুস্তাফা, কৃত্তিবাস চক্রবর্তী, মৌলিক মজুমদার, বিশ্বজিৎ দেব, মানস পাল, মীনাক্ষী ভট্টাচার্য, নকুল রায়, অনন্ত সিংহ, মণিকা বড়ুয়া, খোকন সাহা, সনজিৎ বণিক, বিমলেন্দ্র চক্রবর্তী, দিলীপ দাস, বিধু দেব, কাকলি গঙ্গোপাধ্যায়, তমালশেখর দে, অশোক দেব, অপন দাস, অপাংশু দেবনাথ, লক্ষ্মণকুমার ঘটক, সঞ্জীব দে, রসরাজ নাথ, খোকন সাহা (খোকন সাহার দ্বিতীয় কবিতা কিংবা একই নামের অন্য কবি তার উল্লেখ নেই), রণজিৎ রায়, আকবর আহমেদ, নন্দিতা দাস চৌধুরী, নবীনকিশোর রায়, রবিন কুমার দাস, জহরলাল দাস, পঙ্কজ বণিক, মিঠুন রায়, অভীককুমার দে, সুমন পাটারি, দীপান্বিতা সেনগুপ্ত, বিপ্লব উরাং, টিংকুরঞ্জন দাস, শেখর সি. দত্ত, রবীন বসু, শ্যামল কান্তি দে, মধুমিতা ভট্টাচার্য, বিষ্ণু ঠাকুর, গোপেশ চক্রবর্তী, টুটন চক্রবর্তী, সুবল চক্রবর্তী, শ্রীমান দাস, শঙ্কর সাহা, সংহিতা চৌধুরী, চন্দন পাল, রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ, আশিস ভট্টাচার্য, দেবারতি দে, সুমিতা বর্ধন, রতন আচার্য, অরিজিৎ দাস, সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, কলহন, গোপা রায়, ভবানী বিশ্বাস, শিশির অধিকারী, রাহুল শীল, সপ্তশ্রী কর্মকার, বিধানেন্দু পুরকাইত, হরিদাস দেবনাথ, চিত্তরঞ্জন দাস, সৈকত মজুমদার, অমলকান্তি চন্দ, অনামিকা লস্কর, অঙ্কিতা রায়, কৃষ্ণকুসুম পাল, শুভাশিস চৌধুরী, অচিন্ত্য পাল, কল্লোল দত্ত, দিপ্সি দে, মনীষা গুপ্ত পাল, মাধুরী সরকার, পায়েল দেব, বিশ্বজিৎ মন্ডল, শ্যামসুন্দর দে, শঙ্খ অধিকারী ও নৃপেশ আনন্দ দাস।
কাগজের মান অনুযায়ী ছাপার মান স্পষ্ট, বর্ণ-অক্ষর বিন্যাস যথাযথ যদিও বিভিন্ন রচনায় বানান ও ছাপার বিভ্রাট রয়ে গেছে। আধুনিক বানান অনুসৃত হলেও পুরোনো বানানের প্রয়োগ নেহাত কম নয় - এমনকি শিরোনামেও এসেছে দু-একটি স্থানে। বহু রচনায় ‘কি’ ও ‘কী’ এবং ‘র’ ও ‘ড়’-এর স্থানচ্যুতি প্রত্যক্ষ করা গেছে। পুস্পল দেব-এর প্রচ্ছদ এবং স্বপন নন্দী, মৃদুল বড়াল ও বিপ্লব সিন্‌হার রেখাচিত্র তথা সার্বিক অলংকরণ নান্দনিক ও প্রাসঙ্গিক। স্থানীয় অর্থাৎ ত্রিপুরার কবি লেখকদের অগ্রাধিকারের বিষয়টি যথাযথ এবং প্রাসঙ্গিক যদিও উত্তর-পূর্বের অন্যান্য কিছু কবি-লেখকদের লেখাও অন্তর্ভুক্ত করা যেত। সব মিলিয়ে শারদ সংখ্যা হিসেবে একটি সমৃদ্ধ সম্ভার ‘ত্রিপুরা দর্পণ’।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

ত্রিপুরা দর্পণ পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রকাশক ও সম্পাদক - সমীরণ রায়
কার্যকরী সম্পাদক - সুস্মিতা দেবনাথ
মূল্য - ১৫০ টাকা।

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...