Skip to main content

উজ্জ্বল উদ্ধার - ‘লিমেরিক শতাধিক’


একটি গ্রন্থের আয়ুষ্কাল কত ? এমন প্রশ্ন হয়তো কারও মনন চিন্তনে উত্থাপিত হয় কখনও কিছু গ্রন্থ হয়তো জন্মের কয়েক দিন-মাস-বছর পরেই চলে যায় অন্তরালে আবার কিছু গ্রন্থ হয়তো চিরকালের জন্য ভাস্বর হয়ে থেকে যায় গ্রন্থলোকে কিন্তু অবাক হতে হয় তখন যখন প্রথমোক্ত কিছু গ্রন্থ বহুকাল পর পাঠকের বা আলোচকের টেবিলে উঠে আসে নবরূপে, স্বমহিমায়
এমনই একটি গ্রন্থ হাতে এল সদ্য গ্রন্থটির প্রকাশকাল বৈশাখ ১৪০৫ অর্থাৎ প্রায় ২৭ বছর পর গ্রন্থটি হাতে এল যদিও পড়তে পড়তে মনে হল যেন একটি অ্যান্টিক পিস্ ড. মিহির কুমার দেব পুরকায়স্থের ‘লিমেরিক শতাধিক’ শুধুমাত্র লিমেরিকেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৩২ পৃষ্ঠার বইয়ে রয়েছে এক বিশাল লেখালেখির সম্ভার। তার আগে শেষ প্রচ্ছদে লিপিবদ্ধ লেখক পরিচিতির কিয়দংশ উল্লেখ করা নিতান্তই প্রয়োজন। লেখক মূলত সাহিত্যের কেউ ছিলেন না। ১৯৬৪ ইংরেজিতে তিনি গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিজ্ঞানে মাস্টার্স করে এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণাকর্ম সেরে করিমগঞ্জ কলেজে অধ্যাপনায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে বিভাগীয় প্রধানের পদে আসীন হন। ‘...বাংলা সাহিত্যের দ্যুতিতে উজ্জ্বল বিজ্ঞান-ভিত্তিক লেখক খুবই বিরল। কবি জন্মজিৎ রায়ের ভাষায় - ড. দেব পুরকায়স্থ সেই বিরল প্রজাতির বিজ্ঞান সাহিত্যিক’। স্বভাবতই লেখালেখি যে মূলত বিজ্ঞানবিষয়ক হবে তাতে কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। আলোচ্য গ্রন্থটিতে সন্নিবিষ্ট হয়েছে ৫০টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক লিমেরিক, ২৬টি সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের লিমেরিক, ৯৩টি পাঁচমিশেলী লিমেরিক, ৮৫টি ছড়া, ১০টি স্লোগান, ৭টি ধাঁধা এবং গান ও কবিতা ১৮টি। এর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে ইংরেজিতেও।
‘আমার কথা’ শীর্ষক ভূমিকায় গ্রন্থকার এই বিশাল সম্ভারের হদিশ দিতে গিয়ে লিখেছেন - ‘...লিমেরিকের প্রেমের ফাঁদে আমি যে কখন ধরা পড়ে গেছি তা আমিও জানিনে। তবে আমি লিমেরিকের ফাঁদে না লিমেরিক আমার প্রেমের ফাঁদে ধরা পড়ল সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যেতে পারে লিমেরিকই হল আমার প্রথম প্রেম এবং তা প্রথম দর্শনেই হয়েছে...।’ রয়েছে লিমেরিক বিষয়ে এক তথ্য ও তত্ত্ব সম্বন্ধীয় ভূমিকা। লিখছেন - ‘...আমি মনে করি বিজ্ঞান বা অন্যান্য দুরূহ বিষয় জনপ্রিয় করার ব্যাপারে ছড়া বা লিমেরিকই হল সর্বোত্তম মাধ্যম। কারণ এগুলোর আবেদন হল সর্বজনীন...।’ ড. দেব পুরকায়স্থের এই ব্যতিক্রমী প্রয়াসের বিষয়ে গ্রন্থের প্রকাশকেরও রয়েছে সংক্ষিপ্ত ‘প্রকাশকের কথা’।
কিছু প্রাসঙ্গিক, কিছু শ্লেষাত্মক লিমেরিক ও ছড়া তুলে ধরা হল পাঠকের জন্য যা আজ এত বছর পরেও সমান উপজীব্য -
প্লাস্টিকের আবর্জনা বাড়ায় দূষণের মাত্রা
ফলে হবে এই সভ্যতার অগস্ত্য যাত্রা
সাধু সাবধান
বাঁচতে যদি চান
প্রযুক্তির অভিশাপ এই পলিথিন খতরা।
 
ছাড়তে পারি ছেলে-মেয়ে ছাড়তে পারি জায়া
ছাড়তে পারি প্রিয়জনে ছাড়তে পারি কায়া
নিকোটিনের প্রেমে
ঝুলতে পারি ‘ফ্রেমে’
তাই বলে কি ছেড়ে দেব ধূম্রপানের মায়া ?
 
ভোটেশ্বরীর অকালবোধন
করল সকল রাজনীতিকে
Power পাওয়ার ধান্দা সবার
দেয় বিসর্জন লাজ-নীতিকে (ছড়া)
 
একথাটি ভুলতে পার কি তুমি
বৃক্ষহীনতায় পৃথিবী হবে যে মরুভূমি ? (স্লোগান)
 
এমনই সব বিজ্ঞান ও সমাজসংস্কার বিষয়ক এই বিস্তৃত সম্ভার আলোচ্য গ্রন্থটি যা আজও সমান প্রাসঙ্গিক এই পেপারব্যাক সংস্করণের প্রকাশক বিপ্ররাজ দাস, করিমগঞ্জ প্রচ্ছদ সৌজন্যে সানগ্রাফিক্স, করিমগঞ্জ স্পষ্ট ছাপা অক্ষর, শব্দ ও পঙ্ক্তিবিন্যাস যথাযথ বানান বিশ্লেষণ অপ্রাসঙ্গিক যদিও যথেষ্ট আধুনিক ফন্ট যথেষ্ট বড় হওয়ায় পঠনবান্ধব গ্রন্থ গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে গ্রন্থকারেরস্ত্রী স্বপ্না ও ভাগিনী পাপিয়ার স্মৃতির উদ্দেশেযাঁরা আকস্মিক দুর্ঘটনায় এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন অকালে গ্রন্থে তাঁদের নিয়েও আছে স্মৃতিচারণমূলক কবিতা

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 
গ্রন্থমূল্য ছিল - ৪০ টাকা
সৌজন্যে - বনানী চৌধুরী। 

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...