Skip to main content

সৃষ্টির আঙিনায় ব্যতিক্রমী কাব্য সংকলন ‘সৌরজা’


২০২৩-এর মাঝামাঝি এমন একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল বরাক থেকেই বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক অশোক বার্মা সংকলিতজনপদের মহিলা কবিরাগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছিল মোট ৮৯ জন মহিলা কবির কবিতা যার মধ্যে ছিল ৭৪ জন কবির বাংলা কবিতা দুবছর না গড়াতেই একই ধারায় শুধু মহিলা কবিদের অপর একটি সংকলন সম্প্রতি প্রকাশিত হল গুনে গুনে ১০০ জন মহিলা কবির কবিতা এখানে সযত্নে হয়েছে সংকলিত আলোচ্য সংকলন গ্রন্থ - ‘সৌরজা সম্পাদক - . শমিতা ভট্টাচার্য
পেপারব্যাকে ৯৮ পৃষ্ঠার গ্রন্থের ৮৮ পৃষ্ঠায় ধরে রাখা হয়েছে এই অসাধারণ দস্তাবেজ পাতা ওলটালে ব্যতিক্রমী হিসেবে স্বচ্ছতায় ভরপুর ভেতরের পৃষ্ঠাগুলি পাঠকমনে নিশ্চিতভাবেই উদ্রেক করবে এক সুখপঠনের আবেশ - সৌজন্যে কাগজের মান, ছাপার স্পষ্টতা, অক্ষরাকার, বর্ণ-শব্দ-পঙ্ক্তির যথাযথ বিন্যাস
এমন একটি সংকলনের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে সবার আগে জেনে নিতে হয় সম্পাদকীয় কথন। তাই চোখ রাখা যাক মুখবন্ধে - ‘সৃষ্টির আঙিনায় রবিবারের আসর আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিক ই-পত্রিকা’ ৮০ জন মহিলা কবির কবিতা নিয়ে নভেম্বর ২০২৩ সালে দীপাবলি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে...পত্রিকাটির সম্পাদক হিসেবে সেই সময় থেকেই সংখ্যাটিকে দুই মলাটে আবদ্ধ করার একটি স্বপ্ন ছিল। ...৮০ জন কবির সাথে আরো ২০ জন কবির কবিতা নিয়ে ১০০ জন মহিলা কবির ১০০টি কবিতা দিয়ে প্রকাশিত হল ‘সৌরজা’ - সৃষ্টির আঙিনায় প্রথম প্রয়াস। ভারতের বিভিন্ন স্থান এবং বাংলাদেশের কবিদের নিয়ে এই সংখ্যায় যেমন স্বন্মাওধন্য কবিরা অংশগ্রহণ করেছেন তেমনি রয়েছে যারা কোনোদিন কবিতা লিখেননি এমন দু’চারজন কবির কবিতা, সৃষ্টির উন্মেষ হিসেবে সেই কবি ও কবিতাগুলিকে আমরা ভালোবাসায় আবদ্ধ করেছি...।’
শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট কবি রামকুমার মুখোপাধ্যায় গ্রন্থটির ভূমিকায় লিখছেন - ‘...সৌরজা। একশোজন কবির একটি করে কবিতার এক বর্ণময় শতদল। কবিরা সবাই নারী আর এটাই এই সংকলনের বিশেষ উল্লেখযোগ্য বিষয়। পুরুষশাসিত এবং ধর্মের বিধান নিয়ন্ত্রিত সমাজে নারীর স্বর বহুকাল অবদমিত হয়ে এসেছে। আজও সর্বত্র সে স্বর মুক্ত কণ্ঠে তার কথা বলতে পারে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশের নারী কবিদের কাছ থেকে কবিতা সংগ্রহ করে একটি সংকলন প্রকাশ করা কম কথা নয়। ...যে কোনো সংগ্রহ, বিশেষ করে তা যদি বহু জনের লেখা নিয়ে করা হয়, তা সুসম্পাদিত হতে হয়। কাজটি মালিনীর আর ভালো সৌন্দর্য ও শিল্পবোধ না থাকলে সে কাজ করা সম্ভব নয়। শমিতার সে রুচিবোধ আছে আর তাই বহুস্বরকে সিম্ফনির রূপ দিতে পেরেছেন। ...আমি নিজে কবিতা পড়ে খুবই আলোড়িত। সংসার, সমাজ, রাজ্য, রাষ্ট্র ও বিশ্বের নানা সুখ-দু:খের কথা কবিতাগুলির শরীর ছুঁয়ে আছে। ...সব মিলে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংকলন। সাহিত্যের রস রয়েছে আর সে সঙ্গে নারীর রূপান্তরিত মনের পরিচয়ও।’
এরপর আর আলোচনার বিশেষ কিছু থাকে না। পরিসরের সীমাবদ্ধতায় কবিতাসমূহের উল্লেখ কিংবা ভাবের বিশ্লেষণ একেবারেই অসম্ভব। কবিনামের উল্লেখ প্রয়োজনীয় ভেবে দেখে নেয়া যাক তালিকা।
৩ পৃষ্ঠারও বেশি বিস্তৃত সূচিপত্রে কবিতার শিরোনাম ও কবির স্থাননাম সহ সন্নিবিষ্ট হয়েছে যেসব কবির কবিতা তাঁরা হলেন - ঝুমুর পাণ্ডে, শিখা দাশগুপ্ত, চন্দ্রিমা দত্ত, মৃদুলা ভট্টাচার্য, ড. রূপাঞ্জলী গুপ্ত, অর্চনা ভট্টাচার্য, সুদীপ্তা ভট্টাচার্য, সুস্মিতা দেবনাথ, ঋতা চন্দ, মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, কপোতাক্ষী চক্রবর্তী, আলপনা রায়চৌধুরী, সর্বাণী বিশ্বাস, মঞ্জরী হীরামণি রায়, কৃষ্ণা ভট্টাচার্য, ড. অনামিকা চক্রবর্তী, চিত্রা চ্যাটার্জী, বিজয়িনী ভট্টাচার্য, বনানী চৌধুরী, মমতা চক্রবর্তী, অলকা গোস্বামী, মীরা পাল, দেবলীনা রায়, জয়ন্তী দত্ত, সুদীপ্তা সেনগুপ্ত, ড. দেবযানী (দুর্গা) ভট্টাচার্য, শ্বেতা ব্যানার্জী, দীপান্বিতা ভট্টাচার্য, রমলা চক্রবর্তী, গীতশ্রী ভট্টাচার্য, ড. সুমিতা বসু, শামীমা সুলতানা, তনুশ্রী পাল, সুস্মিতা ভট্টাচার্য, পায়েল দাস, সুমিতা গোস্বামী, পুস্পিতা রায়, বন্নী ভট্টাচার্য, সুমা গোস্বামী, তুষ্টি ভট্টাচার্স পুরকায়স্থ, শিবানী গুপ্ত, মিলি চক্রবর্তী, শাশ্বতী দেব, চান্দ্রেয়ী দেব, মধুশ্রী চক্রবর্তী, শ্রাবণী পাল, জ্যোৎস্না পাল, নিবেদিতা ভট্টাচার্য, ড. দিঘি চক্রবর্তী, ড. মুন্নি দেব মজুমদার, শর্মি দে, মল্লিকা চ্যাটার্জী রায়, সোনালি গোস্বামী, মুক্তা চক্রবর্তী, রঞ্জু রায়, পম্পা ভট্টাচার্য, সুতপা পাল দাস, মধুকৃষ্ণা চক্রবর্তী, মায়া সাহা, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, শ্রীমা গোস্বামী মুখার্জী, মিতা দাস, শবরী রায়, সুচরিতা সিনহা, পৌলমী পাল, শিল্পী চৌধুরী, মৌসুমী চক্রবর্তী, চম্পা নাগ, শম্পা নাথ চৌধুরী, সপ্তমিতা নাথ, সুজাতা চৌধুরী, ঝুমা পাল, মণিকর্ণিকা রায়, সাগরিকা ভট্টাচার্য, জয়ন্তী কর্মকার, সুমি দাস, দেবযানী ভট্টাচার্য, তন্দ্রা মজুমদার, বনশ্রী চৌধুরী, স্মৃতি দাস, খাদিজাতুল কোবরা রুবি, মুনমুন চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ, সুদীপ্তা পাল, ছন্দা দাম, স্বর্ণালি বিশ্বাস ভট্টাচার্য, বন্দনা এস, সুপর্ণা ভট্টাচার্য, সুমা দাস, ড. কাত্যায়নী দত্তচৌধুরী, ঝিমলি ব্যানার্জি, রূপালি দত্ত, শকুন্তলা সান্যাল, রুচিস্মিতা ঘোষ, আলপনা রায় চৌধুরী, পিয়ালি ঘোষ চৌধুরী, সুমনা পাল ও সম্পাদক ড. শমিতা ভট্টাচার্য।
নিঃসন্দেহে এক দলিল হয়ে থাকবে আলোচ্য গ্রন্থটি। সম্পাদনার কাজ যে কতটা গরজ ও অধ্যবসায়ের ফল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্পাদকের সর্বতোপ্রকার সহযোগিতায় উঠে আসছে যে নামটি, যঁর উল্লেখ রয়েছে রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকায়ও তিনি হচ্ছেন কবি ছন্দা দাম। টাইটেল ভার্সোতে তাঁকেই সংকলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানস ভট্টাচার্যের প্রচ্ছদ সততই নান্দনিক। এখানেও ব্যত্যয় ঘটেনি। কবিনাম সহ কিছু কবিতায় কিছু বানানের পুরোনো রূপ রয়ে গেছে, রয়ে গেছে কিছু ছাপাজনিত ত্রুটিও। ভবিষ্যতে তাই প্রয়োজন রয়েছে অধিকতর সচেতনতার। অন্যথায় স্থানিক মর্যাদা প্রাপ্ত হলেও বৌদ্ধিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রটি সংকুচিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনস্বীকার্য।
সম্পাদক গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন বরাকের স্বনামধন্য কবি স্বর্গীয় ছবি গুপ্তাকে। বিচিত্র বিষয়ের সমাহারে একশো নারীর একশোটি কবিতার এই শতদল পুস্প যে প্রস্ফুটিত হল তার শোভা যে বহুদিন ধরে বাংলা কবিতার জগৎটিকে স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে এক অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে রাখবে সে নিশ্চিত। মর্যাদার পাত্র হয়ে রইলেন নারী সংকলক ও নারী সম্পাদকও। মহিলা কবির বিজয় কেতন প্রতিষ্ঠিত হল এই সংকলনে।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৬৬৩৮২৩ 

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...