Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2024

ব্যতিক্রমী আঙ্গিকের কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষে মানুষে’

পৃথিবীতে উন্নত মগজ , উন্নত বুদ্ধিমত্তা ও মানবিকতাসম্পন্ন একমাত্র জীব মানুষ । যদিও এক বিচিত্র নিয়মে মানুষের কার্যপন্থা অবনত করে দেয় মানুষেরই মাথা এমন দৃষ্টান্ত ভূরিভূরি । মানুষকে নিয়ে, মানুষের কর্মকাণ্ড, তাঁদের অবস্থান নিয়ে গবেষণা হয়েছে বিস্তর, রচিত হয়েছে বহু মহাভারত। মানুষের উত্তরণে, তাদের হাতিয়ার করে আখের গোছানোর অছিলায় গঠিত হয়েছে বহু দল-সংগঠন, রচিত হয়েছে বহু কথা, গাথা ও কবিতা। তবে ঠিক গড্ডলিকা প্রনাহে গা না ভাসিয়ে এক ভিন্নতর আঙ্গিকে, ব্যতিক্রমী ধারায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবি প্রাণজি বসাকের কাব্যগ্রন্থ ‘মানুষে মানুষে’। একটি জীবনের ভিন্ন ভিন্ন মোড়ে আহৃত অভিজ্ঞতার সূত্রে লেখা কবিতাগুলিতে বলা যায় কবি উন্মোচিত করেছেন সমকালিক মানুষের এক নির্মোহ চরিত্র, এঁকেছেন অসংখ্য অনুষঙ্গ সম্বলিত সবাকচিত্র। প্রাণজির গ্রন্থে কোনও ভূমিকা না থাকায় এই গ্রন্থের ভিন্ন মূল্যায়ন উপলব্ধ হয় না। তবে প্রকাশক ‘পত্রলেখা’র (কলকাতা) তরফে আলোচ্য গ্রন্থের শেষ প্রচ্ছদে কবি প্রাণজি সম্পর্কে লেখা আছে বিস্তৃত পরিচিতি। দুটি লাইন সেখান থেকে উদ্ধৃত করা যেতে পারে - ‘...তাঁর একাধিক কাব্যগ্রন্থে মানবধর্মী ভাবনা, সমাজ চেতনা ও...

পূর্ণ আকাশ, অপূর্ণ আশা

– আকাশ দেখেছ শান্তিময়ী ? আমি আকাশ দেখেছি। এমন আপাত অর্থহীন প্রশ্নে থতমত খেয়ে যান শান্তিময়ী। এই প্রথম যদিও নয়। প্রায়শ এমন ধোঁয়াশামুখর প্রশ্নের সামনে পড়ে শান্তিময়ীর মতো গভীর সংসারী, প্রখর বিচক্ষণ মহিলাও দস্তুর মতো হাবুডুবু খেয়েছেন অথই সাগরে। বহুবার। খেই না পেয়ে ‘জানি না’ বলে পাশ কাটানোকেই শ্রেয় বলে সরে আসতেন পুলকেশের সামনে থেকে। ঘরে বাইরে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার নামই সংসারধর্ম । বা জীবনযুদ্ধ । এমনই মনে করতেন পুলকেশবাবু । এখনও তাই ভাবেন , বিশ্বাস করেন মনে প্রাণে । ঠিক নির্বাণ বা সন্ন্যাস হয়তো নয় , তবে এমন বিশ্বাস বা ধারণা পুলকেশের ভিতরে জন্ম নিয়েছিল জীবনের প্রথমদিকেই । গভীর বাস্তবকে আঁকড়ে ধরেই যেহেতু চলতে হবে আমৃত্যু , তাই ভবিষ্যতের একটা ছক মনে মনে কষে রেখেছিলেন তখন থেকেই । পৃথিবীতে তাঁর আসাটা যেহেতু নিজের ইচ্ছায় নয় তাই এখানে থাকা কিংবা এখান থেকে চলে যাওয়াটাও যে নিজের ইচ্ছায় হবে না তা বিলক্ষণ বুঝে উঠতে পেরেছিলেন সেই বয়সেই । সুতরাং কোনওরকমের ধানাইপানাই নয় , যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করে গেছেন ন্যূনতম চাহিদাপূরণের মাধ্যমে সবদিক সামলেসুমলে নির্বাহ করতে এই সংগ্রামমুখর যাপনটুকু । এখন অবসৃত জীবন...

এক সংগ্রামী সাহিত্য জীবন কথা 'মুখোমুখি বিকাশ সরকার'

জন ব্যক্তিকে চিনতে, জানতে, তাঁর গুণের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে এবং জনসমক্ষে তাঁর পরিচিতি তুলে ধরতে সর্বাপেক্ষা উত্তম পন্থা হল সাক্ষাৎকার। এতে একদিকে যেমন তাঁর ব্যক্তিসত্তা থেকে শুরু করে জীবনজোড়া কাজকর্মের বিস্তৃত খতিয়ান তুলে ধরা যায় তেমনি পাঠক-দর্শকদের সামনে উন্মোচিত হয় তাঁর অন্তরাত্মার বিশেষত্ব। এমনই একটি কাজ করেছেন উত্তরপূর্বের অন্যতম নিরলস একজন সম্পাদক, কবি, লেখক ও প্রকাশক গোবিন্দ ধর। ত্রিপুরার স্রোত প্রকাশনার কর্ণধার গোবিন্দ নিজেরই প্রকাশনা থেকে প্রকাশ করেছেন এই আপন সাহিত্যবিশ্বের অন্যতম বহুচর্চিত, বহুনন্দিত এবং ব্যতিক্রমী ঘরানার কবি ও সাহিত্যিক বিকাশ সরকারের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ বিষয়ক গ্রন্থ - ‘মুখোমুখী বিকাশ সরকার’। এখানে নিজের করা প্রশ্নের বাইরেও রয়েছে ইতিপূর্বে বিভিন্ন ব্যক্তিদের দ্বারা গৃহীত সাক্ষাৎকার থেকেও উঠে আসা কিছু প্রশ্নোত্তর। হার্ডবোর্ড বাঁধাইয়ের মধ্যে ১১১ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটিকে সাক্ষাৎকারদাতার এক অঘোষিত আত্মজীবনী বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না।  কবি বিকাশ সরকার এক মহাযুদ্ধের ঘোড়া। কীভাবে একজন মানুষ গরিবির তলানি সীমা থেকে শুধু নিজেকে বাঁচানোই নয়, উৎকর্ষে গড়ে তুলতে পারেন তাঁর...

সুস্থ সংস্কারবোধের উপযোগী সংকলন ‘ছোটদের গল্প’

শিশু সাহিত্য কিংবা ছোটদের নিয়ে আজকাল খুব একটা লেখালেখি চোখে পড়ে না। বিশেষত উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্য পরিমণ্ডলে যা কিছু কাজ হচ্ছে তা নিতান্তই স্বল্প এবং বহুল প্রচারের অভাবে অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে। রাজ্য সরকারের সাহিত্য পেনশন প্রাপ্ত সাহিত্যিক অশোক বার্মা শিশু সাহিত্য নিয়ে কাজ করছেন বহু দিন ধরে। ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ক তাঁর দুটি হিন্দি বই। ‘নন্‌হে মুন্নে কী লোরিয়া’ - ভাগ ১ ও ২। বাংলায় লিখেছেন ‘বিন্নি পাপাইয়ের ছড়া’। এছাড়া যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘ছড়ায় মজা’ শীর্ষক তিনটি সংকলন - ভাগ ১, ২ ও ৩। তবে গল্প নিয়ে এই প্রথম সংকলন করলেন তিনি। মৌলিক গল্প নয় যদিও শিশুসাহিত্যের পরিসরে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি কাজ নিঃসন্দেহে। সামাজিক মাধ্যমে একটি বার্তা প্রায়শই ঘুরে ফিরে আসে আজকাল - ‘যেদিন থেকে মাস্টারমশাইয়ের হাত থেকে বেত কেড়ে নেওয়া হয়েছে সেদিন থেকেই সমাজ অধঃপতনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে’’। বিষয়টি বিতর্কিত যেহেতু এবং সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই এমন হয়েছে তাই বিশদে এ নিয়ে না গিয়েও বলা যায় যে শুধু মাস্টারমশাইয়ের বেত নয় স্কুলের বা গৃহাভ্যন্তরে লালিত শিশুদের নীতিশিক্ষামূলক গল্পের মাধ্যমে আগের সেই জ্ঞানবর্...

সিংলা থেকে মহাবাহু

সিংলা দেখেছি আমি , একদিন বিমূঢ় বিস্ময়ে অন্তরে ধুকপুক প্রথম প্রেমের , এই কি নদী ? ঝাড়পথে কুলু কুলু , এত জল , এ স্রোতধারা কোথা হতে কোথা যায় আমি বাকহারা ।   এরপর একদিন ধলেশ্বরী তীরে তীরে হেঁটেছি আনমনে ছুটন্ত বলাকার সাথে জুড়িয়েছি চোখ , দৃষ্টি নিবদ্ধ দূর পারে যেমন চলেছি সযতনে , মায়ের হাতটি ধরে ।   বরাক দেখেছি আমি উদ্ভাসিত স্ফীতচোখে মাঝনদী ভরাজল মাঝিদের বইঠা ও নাও ভেঙে চুরে গেছে সব বেহিসেবি কল্পনা ফানুস এপারে একা আমি , ওপারে পিঁপড়ে মানুষ ।   সেই আমি একদিন পড়েছি বহুধারা প্রেমে কুশিয়ারা , মনু থেকে রাঙানদী , দিহিং - এর পাড়ে কত কথা মহানদী , যমুনা ও বিপাশার সাথে গঙ্গা , পদ্মা হয়ে কপিলী ও ধনশিরি পথে ।   সিংলা পাড়ের ছেলে ’ থিতু হতে একদিন শেষমেশ    এ কোন দোসর এল যাপন বেলার শেষে ভালোবেসে একটুকু দিয়েছে ঠাঁই , বাড়ায়ে দু ’ বাহু কল্পনা অগোচরে থাকা মগ্ন মৌন মহাবাহু ।

আলোকের দায়

সজ্জিত তরী এক , এইবই আর কিছু নয় হৃদয় আকাশ জুড়ে একা এক পূর্ণিমা চাঁদ । আলোকের দায় নিয়ে উদ্ ‌ ভাসিত নিসর্গ তরীখানি ভরা দেখি সোনার ফসল ভারে। দ্বিতীয় ফসলের মাদক আঘ্রাণে , ধূসর অঘ্রানে নিঃশেষিত প্রথম ফসল স্মৃতি , আর অভাবিত আগামীর দুরন্ত অধিকারে ফিরে দেখা শুধু বিমূর্ত যৌবন - কোলাজ ।   সেই কবে কে বা কারা মূর্ত হয়েছিল মননে ধরেছিল হাতে হাত, গেয়েছিল জীবনকোরাস আমিও শামিল হয়ে ছুটিয়েছি হৃদয়-তুরগ দামাল দাবানল হয়ে পুড়িয়েছি কত মনোবন। এ মন হয়েছে চঞ্চল, যাপিত ক্ষণ অবচেতন একদিন কেটে গেছে ঘোর, ফসল সন্ধানে । শিরদাঁড়া সোজা হতে প্রজন্ম পেরিয়ে চলে যায় আস্ত জীবন, ভিটেমাটির দায় ঝলসানো গৃহকোণ হৃদয়ে গেঁথে রয় আজীবন সেই ছবি বিলীন হতে হতে আসে আহ্বান ওরে গৃহবাসী, ছাড় দোর ছাড় - দেখ চেয়ে তরীখানি বাঁধা ঘাটে - অপেক্ষমান চল তবে শুরু হোক অনন্ত ভাসান।

জবাবদিহি

এতদিন দূরে দূরে ছিল , নয়নে নয়নে অথবা কথা - কল্পনা , দুরন্ত সান্নিধ্যে তবু রাত দিনভর এতটাই কাছে … ছোঁয়া তার ছিল অহরহ উষ্ণ নিঃশ্বাসে । আজ নাতিদূরে বাড়ালেই হাত হাতের নাগালে মূর্ত মুরতি , অথচ … উবে গেছে যত চোখের নেশা , স্বপ্নময় সে ছিল … সে আছে … সে নেই … এ কোন মায়াবী ছলনা , এই কি জীবন ?   জীবন তো একটাই , একদিন যাবে হারিয়ে এই সুখতরঙ্গ , তবু এই ঝঞ্ঝাতাড়িত যাপন এ কেবল মনই জানে আর জানে মহাকাল জানত কি সে ? কিংবা নাতিদূরে - ওই বুক - ধুকপুক হৃদয় ? হয়তো বা , হয়তো না ; সে কথাটি হায় এ জীবনে জানা হল না । পথশেষে একটুকু ইশারা কিংবা অন্য কিছু এতটাই চাওয়া - আর কিছু নয় শেষ ঝাঁপ হতে পারে এটুকু অমৃতময় ।

বিড়ম্বিত জলশোক

তিষ্ঠ পথিকবর , তিষ্ঠ এ জল - জীবনে , দাঁড়াও ক্ষণকাল , যদি হও বীতশোক এ জীবন জলরং জীবনকথা নয় পায়ে পায়ে শুধু বিড়ম্বিত জলশোক ।   নিয়তি লিখেছে যার ঘোর কাঙালপনা বয়ে নিয়ে চলা শুধু ন্যুব্জ এ দেহভার আমাদের শিরদাঁড়া - যেন গলুইয়ের খাঁজ ঋজু সংগ্রামে তিন ঋতু ভিক্ষা , ধার ।   চালচুলো নেই , নেই শেকড়ের খোঁজ হারিয়ে গেছেন মা , ভেসে কোলের সন্তান আশা নেই , বাসা নেই , নেই ভালোবাসা আছে শুধু ইতিউতি ত্রাণের সন্ধান ।   এ জল করেছে আজ পথের ভিখারি অশ্রু নেই , মান নেই খুইয়েছি সবই যাপনে শুধুই দেখি জীবন সংগ্রাম আর দেখি বাবুদের - হাসিমুখ ত্রাণের ছবি ।

রাত দখল

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে ঘৃণাদহনে হোক সে সমান সমান কিন্তু .... অন্যায়কারীকে যে বাঁচায় উঠেপড়ে রক্ষণাবেক্ষণে শক্তি বুদ্ধি দিয়ে , তার দহন হোক হাজার গুণিতকে । বিচার চাই , বিচার হোক তাবৎ অত্যাচারীর বিচার হোক ভ্রষ্ট নষ্ট ধর্ষক - দরদির । নিপাত যাক সব অপরাধী ধর্ষক নিপাত যাক সব অপরাধী সমর্থক নিপাত যাক সব পাপীদের রক্ষক । চলো বেরোই রাত দখলে নির্মূল করি আঁধার রাতের বিভীষিকা দিনের আলোর মতোই রাত হোক ভীতিহীন এ সমাজ হোক অমলিন । থাকবে না কোনো স্বঘোষিত দাদা দিদি থাকবে না কোনো ভাইপো ভাইঝিবাদ , উপড়ে ফেলতে হবে গোটা সিঁড়ি এ সিঁড়ির ধাপে ধাপে দুর্নীতি । চলো এক হই , হাতে হাত ধরে ধরে পায়ে পায়ে হাঁটি পথ বিশ্ব জেগেছে আজ , ভেঙেছে ধৈর্য - বাঁধ নিশান উড়িয়ে ছুটুক বিজয় রথ ।

বিষাদ গাথা

এ কোন শরৎ - ব্যথায় গাঁথা ? আস্ত একটি বিষাদ গাথা । পশ্চিমে আজ ধ্বস্ত দুয়ার বারুদ গন্ধে বার্তা আসে ভুলুণ্ঠিত মানবতার । শিউলি গন্ধ আর আসে না ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে , মন - মগজে মা আসবেন নতুন সাজে ?   এ কোন নদী যার চরে আজ কাশের ফুলের বড্ড অভাব বইছে নদী বইছে যদি চোখ কেন আজ হয় না মদির ? মা যদি আজ ধরাধামে পাই না কেন এদিক ওদিক ভোরের বেলার স্নিগ্ধ শিশির ?   এমন শরৎ আর আসেনি মায়ের জাতের এ হয়রানি লজ্জানত পুরুষ জাতি তুলছে মাথা অসুর জানি । এবার মা গো ফুল দেব না রক্ত দেব রাগ করো না তোমার চোখের ঝরুক ছানি ।

ঘুমোও দেশ

ঘুমোও দুপুর , ঘুমোও রাত্র ঘুমোও তোমরা অহোরাত্র । ঘুমোও বাংলা , ঘুমোও দেশ আমি তো ভাই এই আছি বেশ । পড়ুক দেবীর মুণ্ড খসে মরুক স্বজন বাংলা - দেশে আমার তাতে কী যায় আসে এই আছি বেশ রঙ্গ রসে ।   ভোটের দিনেও ঘুমোও জবর রাখবে কেন দেশের খবর ? চলুক ঘরে এসি , টিভি চর্ব্য চোষ্যে আমেজ মাখি । ভোটের লাইনে যাব নাকি ? এই গরমে পোষায় বুঝি ? এই তো বৃষ্টি নামল পথে কী করে যাই ভোটের বুথে ?   ঘুমোও তোমরা ঘুমোও সই মারুক নাহয় নেপোয় দই । আমার তাতে কী যায় আসে ? মাইনে তো ঠিক পাবই মাসে । গোল্লায় যাক ধর্ম , দেশ আমার কী আর , এই আছি বেশ ।

শিউলিগন্ধা

তার শিউলিগন্ধা শীতল পরশ জুড়ে লেখা ছিল এক প্রত্যাখ্যানের প্রস্তরলিপি অথচ সে নিজেরই হাতে লিখে রেখেছিল ঝরনাধারায় নিজেরই ভাগ্যলিপি , কুয়াশার গায়ে ।   কতটা আয়ুষ্কাল নিয়ে কুয়াশার জন্ম হয় ? লিপি তাই অচিরে ফুরিয়ে যায় পথ বদলায় ভাগ্যলিপি , রং বদলায় প্রেম ।   শিউলি এখনো ফোটেনি বিলাসী বাগানে বনানী বিজনে গন্ধবিভোর ভ্রমর আসে যায় । কেউ আকাশনীলে বহুদূর উড়ে যায় গন্ধবিহীন কুয়াশারই মতো কেউ সন্ধে হলেই রোজ , তাহাদের নামে শিউলি তলে তারাদের দেখে , আকাশপ্রদীপ জ্বালে ।

নীলনয়নার কথা

এ কী বিভঙ্গে এসে দাঁড়ালে সমুখে বলো ? সবুজ-নীল আগ্রাসনে বান আসে নদী বুকে এ আর কী গোপন কথা ? গোপন ছিল যা সব -তুমি কি জানো না সমঝে দিয়েছি তোমারই সানুনয় আবদারে ? যে নদী গোপনে গোপনে আরণ্যক হতে চেয়েছিল শিখিয়েছ তাকে তুমি নিগূঢ় জীবন কথা। সেই থেকে তুমি অরণ্য হয়েছ - সব জানি। আমি জানি , আকাশনীলে মাধুর্য ছড়িয়ে সবুজে আত্মহনন কথা। হারিয়ে যাবার পথে তবে কেন ফের নীলাম্বর তলে কাঁচা রোদে ঢেলে দাও সবুজ অরণ্য ঘিরে তোমার আঁচল ? কত আর তাকাব বলো পিছন ফিরে আর কত বিষাদবিন্দু রাখি ধরে এ ক্ষুদ্র হৃদয়ে ? অরণ্যসখা বলে একদিন জেনেছি নিজেকে সে অধিকার কতটুকু দিয়েছিলে তুমি সবই জানো , একদিন ফিরায়েছ সকরুণে। কেন তবে ফের চোখে রাখো চোখ ? আমি সাগরে বিলীন হতে হতে সবুজের ছোঁয়া নিয়ে, নীলিমায় রেখে যেতে চাই সপাট সবুজ কথা - নীলনয়নার কথা। এসো তবে একবার , শেষবার মেতে উঠি অরণ্য অভিসারে , প্রখর প্রহরে।

শ্রাবণ-গহন কথা

( ১) আমার শ্রাবণ-কথা রোজ কেউ শোনে চুপিসারে। সে চোখে শ্রাবণ ঝরে ? রোজ রাতে পালা করে বন্ধ জানালা ভেঙে আমাকে একশা করে যে শ্রাবণ আমার বন্ধকি জীবন তারই কাছে রেখেছি গচ্ছিত। ( ২) হৃদয় দরোজা ভেঙে হড়পা বানের মতো যে শ্রাবণগন্ধে আমি হই মাতোয়ারা পদ্মনাভিতে করি রোজ তারই আবাহন , তারই স্তব স্তুতি সেই তো মেঘডম্বরু , একেলা একা শ্রাবণঘন আমার পাগলপারা। ( ৩) শ্রাবণ আমাকে যতটা করেছে নিঃস্ব দিয়েছে ফিরিয়ে তার কিছুটা বেশি চোখে তার ভরা শ্রাবণের উতল নদী চোখে হারাই তারে নিরবধি , কেন যে একদিন শুধু ভিজেছি অকারণে নদী ধারে - শ্রাবণ সুখে কুড়িয়েছি মায়াবী সঙ্গসুধা , আঁজলা ভরে। ( ৪) মধ্য শ্রাবণ দিনে বৃষ্টিকথায় উঠেছিল ধোঁয়া ওঠা পিরিচ পেয়ালায় চুমুক চুম্বনে ঘোর মায়ার তুফান সে তুফান একেবারেই কি গিয়াছে থামি ? সেই থেকে স্বপ্নবিহীন যাযাবর আমি। আজ মোহ নেই আর শ্রাবণ ধারাপাতে ভিজে মরি শুধু একেলা রাতে। ( ৫) শ্রাবণ আমাকে ভিজিয়েছে বার বার হর্ষ বিষাদে করেছে তোলপাড় শ্রাবণ আবহে সঘনে মায়া ও মোহে এসেছিল কেউ মেঘমল্লার হয়ে সে গিয়াছে চলি কাঁটার পথেও কুসুম বিছিয়ে বিছিয়ে , মোহকণ্টকে আমি আছি ঠায় দাঁড়িয়ে। ( ৬) অবশেষে কো...

আলো-আঁধারি

এ কুটিরে আজ আলোর বন্যা হড়পা হাসিতে ভেসে যায় যত আঁধার-কথা। আলো-আঁধারির যাপন আস্ত এ জীবন এ জীবন.... কুড়িয়ে আনা কুটোর সমাহার আলো কিংবা আঁধার লেখা খড়কুটো সমাচার। কত দিন ধরে রোদ আসে না এ কুটির প্রাঙ্গণে ছায়াবৃত্তে হাঁসফাঁস করে যাপন কথা যে যার বৃত্তে স্বপ্ন আঁকে শ্রীহরির অনন্ত শয়ান এর পর পার্শ্ব পরিবর্তন , হবে কি উত্থান ? আজ ' মধুবাতা ঋতায়তে। মধু ক্ষরন্তি সিন্ধব ' । আজ খুলেছে বাতায়ন , জেগেছে মধু বাত্যা শ্রীহরির উত্থানে আজ রোদ হেসেছে উঠোন জুড়ে ঘরে ঘরে আজ আলো শুধু আলো । সমস্ত আলোকধারার মাঝে শুধু দেখি এক মুখ বীজমন্ত্রে বপন করেছি যে বীজ দিনের পর দিন নিজেরই আদলে গড়েছি যে মুখ আলোর বন্যা ছড়িয়ে আজ তার মঙ্গলাচরণ। এ পৃথিৱীক বুকে একাকী হেঁটে যাওয়ার অধিকার দিয়ে গেল - বাস্তুচ্যুত অন্ধকার।

আগুনপাখি

উড়তে শিখেছে মানুষ , হারাতে শিখেছে সম্ভ্রম ডানার পালক জুড়ে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হানা দেয় অন্তরে , অন্দরমহলে নীল বিষ ছড়িয়ে দেয় রন্ধ্রে রন্ধ্রে ।   জেনেশুনে বিষ করে পান , ওরা এগিয়ে যায় কিংবা পিছিয়ে … সহমরণের চিতায় , অবুঝ হুজুগে , স্বেচ্ছায় । কেউ ডেকে বলে জোর - যেও না , ওদিকে মৃত্যু আছে পথ চেয়ে … তবু এগোয় মানুষ , তছনছ করে দেয় সাবধানবাণী , বলে সব মিথ্যে । মিথ্যে পরম্পরা , মিথ্যে সব হার মানা বারণকথা আমরা স্বাধীন , আমরা সব পারি কী আছে যা আমরা নারি ?   আগুনপাখি নিজেই মরে বাঁচে মিছে প্রলোভনে ঝাঁপ দিয়ে মরে কোমল অঙ্গ সঁপে দেয় , আগুনেরই কাছে ।

নদীপারের বৃত্তান্ত

একটি নদীর একটি ছিল ওপার কতটা সুখের ছিল সেই পার , যাঁরা জানতেন তাঁদের কেউ আর বেঁচে নেই আজ । আমাদের এপারেই সৃষ্টি , স্থিতি , লয় ওপারের বৃত্তান্ত - সে আমাদের কথা নয় । আমাদের এপারের বৃত্তান্তে বৃত্ত আছে বহু অন্ত নেইকো আপাতত । আদি আছে এক বিচিত্র , আর আছে বৃত্তে বৃত্তে ছায়াবৃত্তে অফুরান কথাবৃত্ত । বৃষ্টিভেজা শৈশবের প্রথম কদম ফুল থেকে পায়ে পায়ে চলে আসা ইমারত জীবনগাথা সেও এক দুঃখসুখের পারাপার কথামালা ।   এ আমার স্বদেশ , আমার আপন যাপন ভূমি এ ভূমি বাংলার মাটি নয় , ভারত আমার দেশ যে দেশে রোজ সকালে সূর্য ওঠে ঈশান কোণে আমরা সেই ঈশানের পুত্র ভেঙেছি আমরা কালির আঁচড় , যত ভুয়ো মানচিত্র এপার ওপার মিথ্যা বিবাদ , ভুল ভূগোলের সূত্র ।

নয়নপুরের পথে

চলো বসি কোথাও যে পথ গিয়েছে চলে নয়নপুরের দিকে তারই পাশে চৌপেয়ে চায়ের টেবিল ঘিরে কাচের জানালা ধারে খানিক যাপনে । ভাষা হোক নীরবতা , যত কথা সব হোক চোখে চোখে - আবারও সেদিনেরই মতো ঘোর লাগা বর্ষা দিনে । জানালা ছিল না সেদিন , অবারিত চারিপাশ ভিজেছি ছাতাহীন বৃষ্টি ধারায় আশায় , নিরাশায় - যে ছবি আজও পলে পলে বুক জুড়ে কাঁপন ধরায় । এসো বসি নিভৃতে ফের একবার বসাবো চায়ের কাপে চুমুক মায়ার কোনো কথা নয় , হবে শুধু ফের একবার চকিতে চকিতে এধার ওধার চোখে চোখ পড়ে যাওয়া , মায়াবী নয়নঠার । নয়নপুরের পথে জানালায় ফের চলো বসি , বাতিঘর নয়নে নয়নে হোক অমলিন ভালোবাসাবাসি ছলকে উঠুক ফের - ধরা পড়া লাজুক হাসি নয়নে নয়নে হোক অমলিন ভালোবাসাবাসি ছলকে উঠুক ফের - ধরা পড়া লাজুক হাসি ।  

খোলা বাতায়ন

( ১ ) কী যেন আড়াল করে রাখি আজীবন বুজে রাখি দু ’ চোখের পাতা একদিন ছাই হবে সত্তা , ফুসমন্তর হবে সব কথা ।   তাসের ঘরে বসে আর যাই হোক যাপন কথা তো রাখা যায় না লিখে । জীবন মানেই কালের বিস্মরণ এ অমোঘ সত্য - জানে বা ক ’ জন ?   ( ২ ) কিছু মুখ ফিরে ফিরে আসে বার বার অন্তর - নয়নে ভাসে ছবি আপাদমস্তক পারি না ফেরাতে তারে কিছুতে কিছু সরল পাটিগণিত পারি না মেলাতে ।   এমনই ব্যর্থ যাপন , রুদ্ধ বাতায়ন এ মনই হল শেষে কাল মন বাতায়ন কে আর পেরেছে খুলে দিতে জানতে কিংবা অজানিতে ?   ( ৩ ) যে কথা যে মুখ রোজ আসে মনজানালায় হয়তো সে কিছু নয়, কিছুই নয় অথচ অযথা কম্পিত তনু মন এই তো কিমাশ্চর্যম্‌, রহস্য যাপন।   নিথর থর জুড়ে দেখেছি যে বালুকা চোখে হারাই তারে সাগর সৈকতে গরাদে হাত রেখে ক্ষণিকের কত স্ন্যাপশট দাঁড়ায় চকিতে এসে, বাজে ছায়ানট।   (৪) নিজেকে দেখে দেখেই যায় আধেক জীবন ‘তুমি’ যে কী, সে আমি কী বা জানি ? শেষের বেলায় শেষে দরোজায় মৃদু করাঘাত হা-হুতাশ আর শুধু হত, গত মিঠে মধুরাত।   পাহাড়িয়া পথ ধরে যত আসা যাওয়া মন্দমধুর যত ইতিউতি পাথুরে যাপন সব ছবি জমে থাকে পথের ধুলায় চোখে এসে বিঁধে শেষে ...