Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2024

সিংলা থেকে মহাবাহু

সিংলা দেখেছি আমি , একদিন বিমূঢ় বিস্ময়ে অন্তরে ধুকপুক প্রথম প্রেমের , এই কি নদী ? ঝাড়পথে কুলু কুলু , এত জল , এ স্রোতধারা কোথা হতে কোথা যায় আমি বাকহারা ।   এরপর একদিন ধলেশ্বরী তীরে তীরে হেঁটেছি আনমনে ছুটন্ত বলাকার সাথে জুড়িয়েছি চোখ , দৃষ্টি নিবদ্ধ দূর পারে যেমন চলেছি সযতনে , মায়ের হাতটি ধরে ।   বরাক দেখেছি আমি উদ্ভাসিত স্ফীতচোখে মাঝনদী ভরাজল মাঝিদের বইঠা ও নাও ভেঙে চুরে গেছে সব বেহিসেবি কল্পনা ফানুস এপারে একা আমি , ওপারে পিঁপড়ে মানুষ ।   সেই আমি একদিন পড়েছি বহুধারা প্রেমে কুশিয়ারা , মনু থেকে রাঙানদী , দিহিং - এর পাড়ে কত কথা মহানদী , যমুনা ও বিপাশার সাথে গঙ্গা , পদ্মা হয়ে কপিলী ও ধনশিরি পথে ।   সিংলা পাড়ের ছেলে ’ থিতু হতে একদিন শেষমেশ    এ কোন দোসর এল যাপন বেলার শেষে ভালোবেসে একটুকু দিয়েছে ঠাঁই , বাড়ায়ে দু ’ বাহু কল্পনা অগোচরে থাকা মগ্ন মৌন মহাবাহু ।

আলোকের দায়

সজ্জিত তরী এক , এইবই আর কিছু নয় হৃদয় আকাশ জুড়ে একা এক পূর্ণিমা চাঁদ । আলোকের দায় নিয়ে উদ্ ‌ ভাসিত নিসর্গ তরীখানি ভরা দেখি সোনার ফসল ভারে। দ্বিতীয় ফসলের মাদক আঘ্রাণে , ধূসর অঘ্রানে নিঃশেষিত প্রথম ফসল স্মৃতি , আর অভাবিত আগামীর দুরন্ত অধিকারে ফিরে দেখা শুধু বিমূর্ত যৌবন - কোলাজ ।   সেই কবে কে বা কারা মূর্ত হয়েছিল মননে ধরেছিল হাতে হাত, গেয়েছিল জীবনকোরাস আমিও শামিল হয়ে ছুটিয়েছি হৃদয়-তুরগ দামাল দাবানল হয়ে পুড়িয়েছি কত মনোবন। এ মন হয়েছে চঞ্চল, যাপিত ক্ষণ অবচেতন একদিন কেটে গেছে ঘোর, ফসল সন্ধানে । শিরদাঁড়া সোজা হতে প্রজন্ম পেরিয়ে চলে যায় আস্ত জীবন, ভিটেমাটির দায় ঝলসানো গৃহকোণ হৃদয়ে গেঁথে রয় আজীবন সেই ছবি বিলীন হতে হতে আসে আহ্বান ওরে গৃহবাসী, ছাড় দোর ছাড় - দেখ চেয়ে তরীখানি বাঁধা ঘাটে - অপেক্ষমান চল তবে শুরু হোক অনন্ত ভাসান।

জবাবদিহি

এতদিন দূরে দূরে ছিল , নয়নে নয়নে অথবা কথা - কল্পনা , দুরন্ত সান্নিধ্যে তবু রাত দিনভর এতটাই কাছে … ছোঁয়া তার ছিল অহরহ উষ্ণ নিঃশ্বাসে । আজ নাতিদূরে বাড়ালেই হাত হাতের নাগালে মূর্ত মুরতি , অথচ … উবে গেছে যত চোখের নেশা , স্বপ্নময় সে ছিল … সে আছে … সে নেই … এ কোন মায়াবী ছলনা , এই কি জীবন ?   জীবন তো একটাই , একদিন যাবে হারিয়ে এই সুখতরঙ্গ , তবু এই ঝঞ্ঝাতাড়িত যাপন এ কেবল মনই জানে আর জানে মহাকাল জানত কি সে ? কিংবা নাতিদূরে - ওই বুক - ধুকপুক হৃদয় ? হয়তো বা , হয়তো না ; সে কথাটি হায় এ জীবনে জানা হল না । পথশেষে একটুকু ইশারা কিংবা অন্য কিছু এতটাই চাওয়া - আর কিছু নয় শেষ ঝাঁপ হতে পারে এটুকু অমৃতময় ।

বিড়ম্বিত জলশোক

তিষ্ঠ পথিকবর , তিষ্ঠ এ জল - জীবনে , দাঁড়াও ক্ষণকাল , যদি হও বীতশোক এ জীবন জলরং জীবনকথা নয় পায়ে পায়ে শুধু বিড়ম্বিত জলশোক ।   নিয়তি লিখেছে যার ঘোর কাঙালপনা বয়ে নিয়ে চলা শুধু ন্যুব্জ এ দেহভার আমাদের শিরদাঁড়া - যেন গলুইয়ের খাঁজ ঋজু সংগ্রামে তিন ঋতু ভিক্ষা , ধার ।   চালচুলো নেই , নেই শেকড়ের খোঁজ হারিয়ে গেছেন মা , ভেসে কোলের সন্তান আশা নেই , বাসা নেই , নেই ভালোবাসা আছে শুধু ইতিউতি ত্রাণের সন্ধান ।   এ জল করেছে আজ পথের ভিখারি অশ্রু নেই , মান নেই খুইয়েছি সবই যাপনে শুধুই দেখি জীবন সংগ্রাম আর দেখি বাবুদের - হাসিমুখ ত্রাণের ছবি ।

রাত দখল

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে ঘৃণাদহনে হোক সে সমান সমান কিন্তু .... অন্যায়কারীকে যে বাঁচায় উঠেপড়ে রক্ষণাবেক্ষণে শক্তি বুদ্ধি দিয়ে , তার দহন হোক হাজার গুণিতকে । বিচার চাই , বিচার হোক তাবৎ অত্যাচারীর বিচার হোক ভ্রষ্ট নষ্ট ধর্ষক - দরদির । নিপাত যাক সব অপরাধী ধর্ষক নিপাত যাক সব অপরাধী সমর্থক নিপাত যাক সব পাপীদের রক্ষক । চলো বেরোই রাত দখলে নির্মূল করি আঁধার রাতের বিভীষিকা দিনের আলোর মতোই রাত হোক ভীতিহীন এ সমাজ হোক অমলিন । থাকবে না কোনো স্বঘোষিত দাদা দিদি থাকবে না কোনো ভাইপো ভাইঝিবাদ , উপড়ে ফেলতে হবে গোটা সিঁড়ি এ সিঁড়ির ধাপে ধাপে দুর্নীতি । চলো এক হই , হাতে হাত ধরে ধরে পায়ে পায়ে হাঁটি পথ বিশ্ব জেগেছে আজ , ভেঙেছে ধৈর্য - বাঁধ নিশান উড়িয়ে ছুটুক বিজয় রথ ।

বিষাদ গাথা

এ কোন শরৎ - ব্যথায় গাঁথা ? আস্ত একটি বিষাদ গাথা । পশ্চিমে আজ ধ্বস্ত দুয়ার বারুদ গন্ধে বার্তা আসে ভুলুণ্ঠিত মানবতার । শিউলি গন্ধ আর আসে না ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে , মন - মগজে মা আসবেন নতুন সাজে ?   এ কোন নদী যার চরে আজ কাশের ফুলের বড্ড অভাব বইছে নদী বইছে যদি চোখ কেন আজ হয় না মদির ? মা যদি আজ ধরাধামে পাই না কেন এদিক ওদিক ভোরের বেলার স্নিগ্ধ শিশির ?   এমন শরৎ আর আসেনি মায়ের জাতের এ হয়রানি লজ্জানত পুরুষ জাতি তুলছে মাথা অসুর জানি । এবার মা গো ফুল দেব না রক্ত দেব রাগ করো না তোমার চোখের ঝরুক ছানি ।

ঘুমোও দেশ

ঘুমোও দুপুর , ঘুমোও রাত্র ঘুমোও তোমরা অহোরাত্র । ঘুমোও বাংলা , ঘুমোও দেশ আমি তো ভাই এই আছি বেশ । পড়ুক দেবীর মুণ্ড খসে মরুক স্বজন বাংলা - দেশে আমার তাতে কী যায় আসে এই আছি বেশ রঙ্গ রসে ।   ভোটের দিনেও ঘুমোও জবর রাখবে কেন দেশের খবর ? চলুক ঘরে এসি , টিভি চর্ব্য চোষ্যে আমেজ মাখি । ভোটের লাইনে যাব নাকি ? এই গরমে পোষায় বুঝি ? এই তো বৃষ্টি নামল পথে কী করে যাই ভোটের বুথে ?   ঘুমোও তোমরা ঘুমোও সই মারুক নাহয় নেপোয় দই । আমার তাতে কী যায় আসে ? মাইনে তো ঠিক পাবই মাসে । গোল্লায় যাক ধর্ম , দেশ আমার কী আর , এই আছি বেশ ।

শিউলিগন্ধা

তার শিউলিগন্ধা শীতল পরশ জুড়ে লেখা ছিল এক প্রত্যাখ্যানের প্রস্তরলিপি অথচ সে নিজেরই হাতে লিখে রেখেছিল ঝরনাধারায় নিজেরই ভাগ্যলিপি , কুয়াশার গায়ে ।   কতটা আয়ুষ্কাল নিয়ে কুয়াশার জন্ম হয় ? লিপি তাই অচিরে ফুরিয়ে যায় পথ বদলায় ভাগ্যলিপি , রং বদলায় প্রেম ।   শিউলি এখনো ফোটেনি বিলাসী বাগানে বনানী বিজনে গন্ধবিভোর ভ্রমর আসে যায় । কেউ আকাশনীলে বহুদূর উড়ে যায় গন্ধবিহীন কুয়াশারই মতো কেউ সন্ধে হলেই রোজ , তাহাদের নামে শিউলি তলে তারাদের দেখে , আকাশপ্রদীপ জ্বালে ।

নীলনয়নার কথা

এ কী বিভঙ্গে এসে দাঁড়ালে সমুখে বলো ? সবুজ-নীল আগ্রাসনে বান আসে নদী বুকে এ আর কী গোপন কথা ? গোপন ছিল যা সব -তুমি কি জানো না সমঝে দিয়েছি তোমারই সানুনয় আবদারে ? যে নদী গোপনে গোপনে আরণ্যক হতে চেয়েছিল শিখিয়েছ তাকে তুমি নিগূঢ় জীবন কথা। সেই থেকে তুমি অরণ্য হয়েছ - সব জানি। আমি জানি , আকাশনীলে মাধুর্য ছড়িয়ে সবুজে আত্মহনন কথা। হারিয়ে যাবার পথে তবে কেন ফের নীলাম্বর তলে কাঁচা রোদে ঢেলে দাও সবুজ অরণ্য ঘিরে তোমার আঁচল ? কত আর তাকাব বলো পিছন ফিরে আর কত বিষাদবিন্দু রাখি ধরে এ ক্ষুদ্র হৃদয়ে ? অরণ্যসখা বলে একদিন জেনেছি নিজেকে সে অধিকার কতটুকু দিয়েছিলে তুমি সবই জানো , একদিন ফিরায়েছ সকরুণে। কেন তবে ফের চোখে রাখো চোখ ? আমি সাগরে বিলীন হতে হতে সবুজের ছোঁয়া নিয়ে, নীলিমায় রেখে যেতে চাই সপাট সবুজ কথা - নীলনয়নার কথা। এসো তবে একবার , শেষবার মেতে উঠি অরণ্য অভিসারে , প্রখর প্রহরে।

শ্রাবণ-গহন কথা

( ১) আমার শ্রাবণ-কথা রোজ কেউ শোনে চুপিসারে। সে চোখে শ্রাবণ ঝরে ? রোজ রাতে পালা করে বন্ধ জানালা ভেঙে আমাকে একশা করে যে শ্রাবণ আমার বন্ধকি জীবন তারই কাছে রেখেছি গচ্ছিত। ( ২) হৃদয় দরোজা ভেঙে হড়পা বানের মতো যে শ্রাবণগন্ধে আমি হই মাতোয়ারা পদ্মনাভিতে করি রোজ তারই আবাহন , তারই স্তব স্তুতি সেই তো মেঘডম্বরু , একেলা একা শ্রাবণঘন আমার পাগলপারা। ( ৩) শ্রাবণ আমাকে যতটা করেছে নিঃস্ব দিয়েছে ফিরিয়ে তার কিছুটা বেশি চোখে তার ভরা শ্রাবণের উতল নদী চোখে হারাই তারে নিরবধি , কেন যে একদিন শুধু ভিজেছি অকারণে নদী ধারে - শ্রাবণ সুখে কুড়িয়েছি মায়াবী সঙ্গসুধা , আঁজলা ভরে। ( ৪) মধ্য শ্রাবণ দিনে বৃষ্টিকথায় উঠেছিল ধোঁয়া ওঠা পিরিচ পেয়ালায় চুমুক চুম্বনে ঘোর মায়ার তুফান সে তুফান একেবারেই কি গিয়াছে থামি ? সেই থেকে স্বপ্নবিহীন যাযাবর আমি। আজ মোহ নেই আর শ্রাবণ ধারাপাতে ভিজে মরি শুধু একেলা রাতে। ( ৫) শ্রাবণ আমাকে ভিজিয়েছে বার বার হর্ষ বিষাদে করেছে তোলপাড় শ্রাবণ আবহে সঘনে মায়া ও মোহে এসেছিল কেউ মেঘমল্লার হয়ে সে গিয়াছে চলি কাঁটার পথেও কুসুম বিছিয়ে বিছিয়ে , মোহকণ্টকে আমি আছি ঠায় দাঁড়িয়ে। ( ৬) অবশেষে কো

আলো-আঁধারি

এ কুটিরে আজ আলোর বন্যা হড়পা হাসিতে ভেসে যায় যত আঁধার-কথা। আলো-আঁধারির যাপন আস্ত এ জীবন এ জীবন.... কুড়িয়ে আনা কুটোর সমাহার আলো কিংবা আঁধার লেখা খড়কুটো সমাচার। কত দিন ধরে রোদ আসে না এ কুটির প্রাঙ্গণে ছায়াবৃত্তে হাঁসফাঁস করে যাপন কথা যে যার বৃত্তে স্বপ্ন আঁকে শ্রীহরির অনন্ত শয়ান এর পর পার্শ্ব পরিবর্তন , হবে কি উত্থান ? আজ ' মধুবাতা ঋতায়তে। মধু ক্ষরন্তি সিন্ধব ' । আজ খুলেছে বাতায়ন , জেগেছে মধু বাত্যা শ্রীহরির উত্থানে আজ রোদ হেসেছে উঠোন জুড়ে ঘরে ঘরে আজ আলো শুধু আলো । সমস্ত আলোকধারার মাঝে শুধু দেখি এক মুখ বীজমন্ত্রে বপন করেছি যে বীজ দিনের পর দিন নিজেরই আদলে গড়েছি যে মুখ আলোর বন্যা ছড়িয়ে আজ তার মঙ্গলাচরণ। এ পৃথিৱীক বুকে একাকী হেঁটে যাওয়ার অধিকার দিয়ে গেল - বাস্তুচ্যুত অন্ধকার।

আগুনপাখি

উড়তে শিখেছে মানুষ , হারাতে শিখেছে সম্ভ্রম ডানার পালক জুড়ে মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে হানা দেয় অন্তরে , অন্দরমহলে নীল বিষ ছড়িয়ে দেয় রন্ধ্রে রন্ধ্রে ।   জেনেশুনে বিষ করে পান , ওরা এগিয়ে যায় কিংবা পিছিয়ে … সহমরণের চিতায় , অবুঝ হুজুগে , স্বেচ্ছায় । কেউ ডেকে বলে জোর - যেও না , ওদিকে মৃত্যু আছে পথ চেয়ে … তবু এগোয় মানুষ , তছনছ করে দেয় সাবধানবাণী , বলে সব মিথ্যে । মিথ্যে পরম্পরা , মিথ্যে সব হার মানা বারণকথা আমরা স্বাধীন , আমরা সব পারি কী আছে যা আমরা নারি ?   আগুনপাখি নিজেই মরে বাঁচে মিছে প্রলোভনে ঝাঁপ দিয়ে মরে কোমল অঙ্গ সঁপে দেয় , আগুনেরই কাছে ।

নদীপারের বৃত্তান্ত

একটি নদীর একটি ছিল ওপার কতটা সুখের ছিল সেই পার , যাঁরা জানতেন তাঁদের কেউ আর বেঁচে নেই আজ । আমাদের এপারেই সৃষ্টি , স্থিতি , লয় ওপারের বৃত্তান্ত - সে আমাদের কথা নয় । আমাদের এপারের বৃত্তান্তে বৃত্ত আছে বহু অন্ত নেইকো আপাতত । আদি আছে এক বিচিত্র , আর আছে বৃত্তে বৃত্তে ছায়াবৃত্তে অফুরান কথাবৃত্ত । বৃষ্টিভেজা শৈশবের প্রথম কদম ফুল থেকে পায়ে পায়ে চলে আসা ইমারত জীবনগাথা সেও এক দুঃখসুখের পারাপার কথামালা ।   এ আমার স্বদেশ , আমার আপন যাপন ভূমি এ ভূমি বাংলার মাটি নয় , ভারত আমার দেশ যে দেশে রোজ সকালে সূর্য ওঠে ঈশান কোণে আমরা সেই ঈশানের পুত্র ভেঙেছি আমরা কালির আঁচড় , যত ভুয়ো মানচিত্র এপার ওপার মিথ্যা বিবাদ , ভুল ভূগোলের সূত্র ।

নয়নপুরের পথে

চলো বসি কোথাও যে পথ গিয়েছে চলে নয়নপুরের দিকে তারই পাশে চৌপেয়ে চায়ের টেবিল ঘিরে কাচের জানালা ধারে খানিক যাপনে । ভাষা হোক নীরবতা , যত কথা সব হোক চোখে চোখে - আবারও সেদিনেরই মতো ঘোর লাগা বর্ষা দিনে । জানালা ছিল না সেদিন , অবারিত চারিপাশ ভিজেছি ছাতাহীন বৃষ্টি ধারায় আশায় , নিরাশায় - যে ছবি আজও পলে পলে বুক জুড়ে কাঁপন ধরায় । এসো বসি নিভৃতে ফের একবার বসাবো চায়ের কাপে চুমুক মায়ার কোনো কথা নয় , হবে শুধু ফের একবার চকিতে চকিতে এধার ওধার চোখে চোখ পড়ে যাওয়া , মায়াবী নয়নঠার । নয়নপুরের পথে জানালায় ফের চলো বসি , বাতিঘর নয়নে নয়নে হোক অমলিন ভালোবাসাবাসি ছলকে উঠুক ফের - ধরা পড়া লাজুক হাসি নয়নে নয়নে হোক অমলিন ভালোবাসাবাসি ছলকে উঠুক ফের - ধরা পড়া লাজুক হাসি ।  

খোলা বাতায়ন

( ১ ) কী যেন আড়াল করে রাখি আজীবন বুজে রাখি দু ’ চোখের পাতা একদিন ছাই হবে সত্তা , ফুসমন্তর হবে সব কথা ।   তাসের ঘরে বসে আর যাই হোক যাপন কথা তো রাখা যায় না লিখে । জীবন মানেই কালের বিস্মরণ এ অমোঘ সত্য - জানে বা ক ’ জন ?   ( ২ ) কিছু মুখ ফিরে ফিরে আসে বার বার অন্তর - নয়নে ভাসে ছবি আপাদমস্তক পারি না ফেরাতে তারে কিছুতে কিছু সরল পাটিগণিত পারি না মেলাতে ।   এমনই ব্যর্থ যাপন , রুদ্ধ বাতায়ন এ মনই হল শেষে কাল মন বাতায়ন কে আর পেরেছে খুলে দিতে জানতে কিংবা অজানিতে ?   ( ৩ ) যে কথা যে মুখ রোজ আসে মনজানালায় হয়তো সে কিছু নয়, কিছুই নয় অথচ অযথা কম্পিত তনু মন এই তো কিমাশ্চর্যম্‌, রহস্য যাপন।   নিথর থর জুড়ে দেখেছি যে বালুকা চোখে হারাই তারে সাগর সৈকতে গরাদে হাত রেখে ক্ষণিকের কত স্ন্যাপশট দাঁড়ায় চকিতে এসে, বাজে ছায়ানট।   (৪) নিজেকে দেখে দেখেই যায় আধেক জীবন ‘তুমি’ যে কী, সে আমি কী বা জানি ? শেষের বেলায় শেষে দরোজায় মৃদু করাঘাত হা-হুতাশ আর শুধু হত, গত মিঠে মধুরাত।   পাহাড়িয়া পথ ধরে যত আসা যাওয়া মন্দমধুর যত ইতিউতি পাথুরে যাপন সব ছবি জমে থাকে পথের ধুলায় চোখে এসে বিঁধে শেষে জ্বালায়, পোড়ায়।   (৫) বসন্ত শেষেই

মেঘমল্লার

মাঝে মাঝেই দুচোখে জেগে ওঠে মেঘমল্লার গভীর রাতে বর্ষা আসে ঝমঝমিয়ে। পাষাণীর কাজল চোখে আজীবন বর্ষাঋতু ভালোবাসাহীন আদিখ্যেতাহীন...... এক একটি সাদাকালো বর্ষাযাপন আর রাত গভীর হলেই হৃদয়ে জমাট বাঁধে ঘন কালো মেঘের শামিয়ানা, জমা হয় ছলছল জলকথা, থইথই বর্ষাযাপন ব্যথা।   মেঘমেদুর এ বর্ষা যাপনে কেন শুধু বাজে মল্লার ? বৃষ্টিভেজা মধ্যদিনে ওঠে না কেন বিলাসখানি বাহার ? অতীত কথারা সব অলীক হয়ে যায় একদিন বিন্দু বিন্দু বৃষ্টিবারি বয়ে চলে নিশিদিন জীবনধারারই মতো বহমান সাগরমেঘের পানে। মরুকথা সমাপনে গড়ে ওঠে জলছাপ ইতিহাস ভেঙে যায় সব যাপন ব্যথা, ভালোবাসাবিহীন।

দহন সন্ধ্যা

হাতের মুঠোয় ছিল আস্ত একটি সন্ধ্যা অথচ...... হারিয়ে যায়, হারিয়ে যায় অনেক কিছুই নীপমালায় খুঁজিনি কখনও ‘প্রথম কদম ফুল’ সে তো ছিল ‘অন্য কোথা, অন্য কোনখানে’। আমার এ পথ আমারই ছিল অনাবিল।   যে পথ ধরে হেঁটেছি অনাদি কাল কেউ রাখেনি সে পথে ছড়িয়ে কুসুম শিমূল পলাশে ফোটেমি তো কোনো ফুল   আবার এসেছে ফিরে রাশি রাশি সন্ধ্যাবেলা পথের শেষে সবাই আসে ফিরে হাতের মুঠোয় অতীত ফেরি করে আসেনি তো সেই মুঠোভরা সন্ধ্যা এসেছে যা তা নিছকই এক সান্ধ্যবেলার প্রহসন চায়ের কাপে তুফান আর আঁজলা ভরে কুড়িয়ে নেয়া গুচ্ছ গুচ্ছ দহন।

জল-রং কবিতা

মাঝে মাঝেই মেঘ না চাইতে জল । এ জল নয় , জল নয় - এক ভবিতব্য … সুখদিন বারতা । কিছু কথা ধরা আছে গভীর নদীর বুকে কিছু কথা বিস্মৃত ইতিহাসের পাতায় ।   সকাল হতেই দাঁতরাঙা পথ ধরে হেঁটে যায় যে ছায়ামানবী, রাতের মায়াবী নিয়ন আলোয় ভেসে ওঠে এক ভিন্নতর কায়া । এ ঘোর লাগা নিঝুম বেলায় সব ছায়া একাকার হয়ে মিশে যায় একখানে , আবারও তুলে দেয় হাতে হারানো পঙ্ ‌ ক্তি - হারানো স্মৃতির গাথা বলে - জীবন তো একটাই লিখে রাখো সব জল-রং কবিতা ।

কৃষ্ণচূড়া প্রজন্ম

পথে পথে আলপনা দেখে চলেছেন এক বৃদ্ধা ধরে হাতে তাঁর দশ বছরের বালিকা অপাপবিদ্ধা । পথের ধারে ডালপালা মেলে কৃষ্ণচূড়ার প্রজন্ম বংশানুক্রমে যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে অতন্দ্র ।   জ্যৈষ্ঠ এলেই পাতায় পাতায় কুসুম ছড়ায় লাল বৃদ্ধার চোখে শহিদের মুখ বিষাদে টালমাটাল । আসর বসেছে গান কবিতার গরজ বড় বালাই এই তাহলে শহিদ স্মরণ বৃদ্ধা ভাবেন তাই ।   বালিকা জানে বেনীআসহকলায় কমলার পরে লাল বৃদ্ধা দেখেন সেদিনের সেই কমলার গায়ে লাল । শহিদ হয়েছে কমলা সেদিন দশটি ভাইকে নিয়ে মুখের ভাষা লক্ষজনের দিয়েছে সেদিন বাঁচিয়ে ।   মন উচাটন বৃদ্ধা , মননে ভবিষ্যতের শঙ্কা পড়ে এসে গায় কৃষ্ণচূড়ার কুসুম আচমকা । কুড়িয়ে কুসুম উপহারসম , বৃদ্ধা বিস্ময়াবনত বালিকার হাতে মুঠো ভরে সঁপে এবার নিশ্চিত ।

উনিশ ছড়ায় কৃষ্ণচূড়া লাল

কৃষ্ণচূড়ার পাতায় পাতায় অক্ষর সোচ্চার আবার এসেছে অমর উনিশ , তপ্ত চরাচর , জ্যৈষ্ঠ শুরুর গনগনে আঁচ ছড়ায় নভোনীলে বারুদ গন্ধে বাতাস ভারী , বক্ষে বৈশ্বানর ।   এ গন্ধে জাগ্রত হয় প্রজন্ম জোড়া প্রত্যয় সেই প্রতীতি , ভাষার গরজ জমাট বাঁধে বুকে ,  হাপর তলে লুক্কায়িত তপ্ত বহ্নিশিখা দহন বেলায় ছলকে ওঠে পাথরচাপা শোকে ।   বরাক যেদিন ঠাঁই নিয়েছিল বিশ্বের মানচিত্রে দেখেছে বিশ্ব আগ্রাসনের নগ্ন স্বরূপ ছবি ,  ধরে হাতে হাত রাজপথ জুড়ে সংগ্রামী সত্তা রুদ্ধ প্রাণের স্পন্দন , আছে ইতিহাসে লেখা সবই ।   সেদিন থেকেই রুধির ধারা প্রবাহিত অবিরল এগারোটি প্রাণ শহিদের বেশে জাগ্রত চিরকাল , দশ ভাই আর কমলা বোনের উত্তরাধিকার সূত্র উনিশ ছড়ায় তটিনী বিটপে কৃষ্ণচূড়া লাল ।

উনিশের পদাবলি

উনিশ আমাদের গর্ব, দহন যাপন আজীবন   সেই দহনের সূত্র ধরেই আসেন চণ্ডীচরণ ।   উনিশের কথায় মনন জুড়ে ছলকে ওঠে লাল ব্যথায় হৃদয় উথলে ওঠে - নামটি কানাইলাল ।   ভাষার সূত্রে ছলচাতুরি, সতত স্বদেশ বিদেশ ভুলতে কি আর পারি তোমায়, ভাই দুরন্ত হিতেশ ?   মাতৃভাষা - সত্য ভাষা, আমাদের নিঃশঙ্ক সত্যেন্দ্র ভাষা-গরজের আরো দুই নাম শচীন্দ্র ও বীরেন্দ্র ।   ভাষার কথায় অকারণে অসূয়া জাগে যখনই বুকের মধ্যে তুফান ওঠে, আসেন অতন্দ্র তরণী ।   বিদ্বেষ বিষে নদীর জল যখনই হয় ফেনিল আঁধার রাতে বাতির মতো পথটি দেখান সুনীল ।   উনিশ যবে হৃদয় জুড়ে ছড়ায় ব্যথার আঁচল মন-মুকুরে আসন পাতেন অবিচল সুকোমল । পারুল বোনটি কমলা - তোমায় ভুলিনি বিলক্ষণ যেমন হৃদয়ে চিরন্তন - সেনানী কুমুদরঞ্জন।   আজ উনিশের পুণ্য দিনে এ কবিতার পদাবলি তোমাদেরই জন্য মাতৃভাষায় আজও কথা বলি শহিদ স্মরণে উনিশ পঙ্‌ক্তি, কবিতার অঞ্জলি।   (উনিশটি অক্ষরসমৃদ্ধ উনিশ পঙ্‌ক্তির এই কবিতায় আছে এগারো শহিদের নামের উল্লেখ)।

দহনবেলার অ আ ক খ

বোশেখ শেষে চরাচরে উড়ুউড়ু মন ,  ভাবনারা এসে তছনছ করে দেয় অন্তর, জৈষ্ঠ্য শুরুর তপ্ত বেলার সেই গনগনে আঁচ দহন বেলার সেই অ আ ক খ অক্ষর।   এর পর বয়ে গেছে কত কত জলধারা তবু তো বরাক ভুলেনি সেই ক্ষত তীরের ব্যথা নদী কি ভুলতে পারে ?   পলিতে পলিতে জমে আছে ব্যথা শত।   এই পৃথিবীর বুক থেকে নাকি রোজ একটি ভাষা হারিয়ে যায় ইতিহাসে তবু যে কত অসহিষ্ণু, অর্বাচীনের দল ভাষার উপর হামলে পড়ে আগ্রাসে।   সেদিনও বরাক থেকেছিল নীরব সাক্ষী এগারো মায়ের কোল যে হয়েছে শূন্য। সেই থেকে জেগেছে লক্ষ প্রজন্ম প্রাণ ভাষার গরিমা দেবে না তো হতে ক্ষুণ্ণ।   আবার এসেছে গরিমাগাথার উনিশ বিশ্ব জুড়ে বেঁচে থাক সব ভাষা আর নয় কোন ব্যানারবাজি, ভাষাগিরি প্রণম্য ভাষা মা, প্রণম্য মাতৃভাষা।

তাঁর সাথে, তাহাদের সাথে

চলে যাই রোজ রাতে রাঙা মাটি ধরে, গ্রাম থেকে শহরে, আজব সফরে।   দোরে দোরে রাশি রাশি বাগানবিলাস পথে পথে ছয়লাপ হলুদ অমলতাস আর দূরান্ত বনানী জুড়ে ছাতা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শালপ্রাংশু রুদ্রপলাশ।   দেখা হয় তাঁ র সাথে, তাহাদের সাথে কথা হয়, হয় খুনশুটি । প্রিয়তমা অগ্নিশিখা... তার হাতে তুলে দিই নীলমণি লতা। গুলঞ্চ গন্ধে, মত্ত আনন্দে আরো দেখি আড়চোখে একজোড়া চোখ, ষোড়শী অলকানন্দা।   তারপর কী যে হয় ছাই কোথা যেন উবে যায় সব পথ, সব বনানী ফুলে ফুলে দোল দেয়া কিচিরমিচির  কথা, তা সে যত হোক পরিপাটি।   এ কোন মায়াবী সফর রোজ রাতে হয় সমাপন বোশেখ এলেই ইতিউতি তাঁর সাথে নিভৃত যাপন।