Skip to main content

সম্ভবত কয়েক দশক আগে এমনটি ঘটেছিলবলা হচ্ছে এই রাজ্য থেকে প্রকাশিত একটি বাণিজ্যিক বাংলা শারদীয় পত্রিকা-সংখ্যার কথাসেই হিসেবে দীর্ঘ খরা কাটিয়ে বরাক উপত্যকার শিলচর-এরশীতালং পাবলিকেশনথেকে এবার ২০২৪ শারদীয় সংখ্যাআউলপ্রকাশের সংবাদটি স্বভাবতই পাঠক মহলে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেসৌজন্যে দুই তরুণ তুর্কি সম্পাদক রাজেশ শর্মা ও আশু চৌধুরী (অবৈতনিক)
হাতে নিয়ে দর্শন ও পঠনবিলাসী পাঠক নিশ্চিতই এক সুখানুভবে নিমগ্ন হবেনকারণ আকারে, প্রচ্ছদে, ধারে ও ভারে পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত অপরাপর শারদীয় সংখ্যাগুলোর চাইতে কোনো অংশেই নিম্নমানসম্পন্ন হয়নিআউলবরং বলা যায় কাগজের মান, ছাপার স্পষ্টতা ও অলংকরণে নিশ্চিতভাবেই টেক্কা দিয়েছে আর সবাইকেঅন্দর-সম্ভারে নজর দিলে দেখা যাচ্ছে ১৫৬ পৃষ্ঠার পত্রিকায় রয়েছে দুটি বিশেষ রচনা, চারটি প্রবন্ধ, দুটি উপন্যাস, আটটি ছোটগল্প, তিনটি গ্রন্থ-আলোচনারয়েছে কবিতা বিভাগ এবং রাজনীতি, সিনেমা ও বাণিজ্য বিষয়ক তিনটি রচনান্যূনতম একটি ভ্রমণ কাহিনির অভাব অবশ্য অনুভব করতেই পারেন এক বিশেষ শ্রেণির পাঠকপৃষ্ঠাসংখ্যার হিসেবে তুলনামূলকভাবে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও পরবর্তীতে হয়তো দৈন্য কাটিয়ে ওঠা যাবে
‘…সবার জন্য কিছুটা মায়া রাখলাম এখানে আমাদের সব বন্দনা মায়াময় হোক’ - এক পৃষ্ঠার ছিমছাম সম্পাদকীয়তে সবই এসেছে - ঋতু, দেবী, বরাক পত্রিকা নামআউলকেন এ নিয়ে দুএক লাইন সংযোজিত হতে পারত সংক্ষিপ্ত হলেও ভাষায়, উপস্থাপনায় নান্দনিক সম্পাদকীয় প্রথম দুটি বিশেষ রচনা - মহবুবুল বারীরসহজিয়া দর্শনের মরমী সাধক শিতালং শাহ্ও হাছন রাজার গানএবং কাঞ্চনবরণ সিংহ-এরআপোকপা হমাদেনা - বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরিদের আদি ধর্ম-ভাবনা নিয়ে কিছু কথাসত্যিকার অর্থেই বিশেষ হয়ে উঠেছে বিষয়-ব্যতিক্রমে এবং তথ্যাদির যথাযথ প্রয়োগ গুণে অবশ্যপাঠ্য দুটি রচনাই যথেষ্ট মনোগ্রাহী এবং সুখপঠনের দাবিদার এই দুটি রচনাকে প্রথমেইবিশেষহিসেবে স্থান দিয়ে কোথাও বরাকমাটির যুগপ্রাচীন ভাষা-ধর্মের এক সৌহার্দ ও সম্প্রীতিরই বার্তা যেন দেওয়া হয়েছে সাধু প্রচেষ্টা
উপন্যাস বিভাগে প্রথমেই আসছে তাপস রায়ের রহস্য উপন্যাসলাল ডায়েরি সাদা হাত জমজমাট উপন্যাস নিঃসন্দেহে চরিত্রের ভিড়ে অপরাধী ও গোয়েন্দাও বহুজন তবু হারিয়ে যায়নি খেই সাহিত্যগুণও বজায় থেকেছে আগাগোড়া সুখপঠন ও সরলপঠনের উপন্যাস দ্বিতীয় উপন্যাসবেলা লিখেছেন সত্যজিৎ নাথ উত্তরপূর্বের স্থানিক আবহে একটি বাস্তবভিত্তিক সামাজিক উপন্যাস তিন প্রজন্ম জুড়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে স্থানীয় হিংসা-দ্বেষ ও রাজনৈতিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি পরিবারের সফলতার গল্প উপন্যাস এগিয়েছে তরতরিয়ে নিরবচ্ছিন্ন পঠনে সংলাপ, প্লট ও উপস্থাপনা যথাযথ তবে আরও খানিক বিস্তৃত হওয়ার সুযোগ হয়তো ছিল গল্প বিভাগে রয়েছে মোট আটটি গল্প বিজয়া দেব-এর গল্পদৃশ্যকাব্য ফিচারধর্মী এই গল্পের উপস্থাপনা অনবদ্য জটিল এবং বিধ্বস্ত মানবিকতার আবহে বাস্তবভিত্তিক গল্প হামিরউদ্দিন মিদ্যারলাশ সুলিখিত রাখি মাহাতোর গল্পপেঁড়ি আঞ্চলিক ভাষার বহুল প্রয়োগে পঠনজটিলতার সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু একটি পজিটিভ বার্তা আছে গল্পে সৌরভ হোসেন-এর গল্পকাঁটাতারআজকের দিনের প্রেক্ষাপটে সম্প্রীতির বার্তাবহ একটি সুখপাঠ্য গল্প গল্পের চলন, ভাষা, গঠন - নির্ভুল, নিখুঁতলিঙ্গ নির্ণয়গল্পে গল্পকার কৃষ্ণা মালিক এক ব্যতিক্রমী বিষয়সমকামিতাকে উপপাদ্য করেছেন শুরু ও শেষ খনিকটা জটিল মনে হতে পারে যদিও একটি ভালো হৃদয়স্পর্শী গল্প হিসেবেই বিবেচিত হবে আদিমা মজুমদারেরল্যাংড়া আবিবুরস্থানীয় প্রেক্ষাপটে রচিত একটি চমৎকার মানবিকতার গল্প গল্পের চলন উল্লেখযোগ্যহরিসাধনের শেষবেলাও তেমনি শর্মিলী দেব কানুনগোর এই গল্প পারিবারিক সম্পর্কের উপর একটি সুলিখিত গল্প গল্পের কয়েকটি সত্য বয়ান খুবই উল্লেখযোগ্য শেষ গল্প মোহাজির হোসেইন চৌধুরীরপ্রায়শ্চিত্ত টানটান ঘটনাবলির উপর দাঁড়িয়ে একটি অবাঞ্ছিত মৃত্যুর ঘটনার আবর্তে উন্মোচিত হয়েছে কিছু মানুষের চরিত্র হৃদয়বিদারক কাহিনি লেখা হয়েছে সাবলীলতায়
কবিতা বিভাগে গুচ্ছ কবিতা রয়েছে লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল, কিরণ দেবী ও বিশাল কর্মকার-এর সুখপাঠ্য সব কবিতা এছাড়াও সুচয়িত কবিতা সন্নিবিষ্ট হয়েছে বেশ কিছু যাঁরা লিখেছেন - দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, তীর্থঙ্কর দাশ পুরকায়স্থ, সুব্রত পুরকায়স্থ, ঈশিতা ভাদুড়ী, ঋত্বিক ত্রিপাঠী, সজল দে, নীলাব্জ চক্রবর্তী, সমীরণ ঘোষ, শ্রীতনু চৌধুরী, অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়, তন্ময় ধর, প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী, বেবি সাউ, শীর্ষা, জিতেন্দ্র নাথ, রাহেবুল, আনিস আহমেদ, দেবপ্রতিম দেব, ময়ূরী রয়, তৌফিক হোসেন, ওয়াহিদ মেহবুব মজুমদার ও অর্পিতা ঘোষ পালিত
রাজনীতিবিভাগে লিখেছেন ইমাদ উদ্দিন বুলবুল - ‘সম্প্রীতির বাঁধন অটুট থাকুক ঘটনা প্রমাণ সহ বিশেষত বরাকিভূমের প্রেক্ষিতে হিন্দু মুসলমান সম্প্রীতির হাল হকিকত চাষী সিরাজুল ইসলামের সিনে প্রবন্ধ ‘‘ওরা ১১ জন’-এর পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামপরিচালকের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সুচয়িত রচনা নেহা চক্রবর্তীরদ্য হ্যান্ডমেড ওয়ার্মথরয়েছে বাণিজ্য বিভাগে শেষ পর্বে রয়েছে তিনটি বুক রিভিউ এক নান্দনিক ও ব্যতিক্রমী সংযোজনকমলকুমারের নতুন পাঠঅগ্রন্থিত গল্পসংগ্রহপ্রসঙ্গে’ - লিখেছেন সৈকত দে বরাক উপত্যকার গল্পকার শর্মিলী দেব কানুনগোর গল্পের উপর আলোচনা করেছেন আরেক স্বভূমের কবি চন্দ্রিমা দত্ত - ‘শিউলি ফোটা ভোরের মতো যাঁর গল্প কবি জিতেন্দ্র নাথের দুটি সদ্যপ্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঅসীমকে ছুঁতে মগ্ন থাকি ‘’ঈশ্বরী একটি নক্ষত্রের নাম’-এর আলোচনা করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
সব মিলিয়ে সম্ভার বিশাল না হলেও যথেষ্ট বলাই যায় কবি লেখকদের সূচিতে পশ্চিমবঙ্গের উপস্থিতি সরব হলেও উত্তরপূর্বের উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম অনুভূত হয়েছে বিশেষ করে ত্রিপুরা থেকে কোনও লেখা সম্ভবত সংযোজিত হয়নি, অথচ উত্তরপূর্বে বাংলায় সর্বাধিক লেখালেখি ত্রিপুরাতেই হয় পরবর্তীতে অপেক্ষাকৃত পাতলা কাগজ ব্যবহার করে আরও কিছু ম্যাটার, গল্প, উপন্যাস, কবিতা সন্নিবিষ্ট হতেই পারে আধুনিক বানান যথাসম্ভব ব্যবহৃত হলেও বেশ কিছুই থেকে গেছে পুরোনো বিশেষ করে সূচিপত্র ও লেখার শিরোনামে বানানবিভ্রাট দৃষ্টিকটু বটে পত্রিকার শোভনসুন্দর ও আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ তথা ভেতরের অলংকরণ (সৌজন্যে আশু চৌধুরী) উল্লেখযোগ্য শিল্প নির্দেশক হিসেবে রয়েছেন গণেশ নন্দী
সার্বিক প্রকাশের দায়বদ্ধতায় ঋদ্ধ পত্রিকাগোষ্ঠীর উপর প্রত্যাশার বোঝা বেড়ে গেছে নিশ্চিত ফলত পরবর্তীতে অধিক সজ্জিত হয়ে প্রকাশিত হবে বরাকমাটির গন্ধ মাখাআউলএমন প্রত্যাশা ও প্রত্যয় স্বভাবতই বহন করে চলবেন পাঠকবৃন্দ এটাও নিশ্চিত

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ২৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯১০১৩৫১৯০৩ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...