Skip to main content

নাগরিকত্বের মহাকাব্য

সকাল ঠিক সাড়ে সাতটায় পাশের চেয়ারটিতে রাখা মোবাইলে অ্যালার্ম বাজতেই ধড়ফড়িয়ে উঠতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল তুষার বয়েস হয়েছে বয়সের কথাটা অহরহ মনে করিয়ে দেয় সোনালি এমনিতে বলার মতো তেমন কোনও ব্যাধি কিংবা অস্বস্তি নেই তুষারের তবু সামলে চলার বোধটা তৈরি হয়ে গেছে ভেতরে ভেতরে চোখ খুলে তাই হাত বাড়িয়ে অ্যালার্ম অফ করে এক মুহূর্ত শুয়েই রইল এরপরই উঠে বসল ধীরে ধীরে পা নামিয়ে, চপ্পলটা পায়ে গলিয়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল কয়েক পা এগিয়েই ফের ফিরে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে এবার গিয়ে ঢুকল বাথরুমে এমনিতে সব সময় বাজে না মোবাইল কিন্তু বাথরুমে গেলেই কেউ না কেউ ফোন করবেই এটা যেন নিয়ম হয়ে গেছে বহু দিন ধরে তাই মোবাইল হাতে করে নিয়ে যাওয়াটাই শ্রেয় বলে ভাবে তুষার 
যথারীতি বাথরুমে থাকতে থাকতেই বেজে উঠল ফোন বাবলু ফোন করেছেদাঁত ব্রাশ করতে থাকা সময়ে ফোন এলে খুবই সমস্যা হয় অথচ বাবলুর ফোন না ধরলেও নয় মুখের ভেতর জমে থাকা বিস্বাদটুকু বেসিনে ফেলে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বাবলুর স্বর - গুড মর্ণিং, ঘুম ভাঙল ?
হ্যাঁ, গুড মর্ণিং
শোন্ রুমা বলেছে সকালের ব্রেকফাস্ট আমাদের বাড়িতেই করতে এসে যাবি কিন্তু
আপত্তি নেই এমনিতেও রুমার সঙ্গে দেখা না করে চলে যাব এমন বুকের পাটা আমার নেই আখেরে ধড়ের উপর মাথা তো একটাই আছে আমার
তুষারের কথায় হেসে ওঠে বাবলু - টা নাগাদ আসবি ?
ব্রেকফাস্ট কটা নাগাদ রেডি হবে ?
সাড়ে নটা নাগাদ চলে আসবি
ঠিক আছে
চা খেয়েছিস ?
না, দাঁত ব্রাশ করছি চা খেয়ে নেব তুই চিন্তা করিস না এবার রাখব ?
ঠিক আছে - ফোন ডিসকানেক্ট হয়ে গেল দাঁত ব্রাশ সেরে একসাথে টয়লেট, চানটাও সেরে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এল তুষার মনের মধ্যে ভাবনা একরাশ আনন্দ, উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে যেন কালই এসে উঠেছে এখানেসদ্য গড়ে ওঠা শহরের এক প্রান্তে, যেখানটা তুষারদের ছোটোবেলায় ছিল নিতান্তই এক গ্রাম, দিন পনেরো হল প্রথমবারের মতো একটি গেস্ট হাউস খুলেছে গতকাল তুষার এসে এই গেস্ট হাউসের প্রথম গেস্ট হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছে এর আগে যতবার এখানে এসেছে, বাবলুদের বাড়িতেই থেকেছে নিজেদের বাড়িটা বহু বছর আগেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে কেউ থাকে না বলে যেখানে জন্ম, বেড়ে ওঠা, মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষালাভ সেখানকার আত্মিক টানে মাঝে মাঝেই যেতে হয়, যেতে উন্মুখ হয়ে থাকে মন এবারের আসাটা বহু বছর পর হয়েছে নানা ঝামেলায় মন টানলেও সময় হয়ে ওঠেনি এতদিন এরই মধ্যে এইলক্ষ্মীনারায়ণ অতিথি নিবাস’-এর খবর পেয়ে মন যেন আরোও উতলা হয়ে উঠেছিল গেস্ট হাউসটি তৈরি হয়েছে বন্ধু টিটুর বদান্যতায় টিটুও তাড়া দিচ্ছিলযা, একবার গিয়ে ওঠ সেখানে সুবিধা অসুবিধাগুলো জানালে ব্যাবস্থা নিতে পারব
টিটুর অবদান মুখ্য হলেও নেপথ্যে ছিলেন সেখানেরই সিনিয়র দাদা পীযূষদা এবং লক্ষীনারায়ণ মন্দির কর্তৃপক্ষ গতকাল দুপুরে যখন তুষার এসে উঠেছিল গেস্ট হাউসে তখন দরজার চাবি হাতে নিয়ে প্রতীক্ষায় সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছিল বাবলু তুষারকে নিয়ে সামনের গেস্ট রুমে ঢোকাল আপত্তি করেছিল তুষার বাবলু বললএই রুমটি তোদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে সব ধরনের আধুনিক সুবিধাটুকু এখানে রাখা হয়েছে এটা গেস্ট রুম বাকি রুমগুলোতেও প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই রয়েছে দেখাব তোকে
কিন্তু আমি তো সাধারণ পর্যটকের মতো থাকতে চাই রুম ভাড়া দিয়ে
হেসে ওঠে বাবলু - সে হবেখন দেখা যাবেপীযূষদা আসুন, তারপর
দুপুরের খাবার ব্যবস্থাও মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফেই করা হয়েছিল ভোগের প্রসাদ বড়ই তৃপ্তি করে খেয়েছে তুষার একেবারে আসন পেতে মেঝেতে বসে সেই আহারের সময় মনে পড়ে যাচ্ছিল বাড়িতে থাকাকালীন সময়ের কথা আনন্দে এতটাই বিভোর হয়ে রয়েছিল তুষার যে ফিরে আসা অবধি ভোগের প্রসাদ বাবদ প্রদেয় আর্থিক অবদানের কথা ভুলেই গিয়েছিল মনে হচ্ছিল যেন নিজের বাড়িতেই গেছে সে বিকেলে পীযূষদা এসেও অনেকক্ষণ গল্প করে গেলেন অনেক কথা, অনেক দিনের না জানা সব বৃত্তান্ত এত স্নেহ এখনও সঞ্চিত হয়ে আছে তাঁদের বুকে ভাবলে অবাক হতে হয় নিজের দুই দাদাকে ইতোমধ্যেই হারিয়েছে তুষার পীযূষদার কথায়, আদরে যেন সেসবই মূর্ত হয়ে উঠছিল বার বার কথার মধ্যেই একটা প্রস্তাব রাখল তুষার - পীযুষদা, গেস্ট হাউসের রেজিস্টারটা দিতে বলবে বাবলুকে আমি গেস্ট নয়, কাস্টমার হিসেবে থাকতে চাই প্রথম কাস্টমার হিসেবে রেজিস্টারে এন্ট্রি করতে চাই
হেসে ওঠেন পীযূষদা - আরে, এ নিয়ে চিন্তা করছিস কেন ? তোরা সব সময়ই এসে উঠবি, গেস্ট হিসেবেই থাকবি এই অতিথি নিবাসের মূল লক্ষ্য তো উপার্জন নয় তুই তো জানিস কত লোক আসে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে, শনবিল দেখতে কিন্তু থাকার জায়গা না পাওয়ায় দিনে দিনে ফিরে যেতে হয় তাঁদের তাঁদের সুবিধার্থেই এই গেস্ট হাউস তোরা তো নিজেদের মানুষ তোদের থেকে টাকাপয়সা নেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না
হার মানতে হয় স্নেহের কাছে বিকেলে খাওয়াদাওয়ার পর বিছানায় খানিকটা সময় গা এলিয়ে সন্ধে হওয়ার আগেই উঠে পড়ে তুষার বাবলুকে ফোন করে ডেকে নেয় বাবলু জানাল রাস্তায় আছে, এখানেই আসছে বাবলু আসতেই বেরিয়ে পড়ে দুটিতে পুরোনো আড্ডার জায়গাগুলোতে এখনও সহপাঠী বন্ধুরা আছে দোকান দিয়েছে নিজেরা প্রথমেই শৈলেনের চায়ের দোকান শৈলেন তো পারলে জড়িয়ে ধরে কথা আর ফুরোয় না খবর পেয়ে কাজলও এসে উপস্থিত ঘণ্টাখানেক সেখানে কাটিয়ে পরবর্তী গন্তব্য বাবুলের জুতোর দোকান সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত মিঠু গৌতমও এসে জুটেছে জম্পেশ আড্ডা শেষে রাতের আহার খাবার হোটেলে সেরে ফিরে এসেছিল অতিথি নিবাসে রাতে ঘুম আসার আগে অবধি বিচিত্র এক আবেগে কাটিয়েছে প্রতিটি মুহূর্ত এবারের সফরের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য অভিমুখে কাল সকালেই বেরিয়ে পড়তে হবে তুষারের আর তর সইছে না
###
বাথরুম থেকে বেরিয়ে কাপড়জামা গায়ে লাগিয়ে বেরিয়ে এল সাময়িক শেষ রাতে ও ভোরে কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে এখনও রোদ উঠেনি ভিজে হয়ে আছে রাস্তাঘাট ভাগ্যিস ছাতা এনেছিল সঙ্গে নাহলে আজকের এই মূল্যবান সকালের যাবতীয় অ্যাডভেঞ্চার পণ্ড হয়ে যেত কাছেই চায়ের দোকান পায়ে পায়ে এসে ঢুকল দোকানে এই দোকানটা খুলেছিল সঞ্জু চা-মিষ্টির এদিক ওদিক তাকাল তুষার স্মৃতি আর বাস্তব একাকার হয়ে আছে নরেন্দ্র সংঘ একটি ঐতিহ্যবাহী ক্লাব যা একসময় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল, তুষার ও বন্ধুরা মিলে নিজেরা কাঁধে করে কাঠ বয়ে এনে নতুন করে গড়ে তুলেছিল ক্লাবঘর এর পর বহু বছর আড্ডাসভায় পর্যবসিত হয়েছিল নবনির্মিত নরেন্দ্র সংঘ এখন আবার ধ্বংসের মুখে খারাপ লাগল ওদিকে কিরণদার দোকান রেডিও মেরামতি আর চায়ের ব্যবস্থা ছিল দোকানে কিরণদা ছিলেন দাদার অভিন্নহৃদয় বন্ধু এখন বৃদ্ধাবস্থায় বাড়িতেই আছেনদোকান বন্ধ খোকাদার লন্ড্রিশপও বন্ধ খোকাদা নাকি কিছুদিন আগে চলে গেছেন পরপারে - বাবলুর মুখে শোনা অথচ এর আগে তুষার যত বার এখানে এসেছে, বাস থেকে নামতেই হাসিমুখে খোকাদা এসে কুশল মঙ্গল জিজ্ঞাসা করেছেন মোড়ের বিশাল কদমগাছের রেপ্লিকা নতুন করে গজানো চারা এখন অনেকটা বড় হয়ে গেছে, যেমন হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েছেলেরা ভোরের বৃষ্টি এসে তার শরীর, পাতাগুলোকে ধুয়ে মুছে সারাদিনের জমে থাকা ধুলো থেকে মুক্ত করে গেছে আয়েস করে যেন টুপটুপ করে পাতা ঝরা জলের বিন্দুগুলোকে বিলিয়ে দিচ্ছে মাটিতে এক ফোঁটা জল তুষারের গায়ে এসে পড়তেই চমকে ওঠে তুষার এ যেন সম্পর্কের আলিঙ্গন - নতুন ও পুরাতনের চারিদিকে ঘটে যাওয়া সব পরিবর্তন দেখে মনটা বিষণ্ণ হয়ে গেল আরোও কত বিষণ্ণতা আছে সামনে ভাবতে ভাবতেই চায়ের দোকানে ঢুকল তুষার সঞ্জু এখানে নেই বড় শহরে ছেলেমেয়েদের পড়ার সুবিধার্থে শিফট করেছে বন্ধু হলেও বয়সে ছোট সঞ্জুর নাকি কিছুদিন আগে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মোটামুটি সুস্থ আছে এখন
এক কাপ লাল চা আর ছোট এক প্যাকেট ম্যারি বিস্কিট নিল তুষারসকালের নিত্যদিনের পানীয় চুমুক দিতেই যেন চনমনে হয়ে উঠল দেহ মন বড্ড মায়াময় আজকের এই মর্ণিং-টি চা শেষ করে বেরিয়ে আবার রুমে এসে ছাতাটা নিয়ে বেরিয়ে এল রাস্তায় পিচ করা রাস্তার মাঝে মাঝেও নিচু জায়গাগুলোতে কিছু জল জমে আছে দুএকটা অটোরিকশা চলতে শুরু করেছে আপাতত তুষারের অটো ভাড়া করার দরকার নেই আজকের সকাল পুরোটাই হাঁটাহাঁটির ব্যাপার দুপুরেই আবার বেরিয়ে পড়তে হবে অতিথি নিবাস ছেড়ে সন্ধ্যায় এখান থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে এক জায়গায় একটি অনুষ্ঠানে সে নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছে সুতরাং দুপুরের মধ্যেই রওনা হতে হবে এখান থেকেমূলত ওই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করেই আসা একই সাথে অতীতটাকে আরোও একবার ঝালিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে বয়স যত বাড়ছে স্মৃতি এসে যেন ততই আঁকড়ে ধরছে আষ্টেপৃষ্ঠে তাছাড়া দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিও এক্ষেত্রে ইন্ধন জুগিয়ে থাকে নিরন্তর
নাগরিকত্ব নিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েনের রাজনীতি এই রাজ্যে তো এটা চিরন্তন এক ট্রাম্পকার্ড এক শ্রেণির নাগরিক নিত্যদিন নিজের নাগরিকত্ব নিয়েই হতবুদ্ধি নাগরিক হয়েই থাকবে নাকি অতিথি হয়ে সেই ধাঁধার আর নিষ্পত্তি নেই আবার আরেক শ্রেণির তথাকথিত স্থায়ী নাগরিক অতিথিদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ভয়ে ভীত, সন্ত্রস্ত, ক্ষুব্ধ এই টালমাটালে মাঝে মাঝেই অশান্ত হয়ে উঠে চারপাশ, অশান্তি এসে দানা বাঁধে মনের অন্দরে অথচ বৃদ্ধাবস্থার দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া তুষার এবং আরোও লক্ষ লক্ষ নাগরিকের জন্মদেশ এটাই, শৈশব এখানেই, কৈশোর- যৌবনের খেলাভূমি এখানেই তুষার বিদেশ দেখেনি আজন্ম বিদেশ কেমন জানা নেই তার সে শুধু জানে তার জন্মভূমি, চেনে শুধু তার ছোটোবেলার মায়াময় দিনযাপনকে আর সেই সূত্রেই এবার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সযত্নে গচ্ছিত রেখেছে এখানকার আলো হাওয়া আরেকবার গায়ে মেখে চনমনে হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে কতদিন দেখা হয়নি সেই পথঘাট, নিত্যদিনের চলার রাস্তা কতদিন দেখা হয়নি গ্রামের লোকদের যাঁরা একদিন প্রতিবেশী হয়ে মিটিয়েছেন তুষারদের কত আবদার দেখা হয়নি একসাথে পথ চলা বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়নি কিছু হারিয়ে যাওয়া কোমল সুখমুখ
পাকা রাস্তা ধরে খানিকটা এগোতেই তুষার পৌঁছে গেল পরেশদা ওদের মূর্তি বানানোর ঘরটির কাছে স্কুল থেকে ফেরার পথে রোজ একবার করে ঢুঁ মেরে দেখা হতো কালী, দুর্গা, সরস্বতী কিংবা কার্তিক ঠাকুরের কতটা আদল এসেছে মূর্তির গায়ে আজ সকালের খানিকটা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় লোকজন কম ওদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে এবার বাঁয়ে মোড় নিল তুষার গ্রামের রাস্তা অনেকটা চওড়া হয়েছে এখন ব্লক বসানো হয়েছে তখন বড়জোর দুফুট চওড়া ছিল দুদিকে পাহাড় জঙ্গল অথচ রাতবিরেতেও অকুতোভয় হয়ে অন্ধকারে হেঁটে চলে যেত বাড়ির দিকে শহরের বাচ্চারা এটা কল্পনাও করতে পারে না দুপাশের গাছগাছালি পেরিয়ে এবার গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করল তুষার আধমাইলখানেক হেঁটে এসে উপস্থিত হল নিজেদের ছেড়ে আসা বাড়ির কাছে পাশের ঘরের জয়ন্ত, তুষারদের পরবর্তী প্রজন্ম এখনও এখানেই আছে দেখা গেল দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সামনে জানত তুষার আসবে তাই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে
আমি ভেবেছি তুমি আসবে না বৃষ্টি হল খুব - জয়ন্ত বলল
ধুর এখানে এসেছিই তো বাড়ি আর গ্রামটাকে দেখব বলে
এসো তাহলে ঘরে
চল বলে ঘরের মধ্যে এসে বসে তুষার মনে মনে ভাবছে এক কাপ চা হলে ভালো হয় অনেকটা পথ হাঁটতে হবে এবার পুরো গ্রামটাকে দেখবে যেদিকে দৌড়ে যেত খেলার মাঠ কিংবা ধানখেতের ফাঁকে ফাঁকে উদ্ভ্রান্ত মানসে সেদিকেই আরোও একবার যেতে চায় তুষার অর্ধশতাব্দীরও আগে বাবা মায়ের হাত ধরে হেঁটে যেত মানব কল্যাণ বিদ্যালয়ে ওখানেই ভোট দিতেন তাঁরা এখন আবার একবার ফ্ল্যাশব্যাক ভ্রমণে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের নাগরিকত্বের সিলমোহর সেঁটে দিতে চায় নিজেরই গায়ে
বেশিক্ষণ দেরি করল না তুষার টুকটাক কথাবার্তা সেরে বিদায় নিল জয়ন্তর কাছ থেকে তার আগে জয়ন্তর বউ অম্পি এসে প্রণাম করেছে, চা খাইয়েছে বড় ভালো ওরা এখনও সেই আগেরই মতো শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে পুরোপুরি জয়ন্ত কর্মস্থলে যাবে বলে বেরিয়ে গেল অনুমতি নিয়ে একই সঙ্গে তুষারও আবার পথে নামল
উত্তরের রাস্তাটা ধরে এগোতে থাকল অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে উন্নত হয়েছে রাস্তাঘাট, চারপাশ অথচ এটা ভালো লাগল না তুষারের মনে মনে ভাবে উন্নয়ন কি না হলে একেবারেই চলছিল না ? কোথায় যে সব হারিয়ে গেল তবু পথ চলে তুষার ওই তো সেই মোড় যেখান থেকে বাঁদিকে দেখা যাচ্ছে উঁচু টিলার ঠিক নীচেই অশোকদা-দীপকদা ওদের পরিত্যক্ত ভিটে কত দুপুর, কত সকাল-বিকেল কাটিয়েছে ওদের সঙ্গে অশোকদা কবিতা লিখত কোদাল দিয়ে ঘরের পেছনটায় সবজি খেতের জন্য মাটি কাটত আর কবিতার লাইন বলত তুষার ওসব লিখে রাখত কী অসাধারণ সেসব কবিতা ওইটুকু বয়সেই তুষার কবিতার প্রেমে পড়েছিল এভাবেই যার ফলশ্রুতি আজ কবিতার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে আসা মনে মনে প্রণাম জানায় তুষার ওদিকে তাকিয়ে ডান দিকে ওই তো সরু রাস্তাটা অনেকটা আগেরই মতো চলে গেছে নিশিকাকাদের ঘরের দিকে সেই রাস্তার পাশের বুড়ো তেঁতুলগাছটা আর নেই এক সময় বহু বাঁদরামি সহ্য করেছে তুষারদের বহু বছর আগে একবার যখন এসেছিল তুষার তখন দেখা হয়েছিল নিশিকাকার সঙ্গে অভাবের দিনে বাড়িতে টুকটাক কাজ করতেন নিশিকাকা টি টাকা, কিছু চাল ডাল নিয়ে সংসার চালাতেন পরে অবশ্য ছেলেরা বড় হয়ে ব্যাবসাপত্র করায় কিছুটা হলেও হাল ফিরেছে সংসারের নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন তুষারকে এখন হয়তো বুড়ো হয়ে গেছেন হয়তো কেন নিশ্চিতই বুড়ো হয়েছেন তুষার নিজেই তো বুড়ো হওয়ার পথে
অদম্য ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রেখে এগোয় তুষার কারণ হাতে সময় নেই মানব কল্যাণ তখনও বহু দূর কিছুটা পথ হেঁটে আসার পর সেই ছড়াটার কাছে এসে পৌঁছালো তুষার হাতলবিহীন এক-বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে তখন দিব্যি এপার-ওপার হওয়া যেত এখন ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয় এখন অবশ্য ছড়ার উপর সেতু হয়েছে রেলিংও আছে তাই অসুবিধে হলো না রাস্তাটা খানিক বদলে গেছে মনে হল তুষারের ঠিকঠাক যাচ্ছে কিনা জানতে গুগল ম্যাপের দ্বারস্থ হতে হল না, ঠিকই আছে অবশ্য এর মধ্যা একজন পথচারীকেও জিজ্ঞেস করে পথ বুঝে নিয়েছে এক অদম্য ইচ্ছে হৃদয়টাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে যেন মাঠ পেরিয়ে, আল পেরিয়ে যত এগোচ্ছে ততই নস্টালজিয়া এসে জাপটে ধরছে মনে হচ্ছে যেন সেই সেদিনেরই মতো মা-বাবা এসে হাতে হাত ধরেছেন আর এগিয়ে যাচ্ছে ছোট্ট শিশু তুষার
এমনই এক আলের রাস্তায় চলার মধ্যেই একজন এসে সত্যি সত্যিই এসে পেছন থেকে একটু কেশে হাতটা ধরলেন তুষারের চমকে উঠল তুষার এক বৃদ্ধ, ঠাণ্ডা হাতটা দিয়ে তুষারের হাত ধরে বললেন - চিনতে পেরেছ ? ভালো করে তাকিয়ে অনেকটাই চেনা চেনা মনে হচ্ছিল তুষারের আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ে পালটা প্রশ্ন করলনিশিকাকা ?
হ্যাঁ
আনন্দে বাঁধনহারা হয়ে উঠল তুষার - তুমি কোথা থেকে নিশিকাকা ? এত বুড়ো হয়ে গেছ তুমি ? চিনতেই পারছিলাম না
ফোঁকলা হাসি ছড়িয়ে নিশিকাকা বললেন - খবর পেলাম তুমি এসেছ এদিকেই যেতে দেখেছে আমাদের পাশের বাড়ির সুশীল আমাদের বাড়িতে তো গেলে না তাই পা চালিয়ে এসে ধরে ফেললাম
ততক্ষণে হাত ছেড়ে দিয়ে পাশে পাশেই হেঁটে চলছেন নিশিকাকা আর কথায় কথায় দুজন মিলে যেন ফিরে গেছেন বহু যুগ আগে তুষার নিশিকাকাকে পেয়ে যেন তৃপ্ত হয়ে গেছে একেবারে পুরোনো দিনের যাপিত বহু কথা উঠে এল প্রসঙ্গক্রমে বহু কথা তুষারের স্পষ্ট মনে থাকলেও ভুলে গেছেন নিশিকাকা তুষার ভাবে বয়স হয়েছে যখন এটাই তো স্বাভাবিক স্বতঃস্ফুর্ত হয়ে তুষার জিজ্ঞেস করেতোমার মনে আছে নিশিকাকা, সেই যে শেষ বিকেলের মিঠে রোদে বসে টুয়েন্টি-নাইন খেলা ? তুমিই তো আমাদের শিখিয়েছিলে
খানিকটা ভেবে তেমন আবহ স্মৃতির খাতায় খুঁজে না পেয়ে আমতা আমতা করে নিশিকাকা বললেন - এখন আর সেসব দিন নেই রে বাবা দিন পালটেছে, খেলা পালটেছে এখন বলে মুচকি হেসে সামনেটা দেখিয়ে বললেন - ওই দ্যাখো, তোমার গন্তব্য এসে গেছে
সত্যিই তাই কথায় কথায় হাঁটতে হাঁটতেই এসে পৌঁছে গেল ওরা মানব কল্যাণ বিদ্যালয়ে সেদিন বন্ধ বার ছিল বলে কেউ ছিল না সেখানে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিশিকাকাকে পাশে নিয়ে সবার অজান্তেই নিজের নাগরিকত্বটাকে যেন পাকাপোক্ত করে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে এবার ফেরার পথ ধরল সাড়ে নটা প্রায় বাজতেই চলল এখনই হয়তো বাবলুর ফোন এসে যাবে নিশিকাকাও বিদায় নিলেন যেদিক থেকে আসছিলেন সেদিকে তুষার এসে বাস রাস্তায় দাঁড়াল এখান থেকে অটো করে সোজা বাবলুদের বাড়ির সামনে গিয়ে নামবে বলে আগে এ রাস্তায় দিনে বড়জোর দুতিনটে বাস চলত অন্যথা হেঁটেই আসা যাওয়া করতে হতো এখন অটোরিকশার ছড়াছড়ি
মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছে গেল তুষার বাবলুর বউ রুমা এসে অনুযোগের স্বরে বলল - এখন অতিথি নিবাস হয়ে গেছে বলে আমাদের কথা ভুলেই গেলেন না তুষারদা ? এবার রুমাকে বলে কয়ে বুঝিয়ে অনুযোগমুক্ত করে ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসল তুষার বেশি দেরি না করে বেরিয়ে যাওয়াই ভালো প্রাপ্তির ঘরে অনেককিছুই জমা পড়েছে আজ সেসব রোমন্থন করেই কাটিয়ে দেওয়া যাবে আরোও বহু কাল
ব্রেকফাস্ট টেবিলে একথা ওকথার ফাঁকে বাবলু জিজ্ঞেস করল - তারপর বল তোর সকালের ভ্রমণপর্ব কেমন হল ?
একেবারে জম্পেশ হল ভাই অনেকদিন পর যেন আবার সেই শৈশব কৈশোরে ফিরে গিয়েছিলাম বাড়ি হয়ে একেবারে পুরো গ্রাম পেরিয়ে সেই মানব কল্যাণ অবধি
এতটা পথ হাঁটতে পারলি ?
ইচ্ছেটা অদম্য হলে অসাধ্যও সাধন করা যায় বন্ধু আজ যা পেয়েছি সে তো বহু দিনের রসদ হয়ে রইল
সে তো ঠিকই কত যে হইহই করে এ গ্রাম ও গ্রাম ঘুরে বেড়াতাম আমরা আজ ভাবলেও মনটা ফুরফুরে হয়ে যায় তোরা কেউ আর এখানে থাকিস না বলে আমারও আর সেরকম ঘোরাঘুরি হয় না ভালো লাগে না সংসার আর স্ত্রী পুত্র কন্যাদের দেখভালেই কেটে যায় সময় তা কার কার সঙ্গে দেখা হল ?
বাবলুর কথা শুনেই তুষারের মনে হল আসল কথাটাই বলা হয়নি এখনও খানিকটা উত্তেজিত হয়েই বলল - জয়ন্তদের সঙ্গে দেখা হল বহু দিন পর আর জানিস ? রাস্তায় দেখা নিশিকাকার সঙ্গে কত গল্প, কত কথা হল অনেকক্ষণ ছিলেন আমার পথ চলার সঙ্গী হয়ে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়লেও এখনও সেই হাসি খুশি উচ্ছল কিন্তু বড্ড আপশোশ হচ্ছে রে কথায় এমন ভাবে জড়িয়ে গেলাম যে নিশিকাকার সঙ্গে একটা সেলফি যে উঠব সে কথাটি এলই না মাথায়
তুষারকে থামিয়ে কপাল, ভ্রু কুঁচকে বাবলু বলে উঠল - নিশিকাকা ? তুই কি পাগল হয়েছিস ?
কেন বল তো ?
নিশিকাকা তো বছর চারেক আগেই চলে গেছেন তাঁর ছেলের কাছে শিলঙে ছেলে ওখানে ব্যাবসা করে আমি তোকে বলতে ভুলে গেছি গত মাসে তাঁর ছেলে ফোন করে জানাল সেখানেই তিনি মারা গেছেন
হতভম্ব তুষারের হাত পা যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসছে কেঁপে উঠছে সারা শরীর মুহূর্তের মধ্যেই গা দিয়ে যেন ঘামের ধারা বইতে শুরু হয়েছে ধরাধরি করে তুষারকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে উঠল বাবলু ও রুমা
ঘণ্টা দুয়েক পর যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল উঠে বসে খানিকটা সময় নিয়ে অনেকটা ধাতস্থ হল তুষার বলল - এ নিয়ে আর কথা বলব না রে বাবলু চল ফিরব এবার আমাকে যেতে হবে সন্ধ্যার আগেই পৌছতে হবে অনুষ্ঠানে আজ যে সেখানে আমাকে পাঠ করতেই হবে একনাগরিকত্বের মহাকাব্য

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...