Skip to main content

প্রচ্ছন্ন নিবেদনের পত্রিকা - ‘শব্দনীল’ - ২৭তম সংখ্যা


২১ মার্চ, ২০২৫ - বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষে উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর থেকেপয়েটস্ইউনিট’-এর নিবেদন - ‘শব্দনীলপত্রিকার ২৭তম সংখ্যা প্রায় লেটার সাইজের পত্রিকার দুই মলাটের ভিতর রয়েছে গদ্য পদ্যের ৩০ পৃষ্ঠাব্যাপী সম্ভার। যদিও disclaimer-এ লেখা আছে - A Magazine of Poems তবু শুরু ও শেষে যথাক্রমে একটি মূল্যবান নিবন্ধ ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবেদন জুড়ে দিয়ে পত্রিকাটিকে শুধু কবিতার পাঠকদের উপভোগ্য না করে আপামর সাহিত্য পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে দেওয়া হয়েছে বিশিষ্ট সাহিত্যিক তথা কবি এবং পয়েটস্ইউনিট, ধর্মনগর ও পত্রিকা সম্পাদক হৃষিকেশ নাথের সম্পাদকীয়তে উঠে এসেছে অনেক গরজের কথা রয়েছে চরাচর জুড়ে বারুদের গন্ধ, প্রতিবেশী পরিসরে দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রহসন আর ভারী বাতাসের উল্লেখ রয়েছে আপন সাহিত্যবিশ্বের কয়েকজন সদ্য প্রয়াত ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি - ‘…আমাদের ছোট্ট শহরের তিনজন কবি সাহিত্যিক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন অজানার ওই পারে সদ্য প্রয়াত ওইসব কবি সাহিত্যিকের শোক এখনও আমাদের চোখে হৃদয়ে রক্ত ঝরায় কবি নিরঞ্জন দাস, কবি সাহিত্যিক সুনীতি দেবনাথ এবং কবি প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক জ্যোতির্ময় রায়ের বিয়োগব্যথা এখনও তরতাজা যন্ত্রণাসব মিলিয়ে এক পরিপাটি সম্পাদকীয়
পত্রিকার বিষয় বিভাগে প্রথমেই রয়েছে হৃষিকেশ নাথের নিবন্ধচর্যা কবি কুক্কুরীপাদের কবিতা চর্যাপদ বিষয়ক গবেষণা ও লেখালেখির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত এই লেখকের উক্ত নিবন্ধটি সাধারণ পাঠকের কাছে কিছু জটিল অনুভূত হলেও আখেরে এক মূল্যবান নিবন্ধ এ কথা অনস্বীকার্য চর্যা কবিদের জীবন ও সাহিত্যকর্ম চিরদিনই এক পরম বিস্ময় ও গভীর প্রাসঙ্গিকতার আকর নিবন্ধটি তাই নি:সন্দেহে মান বাড়িয়েছে সংখ্যাটির কবিতা পর্বের শেষে লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির আরেক বিদগ্ধ গবেষক, প্রাবন্ধিক মন্টু দাস লিপিবদ্ধ করেছেন একটি প্রতিবেদন - ‘লোকসংস্কৃতির ইতিহাসে এক মাইল ফলক’। সমকালীন সময়ে ত্রিপুরার কুমারঘাটে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় লোকসংস্কৃতি পরিষদ’-এর বার্ষিক অধিবেশনের একটি বিস্তৃত তথা নান্দনিক প্রতিবেদন।
কবিতা বিভাগে রয়েছে ৬২জন কবির ৬৫টি বাংলা কবিতা এবং অনিমেষ নাথের একটি ইংরেজি কবিতা - ‘Digging’. বাংলা কবিতার বিভাগটিকে এক আলাদা মর্যাদা প্রদান করেছে ত্রিপুরার সন্তকবি মিলনকান্তি দত্তের কবিতাভাষাচতুর্দশপদী শিরোনামানুযায়ী একটি অনবদ্য সনেট - ভাষায়, বিষয়ে, লালিত্যে রয়েছে একাধিক কবির মন মাতানো কবিতা বিভাগ শুরুর পূর্বপৃষ্ঠায় স্বর্গীয় কবি জ্যোতর্ময় রায়ের স্বকীয় ধারার একটি কবিতা যেন আলোকিত করে আছে বিভাগটিকে, পুরো পত্রিকাকে -
রাত্রি খসে পড়লে
সকাল ছোঁবে আয়ু
 
পৃথিবী বসতি গড়েছে যে আয়ুতে
ভালোবাসার সীমানা রয়েছে
তাকে ছাড়িয়ে
 
রোজনামচায় ভালো বাসা
খোঁজে ভালোবাসা (কবিতা - সকাল ছোঁবে আয়ু)
মিলনকান্তির বাইরেও বিষয়ে, কাব্যিকতায় ঋদ্ধ কবিতা রয়েছে যাঁদের, তাঁরা হলেন - জ্যেষ্ঠ কবি পীযূষ রাউত, সেলিম মুস্তাফা, মধুমিতা ভট্টাচার্য, নিবারণ নাথ, রূপালি দাস, শিপ্রা শর্মা, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, শম্ভুশংকর, গোবিন্দ ধর, অভীককুমার দে, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, নন্দিতা দাস চৌধুরী, জালাল উদ্দিন আহমেদ, রসরাজ নাথ, শান্তনু ভট্টাচার্য, বিধানচন্দ্র দে, জহরলাল দাস, চিরশ্রী দেবনাথ, রতন চন্দ প্রমুখ এছাড়াও একরাশ আবেগ, অনুভূতি ঢেলে লেখা হয়েছে যেসব কবির বেশ কিছু সুপাঠ্য কবিতা তারা হলেন - গৌরব নাথ, হিমাংশু মোহন্ত, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুপ্রিয়া দাস, অসীমা দেবী, জয়ত্রী চক্রবর্তী, শ্রীমতী ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ, অমিত চট্টোপাধ্যায়, জয়ন্ত রায়, উত্তম সরকার, সুজিত দেব, শান্তনু মজুমদার, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনির্মল বিশ্বাস, সুজিতকৃষ্ণ হালদার, পদ্মশ্রী মজুমদার, মিতালি দে, সঞ্চয়িতা রায়, জিতেন্দ্র নাথ, সিদ্ধার্থ নাথ, প্রতিমা দেববর্মা, আদিমা মজুমদার, সুবল চক্রবর্তী, আলপনা নাথ, সত্যেন্দ্র দাস, সাগর শর্মা, কানন দাশগুপ্তা সোম, শিবনাথ সিংহ, রাজকুমার ধর, মাহফুজ রিপন, পরিমল কর্মকার, সমর চক্রবর্তী, বিজন বোস, হেমন্ত দেবনাথ, ইন্দ্রজিৎ পাল, অনিমেষ নাথ, অমিতা নাথ, গোপালচন্দ্র দাস, রাণা চক্রবর্তী, মিলন দেব, হরিহর ভট্টাচার্য ও হৃষিকেশ নাথ
কাব্য বিভাগের শেষে রয়েছে দীপক নাথের দশটি ধাঁধা যার উত্তর দেওয়া আছে নীচে যদিও তা খুঁজে পেতেও ধাঁধায় পড়তে হবে পাঠকের পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় বিশিষ্ট দুই সংবর্ধিত ব্যক্তিত্ব শিল্পী, সাহিত্যিক দীপ্তেন্দু নাগ ও লেখক, শিল্পী সুব্রতা ভট্টাচার্য (নাথ)-এর সচিত্র পরিচিতি সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্রচ্ছদে স্পষ্টতার অভাব থাকলেও, পরিমাণে কম কিছু বানানজনিত ত্রুটি থাকলেও এবং ছাপার মান, অক্ষর বিন্যাস মোটামুটি ধরনের হলেও এক প্রচ্ছন্ন নিবেদন যেন ফুটে ওঠে পত্রিকার গভীরে

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগাযোগ - ৯৮৬২৬৭৭৭৫২  

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...