সাহিত্যের প্রচলিত ধারাসমূহের মধ্যে এক বিশেষ স্থানের অধিকারী হচ্ছে নাট্যসাহিত্য। এক সময় বিভিন্ন ভাষায় রচিত হয়েছে একাধিক বিখ্যাত, সাড়া জাগানো এবং মঞ্চ সফল নাটক। এক থেকে পাঁচ অঙ্কের নাটক অভিনীত হয়েছে বিখ্যাত সব মঞ্চে। ইতিহাস ঘাটলে উঠে আসে সেসব যদিও এই ধারাটি যে বর্তমানে অনেকটাই স্তিমিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মূল কারণ চলচ্চিত্রের এবং একের পর এক মাধ্যমের ও নানা আঙ্গিকের আবিষ্কার। বাংলা ভাষায়ও রয়েছে একাধিক নাটক যেগুলো লিপিবদ্ধ রয়েছে সাহিত্যের ইতিহাসে। সেসব নামোল্লেখের প্রয়োজন নেই। কিন্তু আজকের দিনে সেভাবে নাটক আর রচিত হচ্ছে না যদিও বিলুপ্ত হয়ে যায়নি একেবারেই। তারই উদাহরণ সদ্য প্রকাশিত সাতটি একাঙ্ক নাটকের সংকলন ‘রঙ্গমঞ্চে একা’। নাট্যকার বিশিষ্ট লেখক ঋতা চন্দ। মূলত কবি, গল্পকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও এটি তাঁর দ্বিতীয় নাটকের বই। একেবারেই একটি ব্যতিক্রমী কাজ যে করেছেন তিনি তাতে কোনও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
৯০ পৃষ্ঠার এই সংকলনে রয়েছে একাধিক দৃশ্য সংবলিত সাতটি একাঙ্ক নাটক। ছোট থেকে বড়দের দ্বারা অভিনয়যোগ্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই নাটকগুলি লেখা হয়েছে। নাটকের বিভিন্ন আঙ্গিকের মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে তার বিষয়বস্তু। বস্তুত নাটকের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মূলত প্রতিবাদ ও শ্লেষের মাধ্যমে সমাজের অনিয়ম, শৃঙ্খলহীনতার বিরুদ্ধে এক জীবন্ত দলিল হিসেবেই রচিত হয়েছে বেশির ভাগ নাটক, গণজাগরণের এক সুস্পষ্ট মাধ্যম। আলোচ্য গ্রন্থেও ব্যত্যয় ঘটেনি এই পরম্পরার। এই সংকলন প্রকাশের পিছনে রয়েছে এক ধারাবাহিক গরজ ও শিল্পমনষ্কতার আবেদন যা ভূমিকায় অনেকাংশেই ব্যক্ত করেছেন একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে অভিজ্ঞতাপ্রসূত লেখক ঋতা চন্দ, যিনি নাটক লিখেছেন বাংলা, হিন্দি ও আঞ্চলিক ভাষায় এবং অধিকাংশ নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মঞ্চে।
সংকলনের প্রথমেই রয়েছে একক অভিনয়ের নাটক ‘রঙ্গমঞ্চে একা’। সমাজ, সরকারে দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার শ্লেষ। ধ্বস্ত সমাজ, ধ্বস্ত জীবনচর্চার মধ্যে প্রেম, ভালোবাসার বন্ধনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা একটি মানুষের বিধ্বস্ত পথ চলার কাহিনি। একক অভিনয়ের জন্য যথাযথ একটি নাটক। দশটি দৃশ্যসংবলিত, সকলনের দীর্ঘতম দ্বিতীয় নাটক ‘ঝড়-বৃষ্টি-রোদে’-এ ধরে রাখা হয়েছে একাধারে দাম্পত্য যাপনের টক-ঝাল-মিষ্টি, নারীবাদ - নারীজীবন ও সম্পর্কের জটিলতার চমৎকার নিদর্শন। সুখসমাপনে একটি উপভোগ্য এবং অভিনয়যোগ্য নাটক। হাস্যরসাত্মক নাটক ‘হাড়কিপটে হারাধন’-এ নাট্যকার পর্দাফাঁস করেছেন কিপটেমির হদ্দ মানুষদের কীর্তিকলাপ। চতুর্থ নাটক ‘আমাদের বাঁচতে দাও’। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে লেখা এই নাটকে চমৎকার শৈলীতে তুলে ধরা হয়েছে গাছেদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা। ছোটদের দ্বারা অভিনয়যোগ্য এই নাটকে কুশীলবদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা একগুচ্ছ শিক্ষামূলক বার্তাও তুলে ধরে নাটকীয় উপস্থাপনায়।
এর পরের নাটক ‘আত্মবিশ্বাস’। এক কালো মেয়ের আলোর কাহিনি। অথচ গাত্রবর্ণ কালো হলে সমাজে আজও কত মেয়েকেই সহ্য করতে হয় স্পষ্ট বা অস্পষ্ট লাঞ্ছনা, গঞ্জনা তারই প্রকাশ এই নাটক। এক প্রত্যয়িত সাফল্যের কাহিনি। ষষ্ঠ নাটক ‘প্রত্যাশা’য় তুলে ধরা হয়েছে উঠতি প্রজন্মকে নিয়ে অভিভাবকদের আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা যে আখেরে কতটা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে তারই বর্ণনা। অনেকটা সার্থক ছোটগল্পের আঙ্গিকে এই নাটকের সমাপন নি:নন্দেহে ব্যতিক্রমী। ব্যতিক্রমী কারিগরি দিক দিয়েও। ভাবতে শেখায় দর্শক, শ্রোতা - মানুষকে। শেষ নাটক ‘গোধূলির নীড়’। একটি বৃদ্ধাশ্রমকে প্রেক্ষাপট হিসেবে নিয়ে এগিয়েছে নাটক। আবাসিকদের সুখ-দুঃখের নানা বিচিত্র রসায়ন সংলাপে সংলাপে, হাসি-কান্নায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি উন্মোচিত হয়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা স্খলিত আদর্শের নগ্ন রূপ।
সব মিলিয়ে প্রতিটি নাটকই যেমন উপভোগ্য হওয়ার যোগ্য তেমনই অভিনয়যোগ্য এবং বার্তাবহ - যা নাটকের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সংকলন গ্রন্থটির কাগজের মান, ছাপার স্পষ্টতা যথাযথ। প্রথম দিকে বানান বিভ্রাট অধিক হলেও শেষার্ধে ততটা নেই। নাট্যকারের নির্ধারিত কিছু নাটককে ‘নাটক’ এবং কিছু নাটককে ‘নাটিকা’ শ্রেণিতে বিভাজনের ভিত্তি সংজ্ঞা অনুযায়ী কতটা যথার্থ হয়েছে তা নিয়ে দ্বিমত থাকতেও পারে। নাট্যকার নির্দেশিত মঞ্চসজ্জা, আবহ ইত্যাদি অভিনয় ক্ষেত্রে যথাযথ পালিত হলে সর্বাংশে সার্থক হবে মঞ্চায়ন। নূর আহমেদ চৌধুরীর প্রচ্ছদ অর্থবহ ও নান্দনিক। নাট্যকার ঋতা চন্দ গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন ‘প্রয়াত অধ্যাপক, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং নাট্যপ্রেমী অরবিন্দ চৌধুরীর পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশে’।
৯০ পৃষ্ঠার এই সংকলনে রয়েছে একাধিক দৃশ্য সংবলিত সাতটি একাঙ্ক নাটক। ছোট থেকে বড়দের দ্বারা অভিনয়যোগ্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই নাটকগুলি লেখা হয়েছে। নাটকের বিভিন্ন আঙ্গিকের মধ্যে অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে তার বিষয়বস্তু। বস্তুত নাটকের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় মূলত প্রতিবাদ ও শ্লেষের মাধ্যমে সমাজের অনিয়ম, শৃঙ্খলহীনতার বিরুদ্ধে এক জীবন্ত দলিল হিসেবেই রচিত হয়েছে বেশির ভাগ নাটক, গণজাগরণের এক সুস্পষ্ট মাধ্যম। আলোচ্য গ্রন্থেও ব্যত্যয় ঘটেনি এই পরম্পরার। এই সংকলন প্রকাশের পিছনে রয়েছে এক ধারাবাহিক গরজ ও শিল্পমনষ্কতার আবেদন যা ভূমিকায় অনেকাংশেই ব্যক্ত করেছেন একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক হিসেবে অভিজ্ঞতাপ্রসূত লেখক ঋতা চন্দ, যিনি নাটক লিখেছেন বাংলা, হিন্দি ও আঞ্চলিক ভাষায় এবং অধিকাংশ নাটকই মঞ্চস্থ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন মঞ্চে।
সংকলনের প্রথমেই রয়েছে একক অভিনয়ের নাটক ‘রঙ্গমঞ্চে একা’। সমাজ, সরকারে দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার শ্লেষ। ধ্বস্ত সমাজ, ধ্বস্ত জীবনচর্চার মধ্যে প্রেম, ভালোবাসার বন্ধনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা একটি মানুষের বিধ্বস্ত পথ চলার কাহিনি। একক অভিনয়ের জন্য যথাযথ একটি নাটক। দশটি দৃশ্যসংবলিত, সকলনের দীর্ঘতম দ্বিতীয় নাটক ‘ঝড়-বৃষ্টি-রোদে’-এ ধরে রাখা হয়েছে একাধারে দাম্পত্য যাপনের টক-ঝাল-মিষ্টি, নারীবাদ - নারীজীবন ও সম্পর্কের জটিলতার চমৎকার নিদর্শন। সুখসমাপনে একটি উপভোগ্য এবং অভিনয়যোগ্য নাটক। হাস্যরসাত্মক নাটক ‘হাড়কিপটে হারাধন’-এ নাট্যকার পর্দাফাঁস করেছেন কিপটেমির হদ্দ মানুষদের কীর্তিকলাপ। চতুর্থ নাটক ‘আমাদের বাঁচতে দাও’। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে লেখা এই নাটকে চমৎকার শৈলীতে তুলে ধরা হয়েছে গাছেদের বাঁচিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা। ছোটদের দ্বারা অভিনয়যোগ্য এই নাটকে কুশীলবদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা একগুচ্ছ শিক্ষামূলক বার্তাও তুলে ধরে নাটকীয় উপস্থাপনায়।
এর পরের নাটক ‘আত্মবিশ্বাস’। এক কালো মেয়ের আলোর কাহিনি। অথচ গাত্রবর্ণ কালো হলে সমাজে আজও কত মেয়েকেই সহ্য করতে হয় স্পষ্ট বা অস্পষ্ট লাঞ্ছনা, গঞ্জনা তারই প্রকাশ এই নাটক। এক প্রত্যয়িত সাফল্যের কাহিনি। ষষ্ঠ নাটক ‘প্রত্যাশা’য় তুলে ধরা হয়েছে উঠতি প্রজন্মকে নিয়ে অভিভাবকদের আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা যে আখেরে কতটা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে তারই বর্ণনা। অনেকটা সার্থক ছোটগল্পের আঙ্গিকে এই নাটকের সমাপন নি:নন্দেহে ব্যতিক্রমী। ব্যতিক্রমী কারিগরি দিক দিয়েও। ভাবতে শেখায় দর্শক, শ্রোতা - মানুষকে। শেষ নাটক ‘গোধূলির নীড়’। একটি বৃদ্ধাশ্রমকে প্রেক্ষাপট হিসেবে নিয়ে এগিয়েছে নাটক। আবাসিকদের সুখ-দুঃখের নানা বিচিত্র রসায়ন সংলাপে সংলাপে, হাসি-কান্নায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি উন্মোচিত হয়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা স্খলিত আদর্শের নগ্ন রূপ।
সব মিলিয়ে প্রতিটি নাটকই যেমন উপভোগ্য হওয়ার যোগ্য তেমনই অভিনয়যোগ্য এবং বার্তাবহ - যা নাটকের একটি অপরিহার্য অঙ্গ। সংকলন গ্রন্থটির কাগজের মান, ছাপার স্পষ্টতা যথাযথ। প্রথম দিকে বানান বিভ্রাট অধিক হলেও শেষার্ধে ততটা নেই। নাট্যকারের নির্ধারিত কিছু নাটককে ‘নাটক’ এবং কিছু নাটককে ‘নাটিকা’ শ্রেণিতে বিভাজনের ভিত্তি সংজ্ঞা অনুযায়ী কতটা যথার্থ হয়েছে তা নিয়ে দ্বিমত থাকতেও পারে। নাট্যকার নির্দেশিত মঞ্চসজ্জা, আবহ ইত্যাদি অভিনয় ক্ষেত্রে যথাযথ পালিত হলে সর্বাংশে সার্থক হবে মঞ্চায়ন। নূর আহমেদ চৌধুরীর প্রচ্ছদ অর্থবহ ও নান্দনিক। নাট্যকার ঋতা চন্দ গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন ‘প্রয়াত অধ্যাপক, লেখক, প্রাবন্ধিক এবং নাট্যপ্রেমী অরবিন্দ চৌধুরীর পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশে’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক - উষা প্রকাশনী, হাইলাকান্দি
মূল্য - ১৫০ টাকা, যোগাযোগ - ৯৪৩৫৫৭৮৯৭১
মূল্য - ১৫০ টাকা, যোগাযোগ - ৯৪৩৫৫৭৮৯৭১

Comments
Post a Comment