সাধারণ অর্থে
বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত
করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা। যেমনটি
করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে। অপরদিকে
সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে
এনে হুবহু (শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে)
একত্রীকরণ। সেই
হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয়, একটি সংকলন গ্রন্থ। বিস্তারিত
জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক (সংকলক) সত্যজিৎ
নাথের বিস্তৃত ভূমিকায়। পুরো
ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে
ধরা হলো এখানে -
‘সালটা ১৯৯০। ‘দৈনিক সোনার কাছাড়’-এ একবছর হল আসা-যাওয়া করছি। চাকরির
বয়স হয়নি তাই চাকরি নয়, এই ‘আসা-যাওয়া’। ….হঠাৎ করেই একদিন ভূত
চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব। ‘…সেই শুরু। অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে
পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো
পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে। ...একটা দৃঢ় বিশ্বাস কাজ করত প্রথম
প্রথম যে পত্রিকা বিক্রি করে খরচ সামলে নেওয়া যাবে। তবে সেটাই ছিল আমার সব চেয়ে বড়
ভুল। ...শুধু শুভকামনা দিয়ে আর যাই হোক পত্রিকা বের করা যায় না নিয়মিত। ...দীর্ঘ
তিন বছর চালানোর পর বুকে পাথর চাপা দিয়ে অক্টোবর ১৯৯২ সালে শারদ সংখ্যা প্রকাশের পর ‘ঋতুপর্ণ’ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত
নিতে হল। ...অকালমৃত্যু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। আর হল
না শেষরক্ষা। কিন্তু একটা দায়বদ্ধতা কুরে কুরে খেত প্রায়ই। ...’ঋতুপর্ণ’র কথা অনেকেই
জানেন না আজ। নাই বা জানতে পারেন... কিন্তু যাঁরা লিখেছিলেন সেসময়, তাঁদের লেখা
যাতে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে না যায়, সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’
প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত...।’
যেন এক স্বজনবিয়োগের ব্যথা। একজন পত্রিকা সম্পাদক যে কতখানি দায়বদ্ধ ও স্নেহশীল তাঁর পত্রিকার প্রতি তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই মানবিক ভূমিকার শেষ পরিচ্ছদে ভূমিকাকারের বয়ানটিও এক আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তিনি লিখছেন - ‘আমার প্রায় চারমাসের পরিশ্রমের ফসল আপনাদের সামনে। লিটল ম্যাগাজিন যাঁরাই ভালোবাসেন এ সংকলন তাঁদের উৎসর্গ করলাম। ভালো-মন্দ সব মতামত মাথা পেতে নেব। একটা ছোট প্রস্তাব, ‘দয়া করে কোনও লিটল ম্যাগাজিনের সৌজন্য সংখ্যা আশা করবেন না, লিটল ম্যাগাজিন কিনে পড়াই সৌজন্য।’ নি:সন্দেহে অসাধারণ একটি ভূমিকা, যেখানে অতীত থেকে তুলে আনা এক সাহিত্য-সংগ্রামের ইতিহাসের পাশাপাশি রয়েছে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্ষেত্রটির এক গভীর চিন্তাভাবনা ও আশা আকাঙ্ক্ষা। একজন নির্মোহ সংগ্রামী, একজন নিরলস সাহিত্যপ্রেমী ও সাহিত্যসেবীর কাছ থেকেই এমন উদ্বেগ, এমন দায়বদ্ধতা আশা করা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে গ্রন্থকার নিজেই এখানে ‘সংকলন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
পরিসরের অভাবে নির্বাচিত প্রতিটি লেখার উপর আলাদা টিপ্পনি করা সম্ভব না হলেও একথা অনস্বীকার্য যে ধারে ও ভারে প্রকৃতার্থেই ‘নির্বাচিত’ প্রতিটি লেখা। লেখাসমূহের মান কতটা উৎকৃষ্ট ছিল তার এক স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাবে রচনাসমূহের নিবিড়পাঠে। আলোচ্য নির্বাচিত লেখালেখির সংকলনে সংকলিত হয়েছে পরেশ দত্ত-এর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘রীতেন নিখোঁজ’-এর দুটি সংখ্যায় প্রকাশিত অংশ। স্বভাবতই অসমাপ্ত। সত্য ঘটনার আদলে প্রকৃত নামধাম-এর সন্নিবেশে একটি জমজমাট উপন্যাসের শুরুর অংশ পাঠে জেগে উঠবেই এক পূর্ণপাঠের তৃষ্ণা। যাঁদের নানা স্বাদের নির্বাচিত ছোটগল্প রয়েছে তাঁরা হলেন - শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী (২টি), পরেশ দত্ত, বিভূতি ভূষণ গোস্বামী (২টি), নির্মল শর্মা, শিবানী ভট্টাচার্য, তমোজিৎ ভট্টাচার্য, অর্চনা পুরকায়স্থ ও সত্যজিৎ নাথ।
নিবন্ধ/বিশেষ রচনা বিভাগের লেখকরা হলেন - আশুতোষ দাস, অরবিন্দ বৈষ্ণব, ড. শিবতপন বসু, বিভূতি ভূষণ গোস্বামী, গণেশ দে, দীনেশ লাল রায় ও শংকর দেব। রয়েছে সুশান্ত করের একটি দুই পৃষ্ঠাব্যাপী কবিতা। এছাড়া সুপাঠ্য কবিতা লিখেছেন - করুণা রঞ্জন ভট্টাচার্য, ছবি গুপ্তা, শ্যামল বৈদ্য, বুদ্ধদেব দাস, মন্টু দাস, রাজীব ভট্টাচার্য, বিমলকান্তি দাস, বিভূতি ভূষণ গোস্বামী, তুষার কান্তি নাথ, শতদল আচার্য, রফিকুল ইসলাম, স্মৃতি পাল (নাথ), স্বপন দেবনাথ, মতিউর রহমান চৌধুরী, আমান উল্লাহ খান লেবু, আলোক রঞ্জন ভট্টাচার্য, শিবানী ভট্টাচার্য, প্রদীপ কান্তি দাস, রিপন কুমার নাথ, দেবাশীষ দেব চৌধুরী ও সত্যজিৎ নাথ। অনুবাদ কবিতা বিভাগে রয়েছে অসমিয়া ভাষার বিশিষ্ট কবি নবকান্ত বরুয়া ও প্রয়াগ শইকিয়ার কবিতা। অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট কবি ছবি গুপ্তা। শেষ পাতায় রয়েছে শিল্পজিৎ পালের কথা ও এল মণিগোপাল সিংহের সুরে একটি গানের কথা।
কবি, লেখকদের নামের তালিকাটি এখানে বিশেষ দ্রষ্টব্য। দেখা যায় তৎকালিক সাহিত্য জগতের বহু বিশিষ্ট কবি লেখকদের রচনা সন্নিবিষ্ট হয়েছে পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায়। ৯৬ পৃষ্ঠার আলোচ্য গ্রন্থটির প্রতিটি নির্বাচিত ও সংকলিত রচনার শেষে সংশ্লিষ্ট সংখ্যাটির উল্লেখ রয়েছে।
ছাপা, কাগজের মান, বাঁধাই, অক্ষর-বিন্যাস, অলংকরণ, নির্বাচন আদি যথেষ্ট চলনসই ও সুচিন্তিত। নবজিৎ পালের প্রচ্ছদ ও পীযূষ কান্তি দাসের নামাঙ্কন নান্দনিক। কবি লেখকদের নামের বানানে মধ্যনাম যেভাবে আলাদাভাবে লেখা হয়েছে সেভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে আলোচনায়। সব মিলিয়ে এক মনোজ্ঞ, গর্বিত ফিরে দেখা - এক নিবেদিত সাহিত্যচর্চার ইতিকথা ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’।
যেন এক স্বজনবিয়োগের ব্যথা। একজন পত্রিকা সম্পাদক যে কতখানি দায়বদ্ধ ও স্নেহশীল তাঁর পত্রিকার প্রতি তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই মানবিক ভূমিকার শেষ পরিচ্ছদে ভূমিকাকারের বয়ানটিও এক আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। তিনি লিখছেন - ‘আমার প্রায় চারমাসের পরিশ্রমের ফসল আপনাদের সামনে। লিটল ম্যাগাজিন যাঁরাই ভালোবাসেন এ সংকলন তাঁদের উৎসর্গ করলাম। ভালো-মন্দ সব মতামত মাথা পেতে নেব। একটা ছোট প্রস্তাব, ‘দয়া করে কোনও লিটল ম্যাগাজিনের সৌজন্য সংখ্যা আশা করবেন না, লিটল ম্যাগাজিন কিনে পড়াই সৌজন্য।’ নি:সন্দেহে অসাধারণ একটি ভূমিকা, যেখানে অতীত থেকে তুলে আনা এক সাহিত্য-সংগ্রামের ইতিহাসের পাশাপাশি রয়েছে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্ষেত্রটির এক গভীর চিন্তাভাবনা ও আশা আকাঙ্ক্ষা। একজন নির্মোহ সংগ্রামী, একজন নিরলস সাহিত্যপ্রেমী ও সাহিত্যসেবীর কাছ থেকেই এমন উদ্বেগ, এমন দায়বদ্ধতা আশা করা যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে গ্রন্থকার নিজেই এখানে ‘সংকলন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
পরিসরের অভাবে নির্বাচিত প্রতিটি লেখার উপর আলাদা টিপ্পনি করা সম্ভব না হলেও একথা অনস্বীকার্য যে ধারে ও ভারে প্রকৃতার্থেই ‘নির্বাচিত’ প্রতিটি লেখা। লেখাসমূহের মান কতটা উৎকৃষ্ট ছিল তার এক স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাবে রচনাসমূহের নিবিড়পাঠে। আলোচ্য নির্বাচিত লেখালেখির সংকলনে সংকলিত হয়েছে পরেশ দত্ত-এর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘রীতেন নিখোঁজ’-এর দুটি সংখ্যায় প্রকাশিত অংশ। স্বভাবতই অসমাপ্ত। সত্য ঘটনার আদলে প্রকৃত নামধাম-এর সন্নিবেশে একটি জমজমাট উপন্যাসের শুরুর অংশ পাঠে জেগে উঠবেই এক পূর্ণপাঠের তৃষ্ণা। যাঁদের নানা স্বাদের নির্বাচিত ছোটগল্প রয়েছে তাঁরা হলেন - শ্যামলেন্দু চক্রবর্তী (২টি), পরেশ দত্ত, বিভূতি ভূষণ গোস্বামী (২টি), নির্মল শর্মা, শিবানী ভট্টাচার্য, তমোজিৎ ভট্টাচার্য, অর্চনা পুরকায়স্থ ও সত্যজিৎ নাথ।
নিবন্ধ/বিশেষ রচনা বিভাগের লেখকরা হলেন - আশুতোষ দাস, অরবিন্দ বৈষ্ণব, ড. শিবতপন বসু, বিভূতি ভূষণ গোস্বামী, গণেশ দে, দীনেশ লাল রায় ও শংকর দেব। রয়েছে সুশান্ত করের একটি দুই পৃষ্ঠাব্যাপী কবিতা। এছাড়া সুপাঠ্য কবিতা লিখেছেন - করুণা রঞ্জন ভট্টাচার্য, ছবি গুপ্তা, শ্যামল বৈদ্য, বুদ্ধদেব দাস, মন্টু দাস, রাজীব ভট্টাচার্য, বিমলকান্তি দাস, বিভূতি ভূষণ গোস্বামী, তুষার কান্তি নাথ, শতদল আচার্য, রফিকুল ইসলাম, স্মৃতি পাল (নাথ), স্বপন দেবনাথ, মতিউর রহমান চৌধুরী, আমান উল্লাহ খান লেবু, আলোক রঞ্জন ভট্টাচার্য, শিবানী ভট্টাচার্য, প্রদীপ কান্তি দাস, রিপন কুমার নাথ, দেবাশীষ দেব চৌধুরী ও সত্যজিৎ নাথ। অনুবাদ কবিতা বিভাগে রয়েছে অসমিয়া ভাষার বিশিষ্ট কবি নবকান্ত বরুয়া ও প্রয়াগ শইকিয়ার কবিতা। অনুবাদ করেছেন বিশিষ্ট কবি ছবি গুপ্তা। শেষ পাতায় রয়েছে শিল্পজিৎ পালের কথা ও এল মণিগোপাল সিংহের সুরে একটি গানের কথা।
কবি, লেখকদের নামের তালিকাটি এখানে বিশেষ দ্রষ্টব্য। দেখা যায় তৎকালিক সাহিত্য জগতের বহু বিশিষ্ট কবি লেখকদের রচনা সন্নিবিষ্ট হয়েছে পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যায়। ৯৬ পৃষ্ঠার আলোচ্য গ্রন্থটির প্রতিটি নির্বাচিত ও সংকলিত রচনার শেষে সংশ্লিষ্ট সংখ্যাটির উল্লেখ রয়েছে।
ছাপা, কাগজের মান, বাঁধাই, অক্ষর-বিন্যাস, অলংকরণ, নির্বাচন আদি যথেষ্ট চলনসই ও সুচিন্তিত। নবজিৎ পালের প্রচ্ছদ ও পীযূষ কান্তি দাসের নামাঙ্কন নান্দনিক। কবি লেখকদের নামের বানানে মধ্যনাম যেভাবে আলাদাভাবে লেখা হয়েছে সেভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে আলোচনায়। সব মিলিয়ে এক মনোজ্ঞ, গর্বিত ফিরে দেখা - এক নিবেদিত সাহিত্যচর্চার ইতিকথা ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক -
নতুন দিগন্ত প্রকাশনী, শিলচর
মূল্য - ২০০ টাকা, যোগাযোগ - ৯৪৩৫৩৭৩৮১৪
মূল্য - ২০০ টাকা, যোগাযোগ - ৯৪৩৫৩৭৩৮১৪
এ আলোচনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা। আমাকে সাহস যোগাবে।
ReplyDeleteশুভেচ্ছা সত্যজিৎ
ReplyDelete