জীবনের বেশির
ভাগ সময় নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহরে কাটালেও গল্পকার সুব্রত দত্ত বর্তমানে আসামের বাসিন্দা। সহজ, সরল গদ্যের হাতটি তাঁর বরাবরই সাবলীল - তা সে ভ্রমণ কাহিনিই
হোক বা ছোটগল্প কিংবা মুক্ত গদ্য। একাধিক
রচনা প্রকাশিত হলেও পাদপ্রদীপের আলোয় না আসার মূল কারণ হচ্ছে তাঁর প্রচারবিমুখতা। সম্প্রতি
প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম ছোটগল্পের সংকলন ‘জলসাঘরের বিস্মৃত নায়ক’। ৩১১
পৃষ্ঠার বিশাল গ্রন্থটিতে রয়েছে মোট ২০টি গল্প। কিন্তু
নিছক গল্প সংকলন হিসেবে একে অভিহিত করা যাবে না মোটেও। এটি
আসলে একটি নন-ফিকশনাল অটোবায়োগ্রাফি। একটি
কালানুক্রমিক ঘটনাসমূহের সমাহার। সচরাচর
এমন ব্যতিক্রমী আঙ্গিকের গ্রন্থ প্রকাশিত হতে দেখা যায় না এ অঞ্চলে। সেদিক
থেকে নিতান্তই এক ব্যতিক্রমী প্রকাশ। বাংলা
সাহিত্যে এমন কিছু কালজয়ী রচনার হদিশ পাওয়া যায়। প্রাপ্ত
তথ্যানুযায়ী তালিকায় রয়েছে রাসসুন্দরী দেবীর ‘আমার জীবন’, শামসুর রহমানের ‘স্মৃতির শহর’, কালের ধুলোয় লেখা’, বুদ্ধদেব বসুর ‘আমার ছেলেবেলা’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ ইত্যাদি।
সুবল চরিত্রটির মাধ্যমে গল্পকার তাঁর জীবনে আরব্ধ অভিজ্ঞতাসমূহের স্থিরচিত্র অঙ্কন করেছেন একের পর এক গল্পে, স্থান-কাল-পাত্রের অপরিবর্তিত উল্লেখের মাধ্যমে। সুবলের জীবনকাহিনি এগিয়েছে কালের সূত্র মেনে ঘটনার ঘনঘটায় তরতরিয়ে। সুব্রতর গল্প বা গদ্যের এক সরলরৈখিক ছাঁদ রয়েছে যা একাধারে সাধারণ থেকে ঋদ্ধ পাঠকের সাহিত্যরসনা মিটিয়ে চলে নিরন্তর। প্রাঞ্জল আঙ্গিক এবং কাঙ্ক্ষিত সমাপনের লক্ষ্যে টানটান গদ্য নিরন্তর আটকে রাখে পাঠকমনন। এ নিয়ে গ্রন্থের শুরুতেই দীর্ঘ ছয় পৃষ্ঠাব্যাপী একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস ‘জলসাঘরের মায়ামুকুরে সুবলের মুখোমুখি সুব্রত’ শিরোনামে। ভূমিকায় গল্প ও গল্পকারকে সর্বাংশে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। নিঃসন্দেহে এক চমৎকার ভূমিকা। ‘নিজের কথা’য় গল্পকার লিখছেন - ‘…সূর্যটা মধ্যগগন অতিক্রম করে অনেকটাই ঝুঁকেছে। ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে দীর্ঘতর। একসময় সেটি আরও দীর্ঘতর হয়ে একাকার হবে তিমিরে। পশ্চিমাকাশে সূর্যটা হেলে পড়বার পূর্বেই, অপরাহ্ণ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, শিকিভাগ বাকি থাকতেই, দিনের টুকরো টুকরো খতিয়ান তুলে ধরবার খতিয়ান। অস্তাচলে পৌঁছবার পূর্বেই আড়ম্বরহীন জীবনের ফেলে আসা সময়েরকিছু কিছু পদচিহ্নের গতিবিধির দলিল রেখে যাওয়ার বাসনা...।’
আলাদা করে প্রতিটি গল্পের আলোচনা পরিসরের অভাবে সম্ভব না হলেও এটা হলফ করেই বলা যায় যে প্রতিটি গল্পেই লেখক ঘটনাক্রমের পরিণতির দিকে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন গল্পকে যে পাঠকের পক্ষে গল্পপাঠ অসম্পূর্ণ রেখে থেমে যাওয়া শুধু মুশকিলই নয়, অসম্ভবও বটে। কিছু গল্পে যেমন রয়েছে নিখাদ হাস্যরসাত্মক ঘটনাবলি তেমনি বহু গল্পে রয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপট। টানটান এগোয় গল্প। প্রেম-ভালোবাসা, সম্পর্কের রসায়ন, বন্ধুকৃত্য আদির সমাহারে উদারচিত্ত সুবল চরিত্রটি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। কিছু গল্প হয়ে ওঠে আদ্যোপান্ত এক সার্থক ছোটগল্প তবু ব্যাহত হয় না ধারাবাহিকতা। প্রায় প্রতিটি গল্পেরই মতো গ্রন্থনাম শীর্ষক শেষ ছোট গল্পেও মহাকুম্ভযাত্রার বর্ণনায় লেখকের/সুবলের উদারচিত্ত ভাবনার প্রতিফলন পাঠক হৃদয়ে নিশ্চিতই দোলা জাগাবে।
একাধিক ক্ষেত্রে তৎসম শব্দের অনাবশ্যক প্রয়োগ মনে হলেও সব মিলিয়ে মুখে বলা গল্পের আদলে সহজ স্বাভাবিক গদ্যের আঙ্গিকে এক সুখপাঠ্য ছোটগল্পের সমাহার। পেপারব্যাকের দুই মলাটের ভিতর স্পষ্ট ছাপা ও অক্ষরবিন্যাস। আমিনুর রহমানের প্রচ্ছদ পরিকল্পনা যথাযথ। প্রথমদিককার গল্পে বানান ভুলের আধিক্য নজরে এলেও ক্রমে ক্রমে তা কমে এসেছে অনেকটাই। লেখক গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর অগ্রজের স্মৃতির উদ্দেশে।
সুবল চরিত্রটির মাধ্যমে গল্পকার তাঁর জীবনে আরব্ধ অভিজ্ঞতাসমূহের স্থিরচিত্র অঙ্কন করেছেন একের পর এক গল্পে, স্থান-কাল-পাত্রের অপরিবর্তিত উল্লেখের মাধ্যমে। সুবলের জীবনকাহিনি এগিয়েছে কালের সূত্র মেনে ঘটনার ঘনঘটায় তরতরিয়ে। সুব্রতর গল্প বা গদ্যের এক সরলরৈখিক ছাঁদ রয়েছে যা একাধারে সাধারণ থেকে ঋদ্ধ পাঠকের সাহিত্যরসনা মিটিয়ে চলে নিরন্তর। প্রাঞ্জল আঙ্গিক এবং কাঙ্ক্ষিত সমাপনের লক্ষ্যে টানটান গদ্য নিরন্তর আটকে রাখে পাঠকমনন। এ নিয়ে গ্রন্থের শুরুতেই দীর্ঘ ছয় পৃষ্ঠাব্যাপী একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস ‘জলসাঘরের মায়ামুকুরে সুবলের মুখোমুখি সুব্রত’ শিরোনামে। ভূমিকায় গল্প ও গল্পকারকে সর্বাংশে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। নিঃসন্দেহে এক চমৎকার ভূমিকা। ‘নিজের কথা’য় গল্পকার লিখছেন - ‘…সূর্যটা মধ্যগগন অতিক্রম করে অনেকটাই ঝুঁকেছে। ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হতে হতে দীর্ঘতর। একসময় সেটি আরও দীর্ঘতর হয়ে একাকার হবে তিমিরে। পশ্চিমাকাশে সূর্যটা হেলে পড়বার পূর্বেই, অপরাহ্ণ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, শিকিভাগ বাকি থাকতেই, দিনের টুকরো টুকরো খতিয়ান তুলে ধরবার খতিয়ান। অস্তাচলে পৌঁছবার পূর্বেই আড়ম্বরহীন জীবনের ফেলে আসা সময়েরকিছু কিছু পদচিহ্নের গতিবিধির দলিল রেখে যাওয়ার বাসনা...।’
আলাদা করে প্রতিটি গল্পের আলোচনা পরিসরের অভাবে সম্ভব না হলেও এটা হলফ করেই বলা যায় যে প্রতিটি গল্পেই লেখক ঘটনাক্রমের পরিণতির দিকে এমনভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন গল্পকে যে পাঠকের পক্ষে গল্পপাঠ অসম্পূর্ণ রেখে থেমে যাওয়া শুধু মুশকিলই নয়, অসম্ভবও বটে। কিছু গল্পে যেমন রয়েছে নিখাদ হাস্যরসাত্মক ঘটনাবলি তেমনি বহু গল্পে রয়েছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপট। টানটান এগোয় গল্প। প্রেম-ভালোবাসা, সম্পর্কের রসায়ন, বন্ধুকৃত্য আদির সমাহারে উদারচিত্ত সুবল চরিত্রটি যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে ধীরে ধীরে। কিছু গল্প হয়ে ওঠে আদ্যোপান্ত এক সার্থক ছোটগল্প তবু ব্যাহত হয় না ধারাবাহিকতা। প্রায় প্রতিটি গল্পেরই মতো গ্রন্থনাম শীর্ষক শেষ ছোট গল্পেও মহাকুম্ভযাত্রার বর্ণনায় লেখকের/সুবলের উদারচিত্ত ভাবনার প্রতিফলন পাঠক হৃদয়ে নিশ্চিতই দোলা জাগাবে।
একাধিক ক্ষেত্রে তৎসম শব্দের অনাবশ্যক প্রয়োগ মনে হলেও সব মিলিয়ে মুখে বলা গল্পের আদলে সহজ স্বাভাবিক গদ্যের আঙ্গিকে এক সুখপাঠ্য ছোটগল্পের সমাহার। পেপারব্যাকের দুই মলাটের ভিতর স্পষ্ট ছাপা ও অক্ষরবিন্যাস। আমিনুর রহমানের প্রচ্ছদ পরিকল্পনা যথাযথ। প্রথমদিককার গল্পে বানান ভুলের আধিক্য নজরে এলেও ক্রমে ক্রমে তা কমে এসেছে অনেকটাই। লেখক গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর অগ্রজের স্মৃতির উদ্দেশে।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
‘জলসাঘরের বিস্মৃত নায়ক’
প্রকাশক - আনন্দ প্রকাশ, নগাঁও
মূল্য - ২৫০ টাকা
প্রকাশক - আনন্দ প্রকাশ, নগাঁও
মূল্য - ২৫০ টাকা

পড়লাম। ভালো লাগল।
ReplyDeleteধন্যবাদ।
ReplyDelete