Skip to main content

Posts

Showing posts from September, 2025

কৈশোরের পুজো ও অনামি, অনামা নদীনামা

পুজো মানেই তো স্মৃতিচারণ। মানুষের বয়স যত বাড়ে ততই পুজোর বিবর্তন দেখে দেখে কৈশোরাভিমুখী হয় মন। ফেলে আসা দিন সততই সুখকর। তা সে যতই কঠিন হোক না কেন। কাঠিন্যও যে সদাই ঊর্ধ্বমুখী। পুরোনো কাঠিন্যকেই তাই অগ্রাধিকার দেয় মানুষ। একসময় ওটা আর কাঠিন্য হয়ে না থেকে এক প্রাপ্তি হিসেবে জায়গা করে নেয় অন্তরে। সেই যে কথায় আছে - Failure is the pillar of success. অর্থাৎ এক সময় যা ছিল অপ্রাপ্তি, পরবর্তীতে তাই যেন মনে হয় প্রাপ্তিসোপানের প্রথম ধাপ। এটা এক ধরনের প্রবৃত্তিগত অবস্থান। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে পুজো দেখার ঝক্কিও তাই আজকের চারচাকার গাড়ি করে পুজো দেখার আরামের চাইতে ভালো বলে বোধ হয়। আমরা যারা ষাট থেকে আশির দশকে জন্মেছি, যারা গ্রাম এবং শহরের পুজোর তারতম্য উপলব্ধি করেছি, যারা সাত্ত্বিকতার অবনমন ও তামসিকতার বাড়বাড়ন্ত দেখে আসছি - আমাদের মননে অতীতের পুজোর গরিবি আয়োজনই ছিল অপেক্ষাকৃত সুখকর। সেই পুজোয় আড়ম্বর হয়তো ছিল না কিন্তু ভক্তি ছিল, পুণ্যার্জনের বাসনা ছিল। অনুভব যত বাড়ছে অনুভূতির পারদও বাড়ছে ততই। এহ বাহ্য। আমাদের কাশফুল ছিল না, ছিল শিউলি বা শেফালি। ছিল ভোরের শিশিরকণায় স্নাত শিউলি কুড়োনোর আনন্দ। চর্চায়...

আমাদের মানুষ - 'ভূপেন-দা’

মহাভারতের চরিত্র ভীষ্মকে আমরা ‘ গঙ্গাপুত্র ’ বলে জানি। কিন্তু আমাদের এই রাজ্যের একজন রক্তমাংসের মানুষও যে সুরের লালিত্যে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে গেছেন - ‘ গঙ্গা আমার মা …’ তা কি আমরা ভুলতে পারি ? বস্তুত আমরা যারা ষাট থেকে আশির দশকে জন্মেছি , আমাদের কৈশোর যৌবনে এই গান আমাদের বুকে লহর তুলত , আমাদের মননে গুঞ্জন তুলত নিরন্তর। দেশের গুটিকয় নদের মধ্যে একটি বয়ে চলেছে আমাদের রাজ্যের বুক চিরে। এই মহাবাহুর পাড়ের সুসন্তান  ভূপেন হাজরিকা গেয়েছেন - ‘ গঙ্গা আমার মা , পদ্মা আমার মা। আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা। একই আকাশ , একই বাতাস - এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস। দোয়েল-কোয়েল পাখির ঠোঁটে একই মূর্ছনা … । ’ গানের কথা যেমন , তেমনি সুর আর স্বরের মাধুর্যে এই গান জায়গা করে নিয়েছিল এবং আজও নেয় এপার ওপারের বাঙালি-হৃদয়। অসম-বাংলার গ্রামে শহরে প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে এক বিশ্বজনীনতার আবহ গড়ে তুলেছিল এই গান। ভূপেন হাজরিকার নাম তখন আমাদের মুখে মুখে। পরবর্তীতে ভাষা-ধর্মের মেলবন্ধনে তাঁর অবদান আমরা জেনেছি। জেনেছি ভূপেন-দা একান্তই ‘ আমাদের মানুষ ’ । তাঁর গান , তাঁর জীবনধারা আমাদের বাধ্য করেছে সংকীর্ণতার গণ্ডিকে...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...

‘স্রোত - ত্রিপুরার উপন্যাস সংখ্যা’ বিষয়ভিত্তিক এক উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা গ্রন্থ

চর্যাপদ যুগ থেকেই বাংলা সাহিত্যে ত্রিপুরার অবস্থান সুস্পষ্ট। রাজন্য আমলে তা বিকশিত হয়েছে নিরন্তর। পরবর্তীতে রবীন্দ্র-সান্নিধ্যে গরিমান্বিত হয়েছে এই পথচলা। একটি ভাষাসাহিত্যের বয়োবৃদ্ধিতে লেগে যায় বহু কাল। সে ইতিহাস বড়ই সুখপাঠ্য। পদ, কাব্য, গদ্য থেকে শুরু করে কাহিনি ও উপন্যাসের সৃষ্টিকথা একদিকে যেমন অবশ্যজ্ঞাতব্য, অন্যদিকে এই ধারাবাহিকতার ইতিহাস নিজেই হয়ে ওঠে ভাষাসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। সেই সম্পদের পুনরাবলোকনের লক্ষ্যেই সম্প্রতি স্রোত সাহিত্য পরিবারের উদ্যোগে এবং কবি, লেখক, সম্পাদক গোবিন্দ ধরের সম্পাদনায় সংস্থার রজত জয়ন্তী বর্ষে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কুমারঘাট থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে পাঁচশতাধিক পৃষ্ঠার সম্পাদনা গ্রন্থ - ‘স্রোত - ত্রিপুরার উপন্যাস সংখ্যা’। ত্রিপুরা রাজ্যের উপন্যাস সৃষ্টির গোড়ার কথায় ‘স্রোতকথা’ শীর্ষক অবতরণিকায় রয়েছে সেই ইতিহাসকথা - ‘প্রায় শতবর্ষ আগে একটি উপন্যাস ছাপা হয়েছিল ত্রিপুরায়, এই কথা ভাবলেই ভালো লাগে। ….’রবি’ পত্রিকা সে দায়িত্ব নিয়ে ত্রিপুরাকে গৌরবান্বিত করল। আজও ‘রবি’র এই দায়িত্ব আমাদের সময়কে আলোকিত করে। ...১৮৯০ সালে ত্রিপুরার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন ‘ত্রিপুর...

একবার মৌমাছি হয়ে দেখি, হাসনুহানা ফুটেছে কেমন রাতের সরণিতে… সবুজ কবিতার কাব্যগ্রন্থ ‘আঁচল’

ডুয়ার্স থেকে জাটিঙ্গা , বরাকের পথ বেয়ে কবিতার ধারা বয়ে এসেছে যেন । তিস্তাপারের তরুণ কবি সায়ন্তন ধরের প্রথম কবিতার বই ‘ আঁচল ’ নানা রঙের এক কবিতা - কোলাজ , যে কোলাজে সবুজ হয়ে উঠেছে মণি মরকতের মতো উজ্জ্বল । উদ্ভিদবিদ কবি উত্তরপূর্বে , ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কর্মরত । স্বভাবতই বিজ্ঞান , ভাষা , মাতৃভাষা , ফেলে আসা দিনের স্মৃতি রোমন্থন , শান্তি - সম্প্রীতির অন্বেষণ , বন্ধুকৃত্য আদি বিষয়কে কবিতায় ধরে রাখলেও সায়ন্তন যেন গাছগাছালি , ফুল ফল , মাটি , অরণ্য আর প্রকৃতির কাছেই আত্ম - সমর্পিত । প্রকৃতির রূপমাধুর্য , সবুজ , অরণ্য ও নদী , তিস্তা , ডুয়ার্স থেক সান্দাক্ ‌ ফু , মেঘালয় থেকে সুন্দরবন , পাহাড় , বরফ , ডিমা হাসাও থেকে জাটিঙ্গা হয়ে বরাক পর্যন্ত প্রকৃতির নেশায় বিভোর কবির এই কাব্যগ্রন্থটি যেন প্রকৃতির আঁচলে বসে লেখা এক প্রকৃতিবন্দনা । স্বাভাবিক অর্থেই এক সার্থক গ্রন্থনাম । প্রকৃতি ছোঁয়া পেতে কবি তাই ছুটে বেড়ান এদিক ওদিক । ট্রেনের কামরায় জানালার পাশে বসে তিনি লিখেন রূপগাথা - চলন্ত ট্রেনের জানালা যেন এক চলন্ত লাইব্রেরি … পাতা ...