স্বপ্ন সফর
কিছু স্বপ্ন শৈশব বা কৈশোর থেকেই আমাদের অন্তরে গেঁথে যায়। কিন্তু তা পূর্ণ হতে দশকের পর দশক পার হয়ে যায়। তেমনই এক স্বপ্ন আজ জীবনের শেষার্ধে এসে পূর্ণ হলো।
পরম পুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের মহিমা গাথা তথা তাঁর অলৌকিক গুণাবলী খুব ছোটবেলা থেকেই শুনে শুনে তাঁর প্রতি মানসিক ভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলাম প্রবল ভাবে। স্বভাবতই রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষা নেওয়ার একটা সুপ্ত ইচ্ছে জন্মেছিল ভেতরে ভেতরে। কিন্তু পরবর্তীতে কোনও এক পারিবারিক কারণে মা-বাবার নিষেধের ফলে সে ইচ্ছে আর ফলপ্রসূ হয়নি। কিন্তু মনের গভীরে আমার সমগ্র সত্ত্বার এক বৃহৎ অংশ জুড়ে আজও ঠাকুর পরমহংস ও সারদা মায়ের প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ ও চরম ভক্তির মনোভাব বিদ্যমান।
ঠাকুরের অশেষ কৃপায় আজ জীবনের অনেকগুলো পর্যায় পেরিয়ে এসে হঠাৎ করে পরম পুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের ও জগন্মাতা সারদা দেবীর স্মৃতি বিজড়িত কামারপুকুর ও জয়রামবাটী দর্শনের সুযোগ পেয়ে ধন্য হলাম।
ঠাকুরের জন্মস্থান, স্বহস্তে রোপিত রসাল, তাঁর বাসস্থান, তাঁর একাধিক লীলাস্থান দেখতে দেখতে প্রায় হারিয়েই যাচ্ছিলাম কোনও এক স্বপ্নিল অজানায়।
ঠাকুরের ভ্রাতুস্পুত্র শিবরাম চট্টোপাধ্যায়ের চতুর্থ প্রজন্ম শ্রী তারক কুমার ঘোষাল অবিকল ঠাকুর। বর্তমানে ঠাকুরের পূজিত দেবতা রঘুবীরের মন্দিরের তিনি পূজক। তাঁকে সামনে পেয়ে প্রণাম করতে গিয়ে আবেগে দু'চোখ ভরে উঠল জলে। তা দেখে কাছে ডেকে নিয়ে প্রচলিত নিয়ম ভেঙে আমাকে ইচ্ছেমতো ফটো উঠাতে বললেন। অভিভূত আমি যেন বিচরণ করছিলাম কোন অপার্থিব জগতে। ঘোর ভাঙল এক চিল চিৎকারে। দূর থেকে এক স্বেচ্ছাসেবী বলছে-''আরে আরে করছেন কী ? ফটো উঠানো মানা আছে। খেতে আসুন, সবাই বসে গেছে''। তাকিয়ে দেখি স্ত্রী-কন্যা আমার কাণ্ড দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।
বিদায় নিয়ে গেলাম পংক্তি ভোজনে।
এরপর একে একে ঠাকুরের অজস্র স্মৃতিচিহ্ন দর্শনে আবারো মুগ্ধ হওয়ার পালা।
হালদার দীঘি, কামার পুকুর (জলাশয়), ঠাকুরের পাঠশালা, যাত্রা পালায় শিব সেজে যেখানে সমাধিস্থ হয়েছিলেন সেই মঞ্চস্থান, বেনেপুকুর, মাতৃসম ধনি কামারনীর মন্দির - সব দেখতে দেখতে ভাবছিলাম আজ যেন কোন জন্মের পুণ্য ফলে হেঁটে যাচ্ছি সে পথ ধরে - যে পথের উপর একদিন পা পড়েছিল শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের।
বিকেলে পরম পূজনীয় সারদা মায়ের বাসস্থান জয়রামবাটীতে এসে তাঁর জীবনের ব্যবহৃত ঘর সংসার, পূজার স্থান দেখেও আবার সেই ঘোর লাগা অবস্থা।
আজকের দিনে কী যে পেলাম তা কি আর ভাষায় বোঝানো যায় ? এ শুধু ভাবনায় থাকে অমলিন হয়ে।
সন্ধ্যায় ফেরার পথে তারকেশ্বর শিবের পূজা ও দর্শন আমরা তিনটে প্রাণীকে করে তুলল ভগবৎ কৃপায় আশীর্বাদ প্রাপ্ত ও সৌভাগ্যমণ্ডিত।
আজকের দিনটি সত্যিকার অর্থে জীবনের এক বিশেষ দিন হয়ে রইল।
Comments
Post a Comment