Skip to main content

হারিয়ে পাওয়া

বছর পাঁচেক আগে 'নিরুদ্দেশ সংবাদ' ধাঁচের একটি পোস্ট দিয়েছিলাম ফেসবুকের পাতায় হারিয়ে যাওয়া বালক বেলার একটি অধ্যায়ের খোঁজে একটি পরিবারকে হাতড়ে বেড়াচ্ছিলাম গত প্রায় চল্লিশটি বছর ধরে

তখন আমার পাঠশালা জীবন জগতের যাবতীয় জটিলতার প্রবেশদ্বারে পৌঁছইনি তখনও গ্রামেরই এক অন্য প্রান্তে দু'টি টিলার নীচে ছিল তাঁদের বাড়ি তখন বুঝতাম না, এখন বুঝি কী অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল সেখানে যেন ছবির মতো সাজানো গোছানো একটি নিটোল ছিমছাম সুখ-বনানী পরিবারের সবাই ছিলেন আমার বড় মাসিমা ছিলেন আর ছিল ওরা দুই ভাই, অশোক-দা আর দীপক-দা ছিল ওরা দুই বোন, বন্দনা-দি আর বাসনা-দি আমার কত যে দিন কেটেছে তাদের ঘরে, তাদেরই তত্ত্বাবধানে সকাল থেকে সন্ধ্যা সেখানেই খাওয়া দাওয়া দু' ভাই এর ন্যাওটা হয়ে পিছু পিছু ঘুরে বেড়াতাম দিনভর অশোক-দা কবিতা লিখতোআমার হাতে কাগজ কলম ধরিয়ে দিয়ে নিজে লেগে যেত কোদাল নিয়ে সব্জি ক্ষেতের পরিচর্যায় অনর্গল বলে যেত আধুনিক কবিতার লাইন আমি কাঁচা হাতে লিখে রাখতাম সেইসব দীপক-দার আখের ক্ষেতে নানা রকম ফলমূলের বাড়বাড়ন্ত মজে থাকতাম সেখানেও দিনভর
ছোটবোন বাসনা-দি ছিল আমার চাইতে সামান্য বড় বড় একটা পাত্তা টাত্তা দিত না আমাকে বড়বোন বন্দনা-দি ডানা কাটা না হলেও যথেষ্ট সুন্দরী ছিল তখনই সবার আদরে তাদের পরিবারেরই এক জন হয়ে উঠেছিলাম দিনে দিনে
এমনি ধারা দিনযাপনের মধ্যেই হঠাৎ করে একদিন গ্রাম ছেড়ে চলে গেল ওরা তখন বুঝতেই পারিনি যে আর কোনও দিন দেখতে পাব না তাদের একটা সময় যখন বুঝতে পেরেছি তখন থেকেই শুরু হয়েছে তলাশ কেউ বলতে পারেনি তাদের হদিশ যেন গায়েব হয়ে গেছিল বেমালুম
এর পর এলো ফেসবুক সবার নাম ধরে রাতের পর রাত তল্লাশি চালিয়েছি সেখানেও কিন্তু বৃথা চেষ্টা তবু হাল ছাড়িনি আর সেই অদম্য চেষ্টার ফলশ্রুতিতেই হঠাৎ করে প্রায় 'মাস আগে হদিশ পেয়ে যাই দীপক-দার আরোও খানিকটা কাঠখড় পুড়িয়ে হাসিল করে ফেলি ফোন নম্বরটাও পেয়েই কথা বলে অনেকটা হালকা করি হৃদয়
####
আজ সকালে ফোনে আবারও কথা বলে সটান গিয়ে হাজির দীপক-দার ঘরে কিন্তু হে ঈশ্বর, আমাকে কোন নিরাশার সাগরে এনে নিক্ষেপ করলে তুমি ? ছন্নছাড়া সংসারের কেমন নিদারুণ ছবি ? শারীরিক ভাবে তো বটেই খানিকটা মানসিক ভাবেও অসুস্থ দীপক-দা চল্লিশ বছর পর আমাকে দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো বুকে কিন্তু মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে চলে যায় বিস্মৃতির ঘরে নিঃসন্তান দীপক-দার স্ত্রী ঘরে বাইরে হাল সামলাতে নাজেহাল বিধ্বস্ত অবস্থা ঘরদোরের বড় ভাই অশোক-দা দিল্লিতে থাকে যোগাযোগ নেই পাশের বাড়িতে থাকা বাসনা-দির স্বামী কার্সিনোমায় আক্রান্ত
অসহ্যকর চমকের বাকি ছিল তখনও বারান্দায় ইতস্তত টহল দিচ্ছিল এক হাড় জিরজিরে আলুথালু মহিলা বৌদিকে জিজ্ঞেস করলাম, বন্দনা-দি কোথায় থাকে ? বৌদি হাতের ঈশারায় দেখিয়ে দিল সেই টহলরত মহিলাকে চোখে আমার আসন্ন বন্যার ইঙ্গিত বন্দনা-দি বলতেই জবাব দিল মনে আছে আমাকে - এটুকুই শুধু বললো আমার আর সহ্য হচ্ছিল না পাশে বসিয়ে একটা ছবি উঠিয়ে ছুটে বেরিয়ে যাওয়ার আগে যেন প্রাণপণে ধরে রেখেছিলাম চোখের জল
####
সকালে এক মন্দির দর্শনে গিয়েছিলাম সেখানে খানিকটা বসে জপ ধ্যান করে প্রসাদ খেয়ে সটান বেরিয়ে এসে পড়েছিলাম দীপক-দার বাড়ির উদ্দেশে রাস্তায় মনে পড়লো একটু প্রণামী তো ঠাকুরের শ্রী চরণে দিতে ভুলে গেছি খুব আফসোস হচ্ছিল মনে শুধু নিয়েই এলাম, দিলাম না কিছুই
অলক্ষ্যে বোধ করি অন্য কিছুই আমার জন্য রচনা করেছিলেন পরমেশ্বর আমার মন মানসে তখন স্পষ্ট নির্দেশ - যেখানে দেওয়ার সেখানেই দে আমার প্রণামী
হে ঈশ্বর তোমার করুণা ধারা বর্ষিত হোক এই নিঃস্ব পরিবারটির উপর আমার বালক বেলার সেই সুখ সহস্র গুণ বর্ধিত হয়ে ফিরে আসুক তাদের ঘরে

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়