তুমি ভাবছো কবিতা কেন লিখি ?
লিখে লিখেই সময়টাকে ধরি।
তুমি ভাবছো এই সময়ে গান ?
আমি চাই যে গানের মধ্যেই
ভাসিয়ে দিতে প্রাণ।
- - - - - - - - -
তোমার জন্যই কবিতা লিখতে হয়।
বন্ধু, তোমার জন্য গানটি গাইতে হয়।
(কবিতা - কেন ??)
এই সময়টাকে বড্ড যতনে ধরে রাখার কবিতা সংকলন - ‘সময়ে অসময়ে’। কবি সুপ্রদীপ দত্তরায়ের দ্বিতীয় কবিতা সংকলন। প্রথম সংকলন ‘প্রথম পঞ্চাশ’-এর পর স্বল্প দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হলো তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটি। মনের অতলে লুকিয়ে থাকা অজস্র ভাবনা, সমাজের পরতে পরতে যত অনিয়ম, অরাজকতা সেই সব দুঃখবোধকে সমক্ষে এনে হৃদয়টাকে হালকা করার তাগিদে কবির মননে জন্ম নেয় যত কবিতা, যত কথা - তারই স্পষ্ট প্রকাশ এই সংকলন। অনেকটাই ‘প্রথম পঞ্চাশ’-এর অনুরণন পরিলক্ষিত হয় এখানেও। তবু, কবির কবিতা এক রোখে চলে না। বিস্তৃত তার পথ চলা। ভাবনার পরিধি সুবিশাল, তাই অতৃপ্তির ক্ষোভকে উগরে দেওয়ার বাইরেও , হয়তো নিজেরই অজান্তে, মূর্ত হয়ে ওঠে ভাবনার বৈচিত্র। তাই তো কবিতায় ভেসে আসে প্রেম, ভালোবাসা, করোনার ভয়াবহতার চিত্র, নদী, নারী, কল্পনা। একজন সফল কবি হয়ে ওঠার যাবতীয় রসদ।
কিছু কবিতা যেন সজোরে আঘাত করে পাঠকের সর্বাঙ্গ জুড়ে। স্পষ্ট উচ্চারণে, কবিতার কবিতাময়তায় ইতিহাস হয়ে ওঠার লক্ষণ প্রতিভাত হয় সর্বাংশে। কবির অনুভবের সাথে পাঠকের আত্মা যেন একাকার হয়ে ওঠে। চক্রব্যূহ, নদী ও নারী, কৃষ্ণকলি, গিউলিয়া, দাঙ্গা, অবাক কথা, বৃষ্টি এলো বৃষ্টি এলো, ঠিকানা, আম্ফান, বোন মৌটুসী, খিলঞ্জিয়া, যাযাবর, একশ ত্রিশ - একের পর এক অনবদ্য কবিতা। পাঠকের ইচ্ছে হয় সবগুলি কবিতা সযতনে সাজিয়ে রাখতে হৃদয়ে, কখনো উগরে ওঠে ক্ষোভ, কখনো সিক্ত হয় দু’চোখ। নিখাদ প্রেমের কিছু অনাবিল উচ্চারণে পুলক জাগে মনে। শ্রেষ্ঠ উদাহরণ কবির ‘নীলনন্দিনী’ কবিতাখানি। ‘নীলনন্দিনী’ এবং ‘অবাক কথা’য় সুপ্ত ভালোবাসা এক অনির্ণীত ছন্দে দোলা দিয়ে যায় পাঠক হৃদয়। বস্তুতঃ ব্যাকরণের ধার না ধেরে এক গোপন ছন্দকে আপন মুন্সিয়ানায় ধরে রেখেছেন কবি তার সবগুলি কবিতায়। সুপ্রদীপের কবিতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় - কবিতায় ব্যাকরণসম্মত ছন্দই শেষ কথা নয়। ছন্দহীনতার মধ্যেও যে লুকিয়ে থাকে জীবনের ছন্দ, পঠনের আনন্দ সেই কবিতাময় মাধুর্যটিই কবিতার শেষ কথা। কবিতার অবয়বেও কবি আনতে চেয়েছেন বৈচিত্র। উদাহরণ তাঁর কঙ্কণা, টেলিফোন, প্রতীক্ষা ইত্যাদি।
কবি সুপ্রদীপ সচরাচর কবিতার দীর্ঘ অবয়বেই স্বচ্ছন্দ। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কোনও কোনও কবিতা ছাপিয়ে গেছে তার আগের দৈর্ঘও। তবু মনে হয় স্বল্প কথায় কবিতা লিখার একটি প্রয়াস যেন শুরু হলো এবার। উদাহরণ অপরাজিতা, মেঘ, তুমি ফিরে এসো সুভাষ ইত্যাদি কবিতা।
এতসব বৈচিত্রের মধ্যেই যে জায়গাটিতে কবি নিবদ্ধ করতে চেয়েছেন তাঁর পাখির চোখ তা হলো সময়ের অস্থিরতাকে চিত্রপটে খোদাই করার তাগিদ। একাধিক কবিতায় তাই ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন এই ত্রস্ত সময়কে। দেশভাগ, এন আর সি, মূল্যবোধের অবনমন, ভাষাগত ধর্মগত সাম্প্রদায়িকতা, খুন ধর্ষন আদি অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে আছে যত দুঃখবোধ, যত ভীতি - ততই আছে ক্ষোভ, আছে প্রতিবাদ। দুঃসহ সময়কে তাই ধরে রেখেছেন শব্দের কারিকুরিতে -
বাংলা মাধ্যমে এখন ভালো ছাত্রই নেই
যদি বা মেধা থাকে ছিটেফোঁটা, সামর্থ কই
টেটের ললিপপে ভিজে মজে একাকার।
দিন দিন নতুন নিয়ম, নতুন বায়নাক্কা -
তবু ‘চামচ’ আর ‘হাতা’য় কত বাহাদুরি।
সময়ে সময়ে অফিস আদালতে
বাংলা ফুঁপিয়ে কাঁদে -
বাংলা বই বিক্রি হয় না তেমন,
তবু সাড়ম্বরে কবি প্রণাম চলে।
(কবিতা - জাতীয় উৎসব),
আবার -
মনে হয় চিৎকার করে বলি
ক্ষান্ত হও, আর নয় মিথ্যার আশ্রয়।
যদি কেউ সত্যিই খিলঞ্জিয়া হয়,
তবে শুধু অসমিয়া নয়
বাগানী, বাঙালি, বড়ো, কুকি আদি
সবাই খিলঞ্জিয়া, নয়তো কেউ নয়।
(কবিতা - খিলঞ্জিয়া)
কিংবা -
তবুও যদি আমায় তুমি কোথাও খুঁজে না পাও
দেশ বিভাগের রক্ত খাদে পিছন ফিরে তাকাও
কাঁটা তারের কাঁটায় কাঁটায় আমার মাংস গাঁথা
বন্ধু, আমি ছিলাম, আমি আছি, এই শেষ কথা।
(কবিতা - ঠিকানা)
এই প্রত্যয় নিয়েই শেষ কথা বলতে চেয়েছেন কবি তাঁর কবিতার অন্তরে। আর এভাবেই সুপ্রদীপের কবিতার পথ চেয়ে পাঠকমনে জেগে ওঠে প্রত্যয়ী আশা।
কবি তাঁর এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর বাবা সুবিনয়চন্দ্র দত্তরায়কে। প্রচ্ছদ অজ্ঞাত। পরবর্তীতে প্রুফ রিডিং-এ আরোও একটু মনোযোগী হলে বানান কিংবা ছাপার ভুলের সংখ্যা নিশ্চিতই কমে আসবে অনেকটা।
- - - - - - - - - -
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
সময়ে অসময়ে
মূল্য - ১৬০ টাকা।
যোগাযোগ - ৯৪৩৫১৭৩২৭৩
তুমি ভাবছো এই সময়ে গান ?
ভাসিয়ে দিতে প্রাণ।
- - - - - - - - -
তোমার জন্যই কবিতা লিখতে হয়।
বন্ধু, তোমার জন্য গানটি গাইতে হয়।
(কবিতা - কেন ??)
এই সময়টাকে বড্ড যতনে ধরে রাখার কবিতা সংকলন - ‘সময়ে অসময়ে’। কবি সুপ্রদীপ দত্তরায়ের দ্বিতীয় কবিতা সংকলন। প্রথম সংকলন ‘প্রথম পঞ্চাশ’-এর পর স্বল্প দিনের মধ্যেই প্রকাশিত হলো তাঁর এই কাব্যগ্রন্থটি। মনের অতলে লুকিয়ে থাকা অজস্র ভাবনা, সমাজের পরতে পরতে যত অনিয়ম, অরাজকতা সেই সব দুঃখবোধকে সমক্ষে এনে হৃদয়টাকে হালকা করার তাগিদে কবির মননে জন্ম নেয় যত কবিতা, যত কথা - তারই স্পষ্ট প্রকাশ এই সংকলন। অনেকটাই ‘প্রথম পঞ্চাশ’-এর অনুরণন পরিলক্ষিত হয় এখানেও। তবু, কবির কবিতা এক রোখে চলে না। বিস্তৃত তার পথ চলা। ভাবনার পরিধি সুবিশাল, তাই অতৃপ্তির ক্ষোভকে উগরে দেওয়ার বাইরেও , হয়তো নিজেরই অজান্তে, মূর্ত হয়ে ওঠে ভাবনার বৈচিত্র। তাই তো কবিতায় ভেসে আসে প্রেম, ভালোবাসা, করোনার ভয়াবহতার চিত্র, নদী, নারী, কল্পনা। একজন সফল কবি হয়ে ওঠার যাবতীয় রসদ।
কিছু কবিতা যেন সজোরে আঘাত করে পাঠকের সর্বাঙ্গ জুড়ে। স্পষ্ট উচ্চারণে, কবিতার কবিতাময়তায় ইতিহাস হয়ে ওঠার লক্ষণ প্রতিভাত হয় সর্বাংশে। কবির অনুভবের সাথে পাঠকের আত্মা যেন একাকার হয়ে ওঠে। চক্রব্যূহ, নদী ও নারী, কৃষ্ণকলি, গিউলিয়া, দাঙ্গা, অবাক কথা, বৃষ্টি এলো বৃষ্টি এলো, ঠিকানা, আম্ফান, বোন মৌটুসী, খিলঞ্জিয়া, যাযাবর, একশ ত্রিশ - একের পর এক অনবদ্য কবিতা। পাঠকের ইচ্ছে হয় সবগুলি কবিতা সযতনে সাজিয়ে রাখতে হৃদয়ে, কখনো উগরে ওঠে ক্ষোভ, কখনো সিক্ত হয় দু’চোখ। নিখাদ প্রেমের কিছু অনাবিল উচ্চারণে পুলক জাগে মনে। শ্রেষ্ঠ উদাহরণ কবির ‘নীলনন্দিনী’ কবিতাখানি। ‘নীলনন্দিনী’ এবং ‘অবাক কথা’য় সুপ্ত ভালোবাসা এক অনির্ণীত ছন্দে দোলা দিয়ে যায় পাঠক হৃদয়। বস্তুতঃ ব্যাকরণের ধার না ধেরে এক গোপন ছন্দকে আপন মুন্সিয়ানায় ধরে রেখেছেন কবি তার সবগুলি কবিতায়। সুপ্রদীপের কবিতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় - কবিতায় ব্যাকরণসম্মত ছন্দই শেষ কথা নয়। ছন্দহীনতার মধ্যেও যে লুকিয়ে থাকে জীবনের ছন্দ, পঠনের আনন্দ সেই কবিতাময় মাধুর্যটিই কবিতার শেষ কথা। কবিতার অবয়বেও কবি আনতে চেয়েছেন বৈচিত্র। উদাহরণ তাঁর কঙ্কণা, টেলিফোন, প্রতীক্ষা ইত্যাদি।
কবি সুপ্রদীপ সচরাচর কবিতার দীর্ঘ অবয়বেই স্বচ্ছন্দ। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কোনও কোনও কবিতা ছাপিয়ে গেছে তার আগের দৈর্ঘও। তবু মনে হয় স্বল্প কথায় কবিতা লিখার একটি প্রয়াস যেন শুরু হলো এবার। উদাহরণ অপরাজিতা, মেঘ, তুমি ফিরে এসো সুভাষ ইত্যাদি কবিতা।
এতসব বৈচিত্রের মধ্যেই যে জায়গাটিতে কবি নিবদ্ধ করতে চেয়েছেন তাঁর পাখির চোখ তা হলো সময়ের অস্থিরতাকে চিত্রপটে খোদাই করার তাগিদ। একাধিক কবিতায় তাই ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন এই ত্রস্ত সময়কে। দেশভাগ, এন আর সি, মূল্যবোধের অবনমন, ভাষাগত ধর্মগত সাম্প্রদায়িকতা, খুন ধর্ষন আদি অনিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে আছে যত দুঃখবোধ, যত ভীতি - ততই আছে ক্ষোভ, আছে প্রতিবাদ। দুঃসহ সময়কে তাই ধরে রেখেছেন শব্দের কারিকুরিতে -
বাংলা মাধ্যমে এখন ভালো ছাত্রই নেই
যদি বা মেধা থাকে ছিটেফোঁটা, সামর্থ কই
টেটের ললিপপে ভিজে মজে একাকার।
দিন দিন নতুন নিয়ম, নতুন বায়নাক্কা -
তবু ‘চামচ’ আর ‘হাতা’য় কত বাহাদুরি।
সময়ে সময়ে অফিস আদালতে
বাংলা ফুঁপিয়ে কাঁদে -
বাংলা বই বিক্রি হয় না তেমন,
তবু সাড়ম্বরে কবি প্রণাম চলে।
(কবিতা - জাতীয় উৎসব),
আবার -
মনে হয় চিৎকার করে বলি
ক্ষান্ত হও, আর নয় মিথ্যার আশ্রয়।
যদি কেউ সত্যিই খিলঞ্জিয়া হয়,
তবে শুধু অসমিয়া নয়
বাগানী, বাঙালি, বড়ো, কুকি আদি
সবাই খিলঞ্জিয়া, নয়তো কেউ নয়।
(কবিতা - খিলঞ্জিয়া)
কিংবা -
তবুও যদি আমায় তুমি কোথাও খুঁজে না পাও
দেশ বিভাগের রক্ত খাদে পিছন ফিরে তাকাও
কাঁটা তারের কাঁটায় কাঁটায় আমার মাংস গাঁথা
বন্ধু, আমি ছিলাম, আমি আছি, এই শেষ কথা।
(কবিতা - ঠিকানা)
এই প্রত্যয় নিয়েই শেষ কথা বলতে চেয়েছেন কবি তাঁর কবিতার অন্তরে। আর এভাবেই সুপ্রদীপের কবিতার পথ চেয়ে পাঠকমনে জেগে ওঠে প্রত্যয়ী আশা।
কবি তাঁর এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর বাবা সুবিনয়চন্দ্র দত্তরায়কে। প্রচ্ছদ অজ্ঞাত। পরবর্তীতে প্রুফ রিডিং-এ আরোও একটু মনোযোগী হলে বানান কিংবা ছাপার ভুলের সংখ্যা নিশ্চিতই কমে আসবে অনেকটা।
- - - - - - - - - -
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
সময়ে অসময়ে
মূল্য - ১৬০ টাকা।
যোগাযোগ - ৯৪৩৫১৭৩২৭৩
Comments
Post a Comment