Skip to main content

গদ্য পদ্যের বৈচিত্র্যময় সম্ভার - পূজা সংখ্যা ‘তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য’


যথারীতি নিয়ম মেনে শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে মহালয়ার সন্ধ্যায় করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত হলতৃতীয় ভুবনের সাহিত্য’ - ১৪২৯ বাংলা, পূজা সংখ্যা সম্পাদক নারায়ণ মোদক বছর জুড়ে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত তিন তিনটি পত্রিকার মধ্যে কলেবরে, ধারে ও ভারে সর্ববৃহৎ আয়োজন এই তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য এবারের সংখ্যাও তার ব্যতিক্রম নয় ২৫১ পৃষ্ঠার এই বিশাল ধারাবাহিক বরাক তথা উত্তর পূর্বের সাহিত্য জগতে এক ব্যতিক্রমী প্রকাশ পরিশ্রম ও গরজের ফসল এই সংখ্যার সহযোগী সম্পাদক - গৌতম চৌধুরী এবং শিখা দাশগুপ্ত
সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছেস্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের পুণ্যকালে দেশের জন্য আত্মবলিদান দেয়া শহিদ বিপ্লবীদের ব্যতিক্রমী উৎসর্গমুখপৃষ্ঠা…’ শিরোনামে সম্পাদকীয়তে রয়েছে সেই পত্রিকা প্রকাশের গরজ, সামাজিক সমস্যাবলির উল্লেখ আছে স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছরের পাওয়া না পাওয়ার নিরিখ
এবারের সংখ্যাটি গত কয়েক বছরের তুলনায় যথেষ্ট উন্নত এবং পরিশোধিত বলে মনে হওয়ার বহু কারণ রয়েছে মোট ৪৯ জন কবি সাহিত্যিকের রচনা প্রত্যেকেরই গদ্য পদ্য মিলিয়ে গড়ে পাঁচটি পৃষ্ঠা বরাদ্দ করেছেন সম্পাদক কয়েকটি ক্ষেত্রে কম বেশি হয়েছে সংশ্লিষ্ট কবি লেখকের পাঠানো বিষয়বস্তুর হিসেবে শুধু কবিতা লিখেছেন মোট ছাব্বিশ জন কবি এছাড়াও গদ্য পদ্য মিলিয়ে লিখেছেন আরোও সাত জন যাঁদের কবিতার বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় তাঁদের মধ্যে আছেন সুশান্ত ভট্টাচার্য, আশুতোষ দাস, শিখা দাশগুপ্ত, শতদল আচার্য, রবিশঙ্কর ভট্টাচার্য, বনশ্রী চৌধুরী, জাহানারা মজুমদার, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, সত্যব্রত চৌধুরী, সুদীপ ভট্টাচার্য, ঋতা চন্দ, সুবল চক্রবর্তী, অভিষেক সেন, অরুণ চট্টোপাধ্যায়, শিবানী গুপ্ত, অনুপ কুমার বণিক, ডাঃ প্রদীপ দে, ছন্দা দাম, কস্তুরী হোম চৌধুরী, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য প্রমুখ এর বাইরে ভালো কবিতা লিখেছেন দীপক হোম চৌধুরী, শঙ্করী চক্রবর্তী, ডঃ গীতা সাহা, ধ্রুবজ্যোতি দাস, শ্রাবণী সরকার, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুচরিতা সিংহ, সুকন্যা চৌধুরী, শিপ্রা পুরকায়স্থ্পূরবী নাথ, শুক্লা চন্দ এবং কৃষ্ণা রাণী চন্দ
গল্প লিখেছেন চান্দ্রেয়ী দেব, আদিমা মজুমদার, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), ঋতা চন্দ, রবিশঙ্কর ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী চক্রবর্তী, পূর্ণিমা রাণী দে, শিবানী গুপ্ত, পূরবী নাথ, অরূপ কুমার ভুঞা, রতন চন্দ, এবং সম্পাদক নারায়ণ মোদক আছে একটি বড় গল্প - লিখেছেন ডালিয়া সিংহ প্রবন্ধ, আত্মকথা, স্মৃতিকথামূলক গদ্য রচনায় আছেন ডঃ গীতা সাহা, জহর দেবনাথ, গৌতম চৌধুরী, শিপ্রা পুরকায়স্থ, শুক্লা চন্দ, সন্তোষ কুমার দত্ত, জয়ন্তী নাথ, পরিমল কর্মকার প্রমুখ ভ্রমণ কথা লিখেছেন শুক্লা মিশ্র
একগুচ্ছ কবিতা রয়েছে যা দাগ রেখে যায় পঠনে অনুরূপ ভাবে অধিকাংশ গল্প, অণুগল্পও চমৎকারিত্বে ভরপুর সব মিলিয়ে এবারের সংখ্যাতৃতীয় ভুবনের সাহিত্যএক অবশ্যপাঠ্য পত্রিকা হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে পূর্ববর্তী সংখ্যাসমূহের বানান ভুলের আধিক্যদোষ প্রায় একশো ভাগই কাটিয়ে ওঠা গেছে এদিকটায় সম্পাদক, সম্পাদকীয় সহযোগীরা ও প্রকাশকের তীক্ষ্ণ নজরদারি ফসল ফলিয়েছে বলা যায় ফলত পঠন সুখেও ঋদ্ধ হয়েছে এ প্রয়াস প্রকাশক - রবিবারের সাহিত্য আড্ডা, করিমগঞ্জ আসাম মুদ্রণে ও প্রচ্ছদ সজ্জায় স্কলার পাবলিকেশনস, করিমগঞ্জ এ ধরণের বড় মাপের পত্রিকার ক্ষেত্রে মুদ্রণ যথাযথই বলা যায় - তবু হয়তো সুযোগ ছিল আরোও খানিকটা বিন্যস্ত করার বোর্ড বাঁধাই প্রচ্ছদ অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক পাতা ওলটানোর আগেই জুড়িয়ে যায় চোখ চতুর্থ পৃষ্ঠাটি খালি থাকার কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া গেল না
স্বল্প পরিসরে প্রতিটি রচনার বিষয়ে আলাদা মন্তব্য সম্ভব নয়, অন্যথা অধিকাংশ রচনাই যথেষ্ট মানসম্পন্ন হয়েছে বলা যায় দলিলযোগ্য কিছু প্রবন্ধ, হৃদয়ে দোলা জাগানো বহু গল্প, কবিতার নির্যাসে সুরভিত বহু কবিতার শিরোনাম তাই অনুল্লেখিতই রয়ে গেল বিষয় বৈচিত্র্যে, রচনা ও রচনাকারের সংখ্যাধিক্যে, উৎকৃষ্টতায় অনবদ্য এবারের সংখ্যা তবে উপত্যকার বাইরে থেকে তৃতীয় ভুবনের আরোও কিছু কবি সাহিত্যিকের রচনা এবং কিছু স্বনামধন্য কবি লেখকের রচনা  এবং আরোও কিছু নবীনের রচনা সন্নিবিষ্ট হলে পত্রিকার জৌলুস নিঃসন্দেহে বর্ধিত হতো পরবর্তীতে এদিকটাতে হয়ত নজর দেবেন সম্পাদকীয় দপ্তর - এমনটা আশা করা যেতেই পারে

 

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য - সপ্তম সংখ্যা
সম্পাদক - নারায়ণ মোদক
মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়