হাঁটি হাঁটি পা পা করে তিনটি বছর অতিক্রম
করল ‘সীমান্তরশ্মি’। বইমেলা ২০২২ সংখ্যা রূপে আত্মপ্রকাশ করল
তার তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ষষ্ঠ সংখ্যা।
হামাগুড়ি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পথ চলা শুরু করার মধ্যে যে দীর্ঘ সময় এবং নিরন্তর প্রচেষ্টার
প্রয়োজন তা একটি পত্রিকার ক্ষেত্রেও একই রকম প্রাসঙ্গিক।
‘সীমান্তরশ্মি’ও পথ চলতে শুরু করেছে উত্তরণের মধ্য দিয়ে, নিজেকে পরিমার্জন ও পরিশোধনের মধ্য দিয়ে। পোড় খাওয়া সম্পাদক নারায়ণ মোদক বছরে তিন তিনটি পত্রিকার সম্পাদনা করে থাকেন। সুতরাং এ উত্তরণ অবশ্যম্ভাবী।
এবারের সংখ্যা জমে উঠেছে এ অঞ্চলের এবং তার বাইরে থেকে আসা মোট ৪৪ টি কবিতা ও একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে। পূর্ববর্তী সংখ্যা সমূহ সম্ভবত শুধু কবিতাতেই সজ্জিত থাকত। সেক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরার বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক জহর দেবনাথের প্রবন্ধ এবারের নবতম সংযোজন। মূল্যবোধ নিয়ে লিখিত এ প্রবন্ধ জ্ঞানতই হোক কিংবা অজানিতে - শিরোনামহীন হয়ে রইল। সম্ভবত দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে সম্পাদকের।
কবিতা বিভাগে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে যাঁদের কবিতা তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জ্যোতির্ময় রায়, সুদীপ ভট্টাচার্য, অরুণ চট্টোপাধ্যায়, ঋতা চন্দ, আদিমা মজুমদার, মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম, শিখা দাশগুপ্ত, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, অভিষেক সেন, রবিশঙ্কর ভট্টাচার্য এবং মন্টু দাস। কিছু কবিতার কিছু পঙ্ক্তি উল্লেখনীয় -
শুধু শুধু মাথায় নিয়ে অভিসম্পাত
ছ্যাঁচড়ামো করে যাই দিনরাত -
বাড়া ভাতে কার দিয়েছি ছাই
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে কার , জানা নেই -
রোজনামচায় ওগরানো যত ছাইপাঁশ
স্বস্তি কেড়েছে কার, তুলেছে কার নাভিশ্বাস।
...... (ধৈর্যং রহু - ঋতা চন্দ, কবিতাংশ)
কিংবা -
ভালোবাসা এখন ইউটোপিয়ার অলীক বাস্তব -
প্রতি মুহূর্তে জিহ্বায় লেগে থাকে কটু স্বাদ
আর মৃত্যুর হাতছানি।
দোষ আর দিই না কাকেও,
বিধ্বংসী দাবানল তো জ্বেলেছি নিজেরই হাতে
বৃদ্ধ অশ্বত্থ গাছের সততাকে
মির্মোহ বিচক্ষণতার যূপকাষ্ঠে বলি দিয়ে।
অলৌকিক জলযান শুধু ভেসে ভেসে চলে
অতল ঘূর্ণিকে পাশ কাটিয়ে
অন্তহীন অন্ধ তমিস্রার আহ্বানে।
...... (অগম্য যাত্রা - অরুণ চট্টোপাধ্যায়, কবিতাংশ)
কিংবা -
আল বেয়ে হেঁটে যায় ছায়া মানুষ
সারি সারি তালগাছের মায়াময় সংসার।
দূরে শণে ঢাকা চারচালা রাখালিয়া বাড়ি
অনামিকা ফুলে ঢাকা পাহাড়,
হারানোর ব্যথারা বন্দি নিঃশব্দে
গাঢ় অক্ষরপ্রবণতা দমকে ওঠে
ক্ষয়ে যায় ইন্দ্রিয় খোলার চাবিকাঠি
কংক্রিটে ঢাকা শহরে
হাতের মুঠোয় বন্দি পৃথিবী। ...
...... (আড়ম্বরহীন - মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম, কবিতাংশ)।
এ ছাড়া আর যাঁদের কবিতায় সমৃদ্ধ হল এবারের সংখ্যা তাঁরা হলেন - শতদল আচার্য, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, রণদীপ সিংহ, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), শঙ্করী চক্রবর্তী, অরূপ কুমার ভুঞাঁ, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুবল চক্রবর্তী, সুশান্ত ভট্টাচার্য, জাহানারা মজুমদার, সত্যব্রত চৌধুরী, অমিত চট্টোপাধ্যায়, জয়িতা চক্রবর্তী, শিবানী গুপ্ত, চান্দ্রেয়ী দেব, সুচরিতা সিংহ, ছন্দা দাম, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, পরিমল কর্মকার, আশুতোষ দাস, ধ্রুবজ্যোতি দাস, ডালিয়া সিংহ, পূরবী নাথ, ডঃ গীতা সাহা, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, ডাঃ প্রদীপ দে, দীপক হোমচৌধুরী, শ্রাবণী সরকার, কস্তুরী হোমচৌধুরী, রতন চন্দ, মাশুক আহমেদ এবং গৌতম চৌধুরী। বলা বাহুল্য এ তালিকায় আছেন বহু নামি কবিরা। আছেন উদীয়মান কিছু প্রতিভাও। একটি ছোট পত্রিকার পরিসরে সবাইকে একসাথে নিয়ে সফল পথ চলার এই যে দৃষ্টান্ত সেখানেই সম্পাদকের কৃতিত্ব। সম্পাদক নারায়ণ মোদক লিখেছেন ভালোবাসার এক অপূর্ব দীর্ঘ কবিতা - ‘শোনাই ভালোবাসার কবিতা’।
বই কেনা আর বই পড়া নিয়ে সুচারু সম্পাদকীয় আছে শুরুতেই। নান্দনিক সম্পাদকীয়। এবারের সংখ্যার আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ প্রথমেই নজর কেড়ে নেয় পত্রিকার। কিন্তু প্রচ্ছদশিল্পীর নাম খুঁজে পাওয়া গেল না। সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘সীমান্তরশ্মির পূর্বতন উপদেষ্টা গল্পকার শ্যামল নন্দীর উদ্দেশে’। সংখ্যাটির প্রকাশকাল করিমগঞ্জ বইমেলা, ২০২২। প্রকাশক সীমান্তরশ্মি সাহিত্য পত্রিকা পরিবার। মুদ্রণে স্কলার পাবলিকেশনস, করিমগঞ্জ। পরিপাটি ছাপাই ও বাঁধাই। কিন্তু বানান ভুলের আধিক্য কিছুটা হলেও ম্লান করেছে পত্রিকার মান। এ বিষয়ে অধিক যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ভবিষ্যতে।
সব মিলিয়ে গরজ ও প্রতিশ্রুতির এক সুসংহত ধারাবাহিকতা - এ সংখ্যা ‘সীমান্তরশ্মি’।
‘সীমান্তরশ্মি’ও পথ চলতে শুরু করেছে উত্তরণের মধ্য দিয়ে, নিজেকে পরিমার্জন ও পরিশোধনের মধ্য দিয়ে। পোড় খাওয়া সম্পাদক নারায়ণ মোদক বছরে তিন তিনটি পত্রিকার সম্পাদনা করে থাকেন। সুতরাং এ উত্তরণ অবশ্যম্ভাবী।
এবারের সংখ্যা জমে উঠেছে এ অঞ্চলের এবং তার বাইরে থেকে আসা মোট ৪৪ টি কবিতা ও একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে। পূর্ববর্তী সংখ্যা সমূহ সম্ভবত শুধু কবিতাতেই সজ্জিত থাকত। সেক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরার বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক জহর দেবনাথের প্রবন্ধ এবারের নবতম সংযোজন। মূল্যবোধ নিয়ে লিখিত এ প্রবন্ধ জ্ঞানতই হোক কিংবা অজানিতে - শিরোনামহীন হয়ে রইল। সম্ভবত দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে সম্পাদকের।
কবিতা বিভাগে বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে যাঁদের কবিতা তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জ্যোতির্ময় রায়, সুদীপ ভট্টাচার্য, অরুণ চট্টোপাধ্যায়, ঋতা চন্দ, আদিমা মজুমদার, মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম, শিখা দাশগুপ্ত, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, অভিষেক সেন, রবিশঙ্কর ভট্টাচার্য এবং মন্টু দাস। কিছু কবিতার কিছু পঙ্ক্তি উল্লেখনীয় -
শুধু শুধু মাথায় নিয়ে অভিসম্পাত
ছ্যাঁচড়ামো করে যাই দিনরাত -
বাড়া ভাতে কার দিয়েছি ছাই
ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে কার , জানা নেই -
রোজনামচায় ওগরানো যত ছাইপাঁশ
স্বস্তি কেড়েছে কার, তুলেছে কার নাভিশ্বাস।
...... (ধৈর্যং রহু - ঋতা চন্দ, কবিতাংশ)
কিংবা -
ভালোবাসা এখন ইউটোপিয়ার অলীক বাস্তব -
প্রতি মুহূর্তে জিহ্বায় লেগে থাকে কটু স্বাদ
আর মৃত্যুর হাতছানি।
দোষ আর দিই না কাকেও,
বিধ্বংসী দাবানল তো জ্বেলেছি নিজেরই হাতে
বৃদ্ধ অশ্বত্থ গাছের সততাকে
মির্মোহ বিচক্ষণতার যূপকাষ্ঠে বলি দিয়ে।
অলৌকিক জলযান শুধু ভেসে ভেসে চলে
অতল ঘূর্ণিকে পাশ কাটিয়ে
অন্তহীন অন্ধ তমিস্রার আহ্বানে।
...... (অগম্য যাত্রা - অরুণ চট্টোপাধ্যায়, কবিতাংশ)
কিংবা -
আল বেয়ে হেঁটে যায় ছায়া মানুষ
সারি সারি তালগাছের মায়াময় সংসার।
দূরে শণে ঢাকা চারচালা রাখালিয়া বাড়ি
অনামিকা ফুলে ঢাকা পাহাড়,
হারানোর ব্যথারা বন্দি নিঃশব্দে
গাঢ় অক্ষরপ্রবণতা দমকে ওঠে
ক্ষয়ে যায় ইন্দ্রিয় খোলার চাবিকাঠি
কংক্রিটে ঢাকা শহরে
হাতের মুঠোয় বন্দি পৃথিবী। ...
...... (আড়ম্বরহীন - মীনাক্ষি চক্রবর্তী সোম, কবিতাংশ)।
এ ছাড়া আর যাঁদের কবিতায় সমৃদ্ধ হল এবারের সংখ্যা তাঁরা হলেন - শতদল আচার্য, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, রণদীপ সিংহ, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), শঙ্করী চক্রবর্তী, অরূপ কুমার ভুঞাঁ, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, সুবল চক্রবর্তী, সুশান্ত ভট্টাচার্য, জাহানারা মজুমদার, সত্যব্রত চৌধুরী, অমিত চট্টোপাধ্যায়, জয়িতা চক্রবর্তী, শিবানী গুপ্ত, চান্দ্রেয়ী দেব, সুচরিতা সিংহ, ছন্দা দাম, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, পরিমল কর্মকার, আশুতোষ দাস, ধ্রুবজ্যোতি দাস, ডালিয়া সিংহ, পূরবী নাথ, ডঃ গীতা সাহা, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, ডাঃ প্রদীপ দে, দীপক হোমচৌধুরী, শ্রাবণী সরকার, কস্তুরী হোমচৌধুরী, রতন চন্দ, মাশুক আহমেদ এবং গৌতম চৌধুরী। বলা বাহুল্য এ তালিকায় আছেন বহু নামি কবিরা। আছেন উদীয়মান কিছু প্রতিভাও। একটি ছোট পত্রিকার পরিসরে সবাইকে একসাথে নিয়ে সফল পথ চলার এই যে দৃষ্টান্ত সেখানেই সম্পাদকের কৃতিত্ব। সম্পাদক নারায়ণ মোদক লিখেছেন ভালোবাসার এক অপূর্ব দীর্ঘ কবিতা - ‘শোনাই ভালোবাসার কবিতা’।
বই কেনা আর বই পড়া নিয়ে সুচারু সম্পাদকীয় আছে শুরুতেই। নান্দনিক সম্পাদকীয়। এবারের সংখ্যার আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ প্রথমেই নজর কেড়ে নেয় পত্রিকার। কিন্তু প্রচ্ছদশিল্পীর নাম খুঁজে পাওয়া গেল না। সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘সীমান্তরশ্মির পূর্বতন উপদেষ্টা গল্পকার শ্যামল নন্দীর উদ্দেশে’। সংখ্যাটির প্রকাশকাল করিমগঞ্জ বইমেলা, ২০২২। প্রকাশক সীমান্তরশ্মি সাহিত্য পত্রিকা পরিবার। মুদ্রণে স্কলার পাবলিকেশনস, করিমগঞ্জ। পরিপাটি ছাপাই ও বাঁধাই। কিন্তু বানান ভুলের আধিক্য কিছুটা হলেও ম্লান করেছে পত্রিকার মান। এ বিষয়ে অধিক যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ভবিষ্যতে।
সব মিলিয়ে গরজ ও প্রতিশ্রুতির এক সুসংহত ধারাবাহিকতা - এ সংখ্যা ‘সীমান্তরশ্মি’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘সীমান্তরশ্মি’
সম্পাদক - নারায়ণ মোদক
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯
সম্পাদক - নারায়ণ মোদক
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯
Comments
Post a Comment