“ভবতোষবাবু আমাদের পাড়াতেই থাকেন।
নিঃসন্তান, খিটখিটে মেজাজের, বাচাল প্রকৃতির। আমরা জেঠু জেঠু বলেই ডাকি। ডাকি মানে
পারতপক্ষে ডাকি না, নেহাত মুখোমুখি হয়ে গেলে…। আর জেঠিমা ঝগড়ুটে,
ফাটা বাঁশের মতো গলার স্বর, কেউ বা বলে দাঁড়কাকের মতো। শুনলেই
মেজাজ বিগড়ে যায়…
এই সাত সকালে ওখানেই নাকি যেতে হবে। বাবার হুকুম। প্রথমে বাবা কিন্তু দাদাকেই বলেছিল যেতে, কিন্তু দাদা কটাস করে না বলে দিল। বলল, তুমি কি আমার মরা মুখ দেখতে চাও ? আমি কি তোমার পর ? সৎ ছেলে ? তবে এত পয়সা খরচ করে পড়াতে গেলে কেন ? তারপর ছোটভাইকে বলতে গেলেই ফোঁস করে উঠে বলল, আমার তো দাড়ি-গোঁফই ওঠেনি। ওই বাড়ি থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পারব না। অগত্যা আমি মানে সবেধন নীলমণি। মেজ ছেলে যে। না ঘরকা, না ঘাটকা। গেলেই বা কী ? আমিও মুখের উপর না বলে দিতে পারতাম, পারতাম কোনো অজুহাত দাঁড় করাতে, কিন্তু করিনি। কারণ আমি না গেলে যে বাবাকেই যেতে হয়। আর এই দুর্দিনের বাজারে বাবার যদি কিছু হয়ে যায় তো পুরো সংসারটাই যাবে। সরকারের দয়ায় যদি চাকরিও হয়, হবে তো দাদার। আমার তাতে কী ? তাই রাজি হয়ে যাই। গুটি গুটি চলি ওই মহাপুরুষের বাড়ির দিকে।” (গল্প - শ্রাদ্ধ সমাচার)।
...... এভাবেই প্রতিটি গল্পের অবতরণিকায় কৌতূহল জাগানো একরাশ চমৎকারিত্ব ছড়িয়ে দিয়েছেন সাবলীল সহজ কথায়। সাহিত্যিক শিশির সেনগুপ্তের স্বনির্বাচিত গল্প সংকলন ‘প্রতিভাস’। মোট চব্বিশটি গল্পের সমাহার এই গ্রন্থ। পেপারব্যাকে ১০০ পৃষ্ঠার এই সংকলন জুড়ে রয়েছে নিত্যদিনের মানবিক জীবনযাত্রার টুকরো টুকরো মণিমালা। সপাট কথার উচ্চারণে, সাবলীল ভঙ্গিমায় পাঠকের রোজকার কথাবার্তার এক অসাধারণ প্রকাশ প্রতিটি গল্প। বাক্যসমূহের গঠনে, বিন্যাসে এবং সরল প্রকাশে পাঠক হৃদয়ে গড়ে ওঠে কুতূহল, পাঠের উন্মাদনা। স্বল্প কথনে গুছিয়ে বলার এক অনন্য উদাহরণ এই গ্রন্থটি। দু’একটির বাইরে অন্য গল্পগুলোকে ঠিক অণুগল্পও বলা যায় না আবার বড়গল্পও নয়। সচরাচর লিখিত ছোটগল্পের চাইতে আবার অবয়বে খানিক খাটো। দুই থেকে তিন পৃষ্ঠার এক একটি গল্প জুড়ে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে মানবিক সিদ্ধান্ত সমূহের অপরূপ প্রকাশ। প্রতিটি গল্পই যেন সমাজের প্রতি বহন করে এক নির্মোহ বার্তা। শুভ চিন্তার পরিচায়ক এই বার্তাসমূহ। এখানেই বলা যেতে পারে যে লেখক বা সাহিত্যিক হিসেবে শিশির সেনগুপ্ত ভাবীকালের কাছে পরিশোধ করতে পেরেছেন তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা। নিছক ঘটনাবলির বাখানে লিখা হয়নি একটি গল্পও।
উল্লেখযোগ্য কিছু গল্পের নাম তুলে ধরা যেতে পারে অনায়াসে। যেমন - কালের বইঠা, বউয়ের জ্বর হয় না, নেশা, মাতৃভিটে, জীবনের বাঁকে বাঁকে, কালের জাঁতাকলে, রাজু ও দীপ, দুই চরণের গল্প, নীল আকাশের নিচে, জন্মদিন, হরি না হইরা ইত্যাদি।
ছোট ছোট বাক্য, ছোট ছোট দুঃখ ব্যথা নিয়ে সেজে উঠেছে একের পর এক গল্প - যেন জীবনবোধের এক একটি পাঠ। রয়েছে তিনটি গল্পের একটি সিরিজ - ‘ছোটকার গল্প’। অধ্যাত্ম অনুভূতির উপর লিখা এই গল্পগুলো। স্বনির্বাচিত গল্পসমূহের এই সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছে জলসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পক্ষ থেকে। প্রচ্ছদে এমনটাই লিখা থাকলেও ভেতরের পাতায় আছে - প্রকাশক ঋতম পাবলিকেশন্স্। অক্ষর বিন্যাস সুলতা বাগচি, আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ সৌজন্যে কমল ঘোষ। মুদ্রক সিটি অফসেট, গুয়াহাটি। বইয়ের ছাপাই ও বাঁধাই যথাযথ। অক্ষর, শব্দ ও বাক্য বিন্যাস তথা ছাপাই স্পষ্ট এবং নিখুঁত। ভেতরে কিছু কিছু বানান ভুল রয়ে গেছে। বিশেষ করে ‘র’ এবং ‘ড়’-এর মধ্যে বহু স্থানে ঘটে গেছে পারস্পরিক স্থানচ্যুতি। লেখক এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন করোনার সময় অকালে তাঁদের ছেড়ে যাওয়া ‘বউদি মিনতি সেনগুপ্ত এবং করোনায় মৃত ব্যক্তিদের প্রতি’।
শেষ প্রচ্ছদে রয়েছে লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
সব মিলিয়ে ‘প্রতিভাস’ এক সরল পঠনের, সুখ পঠনের সার্থক গল্পের সম্ভার যা পাঠক মনে নিশ্চিতই সঞ্চার করে প্রত্যাশা।
‘প্রতিভাস’
শিশির সেনগুপ্ত
মূল্য - ১৭০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫১৪৮৫০২
এই সাত সকালে ওখানেই নাকি যেতে হবে। বাবার হুকুম। প্রথমে বাবা কিন্তু দাদাকেই বলেছিল যেতে, কিন্তু দাদা কটাস করে না বলে দিল। বলল, তুমি কি আমার মরা মুখ দেখতে চাও ? আমি কি তোমার পর ? সৎ ছেলে ? তবে এত পয়সা খরচ করে পড়াতে গেলে কেন ? তারপর ছোটভাইকে বলতে গেলেই ফোঁস করে উঠে বলল, আমার তো দাড়ি-গোঁফই ওঠেনি। ওই বাড়ি থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পারব না। অগত্যা আমি মানে সবেধন নীলমণি। মেজ ছেলে যে। না ঘরকা, না ঘাটকা। গেলেই বা কী ? আমিও মুখের উপর না বলে দিতে পারতাম, পারতাম কোনো অজুহাত দাঁড় করাতে, কিন্তু করিনি। কারণ আমি না গেলে যে বাবাকেই যেতে হয়। আর এই দুর্দিনের বাজারে বাবার যদি কিছু হয়ে যায় তো পুরো সংসারটাই যাবে। সরকারের দয়ায় যদি চাকরিও হয়, হবে তো দাদার। আমার তাতে কী ? তাই রাজি হয়ে যাই। গুটি গুটি চলি ওই মহাপুরুষের বাড়ির দিকে।” (গল্প - শ্রাদ্ধ সমাচার)।
...... এভাবেই প্রতিটি গল্পের অবতরণিকায় কৌতূহল জাগানো একরাশ চমৎকারিত্ব ছড়িয়ে দিয়েছেন সাবলীল সহজ কথায়। সাহিত্যিক শিশির সেনগুপ্তের স্বনির্বাচিত গল্প সংকলন ‘প্রতিভাস’। মোট চব্বিশটি গল্পের সমাহার এই গ্রন্থ। পেপারব্যাকে ১০০ পৃষ্ঠার এই সংকলন জুড়ে রয়েছে নিত্যদিনের মানবিক জীবনযাত্রার টুকরো টুকরো মণিমালা। সপাট কথার উচ্চারণে, সাবলীল ভঙ্গিমায় পাঠকের রোজকার কথাবার্তার এক অসাধারণ প্রকাশ প্রতিটি গল্প। বাক্যসমূহের গঠনে, বিন্যাসে এবং সরল প্রকাশে পাঠক হৃদয়ে গড়ে ওঠে কুতূহল, পাঠের উন্মাদনা। স্বল্প কথনে গুছিয়ে বলার এক অনন্য উদাহরণ এই গ্রন্থটি। দু’একটির বাইরে অন্য গল্পগুলোকে ঠিক অণুগল্পও বলা যায় না আবার বড়গল্পও নয়। সচরাচর লিখিত ছোটগল্পের চাইতে আবার অবয়বে খানিক খাটো। দুই থেকে তিন পৃষ্ঠার এক একটি গল্প জুড়ে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনে মানবিক সিদ্ধান্ত সমূহের অপরূপ প্রকাশ। প্রতিটি গল্পই যেন সমাজের প্রতি বহন করে এক নির্মোহ বার্তা। শুভ চিন্তার পরিচায়ক এই বার্তাসমূহ। এখানেই বলা যেতে পারে যে লেখক বা সাহিত্যিক হিসেবে শিশির সেনগুপ্ত ভাবীকালের কাছে পরিশোধ করতে পেরেছেন তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতা। নিছক ঘটনাবলির বাখানে লিখা হয়নি একটি গল্পও।
উল্লেখযোগ্য কিছু গল্পের নাম তুলে ধরা যেতে পারে অনায়াসে। যেমন - কালের বইঠা, বউয়ের জ্বর হয় না, নেশা, মাতৃভিটে, জীবনের বাঁকে বাঁকে, কালের জাঁতাকলে, রাজু ও দীপ, দুই চরণের গল্প, নীল আকাশের নিচে, জন্মদিন, হরি না হইরা ইত্যাদি।
ছোট ছোট বাক্য, ছোট ছোট দুঃখ ব্যথা নিয়ে সেজে উঠেছে একের পর এক গল্প - যেন জীবনবোধের এক একটি পাঠ। রয়েছে তিনটি গল্পের একটি সিরিজ - ‘ছোটকার গল্প’। অধ্যাত্ম অনুভূতির উপর লিখা এই গল্পগুলো। স্বনির্বাচিত গল্পসমূহের এই সংকলনটি প্রকাশিত হয়েছে জলসিঁড়ি সাহিত্য পত্রিকার পক্ষ থেকে। প্রচ্ছদে এমনটাই লিখা থাকলেও ভেতরের পাতায় আছে - প্রকাশক ঋতম পাবলিকেশন্স্। অক্ষর বিন্যাস সুলতা বাগচি, আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ সৌজন্যে কমল ঘোষ। মুদ্রক সিটি অফসেট, গুয়াহাটি। বইয়ের ছাপাই ও বাঁধাই যথাযথ। অক্ষর, শব্দ ও বাক্য বিন্যাস তথা ছাপাই স্পষ্ট এবং নিখুঁত। ভেতরে কিছু কিছু বানান ভুল রয়ে গেছে। বিশেষ করে ‘র’ এবং ‘ড়’-এর মধ্যে বহু স্থানে ঘটে গেছে পারস্পরিক স্থানচ্যুতি। লেখক এই গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন করোনার সময় অকালে তাঁদের ছেড়ে যাওয়া ‘বউদি মিনতি সেনগুপ্ত এবং করোনায় মৃত ব্যক্তিদের প্রতি’।
শেষ প্রচ্ছদে রয়েছে লেখকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।
সব মিলিয়ে ‘প্রতিভাস’ এক সরল পঠনের, সুখ পঠনের সার্থক গল্পের সম্ভার যা পাঠক মনে নিশ্চিতই সঞ্চার করে প্রত্যাশা।
- বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
‘প্রতিভাস’
শিশির সেনগুপ্ত
মূল্য - ১৭০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫১৪৮৫০২
Comments
Post a Comment