Skip to main content

নিথর লেখনী, সরব কবিতা - ‘কথকতা’



যেন এক নীরব যাপন কথার বিষণ্ণ এপিটাফ। কবি সুকন্যা চৌধুরী। জন্ম ১৫ জুন ১৯৫৯, মৃত্যু ১১ মে ২০২১। করিমগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ‘কথকতা’ গ্রন্থের প্রকাশক কবির অগ্রজা সুনন্দা চৌধুরী। ‘প্রকাশকের নিবেদন’-এ আক্ষেপবশত সুনন্দা লিখছেন - ‘সুকন্যার সীমাহীন পারাবারে চলে যাওয়ার দুই বছরের মধ্যেও আমি বইগুলি ছাপাতে পারলাম না……’ যদিও শেষ পর্যন্ত বইটি প্রকাশ্যে এসে গেছে গত অক্টোবর ২০২৩-এ। ‘কবিতা, অণু কবিতা, ছড়া এগুলো এতো ছড়ানো ছিটানো যে এতগুলি ডাইরি, মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে হয়েছে …… সুকন্যা ডাইরির পাতায় লিখে গেছে - আমি কবি নই। বাচিক শিল্পীও নই। আমার মনের ভাবনাকে আমি নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করি……।’ সেই প্রয়াত কবির ২৭টি ছড়া, ৫৫১টি অণু কবিতা, ৫টি কবিতা ও ১টি অণুগল্প নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘কথকতা’।
১৩৫ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে এতগুলি কবিতা/ছড়ার সমাহার সত্যিই বিস্ময়কর। কেমন ছিল সেসব ? চোখ রাখা যাক - স্বাধীনতা তুমি সত্তর শতাংশের অনাহার,/ তুমি কর্পোরেটের লক্ষ কোটি ছাড়।/ স্বাধীনতা তুমি নেতা-মন্ত্রীর হাতের মুঠোয়/ আরাম, আয়েশ, মিথ্যে কথার ঢপ/ আমার কাছে কেবলমাত্র একটা ললিপপ। (ছড়া - ললিপপ)। প্রতিবাদী সত্তার প্রকাশ। আবার - দাদা আমার ভালো দাদা/ ওকে কিছু বলব না,/ অমুকটা তো বেজায় পাজি/ ওকে আমি ছাড়ব না। (ছড়া - ছাড়ব না)। এমন সরস ছড়াও আছে। শিরোনামহীন ৫৫১টি অণু কবিতা থেকে উদ্ধৃত করার মতো কবিতা বেছে নেওয়াই এক দুরূহ কাজ। এখানে পাওয়া যায় চূড়ান্ত বৈচিত্র্য যদিও বামাদর্শে বিশ্বাসী কবির অধিকাংশ কবিতাই দল ও দেশভাবনাজাত। নামোল্লেখ করেই সোচ্চারে বিষোদ্গার করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলমতের। পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন ধারার কবিতাও আছে দেদার। যেমন - হঠাৎ দুচোখে বৃষ্টি নামলে/ মন কেমন করা সন্ধ্যাবেলা।/ দুটো কথা বললে না হয় আজ/ বন্ধ থাক লুকোচুরি খেলা। কিছু কবিতায় শেষের বেলার ইঙ্গিত ধরা পড়ে, যেমন - আর যদি ফিরে না আসি/ তোমরা কেউ কেঁদো না।/ জীবন বড় ক্ষণস্থায়ী/ কী হয় কেউ জানে না। কবিতা বিভাগে পাঁচটির মধ্যে আছে ৮ লাইনের কবিতা - ভালোবাসা মানে তোমার মুখের/ দায়সারা দুটো কথা,/ ভালোবাসা মানে বুক জুড়ে শুধু/ তোমায় না পাওয়া ব্যথা।... (কবিতা - একি ভালোবাসা)। ছন্দের ব্যবহার এখানে উল্লেখযোগ্য যা একজন সফল ছড়াকারের জন্য অতি আবশ্যক। শেষের পাতায় আছে ‘চোখের জলের ভিন্ন নাম’ শিরোনামে চমৎকার একটি অণুগল্প।
এই নিয়ে গ্রন্থ। একটাই কথা বলার - তা হল এ ভুবন সত্যিই বঞ্চিত হল এমন এক কবির এ জগৎ সংসার ছেড়ে চলে যাওয়ায়।
ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তীর ছিমছাম প্রচ্ছদ আকর্ষণীয়। ছাপা ও কাগজের মান যথাযথ। কিছু বানান ভুল থাকলেও পেপারব্যাক সংস্করণের এই গ্রন্থ প্রকৃতার্থেই এক সংগ্রহযোগ্য সংকলন।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।

বিনামূল্যে বিতরিত, যোগাযোগ - অনুল্লেখিত।

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...