Skip to main content

কবি, গদ্যকার গৌতম বসুকে নিয়ে ‘আদম’-এর বিশেষ সংখ্যা


এই পৃথিবীতে মানুষ জন্মগ্রহণ করে, আবার এক সময় হারিয়েও যায় চিরতরে - বিস্মৃতির অতল গহ্বরে এর মধ্যে কিছু মানুষ নিজ মেধা দক্ষতা ও কাজের মাধ্যমে পার্থিব মৃত্যুর পরও তাঁদেরই অনুসারী মানুষের উদ্যোগে বেঁচে থাকেন অনন্ত কাল - প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং তাঁর অনুসারী উভয়েই সমান বরেণ্য হয়ে থাকেন অগণিত মানুষের মননে, চিন্তনে
আদম’ - একটি অনিয়মিত কবিতা পত্রিকা যেহেতু অনিয়মিত তাই পাঠকের চাহিদায় থাকে না সময়ের নিক্তি ধরে পত্রিকার প্রকাশ এবং এর ফলে পত্রিকা প্রকাশে যথোপযুক্ত যত্ন ও গরজের ছাপ হয়ে ওঠে স্পষ্ট আবার কবিতাপত্র হলেও কবিতার বাইরে কিছুই নেই বা হতে পারে না এমন কোনও দিব্যিও কেউ দেয়নি বা দেওয়ার দরকারও নেই কবি কিংবা কবিতার বিশ্লেষণেই তো গদ্য এসে পড়ে অবধারিতভাবে সুতরাং গদ্য, পদ্য বা সময়ের নিক্তি কোনোটাই মুখ্য নয় বিষয় এবং উৎকর্ষই এখানে মুখ্য
আদম’-এর জানুয়ারি ২০২৩ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছেগৌতম বসু (১৯৫৫-২০২১)’ সংখ্যা হিসেবে কবি, গদ্যকার, অনুবাদক, সম্পাদক এবং সর্বোপরি ব্যক্তি গৌতম বসুর সম্পূর্ণ জীবনকে একের পর এক সুগ্রন্থিত বিষয়বৈচিত্র্যে গ্রন্থিত করেছেন সম্পাদক গৌতম মণ্ডল আদমএবং গৌতম মণ্ডল এর আগেও গৌতম বসুকে নিয়ে ভিন্ন বিষয়ে বই প্রকাশ করেছেন যদিও এ সংখ্যায় তাঁকে উপস্থাপন করা হয়েছে সার্বিক রূপে প্রতিট রচনার ভিতরে যাওয়া তো দূরের কথা সমগ্র সূচিপত্রের উল্লেখও হয়তো কুলোবে না এ পরিসরে পরিসরের কথা মাথায় রেখেই তাই চোখ রাখা যাক পত্রিকার বা বলা যায় গ্রন্থের অন্দরে
রয়েছে চার পৃষ্ঠা জোড়া সম্পাদকীয় যেখানে গৌতম বসুর কবিতার বাঁক, বৈশিষ্ট্য, চেতনা, অনুষঙ্গ যেমন আছে তেমনি আছে তাঁর গদ্যকার, অনুবাদক, সম্পাদক, সংকলক ও চিন্তক সত্তা নিয়েও প্রয়োজনীয় উল্লেখ সম্পাদকীয় উত্তর পর্বে রয়েছে গৌতম বসুর একাধিক প্রতিকৃতি ও ফ্যাকসিমিলি, গৌতম বসুর অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত ৪৭টি কবিতা, অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত ৮টি গদ্য (যদিও বিভাগ বর্ণনায় ৭টি বলে লেখা রয়েছে), অগ্রন্থিত ও অপ্রকাশিত তিনটি অনুবাদকর্ম, অপ্রকাশিত ও অগ্রন্থিত ৩টি সাক্ষাৎকার - সাক্ষাৎকার গ্রহীতারা হলেন গৌতম মিত্র, তপন রায় (যদিও সূচিপত্র এবং টীকায় বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিত বলে লেখা আছে) ও গৌতম মণ্ডল, বহুরৈখিক ও বিমূর্ত কবিতার কবি গৌতম বসুকে নিয়ে রয়েছে ১৯ জন লেখকের লেখা নিবন্ধ, গদ্যকার গৌতম বসুকে নিয়ে লিখেছেন ৪ জন লেখক ৪টি নিবন্ধে, অনুবাদক গৌতমকে নিয়ে রয়েছে কালীকৃষ্ণ গুহ, পার্থজিৎ চন্দ ও শৌভ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা গদ্য, সম্পাদক গৌতম বসুকে নিয়ে রয়েছে ৪টি নিবন্ধ, ব্যক্তি গৌতমকে নিয়ে রয়েছে ৬টি নিবন্ধ ডাকবাক্সবিভাগে গৌতম বসুর লেখা এবং তাঁর উদ্দেশে লেখা চিঠি ও ই-চিঠি রয়েছে একাধিক আছে সম্পূর্ণ পঞ্জি, যার মধ্যে রয়েছে তাঁর জীবনপঞ্জি, গ্রন্থপঞ্জি, প্রচ্ছদ-প্রতিলিপি ও টুকরো খবর (গৌতম বসুর উপর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরাখবরের চিত্র) আটটি পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে গৌতম বসুর শিশু থেকে বড়ো হওয়া অবধি বিভিন্ন আঙ্গিকের বহু ছবি
সাধারণ ও সচেতন পাঠকের বাইরেও বোদ্ধা, গবেষকদের জন্য সযত্নে সংরক্ষিত করে রাখার মতো একটি সংখ্যা নিঃসন্দেহে পেপারব্যাকে ৬৬৪ পৃষ্ঠার এই বিশাল সংখ্যাটির অক্ষর বিন্যাস, কাগজের মান সবকিছুই যথাযথ সিন্ধু থেকে ভুলের বিন্দু খুঁজতে যাওয়ার কোনো মানে হয় না এক কথায় এক ঐতিহাসিক এবং চূড়ান্ত উৎকৃষ্টতার নিদর্শন এ সংখ্যা আদম    
সব শেষে আদম’-এর বইপত্র ও সম্মাননা বিষয়ক তালিকা সহ রয়েছে কর্মকাণ্ডের খতিয়ান যা অবধারিত ভাবেই কাজে লাগবে নিমগ্ন ও বিদগ্ধ পাঠকের জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায়

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

 মূল্য - ৬০০ টাকা 

Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়