Skip to main content

যে দিয়েছে মুখের ভাষা, যে দিয়েছে প্রাণ


(২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গুয়াহাটির ‘জনমত’ প্রতিষ্ঠান আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘স্বরলিপি সাংস্কৃতিক সংস্থা’ দ্বারা পরিবেশিত আলেখ্য।
আলেখ্যপাঠ - সপ্তমিতা নাথ)।
 
ভাষা তো নয় কোনো বিদ্বেষবিষ ছুতো
সাঁকো হয়ে ভাষা দুরকে করে আপন,
ভাষাই তো গড়ে মিলনের শুভ পথ  
ভাষা হতে পারে একতার দৃঢ় বন্ধন।
 
তবু কে বা কারা - অবোধ, অলস
জেনেশুনে বিষ করে যায় পান,
ভাষায় ভাষায় বিভেদের বীজ বোনে
কানে কানে গায় বিদ্বেষবিষ গান।
 
সীমানা ছাড়িয়ে আমরা সবাই
যুগে যুগে গাই তাদেরই জয়গান,
বাঁচিয়ে রাখতে মায়ের ভাষা 
হাসিমুখে যাঁরা জীবন করেছে দান।
 
যে দিয়েছে মুখের ভাষা যে দিয়েছে প্রাণ
আমরা তাঁদের অমৃতের সন্তান।
 
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। এমনই এক শীতের শেষে বসন্তের আগমনে রক্তের হোলিতে, বুলেটের ঘায়ে ভাষাজননীর আব্রু বাঁচাতে, মুখের ভাষার অধিকার আদায়ে যাঁরা প্রাণ করেছিল দান, আমরা কি তাঁদের ভুলতে পারি ?
(গান) - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ......
 
পৃথিবীর বুকে যে ভাষার সদাসতর্ক সেনানী তার অধিকার রক্ষার তাগিদে রক্ত ঝরিয়েছে বহুবার, এদেশে ওদেশে শহিদ হয়েছে বারবার, আমরা সেই বাংলাজননীর অমৃতের সন্তান। পৃথিবীর বুকে আজকের দিন যাঁদের স্মৃতিতে হয়ে আছে অমলিন, আমরা বহন করি সেই ভাষারই উত্তরাধিকার। তবুও আমরা সব ভাষাকে মায়ের আসনে বসিয়ে বাংলায় বাঁধি সুর।
(গান) - আমি বাংলায় গান গাই......
 
একদিকে কবি আল মাহমুদ লিখেন -
 
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ?
বরকতের রক্ত।
 
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে।
 
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে ?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে ?
 
অন্য দিকে মরমি কবি অতুলপ্রসাদ বলেন -
আছে কই এমন ভাষা,
এমন দুঃখ, শ্রান্তিনাশা ......
 
আমি ঐ ভাষাতেই বলবো হরি
সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা।
 
(গান) - মোদের গরব, মোদের আশা ......
 
এই ভাষাতেই বিশ্বকবি থেকে শুরু করে কাজী নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ বরেণ্য কবি, গীতিকার আমাদের করে গেছেন ঋদ্ধ, গর্বিত। আজকের এই পুণ্য দিনে আমরা সবারে করি নমস্কার। কারার ওই লৌহকপাট ভেঙে আমাদের যাঁরা দাঁড় করিয়েছেন মুক্তির মন্দির সোপান তলে, ধন ধান্য পুস্প ভরা দেশের মাটিতে যাঁদের আত্মবলিদানে আমরা কথা বলি নিজের ভাষায়, তাঁদের স্মরণ করে, তাঁদের কাছে নতজানু হয়ে আজ আমরা সবাই মিলে গেয়ে যাই নিজের ও সবাকার মাতৃভাষার জয়গান, সুরে ও ভাষায় নিবেদন করি ভাষা-গানের কোলাজ......।
 
(গানের অংশ নিয়ে কোলাজ) -
ও আমার দেশে মাটি...
ধন ধান্য পুস্প ভরা...
কারার ওই লৌহকপাট...
মুক্তির মন্দির সোপান তলে...।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

(ছবি ঋণ - গুগল, আন্তর্জাল)

 


Comments

Popular posts from this blog

খয়েরি পাতার ভিড়ে ...... ‘টাপুর টুপুর ব্যথা’

ব্যথা যখন ঝরে পড়ে নিরলস তখনই বোধ করি সমান তালে পাল্লা দিয়ে ঝরে পড়ে কবিতারা । আর না হলে একজন কবি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ব্যথাকেও কী করে ধরে রাখতে পারেন কবিতার পঙক্তি জুড়ে ? নষ্টনীড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন - ‘মনে যখন বেদনা থাকে, তখন অল্প আঘাতেই গুরুতর ব্যথা বোধ হয়’। তাঁর অসংখ্য গান, কবিতা ও রচনায় তাই বেদনার মূর্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায়।    এমনই সব ব্যথা আর ভিন্ন ভিন্ন যাপনকথার কাব্যিক উপস্থাপন কবি বিশ্বজিৎ দেব - এর সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ - ‘ টাপুর টুপুর ব্যথা ’ । মোট ৫৬ পৃষ্ঠার এই কাব্যগ্রন্থের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৫৬ টি কবিতা। কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠাজোড়া। ভূমিকায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখছেন - ... বিশ্বজিতের কবিতাগুলো অনেকটা তার কাঠখোদাই শিল্পের রিলিফ-এর মতোই উচ্ছ্বাসধর্মী - যেন উত্তলাবতল তক্ষণজনিত আলো-আঁধারি মায়াবিজড়িত, পঙক্তিগুলো পাঠক পাঠিকার মনোযোগ দাবি করতেই পারে...। এখান থেকেই আলোচ্য গ্রন্থের কবিতাগুলোর বিষয়ে একটা ধারণা করা যেতে পারে। এখানে উচ্ছ্বাস অর্থে আমাদের ধরে নিতে হবে কবির ভাবনার উচ্ছ্বাস, সে বিষাদেই হোক আর তাৎক্ষণিক কোনও ঘটনার জের হিসেবেই হোক। তাই হয়তো কবি করোনার

অবশ্যপাঠ্য এক সার্থক উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যের সৃষ্টিক্ষেত্রে একটি উপন্যাসের সৃষ্টি কিংবা জন্মের ইতিহাস বহু পুরোনো হলেও এই ধারা যে সতত প্রবহমান তা বলা যাবে না কোনওভাবেই। বিশেষ করে আজকের দিনে অন্তত এই ঘটনাকে একটি ‘বিরল’ ঘটনা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়। এমনও দেখা যায় যে ৪০ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বড় গল্প বা উপন্যাসিকাকে দিব্যি উপন্যাস বলেই বিজ্ঞাপিত করা হচ্ছে। তবে প্রকৃতই এক উপন্যাসের জন্মের মতো ঘটনার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংযোজিত হয়েছে সাহিত্যিক সজল পালের উপন্যাস ‘হাজার কণ্ঠে মা’। ২৫৩ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির প্রকাশক গুয়াহাটির মজলিশ বইঘর। তথাকথিত মানবপ্রেমের বা নায়ক নায়িকার প্রেমঘটিত কোনো আবহ না থাকা সত্ত্বেও উপন্যাসটিকে মূলত রোমান্সধর্মী উপন্যাস হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায় যদিও আঞ্চলিকতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও উপন্যাসটিকে যথার্থই এক সার্থক উপন্যাস বলা যায় নির্দ্বিধায়। প্রেম এখানে বিচিত্র এক অনুষঙ্গ নিয়ে এসেছে। সংস্কৃতিমনষ্কতা, নান্দনিকতা এবং প্রেম একসূত্রে গ্রথিত হয়ে আছে এখানে। উপন্যাসটি ‘সার্থক’ অর্থে এখানে সচরাচর একটি উপন্যাসের আবশ্যকীয় ধর্মসমূহ যথা প্রাসঙ্গিক ঘটনাবিন্যাস , কাহিনির জমজমাট বুনোট , মানানসই চরিত্র

ভালোবাসার আস্তরণে ঢেকে রেখেছি, না-বলা কথা……'

তোমাকে দেখব বলে, প্রতিদিন জেগে উঠি। তোমার নবযৌবনার সৌন্দর্য আমাকে প্রাণ চঞ্চল করে তোলে।   তোমার রূপ, তোমার স্বর্ণআভা সৌন্দর্য, আমার দেহমনে শিহরণ জাগায়……। (কবিতা - স্বর্ণআভা)   গ্রন্থের নাম স্বর্ণআভা। কবি পরিমল কর্মকারের সদ্য প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ। ভাবনা ও ভালোবাসার বিমূর্ত প্রকাশ - কবিতায় কবিতায়, পঙক্তিতে পঙক্তিতে। অধিকাংশ কবিতাই ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে। সুতরাং এই গ্রন্থকে অনায়াসে প্রেমের কবিতার সংকলন বলতেও আপত্তি থাকার কথা নয়। কবির কাব্যভাবনা, কাব্যপ্রতিভার ঝলক দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিভাত হয়ে আসছে উপত্যকা ও উপত্যকার সীমানা ছাড়িয়ে। তারই একত্রীকরণের দায়ে এই কাব্য সংকলন। তবে এই গ্রন্থে ভালোবাসার বাইরেও সন্নিবিষ্ট হয়েছে অন্য স্বাদের কিছু কবিতা। এর মধ্যে আছে জীবনবোধ ও জীবনচর্চার ভাবনা, শরৎ, স্মৃতি, উনিশের ভাবনা, দেশপ্রেম, সমাজের অন্দরে লুকিয়ে থাকা অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আদি। ‘পাঠকের উদ্দেশে’ শিরোনামে ভূমিকায় এমনটাই ব্যক্ত করেছেন পরিমল - ‘আমার কবিতার গরিষ্ঠাংশই জীবনমুখী। বাস্তব জীবনের নির্যাসসম্পৃক্ত এই কবিতাগুলি পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেবে সমাজের অনেক গভীর ও অনস্বীকার্য রূঢ়