Skip to main content

ভয়ে ভয়ে কথা বলা - এসব জানে প্রেমিক মন… মায়াবী যাপনের কাব্যগ্রন্থ ‘মায়াময় সময়’


এতগুলো কবিতা অথচ জুতসই একটি ট্যাগলাইন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আগে এমন ছিল না কবি শতদল আচার্যের কাব্যগ্রন্থের পাঠবেলায় অবাক কাণ্ড যদিও এর একটাই কারণ কবি এখানে কোনও একটি বিষয়কে পাখির চোখ করেননি বিচিত্র বিষয়ের উপর ব্যক্ত করেছেন অব্যক্ত কথাছবি আস্ত একটি সময়কে ধরে রাখতে চেয়েছেন কবি সময় মানেই তো এক বিস্তৃত যাপনবেলার বিশাল অধ্যয়ন স্বভাবতই বিষয়, যাপনকথা আর বহু সত্যকথনের কাছে হার মানতে হয়েছে কাব্যিকতাকে আর কাব্যিক উচ্চারণ না হলে ট্যাগলাইন কোথায় ? তবে কাব্যিকতা যে পুরোপুরি অনুপস্থিত সে কথা বলা যাবে না একেবারেই আছে সে বিষয় সাযুজ্যে, স্পষ্ট অনুভবে যথেষ্ট মায়া মিশিয়ে দিয়েছেন কবি তাঁর কবিতায় তবু সময় যে বড়ই নিঠুর
মায়াময় সময়কবির কততম কাব্যগ্রন্থ তা বোঝার উপায় নেই কারণ ইতিপূর্বে প্রকাশিত গ্রন্থাদির কোনও উল্লেখ নেই আলোচ্য সংকলনটিতে বইওয়ালা বুক কাফে, কলকাতা থেকে প্রকাশিত ৬৪ পৃষ্ঠার আলোচ্য সংকলনটিতে আছে মোট ৫৪টি কবিতা বিষয় বিচিত্র হলেও সার্বিকভাবে দুটি বিষয়ভাগে একে উপস্থাপিত করা যায় এক ভালোবাসা এবং দুই বন্ধুকৃত্য এছাড়া যা রয়েছে তা কবির যাপন অনুভব, আপন ভালোলাগা - মন্দ লাগা আর ঋদ্ধ অনুভূতির প্রকাশ আলতো অভ্যাসে ব্যবহৃত কিছু নৈমিত্তিক কথার মধ্যেও যে লুকিয়ে থাকে এক নিগূঢ় ব্যঞ্জনা, -ভাবিত তত্ত্বকথা সে আর কজন ভেবে দেখেন তলিয়ে ? কবি শতদল যেন একের পর এক খনন করে এনেছেন এমন কথা, এমন ভাবনাছড়িয়ে দিয়েছেন কবিতার গায়ে কিছু পঙ্ক্তি অন্তত তেমনই এক ভাবিত ইঙ্গিত দিয়ে রাখে -
কখন জানি মার সাথে গল্প কমে এল
অনেক কথাই বন্ধুদের সাথে
এভাবে গড়িয়ে যাওয়া সময়ে তুমি এলে
 
কোনও ছাতা বেশিদিন সঙ্গে থাকে না
ভুলবশত কোথাও রেখে আসি
এই বদঅভ্যাসে কত কিছু হারিয়েছি (প্রথম কবিতা - বদঅভ্যাস)
 
পূর্বাভাষে বার বার ঝড়ের কথা
আনন্দের কথা তো শুনিনি
জন আর বলে আনন্দের ব্যথা ?
লাইন পড়ে চাল ডাল রকমারি জিনিসের দোকানে
আনন্দের দোকানে, কোনওদিন লাইন পড়েনি
কোনও ঘণ্টা বাজে না
কোনও সংকেত নেই (কবিতা - আনন্দের দোকান)
এমন ব্যতিক্রমী চিন্তাপ্রসূত পঙ্ক্তি নিয়েই বেশির ভাগ কবিতা সেই যে মায়ার কথা বলা হয়েছে গ্রন্থনামে, সেই মায়াময়, জাদুকরী ভাবনারই ফসল সদ্য প্রকাশিত এই গ্রন্থ মায়াচিন্তায় প্রকট হয়ে উঠেছে কবির একান্ত যাপন কবির শহর শিলচর, শনবিল, বরাক, অভাবিত বন্যার প্রতিচ্ছবি, কালানুক্রমিক বিবর্তন, শহিদের কথা - সব এসেছে কবিতায় আর এসেছেবন্ধু ও ভালোবাসা এই দুটি বিষয় শুধু এই গ্রন্থে নয়, বলতে গেলে এ নিয়েই কবির যাবতীয় কবিতাযাপন শুরুবেলা থেকে অভাবিত, অনবদ্য কিছু শব্দ, কিছু পঙ্ক্তি - এই নিয়েই উচ্চারিত হয়েছে বার বার নিজেকে অবারিত করে, উন্মুক্ত করে কবি বলেছেন ভালোবাসার কথা, বন্ধুকৃত্যের কথা  উদ্ধৃত হোক এমনই কিছু মায়াবিজড়িত স্তবক, কিছু নির্বাচিত চরণ -
যত ভুল আমারই বন্ধু
সমস্ত সীমারেখা ভেঙে দিয়েছি
ঘুমের ঘোরে
এখন দেখি, লুকোনোর কিছুই নেই আজ (কবিতা - ভুল সময়)
 
তোমার তো কিছুই মনে নেই
কতটা গল্প দিয়ে বেঁধেছ আমাকে….
আমি তো একা
সব গল্প যাপন করেছি, গভীরে টেনে নিয়েছি
ভাবনা নিয়ে আছি বেশ
আমার ভালো লাগে, কষ্ট হয়
তবুও ভাবি কোনও এক বন্ধু আছে আমার সাথে (কবিতা - সাথে আছে বন্ধু আমার)
 
সময় - সেই বয়স, এই বয়সের ফারাক কবি নিজের মতো করে এঁকেছেন সব কবিতায় ভালোবাসার বিচিত্র আবেশ, আবেগ, সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন আপন খেয়ালে তবু এই নিয়ে আর শেষ কথা হয় না এ জীবনে ফুরায় না ভালোবাসার বন্ধন, ভালোবাসার কথা তাই কবি মোক্ষম লিখছেন -
আমি পরজন্মে রাজা হব ভালোবাসার
তাই ভালোবেসে যাই অকাতরে (কবিতা - পরজন্মে রাজা হব)
এই ভালোবাসা, বন্ধুভাবনা, যাপিত জীবনকেই কবি আঁকতে চেয়েছেন সব ভাবনা একসাথে এসে আচ্ছন্ন করে তুলেছে কবিমন তাই সময়কেই কারক হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন সোজাসাপটা -
আমি সমস্ত যাপনে তোমার সাথেই জড়িয়ে পড়ি
কেন যে এত ভাবনা
টালমাটাল সময় শরীর (কবিতা - তোমার ২০২২)
কতটা শূন্য করেছ আমার সময়কে
দেখ চেয়ে
শূন্যতার ভেতরে খুঁজেছি শূন্যতা (কবিতা - শূন্যতা)
 
সময় এতটাই টালমাটাল যে সময়কে মাপতে গিয়ে, প্রেম, ভালোবাসা, সম্পর্ক, বন্ধুত্বকে দুহাতে আঁকড়ে ধরতে গিয়ে কদাপি কাব্যিকতার টালমাটাল হওয়া একেবারেই তাই অস্বাভাবিক নয় আবেগের কাছে ছন্দ, গণিত কিংবা বিজ্ঞানের হার এক অপ্রতিরোধ্য নিয়তি এই নিয়তির কাছে কবির আত্মপক্ষ সমর্পণ
সৌমদীপ দত্তের গ্রন্থসজ্জা যথাযথ স্পষ্ট ছাপা ও বাঁধাই তথা প্রকাশক আবীর মুখোপাধ্যায়ের প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদ গ্রন্থটির সম্পদ বানানের শুদ্ধতার ব্যাপারে অধিক যত্নবান হওয়ার প্রয়োজন ছিল মাঝে মাঝে কিছু গদ্য-শব্দ এসে জায়গা করে নিয়েছে পদ্য-পঙ্ক্তির অভ্যন্তরে হয়তো এসবই সময়ের উচাটন, মায়ার বিমোহন গ্রন্থটি উৎসর্গীকৃত হয়েছে কবি চন্দ্রিমা দত্তের উদ্দেশে সব মিলিয়ে এক মায়াবী যাপনের কাব্যগ্রন্থমায়াময় সময়

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ৩০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৩৭২৪২৩ 

Comments

  1. পুঙ্খানুপুঙ্খ যথার্থ আলোচনা করেছেন। ভালো লাগল।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...