Skip to main content

বৈচিত্রময় সম্ভার 'শাদ্বল - ১০২'


‘…জন্ম হলে মৃত্যু অনিবার্য এই মৃত্যুকে জয় করতে পারেননি স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণও কিন্তু মাত্র ২৪ বছর বয়সে ঋতর্ণব ক্ষণিকের ধ্রুবতারা হয়ে চিরন্তন সত্যে বিলীন হয়ে গেল তা কি মানা যায়? তাঁর আত্মীয় পরিজনেরা এই শোকের ফল ভোগ করবেন কেন ? এর উত্তর নিশ্চয়ই পবিত্র গ্রন্থ গীতায় আছে….
ঋতর্ণবের স্মৃতি চারণের মধ্য দিয়ে এভাবেই গড়ে উঠেছেঋতর্ণব স্মৃতি পুরস্কার ও সপ্তাশ্বের টুকিটাকিশিরোনামে চার পৃষ্ঠা জোড়া বিস্তৃত সম্পাদকীয় শিলচর থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছেশাদ্বলপত্রিকার বর্ষ - ১২, সংখ্যা - ১ এবং সার্বিক ১০২তম সংখ্যাটি সাহিত্যের নানা আঙ্গিকের লেখালেখির সমাবেশে ১৪০ পৃষ্ঠার এই সংখ্যাটি যথেষ্ট পরিপুষ্ট এবং নান্দনিক হয়ে উঠেছে এতে সন্দেহ নেই বিন্যস্ত সূচিপত্র ধরে এগোলে প্রথমেই রয়েছে শ্রদ্ধার্ঘ্য তিনজন প্রয়াত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হয়েছে এই পর্বে রয়েছে কবি ব্রজেন্দ্র সিংহ-এর দুটি কবিতা, কবি সুশান্ত ভট্টাচার্যের দুটি কবিতা এবং ঋতর্ণব চক্রবর্তীর একটি কবিতা এই মঙ্গলাচরণের পরেই আসছেধর্মীয়বিভাগে দুটি নিবন্ধ অশোক বার্মারকেনে আইলাম’ - ‘ব্রহ্ম সত্য, জীবন মিথ্যাএই ভাবধারার উপর জীবন-মৃত্যুর রহস্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত হলেও সারগর্ভ আলোচনা রূপক শর্মাচার্য (ভ্রান্ত পথিক)-এর নিবন্ধজবা কেন রে মাতে লেখক মা কালী ও জবাফুলের পারস্পরিক তত্ত্ব বিষয়ে লিখেছেন একটি ব্যতিক্রমী তথা ভিন্ন আঙ্গিকের নিবন্ধ
প্রবন্ধ/নিবন্ধ/আলোচনা বিভাগে রয়েছে মোট সাতটি রচনা নীতিশ বিশ্বাসের নিবন্ধরবীন্দ্রনাথ ও সাম্প্রতিক স্বদেশশিরোনাম অনুযায়ী একটি সুলিখিত এবং বিস্তৃত নিবন্ধ সংখ্যাটির অন্যতম সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে . কস্তুরী হোম চৌধুরী লিখেছেনকীর্তিমান সাহিত্যিক শ্রীযুক্ত দীপক হোম চৌধুরীকে নিয়ে কিছু কথা নিবন্ধে রয়েছে সাহিত্যিক দীপক হোমচৌধুরীর জীবন ও বিশাল সাহিত্য সম্ভারের খোঁজখবর অনেক অজানা তথ্য হয়তো উঠে আসবে এই নিবন্ধ থেকে জীবিত ব্যক্তিদের জীবদ্দশায় এ জাতীয় নিবন্ধ প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আলোচ্য সংখ্যাটিও উৎসর্গ করা হয়েছে শ্রী দীপক হোম চৌধুরীকে। শ্রীমতী পান্না চক্রবর্তীর নিবন্ধ ‘ঊনবিংশ শতাব্দীর মহিলা কবি ‘গিরীন্দ্রমোহিনী দাসী’ও ব্যতিক্রমী। ‘লালন সাঁইয়ের জীবন কথা’ - লিখেছেন স্মৃতি দাস। সংক্ষিপ্ত হলেও উৎকৃষ্ট ও তথ্যবহুল। অসিত চক্রবর্তীর সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ ‘দেশের নামটা বাংলাদেশ - বাস্তবে বাংলা ও বাঙালি বিদ্বেষ’ বাস্তব প্রেক্ষিতে একটি নির্মোহ সত্যের বাখান। এছাড়াও রয়েছে আরও দুটি নিবন্ধ। লিখেছেন সুহাস বিমল সেনগুপ্ত ও শঙ্কর চন্দ্র নাথ।
রয়েছে তিনটি অণুগল্প। মঞ্জরী হীরামণি রায়-এর ‘মরমিয়া নৌকো’ নান্দনিক। দীপায়ন পাল-এর ‘পার্থক্য’ বাস্তব প্রেক্ষিতের উপর গোছানো অণুগল্প। সত্যজিৎ নাথ-এর ‘জীবন দর্শন’ শিশুদের উপযোগী গল্প। পরবর্তী পর্বে মানিক চক্রবর্তীর ছোটগল্প ‘সময়-অসময়’ বুনোট, সংলাপ, ঘটনাপ্রবাহ, প্রেম, বাস্তব সব মিলিয়ে একটি চমৎকার গল্প। সাহিত্যগুণে ভরপুর এই গল্পটিও আলোচ্য সংখ্যার অন্যতম সম্পদ নিঃসন্দেহে। চম্পক সাহার গল্পটি বুনোটে, ভাষায় জটিল হলেও সুখপাঠ্য। ‘রবেন আয়ল্যাণ্ড (দক্ষিণ আফ্রিকা)’ - ভ্রমণ কাহিনি লিখেছেন সুমিতা দেব। সাহিত্যগুণে খামতি থাকলেও তথ্যাদির নিপুণ প্রয়োগে সুপাঠ্য হয়ে উঠেছে
কবিতা বিভাগে যাঁদের ভিন্ন স্বাদের কবিতা সন্নিবিষ্ট হয়েছে তাঁরা হলেন - শিশির কুমার বিশ্বাস, হরনাথ চক্রবর্তী, পীযূষ রাউত, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্য, সুনন্দা নন্দী পুরকায়স্থ, স্বপ্না ভট্টাচার্য, মহুয়া চৌধুরী, রুণা পাল, শিখা দাশগুপ্ত, নিভা চৌধুরী, কস্তুরী হোম চৌধুরী, ওঙ্কার প্রসাদ সেন, শিপ্রা দে, সুদীপ্তা বিশ্বাস, রবি শঙ্কর ভট্টাচার্য, কল্লোল চৌধুরী, জয়ন্তী দত্ত, কৃষ্ণকুসুম পাল, ভক্ত সিং, বিধান চন্দ্র দে, শিপ্রা দাশ, আশুতোষ দাস, শিবানী গুপ্ত, সুজিত দেব, ধ্রুবজ্যোতি দাস, নারায়ণ মোদক, জসিম উদ্দিন লস্কর, পিঙ্কু চন্দ, মন্টু দাস, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, পরিমল কর্মকার, আছহাব উদ্দিন তালুকদার, শুক্লা ভট্টাচার্য, অনিল পাল, অখিল চন্দ্র পাল, জয়ন্তী চৌধুরী, ছন্দা দাম, মণিমালা রুদ্র ভট্টাচার্য, নূর মোহম্মদ, সুমিত্রা পাল, সুব্রত পুরকায়স্থ, মরুৎ চক্রবর্তী, মুন চক্রবর্তী, শর্মিলী দেব কানুনগো, ফনি গোপাল নাথ, রমলা চক্রবর্তী, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, যোগেন্দ্র চন্দ্র দাস, শ্রাবণী সরকার, শর্মি দে, স্বাতীলেখা রায়, মমতা চক্রবর্তী, শাশ্বতী ভট্টাচার্য, দোলনচাঁপা দাসপাল, দেবলীনা রায়, জয়ন্তী কর্মকার, শতদল আচার্য, সমর পাল, শৈলেন দাস, রাজশ্রী পুরকায়স্থ, শম্পা ঘোষ, সুমঙ্গল দাস, সপ্তমিতা নাথ, শ্যামলী ভট্টাচার্য পাল, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, সুদীপ ভট্টাচার্য, মানসী সিনহা, পারমিতা দাস, ময়ূরী রয়, চান্দ্রেয়ী দেব, অটল দাস, সুখেন দাস, কিরণ দেবী, আদিমা মজুমদার, সুপ্রদীপ দত্তরায়, অভীক রায়, মাধবী শর্মা ও আলোচ্য পত্রিকার সম্পাদক রাণা চক্রবর্তী।
সব শেষে ‘সপ্তাশ্ব সংবাদ’ শিরোনামে প্রকাশক ‘সপ্তাশ্ব প্রকাশনী’র পক্ষে রয়েছে সংস্থার এ যাবৎ কৃত যাবতীয় কর্মকাণ্ডের খতিয়ান। লিপিবদ্ধ করেছেন আলোচ্য পত্রিকার সহ-সম্পাদক তথা প্রকাশক সুপর্ণা চক্রবর্তী। পত্রিকার কাগজ, ছাপা ইত্যাদির মান যথাযথ হলেও কিছু রচনায় বানান-বিভ্রাট রয়ে গেছে। পিনাকী দাস-এর প্রচ্ছদ পরিকল্পনা ছিমছাম ও নান্দনিক। সব মিলিয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে চলার এক প্রয়াস তথা লিটল ম্যাগাজিনের দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার অনুভূত হয়েছে পত্রিকার নিবিড় পাঠে।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - অনুল্লেখিত
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৮৫৪১

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...