নিখাদ একটি স্বরচিত
প্রেমের কবিতার সংকলন। কবিতায় আসলে
যতই ভিন্ন ভাবধারা থাকুক, থাকুক ভিন্ন প্রেক্ষাপট, ভিন্ন বিষয় তবু সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়ে প্রেমই যেন সব থেকে বেশি পুষ্ট করে কবিতাকে। উলটো
করে বললে কবিতাই যেন সব থেকে বেশি প্রকট করে তোলে প্রেমকে। প্রেম
ও ভালোবাসা এক অর্থে একাকার আবার ভিন্ন অর্থে দুটির মধ্যে রয়ে গেছে সূক্ষ্ম এক রকমফের।
নিখাদ প্রেমের কিংবা ভালোবাসার কবিতার সংকলন আকছার প্রকাশিত হতে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে কবি মননের কিছু দ্বিধা, কিছু সমাজ সচেতনতার প্রেক্ষিতে মানসিক আন্দোলন, কিছু ব্যক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তি মননের খোলাখুলি প্রকাশের দৈন্য এসব কিছুই মূল প্রতিপাদ্য। অথচ দেখা যায় পৌরাণিক কাল থেকে আজকের ঋদ্ধ কাব্যসাহিত্যের মূল্যায়নে প্রেমের কবিতাই দাঁড়িয়ে রয়েছে সর্বাগ্রে। কালজয়ী, যুগজয়ী কাব্যসাহিত্যে প্রেমের কবিতাই সর্বাগ্রগণ্য।
এত সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব, বৈপরীত্য কাটিয়ে উঠে ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছে কবি সত্যজিৎ নাথ-এর কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার মিতা’। কবির ‘মিতা’ এখানে একাধারে বন্ধু, চিরসখা, নির্ভেজাল প্রেমিকা ও ভালোবাসার পাত্রী। ৬৪ পৃষ্ঠার বোর্ড বাঁধাই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে একের পর এক স্বল্পদৈর্ঘের ৫৬টি কবিতা। গ্রন্থের ভূমিকায় ‘একবার ভালোবেসে দেখো আমাকে ঘৃণা করা কতটা কঠিন...’-খ্যাত বিশিষ্ট কবি রুদ্র গোস্বামী লিখছেন - ‘দু:খ হতাশা দহন অথবা ভালোবাসা থেকে প্রাপ্ত আঘাত ব্লেডের ধারের মতো মানুষের হৃদয়কে কাটে। ক্ষতবিক্ষত করে। মানুষকে টেনে নিয়ে যায় মনখারাপের দ্বীপে। কবি সত্যজিৎ নাথ জানেন মন খারাপ ওষুধে কমে না। কথা কখনো-কখনো ওষুধের থেকে ভালো কাজ করে...... প্রিয় মানুষকে ভালো রাখার সমাধান মানুষের হৃদয় থেকে কতদূরে ? ‘ভালোবাসার মিতা’ এই কাব্য সংকলনটিতে কবি মূলত এই সব প্রশ্নেরই অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন এবং এই গ্রন্থে কবি মূলত সেইসব কথাদের স্থান দিতে চেয়েছেন, যা পাঠককে একটা বোধের ঠিকানায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে বলতে পারে, হেরে যাওয়ার থেকে অধিক ভালো ঘুরে দাঁড়ানো......।’
ভূমিকায় বলা
কথাগুলো যেন পরতে পরতে উপলব্ধির জানালায় এসে উঁকি দেয় পাঠকের কাছে। প্রথম কবিতা
থেকেই যার যাত্রা শুরু -
কালচে আকাশের নীচে বেলাশেষের সাইরেন
ভালোবাসার হাপরে ঝড় তোলো তুমি
মিতা,
এসো অক্ষত ফুসফুস নিয়ে
তোমার অবয়ব বুকে খোদাই করে
শিল্পী হব আমি। (কবিতা - প্রাক-শেষের কালে)।
এর পর এক এক করে উন্মোচিত হয়েছে ‘অক্ষত ফুসফুস’, ‘ভালোবাসার হাঁপর’-এর ওঠানামা আর কবি যেন হয়ে উঠেছেন এক মূর্ত শিল্পী, ভালোবাসার অকৃতদার ভাস্কর। দিনে দিনে, কালে কালে, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, হৃদয় থেকে ক্ষরিত হয়েছে প্রেম আর সরাসরি ভালোবাসার বিচিত্র সব অনুষঙ্গ, উদ্ভাসিত হয়েছে নিটোল ভালোবাসার অভিব্যক্তি।
ক্রমান্বয়ে কবিতার পথ ধরে এগোলে এক ভালোবাসার গল্প যেন সজ্জিত হয়ে ওঠে। প্রেমের উদ্রেক, অপ্রাপ্তির মনখারাপি, প্রাপ্তিসুখের উদ্বেল অনুভব, হারিয়ে না যাওয়ার আর্তি আর প্রেমকে অক্ষত ভালোবাসার মোড়কে শিল্পীর শিল্পে চিরভাস্বর করে রাখার এক পূর্ণদৈর্ঘের বাখান। মনে হয় সবগুলো কবিতা মিলে হয়তো হয়ে উঠতে পারত একটি দীর্ঘ প্রেমের কবিতা। কবি কি এভাবে ভেবেছেন কখনও ? কবির ভাবনা কেমন তাহলে ? জেনে নেওয়া যাক শেষ প্রচ্ছদ থেকে - ‘প্রেম। মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই যার, ব্যাপ্তি আছে শুধু। প্রেম চিরন্তন, শাশ্বত। প্রেমের টানেই মানুষ কখনও ঘর ছেড়ে যায় অজানার উদ্দেশে, আবার সেই প্রেমের স্বপ্নে বিভোর কেউ নিজেকে গুটিয়ে নেয় চার দেয়ালের ভেতরে। সম্পর্ক আর পারিপার্শ্বিকের রকমফেরে সংজ্ঞা একটু অদল-বদল হয় ঠিকই, ভিত একই থেকে যায়। এই ভাবনা থেকেই উঠে এসেছে ‘ভালোবাসার মিতা’র কবিতাগুলি...।’
বিরহ কিংবা বিচ্ছেদ না থাকলে নাকি পরিপূর্ণ হয় না প্রেম। সত্যজিতের বহু কবিতায় আমরা দেখতে পাই এক অনাবিল বিচ্ছেদসুখ। প্রেম এসে ধরা দেয় বিচ্ছেদের করুণ আবহে। বিশ্বকবির ভাষায় - ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে...।’ দুঃখ, মৃত্যু, বিরহের আবেশে জাগে অনন্ত আনন্দ, শান্তির সুন্দরতা। কবি সত্যজিতের সহজ, সরল, অকপট পঙ্ক্তিযুক্ত কবিতায়ও ভেসে আসে এমন আবহ -
‘যা কিছু ভালো লাগা ছিল
স্বপ্ন হয়ে গেছে কবেই
তোমাকে নিয়ে তাই স্বপ্ন আছে
আমার, ছবি নেই তেমন।
বৃষ্টি শেষে রোদ এসে জানায়
সে স্বপ্ন ভালোবাসা হয়ে গেছে।
এবার উত্তাপ হয়ে কাছে এসো...
মৃত্যুর মতো ভালোবাসাও
জানিয়ে আসে না কখনও
তাই স্বপ্ন শেষে আজ শুরু হোক
আমাদের আগলে রাখারাখি।’ (কবিতা - স্বপ্ন শেষে)।
স্পষ্ট ছাপা আর যথাযথ অক্ষরবিন্যাসযুক্ত গ্রন্থটির নান্দনিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে অরূপ মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় ব্লার্বে রয়েছে কবির সচিত্র পরিচিতি। ছাপা ও বানান ভুল বর্জিতপ্রায় একটি সরল পঠনের কাব্যগন্থ যদিও কাব্যময়তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে কবিতায়। বিষয়, ভাব ও ভাষ্য এখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে। তবে চিরন্তন প্রেমে নান্দনিকতার স্থান কতটুকু তা ভাববার বিষয় বইকী। তারতম্য শুধু কবিতার সুখপঠনে।
নিখাদ প্রেমের কিংবা ভালোবাসার কবিতার সংকলন আকছার প্রকাশিত হতে দেখা যায় না। এক্ষেত্রে কবি মননের কিছু দ্বিধা, কিছু সমাজ সচেতনতার প্রেক্ষিতে মানসিক আন্দোলন, কিছু ব্যক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তি মননের খোলাখুলি প্রকাশের দৈন্য এসব কিছুই মূল প্রতিপাদ্য। অথচ দেখা যায় পৌরাণিক কাল থেকে আজকের ঋদ্ধ কাব্যসাহিত্যের মূল্যায়নে প্রেমের কবিতাই দাঁড়িয়ে রয়েছে সর্বাগ্রে। কালজয়ী, যুগজয়ী কাব্যসাহিত্যে প্রেমের কবিতাই সর্বাগ্রগণ্য।
এত সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব, বৈপরীত্য কাটিয়ে উঠে ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছে কবি সত্যজিৎ নাথ-এর কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবাসার মিতা’। কবির ‘মিতা’ এখানে একাধারে বন্ধু, চিরসখা, নির্ভেজাল প্রেমিকা ও ভালোবাসার পাত্রী। ৬৪ পৃষ্ঠার বোর্ড বাঁধাই কাব্যগ্রন্থে রয়েছে একের পর এক স্বল্পদৈর্ঘের ৫৬টি কবিতা। গ্রন্থের ভূমিকায় ‘একবার ভালোবেসে দেখো আমাকে ঘৃণা করা কতটা কঠিন...’-খ্যাত বিশিষ্ট কবি রুদ্র গোস্বামী লিখছেন - ‘দু:খ হতাশা দহন অথবা ভালোবাসা থেকে প্রাপ্ত আঘাত ব্লেডের ধারের মতো মানুষের হৃদয়কে কাটে। ক্ষতবিক্ষত করে। মানুষকে টেনে নিয়ে যায় মনখারাপের দ্বীপে। কবি সত্যজিৎ নাথ জানেন মন খারাপ ওষুধে কমে না। কথা কখনো-কখনো ওষুধের থেকে ভালো কাজ করে...... প্রিয় মানুষকে ভালো রাখার সমাধান মানুষের হৃদয় থেকে কতদূরে ? ‘ভালোবাসার মিতা’ এই কাব্য সংকলনটিতে কবি মূলত এই সব প্রশ্নেরই অনুসন্ধান করতে চেয়েছেন এবং এই গ্রন্থে কবি মূলত সেইসব কথাদের স্থান দিতে চেয়েছেন, যা পাঠককে একটা বোধের ঠিকানায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে বলতে পারে, হেরে যাওয়ার থেকে অধিক ভালো ঘুরে দাঁড়ানো......।’
কালচে আকাশের নীচে বেলাশেষের সাইরেন
ভালোবাসার হাপরে ঝড় তোলো তুমি
মিতা,
এসো অক্ষত ফুসফুস নিয়ে
তোমার অবয়ব বুকে খোদাই করে
শিল্পী হব আমি। (কবিতা - প্রাক-শেষের কালে)।
এর পর এক এক করে উন্মোচিত হয়েছে ‘অক্ষত ফুসফুস’, ‘ভালোবাসার হাঁপর’-এর ওঠানামা আর কবি যেন হয়ে উঠেছেন এক মূর্ত শিল্পী, ভালোবাসার অকৃতদার ভাস্কর। দিনে দিনে, কালে কালে, ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, হৃদয় থেকে ক্ষরিত হয়েছে প্রেম আর সরাসরি ভালোবাসার বিচিত্র সব অনুষঙ্গ, উদ্ভাসিত হয়েছে নিটোল ভালোবাসার অভিব্যক্তি।
ক্রমান্বয়ে কবিতার পথ ধরে এগোলে এক ভালোবাসার গল্প যেন সজ্জিত হয়ে ওঠে। প্রেমের উদ্রেক, অপ্রাপ্তির মনখারাপি, প্রাপ্তিসুখের উদ্বেল অনুভব, হারিয়ে না যাওয়ার আর্তি আর প্রেমকে অক্ষত ভালোবাসার মোড়কে শিল্পীর শিল্পে চিরভাস্বর করে রাখার এক পূর্ণদৈর্ঘের বাখান। মনে হয় সবগুলো কবিতা মিলে হয়তো হয়ে উঠতে পারত একটি দীর্ঘ প্রেমের কবিতা। কবি কি এভাবে ভেবেছেন কখনও ? কবির ভাবনা কেমন তাহলে ? জেনে নেওয়া যাক শেষ প্রচ্ছদ থেকে - ‘প্রেম। মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই যার, ব্যাপ্তি আছে শুধু। প্রেম চিরন্তন, শাশ্বত। প্রেমের টানেই মানুষ কখনও ঘর ছেড়ে যায় অজানার উদ্দেশে, আবার সেই প্রেমের স্বপ্নে বিভোর কেউ নিজেকে গুটিয়ে নেয় চার দেয়ালের ভেতরে। সম্পর্ক আর পারিপার্শ্বিকের রকমফেরে সংজ্ঞা একটু অদল-বদল হয় ঠিকই, ভিত একই থেকে যায়। এই ভাবনা থেকেই উঠে এসেছে ‘ভালোবাসার মিতা’র কবিতাগুলি...।’
বিরহ কিংবা বিচ্ছেদ না থাকলে নাকি পরিপূর্ণ হয় না প্রেম। সত্যজিতের বহু কবিতায় আমরা দেখতে পাই এক অনাবিল বিচ্ছেদসুখ। প্রেম এসে ধরা দেয় বিচ্ছেদের করুণ আবহে। বিশ্বকবির ভাষায় - ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে...।’ দুঃখ, মৃত্যু, বিরহের আবেশে জাগে অনন্ত আনন্দ, শান্তির সুন্দরতা। কবি সত্যজিতের সহজ, সরল, অকপট পঙ্ক্তিযুক্ত কবিতায়ও ভেসে আসে এমন আবহ -
‘যা কিছু ভালো লাগা ছিল
স্বপ্ন হয়ে গেছে কবেই
তোমাকে নিয়ে তাই স্বপ্ন আছে
আমার, ছবি নেই তেমন।
বৃষ্টি শেষে রোদ এসে জানায়
সে স্বপ্ন ভালোবাসা হয়ে গেছে।
এবার উত্তাপ হয়ে কাছে এসো...
মৃত্যুর মতো ভালোবাসাও
জানিয়ে আসে না কখনও
তাই স্বপ্ন শেষে আজ শুরু হোক
আমাদের আগলে রাখারাখি।’ (কবিতা - স্বপ্ন শেষে)।
স্পষ্ট ছাপা আর যথাযথ অক্ষরবিন্যাসযুক্ত গ্রন্থটির নান্দনিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে অরূপ মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় ব্লার্বে রয়েছে কবির সচিত্র পরিচিতি। ছাপা ও বানান ভুল বর্জিতপ্রায় একটি সরল পঠনের কাব্যগন্থ যদিও কাব্যময়তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে কবিতায়। বিষয়, ভাব ও ভাষ্য এখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে। তবে চিরন্তন প্রেমে নান্দনিকতার স্থান কতটুকু তা ভাববার বিষয় বইকী। তারতম্য শুধু কবিতার সুখপঠনে।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক -
অভিযান পাবলিশার্স, কলকাতা
মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৮০১৭০৯০৬৫৫ (প্রকাশক)।
মূল্য - ২০০ টাকা
যোগাযোগ - ৮০১৭০৯০৬৫৫ (প্রকাশক)।
Comments
Post a Comment