Skip to main content

ভাব ও বোধের নির্মোহ প্রকাশ - ‘আগনের উঠোন’


ইংরেজিতে একটি কথা আছে - ‘Quality matters, not the quantity’. এবং এই কোয়ালিটি অর্থাৎ গুণমানেই আলোচনায় উঠে আসে কিছু স্বল্পদৈর্ঘের ছায়াছবি, কিছু অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবি কিংবা কিছু গ্রন্থ বা বই যাদের সাধারণত পুস্তিকা বলাই সঙ্গত এমনই একটি কাব্যপুস্তিকা হাতে এল সম্প্রতি উত্তর ত্রিপুরা থেকে কবি নিবারণ নাথেরআগনের উঠোন সাকুল্যে ১২ পৃষ্ঠার পুস্তিকা যেখানে রয়েছে দুলাইনের মোট ৪০টি কবিতা
দু-চার লাইনের কবিতায় সাধারণত বিশদে কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায় না যদিও গুণগত মানে, শব্দের সুচিন্তিত ও সুসংহত প্রয়োগে দুলাইনেও যে এক অপার অনুভব ব্যক্ত করা যায় তারই এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন আলোচ্য পুস্তিকাটি প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো এখানে আঞ্চলিক উচ্চারণে ‘আগন’ মানে হচ্ছে বাংলা মাস অগ্রহায়ণ বা অঘ্রান। অবিভক্ত গ্রামবাংলার কৃষক ও গৃহস্থ বাড়ির উঠোনে এই অঘ্রানেই প্রতিষ্ঠা হয় খেয়ে পরে বেঁচে থাকার প্রত্যয়ের ছবি। আগনের উঠোনে ধানের আগমনে বয়ে আনে ভবিষ্যতের স্থিরতা। সুস্থ জীবন যাপনের এক প্রতিচ্ছবি আগনের উঠোন।
কবি নিবারণের কবিতায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে জীবনেরই নানা রূপকল্প। কঠিন দিনে যেখানে অনাচার, অনিয়ম হয়ে উঠেছে নিত্যদিনের চর্চা সেখানে কবি তাঁর উঠোনে বপন করতে চেয়েছেন আগনের উঠোনের সৌকর্য ও প্রত্যয়। মাত্র দু’লাইনে কবি উপস্থাপন করেছেন ভিন্ন ভিন্ন অনুষঙ্গ। এক নির্দিষ্ট ফর্ম প্রত্যক্ষ করা যায় কবিতায়। এ নিয়ে ভূমিকায় বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক হৃষিকেশ নাথ লিখছেন - ‘…সময়ের গতিপথে অবিরত কবিতার ভাব , ভাষা, শরীর ও ধারণার পরিবর্তন হতে থাকে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় জায়গায়ই এই পরিবর্তন দেখা যায়। সত্তরের দশকের কবি নিবারণ নাথের কবিতাতেও এই পরিবর্তন ও নিরীক্ষা লক্ষ করা যায়। ...দুই লাইনের কবিতাগুলো মনে এক উত্তাপ সৃষ্টি করে যা পাশ্চাত্যের কোন কোন কবির মধ্যে দেখা গেছে। উপনিবেশোত্তর সময়ে চেতনায় ধরা দেয়া প্রান্তিকায়িতজনদের জীবন যন্ত্রণা ধরা পড়েছে ‘মেঘরোদ’ ও ‘নবান্ন’ কবিতাদু’টিতে। কবি লিখেছেন - ‘মেঘ ভেঙে পড়ে মাটির ঘরে / হৃদয় ভেজানো চাই তপ্ত রোদে।’ (মেঘরোদ)। ‘নবান্ন’ কবিতায় কবি বলছেন - ‘ধান গোলায় উঠুক বা না উঠুক / এখন নবান্নের ঝাঁঝে আগন।’ ...’আগনের উঠোন’ সংকলনে নিবারণ নাথ এক আত্মবিদারক অসীম জ্বলন্ত সময়ের জটিল বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। সময় চেতনার নির্ভেজাল দলিল এই কবিতাগুলো...।’
অনুষঙ্গে জীবনের নানা অনুভব, ঘাত-প্রতিঘাত উৎকর্ষে তুলে ধরেছেন কবি। উদাহরণ -
‘এক ইঞ্চি বেষ্টনীতে লজ্জা ঢাকে পিঠ
সময় বলে দেয় সভ্যতার অলংকার’। (কবিতা - অলংকার)
‘আমার উঠোনে আজ থই থই প্রেমসুধা
স্মৃতিপটে আঁকা নবান্নের আজন্ম ক্ষুধা’। (আজন্ম)
এ ধরণের কবিতায় সাধারণত অন্ত্যমিল এক অবধারিত অলংকার। তাই কিছু কবিতা ছন্দহীনতায় হয়তো জমে ওঠেনি সেভাবে যদিও ভাবের ঘরে শূন্যতা বোধ হয়নি। কবির কথা নিরেট উঠে এসেছে গদ্যভাবে। উপযুক্ত প্রুফ রিডিং-এর অভাবে বানান ভুলের আধিক্য কবিতার গুণগত মানকে নিম্নমুখী করেছে। ছাপা তথা বর্ণ সংস্থাপন যথাযথ। সংগৃহীত ছবিযুক্ত প্রচ্ছদ মানানসই হয়েছে যদিও একটি প্রশ্ন থেকেই যায় - এ ধরনের অণুগ্রন্থ কালের খাতায় সংখ্যাবৃদ্ধির বাইরে একটি সুস্পষ্ট ছাপ রেখে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে কি ? কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটির এই সমীকরণে কতটা উতরে যায় কবিতা কিংবা গ্রন্থ তা বলতে পারবে একমাত্র সময় ও পাঠক। সব মিলিয়ে ভাব ও বোধের নির্মোহ প্রকাশ এই একগুচ্ছ কবিতার বই - ‘আগনের উঠোন’।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

প্রকাশক - নীলকণ্ঠ প্রকাশনী, কদমতলা
যোগাযোগ - ৯৮৬২৬৭৭৭৫২ 

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...