একটি মর্মস্পর্শী
গ্রন্থনাম। এই নামে রয়েছে তিনটি শব্দ - শোক, জল ও আলেখ্য। অনুমান
করেই নেয়া যায় শোক ও শোকজনিত জল অর্থাৎ অশ্রুবিষয়ক কবিতার এক নিশ্চিত সমাহার এই গ্রন্থ। আবার
আলেখ্য শব্দের অভিধানগত অর্থ যেখানে ছবি বা প্রতিমূর্তি সেখানে বাস্তবিক অর্থে বিষয়ভিত্তিক
একটি রচনা, সে পদ্য কিংবা গদ্যেই হোক - তাকেই আলেখ্য
বলা হয়ে থাকে। যেমন কাব্য আলেখ্য
ইত্যাদি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে অশ্রু নির্গমনকারী
বিষয়ের উপর লেখা একগুচ্ছ কবিতার সমাহার আলোচ্য গ্রন্থটি। এবং
এর পরিচয়ও পাওয়া যায় অন্তত প্রথমদিককার অনেকগুলো কবিতায় যেখানে সরাসরি ‘শোকজল’ শব্দবন্ধটি এসেছে কবিতার শরীরে দুঃখবোধের দ্যোতক
হিসেবে।
সঞ্জয় চন্দ্র দাস কবিতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। এর আগেও তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে এর পরিচয় পাওয়া গেছে। ছন্দ নিয়ে, ছন্দহীনতা নিয়ে, শব্দ ও শব্দের দ্বিত্ব নিয়ে খেলা করা তাঁর কবিতাগত স্বভাব। ৭১ পৃষ্ঠার আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট ৫৯টি কবিতায়ও এমন নিরীক্ষণ প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রার্থনা সিরিজের ৩টি কবিতাও আছে এর মধ্যে। প্রায় প্রতিটি কবিতার শিরোনামের মধ্যেও শোকদুঃখের আবহ ফুটে উঠেছে শাব্দিক প্রয়োগে, যেমন - দুঃস্বপন, আঁধার, মৃত্যু, অসুখী, দুর্ঘটনা, সন্ধ্যাগাথা, শোকবর্ণ, ঝড়জল, শুকনো পাতা, শূন্যতা, বেদনালিপি, আত্মহত্যা ইত্যাদি। এক গভীর বিষাদগ্রস্ততা ফুটে ওঠে কবিতায় -
আঁধার বেয়ে নামছে ঘাম
ঘাম বেয়ে নামছে বিষাদ সত্তায়
বিগত দুঃস্বপ্নের ইতিমালা ভেসে উঠে ক্রমশ
এক পা দু’পা করে এগোতেই সামনে খাদ -
ভাসে ঝিমঝিম নীরবতা
শেষ ঘুমের বড়ির মতো ছড়িয়ে আছে খাদে
অপার রহস্য-আঁধার
বিছানা-বালিশ আর মশারি ঘিরে
লেপটে আছে শ্রান্তি
আঁধারে বইছে ঘাম হয়তো বা শান্তি (কবিতা - আঁধার বেয়ে নামছে ঘাম)।
প্রায় যতিচিহ্নবিহীন এইসব কবিতা যেন কবির আত্মোপলব্ধির সরাসরি সম্প্রচার। এত নৈরাশ্য, এত এত বিষাদ যেন কবির আত্মগত বোধের প্রকাশ যেখানে নেই কোনো কল্পনার ফানুস, নেই কোনো মেদবাহুল্য। কবির অনুভবে এক জাগতিক বিপর্যয় ভেসে ওঠে। অনাচার, অনিয়মের বাড়বাড়ন্তে অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ নাড়া দেয় অন্তরে -
শোকজলের গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের জগৎ
জলের আলো ঘিরে আমাদের এই জাল-ঘেরা জীবন।
পৃথিবীতে বেড়েছে কালো হাত আর হৃদয়টা টুকরো টুকরো হয়ে
লুকিয়ে পড়েছে ঘরকুনো ব্যাঙের ভিতর… (কবিতা - শোকজলের গর্ভে)।
এ যেন কঠিন বাস্তবের এক অবশ্যম্ভাবী আঁধারকালো ভবিতব্য।
ভূমিকাবিহীন এই কাব্যগ্রন্থের বহু কবিতায় রয়েছে রূপক, উপমা, অনুপ্রাস আর শব্দ-ঝংকারের ছড়াছড়ি। এক নীরব বেদনালিপির আলপনা আঁকা হয়েছে গ্রন্থ জুড়ে। কবি তাঁর কবিতায় ব্যবহার করেছেন কিছু অপ্রচলিত শব্দ যা হয়তো বহু পাঠকের কাছে নতুন হয়ে ধরা দেবে। যেমন - আমক-শ্মশান, সরঃ ইত্যাদি।
স্পষ্ট ছাপা, যথাযথ বাঁধাই। অক্ষর, শব্দ, পঙ্ক্তিবিন্যাসও যথাযথ। বানান সচেতনতার আভাস পরিলক্ষিত হলেও রয়ে গেছে বেশ কটি। এমনকি শিরোনামেও। কমল ঘোষের প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক ও নান্দনিক। গ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন মঞ্জিতকুমার রায়ের স্মরণে। প্রতিটি কবিতার শেষে রয়েছে রচনাকাল ও স্থাননাম। সব মিলিয়ে এক গভীর অনুভবের কাব্যগ্রন্থ ‘শোকজলের আলেখ্য’।
সঞ্জয় চন্দ্র দাস কবিতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন। এর আগেও তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে এর পরিচয় পাওয়া গেছে। ছন্দ নিয়ে, ছন্দহীনতা নিয়ে, শব্দ ও শব্দের দ্বিত্ব নিয়ে খেলা করা তাঁর কবিতাগত স্বভাব। ৭১ পৃষ্ঠার আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট ৫৯টি কবিতায়ও এমন নিরীক্ষণ প্রত্যক্ষ করা যায়। প্রার্থনা সিরিজের ৩টি কবিতাও আছে এর মধ্যে। প্রায় প্রতিটি কবিতার শিরোনামের মধ্যেও শোকদুঃখের আবহ ফুটে উঠেছে শাব্দিক প্রয়োগে, যেমন - দুঃস্বপন, আঁধার, মৃত্যু, অসুখী, দুর্ঘটনা, সন্ধ্যাগাথা, শোকবর্ণ, ঝড়জল, শুকনো পাতা, শূন্যতা, বেদনালিপি, আত্মহত্যা ইত্যাদি। এক গভীর বিষাদগ্রস্ততা ফুটে ওঠে কবিতায় -
ঘাম বেয়ে নামছে বিষাদ সত্তায়
বিগত দুঃস্বপ্নের ইতিমালা ভেসে উঠে ক্রমশ
এক পা দু’পা করে এগোতেই সামনে খাদ -
শেষ ঘুমের বড়ির মতো ছড়িয়ে আছে খাদে
অপার রহস্য-আঁধার
বিছানা-বালিশ আর মশারি ঘিরে
লেপটে আছে শ্রান্তি
আঁধারে বইছে ঘাম হয়তো বা শান্তি (কবিতা - আঁধার বেয়ে নামছে ঘাম)।
জলের আলো ঘিরে আমাদের এই জাল-ঘেরা জীবন।
পৃথিবীতে বেড়েছে কালো হাত আর হৃদয়টা টুকরো টুকরো হয়ে
ভূমিকাবিহীন এই কাব্যগ্রন্থের বহু কবিতায় রয়েছে রূপক, উপমা, অনুপ্রাস আর শব্দ-ঝংকারের ছড়াছড়ি। এক নীরব বেদনালিপির আলপনা আঁকা হয়েছে গ্রন্থ জুড়ে। কবি তাঁর কবিতায় ব্যবহার করেছেন কিছু অপ্রচলিত শব্দ যা হয়তো বহু পাঠকের কাছে নতুন হয়ে ধরা দেবে। যেমন - আমক-শ্মশান, সরঃ ইত্যাদি।
স্পষ্ট ছাপা, যথাযথ বাঁধাই। অক্ষর, শব্দ, পঙ্ক্তিবিন্যাসও যথাযথ। বানান সচেতনতার আভাস পরিলক্ষিত হলেও রয়ে গেছে বেশ কটি। এমনকি শিরোনামেও। কমল ঘোষের প্রচ্ছদ প্রাসঙ্গিক ও নান্দনিক। গ্রন্থটি কবি উৎসর্গ করেছেন মঞ্জিতকুমার রায়ের স্মরণে। প্রতিটি কবিতার শেষে রয়েছে রচনাকাল ও স্থাননাম। সব মিলিয়ে এক গভীর অনুভবের কাব্যগ্রন্থ ‘শোকজলের আলেখ্য’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক -
বাংলা সাহিত্য সভা, অসম
মূল্য - ১২০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৪৭৫৯৮০৩
মূল্য - ১২০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৪৭৫৯৮০৩
Comments
Post a Comment