Skip to main content

ধারাবাহিক উত্তরণের ফসল - তৃতীয় সংখ্যা ‘সম্পর্ক’


বাংলা সাহিত্য সভা, লংকা শাখা থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় বার্ষিক মুখপত্রসম্পর্ক প্রকাশিত হয় মূলত বিশ্ব বই দিবসের দিন যদিও এবারের এই তৃতীয় বার্ষিক মুখপত্র তথা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে খানিকটা পিছিয়ে রথযাত্রার শুভদিনে আগের দুটি সংখ্যার মতোই এবারেও সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন খেয়ালি লেখক মনোজকান্তি ধর /৪ ক্রাউন সাইজে ৬০ পৃষ্ঠার এই সংখ্যায় সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের বাইরেও রয়েছে স্পষ্ট বিভাগবিন্যাসযুক্ত একগুচ্ছ লেখালেখির সম্ভার এবং তা ক্রমান্বয়ে বিন্যস্ত রয়েছে বিভাগ অনুযায়ী
প্রথম পৃষ্ঠার সম্পাদকীয়তে একে একে এসেছে বইবিষয়ক চিন্তাভাবনা, ভাষা বিলুপ্তির শঙ্কা এবংসম্পর্কসম্বন্ধিত কিছু তথ্যের খতিয়ান পাঠকের অভাবের কথা বলতে গিয়ে লেখক লিখছেন - ‘…যারা বাস্তবিক অর্থে পাঠক, তারা বই পড়বেই বইয়ের প্রতি মানুষের অন্তরের টান সেকালে যেমনটা ছিল আজও তেমনই রয়েছেলিখছেন - ‘…আমরা চাই না পৃথিবীর একটি ভাষাও হারিয়ে যাকএক ধনাত্মক বার্তা। রয়েছে এসব নিয়ে প্রকাশক গোষ্ঠীর কাজকর্মের খতিয়ানও
‘সংবাদ’ বিভাগে রয়েছে দুটি রচনা। সুখপাঠ্য রম্য রচনার আঙ্গিকে সুব্রত দত্ত লিখেছেন বাংলা সাহিত্য সভার সদ্য অনুষ্ঠিত শিলচর অধিবেশনে লংকা শাখার অংশগ্রহণ বিষয়ক একটি দীর্ঘ বাস্তবভিত্তিক প্রতিবেদন। অসম সাহিত্য সভার প্রাক্তন সভাপতি তথা কার্বি ও অসমীয়া সাহিত্যের দিকপাল সাহিত্যিক রংবং টেরণের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি আন্তরিক ও নান্দনিক প্রতিবেদন লিখেছেন মনোজকান্তি ধর।
‘কথা’ বিভাগে সন্নিবিষ্ট হয়েছে মূলত প্রবন্ধাদি। চৈতন্যপ্রসাদ দাশগুপ্তের ‘নীলমাধব : জগন্নাথ’। নীলমাধব হচ্ছেন পুরীর জগন্নাথ দেবের আদিরূপ। নীলমাধব সম্পর্কিত তথ্যভিত্তিক এক লৌকিক আঙ্গিকের নিবন্ধ। নিমগ্ন পাঠের নিবন্ধ। সাহিত্যিক রতীশ দাস লিখেছেন প্রতিবেদনভিত্তিক একটি নিবন্ধ - ‘শিলচরে অনুষ্ঠিতব্য ‘বাংলা সাহিত্য সভা, অসম’-এর দ্বিতীয় পূর্ণাঙ্গ রাজ্যিক প্রতিনিধি সম্মেলনে কহতব্য কিছু কথার খসড়া লিপি’। নিবন্ধে প্রকাশ পেয়েছে বর্তমান সময়ে ভাষা সাহিত্যের ক্ষেত্রে চিন্তনীয় ও গ্রহণীয় পদক্ষেপের বিষয়ে কিছু মূল্যবান চিন্তাভিত্তিক কথা। নিত্যানন্দ দাসের গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধ ‘রণবীর পুরকায়স্থের ‘সুরমা গাঙর পানি’ উপন্যাসে উপস্থাপিত লৌকিক উপাদান’ একটি উৎকৃষ্ট সংযোজন যদিও সম্ভবত পরিসরের অভাবে কিছুটা সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে। লৌকিক নানা বিষয়ের উপর ছুঁয়ে গেছেন লেখক। রমা মজুমদারের কাহিনিভিত্তিক নিবন্ধ ‘সময়’-এ ধরে রাখা হয়েছে সময়ের মূল্য। সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ। এছাড়া এই বিভাগে রয়েছে বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর মুখপত্র তথা শারদীয় পত্রিকা ২০২৪-এর উপর বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর একটি পত্রিকা আলোচনা - ‘সম্ভারে, বৈচিত্রে নান্দনিক শারদীয় সংখ্যা ‘সংযোগ’ - ২০২৪’।
‘কাহিনি’ বিভাগে রয়েছে ৪টি গল্প। লিখেছেন সুব্রত দত্ত, আদিমা মজুমদার, কল্যাণব্রত ভরদ্বাজ ও হরিপদ চন্দ। প্রতিটি গল্পই সুখপাঠ্য যদিও বিশেষোল্লেখের দাবি রাখে সুব্রত ও কল্যাণব্রতের গল্প দুটি। ‘কবিতা’ বিভাগটি এবার তুলনামূলকভাবে কিছুটা দুর্বল মনে হলেও রয়েছে কিছু সুপাঠ্য কবিতাওসব মিলিয়ে এই বিভাগে যাঁরা লিখেছেন তাঁরা হলেন - অভিজিৎ দাস, রতীশ দাস, অপূর্ব দেব, বিশ্বজিৎ দেব, শেলী দত্ত, পায়েল মজুমদার, শিল্পী দাস (প্রিয়), দ্বীপ রায়, কল্পনা দে, মোহিত চন্দ ও সুদীপ্তা পাল।
ছাপা স্পষ্ট, অক্ষরবিন্যাস যথাযথ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বানানবিভ্রাট থাকলেও সংখ্যায় তা খুব বেশি নয়। যামিনী রায়ের চিত্রকলাকে সজ্জা ও অলংকরণের মাধ্যমে উপস্থাপিত প্রচ্ছদ নান্দনিক ও প্রাসঙ্গিক হয়েছে। সব মিলিয়ে এক ধারাবাহিক উৎকর্ষ, উত্তরণ ও যতনের পত্রিকা - ‘সম্পর্ক’ তৃতীয় সংখ্যা।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৭০০২৫৩৮১৪২

Comments

Popular posts from this blog

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে

একক কিংবা যৌথ সম্পাদনায় বিগত কয়েক বছরে উত্তরপূর্বের বাংলা লেখালেখি বিষয়ক একাধিক গ্রন্থ সম্পাদনা করে এই সাহিত্যবিশ্বকে পাঠকের দরবারে পরিচিত করিয়ে দেওয়ার এক প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন নিবেদিতপ্রাণ তরুণ লেখক ও সম্পাদক নিত্যানন্দ দাস । হালে এপ্রিল ২০২৪ - এ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সম্পাদনা গ্রন্থ ‘ উত্তর - পূর্বাঞ্চলের বাংলা গল্প : বিষয়ে বিশ্লেষণে ’ ( প্রথম খণ্ড ) । প্রকাশক - একুশ শতক , কলকাতা । আলোচ্য গ্রন্থটিতে দুই ছত্রে মোট ২৮ জন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিকের ২৮টি প্রবন্ধ রয়েছে । উপযুক্ত বিষয় ও আলোচকদের নির্বাচন বড় সহজ কথা নয় । এর জন্য প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে নিজস্ব জ্ঞানার্জন । কালাবধি এই অঞ্চল থেকে প্রকাশিত উৎকৃষ্ট সাহিত্যকৃতির সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না হলে তা সম্ভব নয় মোটেও । নিত্যানন্দ নিজেকে নিমগ্ন রেখেছেন গভীর অধ্যয়ন ও আত্মপ্রত্যয়কে সম্বল করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না । আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন প্রতিষ্ঠিত কথাকার রণবীর পুরকায়স্থ । বস্তুত সাত পৃষ্ঠা জোড়া এই ভূমিকা এক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা । ভূমিকা পাঠের পর আর আলাদা করে আলোচনার কিছু থাকে না । প্রতিটি নিবন্ধ নিয়ে পরিসরের অভাবে সংক্ষিপ্ত হলেও ...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'স্বপ্নতরী'

  স্বপ্নতরী                         বিদ্যুৎ চক্রবর্তী   গ্রন্থ বিপণী প্রকাশনা  বাবা - স্বর্গীয় সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তী মা - শ্রীমতী বীণাপাণি চক্রবর্তী               জনম দিয়েছ মোরে এ ভব ধরায় গড়েছ সযতনে শিক্ষায় দীক্ষায় জীবনে কখনো কোথা পাইনি দ্বন্দ্ব দেখিনি হারাতে পূত - আদর্শ ছন্দ বিন্দু বিন্দু করি গড়ি পদ্য সংকলন তোমাদেরই চরণে করি সমর্পণ প্রথম ভাগ ( কবিতা )   স্বপ্নতরী ১ স্বপ্ন - তরী   নিটোল , নিষ্পাপ কচিপাতার মর্মর আর কাঁচা - রোদের আবোল - তাবোল পরিধিস্থ নতুন আমি ।   আনকোরা নতুন ঝরনাবারি নিয়ে এখন নদীর জলও নতুন বয়ে যায় , তাই শেওলা জমে না ।   দুঃখ আমার রয়ে গেছে এবার আসবে স্বপ্ন - তরী চেনা পথ , অচেনা ঠিকানা ।         ২ পাখমারা   সেই উথাল - পাথাল পাখশাট আজও আনে আরণ্যক অনুভূতি । একটু একটু হেঁটে গিয়ে বয়সের ফল্গুধারায় জগৎ নদীর দু ’ পার ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস - সময়ের কাঠগড়াতে আমি বন...