‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে…।’ মৃত্যু জীবনেরই এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জীবনের শেষ ঘটনা। সমাপন না থাকলে কি আর যাপন পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় ? তাই মৃত্যু এক অনিবার্য প্রক্রিয়া। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে অজস্র মানুষ এই পৃথিবীর মায়া কাটিতে পাড়ি দিচ্ছেন পরলোকে। কতজন আর সবার হৃদয়ে থেকে যান চিরতরে ? কিন্তু গৌরবে, বৈভবে যে ক’জন মানুষ থেকে যান তার মধ্যে সদ্যপ্রয়াত জ্যোতির্ময় রায় অন্যতম। জন্মসূত্রে বরাকের সন্তান হলেও কর্মসূত্রে এবং স্বভাবতই বসতিসূত্রে তিনি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরার বাসিন্দা ছিলেন। উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরের ‘ছন্দনীড়’ ভবনের বাসিন্দা এবং সমৃদ্ধ ছোটপত্রিকা ‘প্রজন্ম চত্বর’-এর সম্পাদক জ্যোতর্ময় সত্যিকার অর্থেই ছিলেন জ্যোতির্ময়। ব্যক্তিগত জীবনে উচ্চশিক্ষিত তিনি সাহিত্য সংস্কৃতির জগতে এক ছাপ রেখে যেতে পেরেছেন স্বকীয়তায়, উৎকর্ষে। তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা ও বাগ্মিতা সর্বজনপ্রিয় ছিল। সমধুর কণ্ঠে সুচয়িত বিষয়ের উপর তাঁর ভাষণ যাঁরা শুনেছেন - কোনোদিনই ভুলবেন না। আচার ব্যবহারে, আন্তরিকতায়, গল্পগুজবে সিদ্ধহস্ত নিপাট ভদ্রলোক এই মানুষটির প্রয়াণে স্বভাবতই মুহ্যমান সাহিত্য সংস্কৃতির জগৎ। তাঁরই স্মৃতিতে সম্প্রতি শ্রীভূমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি, লেখক, সম্পাদক নারায়ণ মোদকের সম্পাদনায় ‘সীমান্তরশ্মি’ পত্রিকার দশম সংখ্যা - জ্যোতির্ময় রায় স্মৃতিচারণ সংখ্যা।
সম্পাদকীয়র পরিবর্তে প্রয়াতজনকে নিয়ে আবেগিক বয়ানে গ্রথিত একটি প্রতিবেদন লিখেছেন সম্পাদক নারায়ণ মোদক যেখানে লিপিবদ্ধ আছে শ্রীভূমিতে একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত জ্যোতির্ময়ের সদর্প অংশগ্রহণের কথা। তাঁর হৃদয়ে সঞ্চিত ভালোবাসা ও আন্তরিকতার কথা। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির বহু কথা। ‘একটি অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব’ শিরোনামে স্মৃতিচারণ করেছেন গীতা সাহা। প্রয়াত জ্যোতির্ময় রায়ের নানা গুণগত দিকের উল্লেখ আছে এই স্মৃতিচারণে। সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেছেন শিখা দাশগুপ্ত, গৌতম চৌধুরী, সুবল চক্রবর্তী, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, রতন চন্দ, শতদল আচার্য ও বিশিষ্ট কবি পার্থ বসু। ব্যক্তি জ্যোতির্ময় ও তাঁর সাহিত্যকৃতি নিয়ে বিস্তৃত প্রতিবেদন লিখেছেন তাঁরই নিজের শহরের আরেক কৃতী কবি, গবেষক ও লেখক মন্টু দাস। ‘কবি জ্যোতির্ময় রায়ের কবিতা নির্মাণ’ বিষয়ক বিশ্লেষণাত্মক রচনা লিখেছেন বিশিষ্ট কবি, ঔপন্যাসিক আশুতোষ দাস। প্রয়াত জ্যোতির্ময়ের জীবনপঞ্জি সহ যাবতীয় গুণাবলি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে গোছানো তথা বিস্তৃত প্রতিবেদন লিখেছেন কবি, লেখক রাণা চক্রবর্তী।
কবিতা বিভাগে রয়েছে বেশ কিছু কবিতা। তার কিছু বিষয়ভিত্তিক, কিছু বিষয়বহির্ভূত। যাঁরা লিখেছেন - সুদীপ ভট্টাচার্য, শিপ্রা শর্মা মহন্ত, ঋতা চন্দ, অনুপ কুমার বণিক, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, বিমলেন্দু চক্রবর্তী, শঙ্করী চক্রবর্তী, শিবানী গুপ্ত, শুক্লা মিশ্র, শঙ্করী প্রভা আচার্য, চান্দ্রেয়ী দেব, ধ্রুবজ্যোতি দাস, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, সৌরভ চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ছন্দা দাম, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, সুমিতা গোস্বামী, পূরবী দাস, গীতাঞ্জলি রায়, বাহারুল ইসলাম, জয়িতা চক্রবর্তী, শমিতা ভট্টাচার্য, নিবারণ নাথ, দীপঙ্কর ঘোষ, অনামিকা শর্মা, গীতা মুখার্জি, জয়ন্তী নাথ, ক্ষিতীশচন্দ্র নাথ, সুমি দাস, দেবলীনা সেনগুপ্ত, গোপালচন্দ্র দাস, সমীরণ চক্রবর্তী, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, কমলিকা মজুমদার ও পি কে রায়।
৭২ পৃষ্ঠার সংখ্যাটির ছাপা, অক্ষর বিন্যাস যথাযথ। সম্পাদককৃত প্রচ্ছদ নান্দনিক ও প্রাসঙ্গিক হলেও প্রচ্ছদছবি খানিক স্পষ্ট হলে ভালো হতো। সংখ্যাটি গরজে উৎসর্গ করা হয়েছে ‘পহেলগাঁও-এ নিহত নিরীহ পর্যটকদের উদ্দেশে। স্বল্পসংখ্যক ব্যতিক্রমের বাইরে বানানের শুদ্ধতা বহুলাংশে রক্ষিত হয়েছে। সব মিলিয়ে নি:সন্দেহে এক গভীর তাৎপর্যমূলক সংখ্যা, সীমান্তরশ্মি-১০।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১০০ টাকাযোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯
Comments
Post a Comment