Skip to main content

গদ্যে পদ্যে নিবেদিত জ্যোতির্ময় রায় স্মৃতিচারণ সংখ্যা ‘সীমান্তরশ্মি-১০’


‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে…।’ মৃত্যু জীবনেরই এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জীবনের শেষ ঘটনা। সমাপন না থাকলে কি আর যাপন পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় ? তাই মৃত্যু এক অনিবার্য প্রক্রিয়া। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে অজস্র মানুষ এই পৃথিবীর মায়া কাটিতে পাড়ি দিচ্ছেন পরলোকে। কতজন আর সবার হৃদয়ে থেকে যান চিরতরে ? কিন্তু গৌরবে, বৈভবে যে ক’জন মানুষ থেকে যান তার মধ্যে সদ্যপ্রয়াত জ্যোতির্ময় রায় অন্যতম। জন্মসূত্রে বরাকের সন্তান হলেও কর্মসূত্রে এবং স্বভাবতই বসতিসূত্রে তিনি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরার বাসিন্দা ছিলেন। উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগরের ‘ছন্দনীড়’ ভবনের বাসিন্দা এবং সমৃদ্ধ ছোটপত্রিকা ‘প্রজন্ম চত্বর’-এর সম্পাদক জ্যোতর্ময় সত্যিকার অর্থেই ছিলেন জ্যোতির্ময়। ব্যক্তিগত জীবনে উচ্চশিক্ষিত তিনি সাহিত্য সংস্কৃতির জগতে এক ছাপ রেখে যেতে পেরেছেন স্বকীয়তায়, উৎকর্ষে। তাঁর অসাধারণ প্রজ্ঞা ও বাগ্মিতা সর্বজনপ্রিয় ছিল। সমধুর কণ্ঠে সুচয়িত বিষয়ের উপর তাঁর ভাষণ যাঁরা শুনেছেন - কোনোদিনই ভুলবেন না। আচার ব্যবহারে, আন্তরিকতায়, গল্পগুজবে সিদ্ধহস্ত নিপাট ভদ্রলোক এই মানুষটির প্রয়াণে স্বভাবতই মুহ্যমান সাহিত্য সংস্কৃতির জগৎ। তাঁরই স্মৃতিতে সম্প্রতি শ্রীভূমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি, লেখক, সম্পাদক নারায়ণ মোদকের সম্পাদনায় ‘সীমান্তরশ্মি’ পত্রিকার দশম সংখ্যা - জ্যোতির্ময় রায় স্মৃতিচারণ সংখ্যা।
সম্পাদকীয়র পরিবর্তে প্রয়াতজনকে নিয়ে আবেগিক বয়ানে গ্রথিত একটি প্রতিবেদন লিখেছেন সম্পাদক নারায়ণ মোদক যেখানে লিপিবদ্ধ আছে শ্রীভূমিতে একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত জ্যোতির্ময়ের সদর্প অংশগ্রহণের কথা। তাঁর হৃদয়ে সঞ্চিত ভালোবাসা ও আন্তরিকতার কথা। প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির বহু কথা। ‘একটি অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব’ শিরোনামে স্মৃতিচারণ করেছেন গীতা সাহা। প্রয়াত জ্যোতির্ময় রায়ের নানা গুণগত দিকের উল্লেখ আছে এই স্মৃতিচারণে। সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেছেন শিখা দাশগুপ্ত, গৌতম চৌধুরী, সুবল চক্রবর্তী, মীনাক্ষী চক্রবর্তী সোম, রতন চন্দ, শতদল আচার্য ও বিশিষ্ট কবি পার্থ বসু। ব্যক্তি জ্যোতির্ময় ও তাঁর সাহিত্যকৃতি নিয়ে বিস্তৃত প্রতিবেদন লিখেছেন তাঁরই নিজের শহরের আরেক কৃতী কবি, গবেষক ও লেখক মন্টু দাস। ‘কবি জ্যোতির্ময় রায়ের কবিতা নির্মাণ’ বিষয়ক বিশ্লেষণাত্মক রচনা লিখেছেন বিশিষ্ট কবি, ঔপন্যাসিক আশুতোষ দাস। প্রয়াত জ্যোতির্ময়ের জীবনপঞ্জি সহ যাবতীয় গুণাবলি ও কর্মকাণ্ড নিয়ে গোছানো তথা বিস্তৃত প্রতিবেদন লিখেছেন কবি, লেখক রাণা চক্রবর্তী।
কবিতা বিভাগে রয়েছে বেশ কিছু কবিতা। তার কিছু বিষয়ভিত্তিক, কিছু বিষয়বহির্ভূত। যাঁরা লিখেছেন - সুদীপ ভট্টাচার্য, শিপ্রা শর্মা মহন্ত, ঋতা চন্দ, অনুপ কুমার বণিক, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, বিমলেন্দু চক্রবর্তী, শঙ্করী চক্রবর্তী, শিবানী গুপ্ত, শুক্লা মিশ্র, শঙ্করী প্রভা আচার্য, চান্দ্রেয়ী দেব, ধ্রুবজ্যোতি দাস, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, সৌরভ চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, ছন্দা দাম, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, সুমিতা গোস্বামী, পূরবী দাস, গীতাঞ্জলি রায়, বাহারুল ইসলাম, জয়িতা চক্রবর্তী, শমিতা ভট্টাচার্য, নিবারণ নাথ, দীপঙ্কর ঘোষ, অনামিকা শর্মা, গীতা মুখার্জি, জয়ন্তী নাথ, ক্ষিতীশচন্দ্র নাথ, সুমি দাস, দেবলীনা সেনগুপ্ত, গোপালচন্দ্র দাস, সমীরণ চক্রবর্তী, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, কমলিকা মজুমদার ও পি কে রায়।
৭২ পৃষ্ঠার সংখ্যাটির ছাপা, অক্ষর বিন্যাস যথাযথ। সম্পাদককৃত প্রচ্ছদ নান্দনিক ও প্রাসঙ্গিক হলেও প্রচ্ছদছবি খানিক স্পষ্ট হলে ভালো হতো। সংখ্যাটি গরজে উৎসর্গ করা হয়েছে ‘পহেলগাঁও-এ নিহত নিরীহ পর্যটকদের উদ্দেশে। স্বল্পসংখ্যক ব্যতিক্রমের বাইরে বানানের শুদ্ধতা বহুলাংশে রক্ষিত হয়েছে। সব মিলিয়ে নি:সন্দেহে এক গভীর তাৎপর্যমূলক সংখ্যা, সীমান্তরশ্মি-১০।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...