Skip to main content

প্রকাশিত শারদীয় ১০ম সংখ্যা ‘তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য


লেখা ও লেখকসংখ্যার দিক দিয়ে অসম বা বরাক উপত্যকা থেকে প্রকাশিত অবাণিজ্যিক শারদীয় সংখ্যাগুলোর মধ্যে ‘তৃতীয় ভুবনের সাহিত্য’ বরাবরই প্রথম দিকে। এবছর বাংলা ১৪৩২ সনের শারদীয় সংখ্যাটি আবার প্রকাশের ক্ষেত্রেও প্রথম। পৃষ্ঠাসংখ্যাও বর্ধিত হয়েছে আগের তুলনায়। পেপারব্যাকে স্ট্যান্ডার্ড ১/৪ ট্যাবলয়েড সাইজের ২৭৬ পৃষ্ঠার সংখ্যাটির সম্পাদক কবি, লেখক নারায়ণ মোদক। দুজন সহযোগী সম্পাদক রয়েছেন - গৌতম চৌধুরী ও সুদীপ ভট্টাচার্য, যথাক্রমে গদ্যকার ও কবি।
সম্পাদকীয়তে উঠে এসেছে এই কঠিন সময়ের কথা, সাহিত্য অঙ্গনের কথা, বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা। সম্পাদক লিখছেন - ‘...সমাজ সংসার দেশের আদর্শচ্যুতি ঘটাতে দেশের বাইরের শত্রুর চেয়ে দেশের ভেতরের শত্রু আজ বেশি সক্রিয়। এদের প্রতিহত করার দায়িত্ব কবি লেখক সমাজ সংস্কারকদেরই নিতে হবে। শুধু মাত্র প্রেম প্রীতি আকাশ মেঘের সীমাবদ্ধতায় থাকলে চলবে না। ...ভাবতে আশ্চর্য লাগে আজ কবি লেখকের কলমে প্রকৃত মানবিক সমস্যার কথা উঠে আসে না বা লিখতে ভয় পান, পাছে নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে যান। তবু আমি বিশ্বাস করি সময়কে ধারণ করে সময়ের কথা বলে কালজয়ী লেখা আবার আমরা পাব নবীন প্রজন্মের কাছ থেকে।’ কঠোর বাস্তব ও যথাযথ নিরীক্ষণসাপেক্ষ সম্পাদকীয়।
আলোচ্য সংখ্যায় লিখেছেন বরাক, ব্রহ্মপুত্র, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গের লেখক, কবিরা। গদ্যে ও পদ্যে, সম্ভারে এক ওজনদার সংখ্যা নিঃসন্দেহে। নানা স্বাদের, নানা আঙ্গিকের কবিতা রয়েছে সংখ্যাটিতে। প্রায় সবারই রয়েছে একাধিক কবিতা। আছে ছন্দকবিতা, অণুকবিতা, দীর্ঘকবিতা, গদ্যকবিতা। অনেকেই আছেন গদ্য ও পদ্য উভয় বিভাগে। শুধু কবিতায় রয়েছেন আশুতোষ দাস, সুবল চক্রবর্তী, জয়শ্রী ভট্টাচার্য, অনুপ কুমার বনিক, ছন্দা দাম, সুদীপ ভট্টাচার্য, চান্দ্রেয়ী দেব, ধ্রুবজ্যোতি দাস, রাজকুমার ধর, অকেলা মধুশ্রী ডি., শিখা দাশগুপ্ত, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, অভিষেক সেন, সুমি দাস, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, শঙ্করীপ্রভা আচার্য, রাণা চক্রবর্তী (গদ্য ও পদ্যের সংমিশ্রণ), বাহারুল ইসলাম মজুমদার, ডা. প্রদীপ কুমার দে, শমিতা ভট্টাচার্য, শুক্লা মিশ্র ও অজীত কুমার জৈন (হিন্দি কবিতা)। গদ্য ও পদ্য উভয় বিভাগে রয়েছেন সুমিতা গোস্বামী, শিবানী গুপ্ত, ঋতা চন্দ ও গীতশ্রী ভট্টাচার্য।
গদ্য বিভাগে রয়েছে একাধিক গল্প ও অন্যান্য গদ্য। প্রথমেই রয়েছে শিপ্রা শর্মা মহন্তের দুটি ভালো গল্প। রয়েছে জহর দেবনাথ, মন্টু দাস ও সম্পাদক নারায়ণ মোদকের একটি করে গবেষণামূলক বিষয়ভিত্তিক দীর্ঘ নিবন্ধ। সুমিতা গোস্বামীর ঘটনাবহুল গল্পের পরই রয়েছে ঋতা চন্দ-এর ভিন্ন আঙ্গিকের একটি গল্প। সুব্রত চৌধুরী বরাকের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার উপর লিখেছেন একটি তথ্যভিত্তিক নিবন্ধ। ড. কস্তুরী হোমচৌধুরীর দুটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধের পর রয়েছে গীতা মুখার্জির ‘গল্প হলেও সত্যি’র ধাঁচে লেখা দুটি ব্যক্তিগত গদ্য। মাধব ঘোষের দীর্ঘ গল্প এই সংখ্যার অন্যতম সম্পদ। এরপর চেনা প্লট, চেনা ছকের লিখেছেন দীপঙ্কর ঘোষ। ড. গীতা সাহার গল্প বিস্তৃতির দাবি রাখে। রয়েছে সন্তোষ কুমার দত্তের মিশ্র বিষয়ের উপর মিশ্র বুনোটের নিবন্ধ। নির্মাল্য দাসের নিবন্ধে উঠে এসেছে শ্রীভূমি গাছকালীবাড়ির বিস্তৃত ইতিহাস ও বর্তমান। একটি প্রাসঙ্গিক রচনা। দেবলীনা সেনগুপ্ত লিখেছেন একটি গোছানো গল্প। শিবানী গুপ্ত লিখেছেন সুখসমাপনে এক মিষ্টি গল্প। গীতশ্রী ভট্টাচার্যের দুটি গল্পই এক কথায় অনবদ্য। যুগপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণকে নিয়ে সুলিখিত নিবন্ধ রয়েছে অরূপ কুমার ভুঞার। সমীরণ চক্রবর্তীর রচনা একটি অসমাপ্ত গল্প নাকি উপন্যাস বোঝা গেল না কারণ শেষে লেখা আছে - চলবে। গীতাঞ্জলী রায়ের ভিন্ন আঙ্গিকের গল্প বাক্যবিন্যাসের জটিলতায় মর্যাদা হারিয়েছে। শতদল আচার্যের দুটি বাস্তবধর্মী নিটোল গল্প সুপাঠ্য যদিও ছাপাবিভ্রাটে আক্রান্ত। গৌতম চৌধুরী লিখেছেন দুটি গল্প। ব্যতিক্রমী প্লট হলেও দুটি গল্পেই অতিরঞ্জনের উপস্থিতি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মীনাক্ষী চক্রবর্তীর দুটি মৌলিক গল্পই সুপাঠ্য।
ব্যতিক্রমী চিন্তার ফসল হিসেবে সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দূর বিজয় গাথার নেপথ্যে থাকা বীর সেনাদের উদ্দেশে’। গৌতম চক্রবর্তী (ভোলা)র প্রচ্ছদ, কাগজের মান, ছাপার স্পষ্টতা যথাযথ হলেও বানান, ছাপার ভুল, যতিচিহ্ন, প্রত্যয়-বিভক্তির বিভ্রাট এতটাই যে সামগ্রিকভাবে এক অসম্পাদিত পত্রিকা বলে মনে হতে পারে। একজন সম্পাদক, দুইজন সহযোগী সম্পাদক থাকা সত্ত্বেও এতটা ভুল নিয়ে প্রকাশিত একটি পত্রিকা বহির্ভুবনে পত্রিকানামের প্রতি এক বিরূপ ধারণার সৃষ্টি করতে পারে। ভারে বড় হওয়াটা মুখ্য নয়, ধারে মুখ্য হওয়াটাই মূল কথা - পরবর্তীতে এই নিয়ে চিন্তাচর্চার প্রয়োজন রয়েছে।
নান্দনিক আঙ্গিকে শেষ চার পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে কবি লেখকদের রঙিন ছবি সহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। 
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক - রবিবারের সাহিত্য আড্ডা
মূল্য - ২৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...