Skip to main content

ছিমছাম নান্দনিকতায় সুখপাঠ্য ‘বালার্ক’ - শারদীয়া ২০২৫


একগুচ্ছ কবিতা, শেষের পাতায় একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ আলোচনা এবং একটি দুইপৃষ্ঠাজোড়া গদ্য নিয়ে শিলচর থেকে প্রকাশিত হয়েছে বালার্ক পত্রিকার মাত্রই ২৪ পৃষ্ঠার ছিমছাম শারদীয় সংখ্যা ২০২৫ প্রকাশকাল আশ্বিন ১৪৩২ সম্পাদনায় রয়েছেন দুই বিশিষ্ট সাহিত্যিক অশোক বার্মা ও তপোজ্যোতি ভট্টাচার্য (তাপস) যদিও সেই অর্থে সম্পাদকীয় নেই আছে যা তা হল একটি কাব্যিক দুর্গাবন্দনা এও ব্যতিক্রমী। পৃষ্ঠাসংখ্যার বিচারে কেউ এই সংখ্যাটিকে দায়সারা ভাবতেই পারেন এটাও ঠিক তবে দায়সারা নয় প্রকৃতার্থেই দায় সারা, গভীর গরজের প্রতিফলন, দায়-দায়িত্বের আন্তরিক নির্বাহ একটি শারদীয় সংখ্যা শুধু সংখ্যাই বর্ধিত করে না, অঞ্চলভিত্তিক সাহিত্যক্ষেত্রে একটি গরিমাময় সংযোজনও সূচিত করে পৃষ্ঠাসংখ্যা সেখানে মুখ্য নয়
প্রথমেই সম্পাদকদ্বয়ের অন্যতম তপোজ্যোতি ভট্টাচার্য এ বড় বিপন্ন সময়শিরোনামে লিখছেন সমকালীন পরিস্থিতির উপর একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ অথবা বলা চলে একটি মুক্ত গদ্য ‘...আমরা সমাজবদ্ধ জীব। ব্যক্তি যতই মননশীল বা কুশলী হোক, জীবন বয়ে চলে সামূহিক প্রজ্ঞার স্পন্দনে। নইলে সব হয়ে যায় পচাগলা বদ্ধ... ভারতবর্ষ বহুত্ববাদের দেশ। ‘নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’ ভারত আত্মার মর্মবাণী এটাই। কিন্তু কায়েমী স্বার্থ বহুত্ববাদের এই আদর্শকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে চাইছে...।’ লেখক ধর্ম ও ভাষার মধ্যে বিভেদের বিরুদ্ধে তার মতাদর্শের কথা প্রাঞ্জল ও নিরপেক্ষভাবে বর্ণনা করেছেন এই লেখায়।
কবিতা বিভাগটিই মুখ্য এই সংখ্যায়। লিখেছেন নামিদামি বহু কবি। তালিকায় রয়েছেন অতীন দাশ, মহুয়া চৌধুরী, নিশুতি মজুমদার, দীপ্তি চক্রবর্তী, ড. কস্তুরী হোমচৌধুরী, সুনীল রায়, সমরবিজয় চক্রবর্তী, আশিসরঞ্জন নাথ, স্বাগতা চক্রবর্তী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, স্মৃতি দাস, সত্যব্রত চৌধুরী, দোলনচাঁপা দাসপাল, আলপনা রায়চৌধুরী, চন্দা বর্মা, সুস্মিতা মজুমদার, বিষ্ণুশংকর বার্মা, সুশান্ত মোহন চট্টোপাধ্যায়, জিতেন্দ্র নাথ, যূথিকা দাস, শতদল আচার্য, মিতা দাসপুরকায়স্থ, স্মৃতি দত্ত, চন্দ্রা মিত্র, ভীষ্মলোচন শর্মা, অভিজিৎ পাল, রফি আহমেদ মজুনদার, ডা. শিশিরকুমার বিশ্বাস, বন্দনা দেব (অজিতা), আরতি দাশ, অঞ্জু এন্দো, শিপ্রা শর্মা (মহন্ত), আশুতোষ দাস, রাণা চক্রবর্তী, জয়ন্তী দত্ত ও অন্যতম সম্পাদক অশোক বার্মা। রয়েছে একগুচ্ছ লিমেরিকও। এই কবিতা বিভাগটিতে স্বভাবতই আছে একাধিক সুলিখিত কবিতা। আছে আবেগ, আছে স্মৃতি, কল্পনা, প্রেম-ভালোবাসা, কিছু নান্দনিকতার উল্লেখ, কিছু শৃঙ্খলহীনতার বাখান। আছে গভীর জীবনচর্চার কথা, আছে উদ্‌বেগ, উৎকণ্ঠার কথা, সুখ-দুঃখের মিশ্র অনুভবের কথা। আছে সাত থেকে সাঁইত্রিশ পঙ্‌ক্তির ছোটবড় কবিতা। বিস্তৃত উল্লেখ পরিসরের অভাবে অসম্ভব।  
সম্পাদক অশোক বার্মা অনূদিত কাব্য সংকলন ‘বরাক ঘাঁটি কি বাংলা কবিতায়েঁ’ যেখানে বরাক উপত্যকার ১৫৬ জন কবির লেখা কবিতার হিন্দি অনুবাদ হয়েছে তার উপর একেবারেই সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা করেছেন শংকর চক্রবর্তী।
এসব নিয়েই আলোচ্য শারদীয় সংকলন। ছাপার স্পষ্টতা যথাযথ হলেও সূচিপত্রের ফন্ট সাইজ বেশি ছোট হওয়ায় পড়ার ক্ষেত্রে গভীর নিমগ্নতার প্রয়োজন। নান্দনিক প্রচ্ছদ। সব মিলিয়ে স্বল্পকালীন সময়ের পাঠোপযুক্ত এক বর্ণিল শারদীয় সংখ্যা।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

মূল্য - ৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৯৫৪৯৬১৭২৩

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...