Skip to main content

সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের নির্মোহ উপস্থাপন - বিকাশ সরকারের ‘উপন্যাস সংগ্রহ’


চারটি উপন্যাসের সংকলন - বিকাশ সরকারের ‘উপন্যাস সংগ্রহ’। ৪০৮ পৃষ্ঠার বোর্ড বাঁধাই সংকলনটির বিষয়ে ব্লার্বের পরিবর্তে শেষ মলাটে রয়েছে অতি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা - যাকে বলা যেতে পারে খেই ধরিয়ে দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা কিংবা উপোদ্‌ঘাতসেখান থেকে খানিক উদ্ধৃতি এখানে তুলে দেওয়াটা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না - প্রতিটি উপন্যাসের বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে এক মঙ্গলাচরণের আদলে।
সাহিত্যগত সংজ্ঞা অনুযায়ী উপন্যাসের শ্রেণিবিভাগ বিন্যাসে যে ক’টি উপাদান রয়েছে তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল সামাজিক, রাজনৈতিক, আঞ্চলিক, মনস্তাত্ত্বিক, আত্মজৈবনিক, প্রেমধর্মী এবং ঐতিহাসিক। প্রতিটি উপন্যাসই আসলে লেখা হয়ে থাকে এক নির্দিষ্ট সময়কালকে সম্বল করে। ঘোষিত বা অঘোষিত ভাবে। সেই হিসেবে অধিকাংশ উপন্যাস - তা যে কোনো বিষয়ের উপর আধারিত হোক না কেন - এক একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। শুধু ইতিহাস বইয়ের চরিত্রসমূহের উপর লেখা কাহিনিই যে ঐতিহাসিক উপন্যাসের মর্যাদা পেতে পারে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তাই এই ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’-এর বিতর্কটি বাদ দিলে কিংবা আলোচনায় রাখলেও অন্যান্য সবগুলি উপাদানই যেন খুঁজে পাওয়া যায় বিকাশের উপন্যাসে। এমনকি শেষ উপন্যাস যেটি আসলে একটি গোয়েন্দা উপন্যাস সেখানেও স্পষ্ট ধরে রাখা আছে এক নির্দিষ্ট সময়কাল, সামাজিক ও রাজনৈতিক এক প্রেক্ষাপট।   
সংকলনের প্রথম উপন্যাস ‘অস্ত্র’। পৃষ্ঠাসংখ্যার বিচারে এটিই দীর্ঘতম ১৬৫ পৃষ্ঠার উপন্যাস নিয়ে শেষ মলাটের উপোদ্‌ঘাতে আছে - ‘বিকাশ সরকারের একটি বহুপ্রশংসিত উপন্যাস ‘অস্ত্র’। অসমে উদ্‌বাস্তু বাঙালির আগমন ও আত্মপ্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম; তার সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সুদীর্ঘ ও ঘটনাবহুল কমিউনিস্ট আন্দোলন, কিন্তু তার লিপিবদ্ধ ইতিহাস প্রায় বিরল। এই গবেষণামূলক উপন্যাসে বিকাশ সেই সংগ্রামেরই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন কথাশিল্পের আদলে। সেই সঙ্গে এসেছে অসমিয়া-বাঙালি সম্প্রীতি ও সংঘাতের বিষয়ও।’ - ‘অস্ত্র’ একটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস। আলোচনার ভূমিকায় উল্লিখিত উপন্যাসের যাবতীয় শ্রেণিগত উপাদান এখানে অপূর্ব ভাষাসুষমায় নিপুণ বিন্যাসে লিপিবদ্ধ করেছেন ঔপন্যাসিক বিকাশ। এই বিন্যাসই তো একটি উপন্যাসের প্রধান শর্ত। ঘটনার বিন্যাস, চরিত্রের বিন্যাস, সংলাপের বিন্যাস এবং ভাষার বিন্যাস। এটাই প্রথম ও শেষ কথা। আসলে উপন্যাস শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিন্যাস শব্দটি। সেই শর্ত, সেই সূত্র ধরে আলোচ্য উপন্যাসটিতে সুবিন্যস্ত শৈলীতে একাধারে রয়েছে রাজনৈতিক, সামাজিক, আঞ্চলিক, মনস্তাত্ত্বিক, আত্মজৈবনিক, প্রেমধর্মী এবং আজকের দিনের হিসেবে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও। একগুচ্ছ চরিত্রের উপস্থাপনায় মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন লেখক। প্রতিটি চরিত্রের ভিন্ন আঙ্গিকে করেছেন চিত্রায়ন। তুলে এনেছেন স্বতন্ত্র ধারার বাক্‌শৈলী, যাপনশৈলী। প্রাথমিক পঠনে ‘চরিত্রের ভিড়’ পরিলক্ষিত হলেও প্রতিটি চরিত্রই যেন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে এখানে। তবু বলা ভালো সতর্ক পঠন একান্তই প্রয়োজন। অন্যথা চরিত্রের ভিড়ে হারিয়ে যেতে সময় লাগবে না। স্বাধীনতা পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের ধর্মোন্মত্ত সন্ত্রাস ও তার জেরে উদ্‌বাস্তুদের জীবন সংগ্রামের করুণ বিবরণ, অসমের জঙ্গি আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনের স্বরূপ বর্ণনার পাশাপাশি এসেছে বাম ও দক্ষিণপন্থার ভিন্নধারার রাজনীতি ও নীতিগত বিশ্লেষণ। অসমের সেই সময়কার আন্দোলন ও সমাজ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কম্যুনিস্ট কার্যকলাপ বিশেষ ছাপ ফেলতে না পারলেও বা তার প্রয়োজন না থাকলেও সমান্তরালভাবে কম্যুনিস্ট গতিবিধির এক সুনিপুণ চিত্র অঙ্কন করতে একশোভাগ সফল হয়েছেন লেখক। একটি বার্তা রয়েছে উপন্যাসে যার সঙ্গে সঙ্গতি রয়েছে সার্থক শিরোনামের অন্যতম নায়ক তপন বলছেন - ‘শোন, এই ইস্পাতে গড়া অস্ত্রের কোনো মূল্যই নেই, কানাকড়িও দাম নেই এর অস্ত্র হাতে নিয়ে এভাবে লুকিয়ে, পালিয়ে বেড়ানোর মধ্যে কোনো শিভালরি নেই বরং নিজেই অস্ত্র হয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে হয়স্বভাবতই এক সুচিন্তিত নামকরণ প্রথম থেকেই টানটান এগিয়েছে কাহিনি। প্রসঙ্গান্তরে নতুন অধ্যায়ের নান্দনিক শিরোনাম এক ভিন্ন আস্বাদের জন্ম দিয়েছে বিরল না হলেও লিখনশৈলীর এক চমকপ্রদ নিদর্শন। সমগ্র সময়কালকে লেখক এক একটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করেছেন খেই না হারিয়ে। সংলাপ ও বুনোট একে অপরের পরিপূরক হয়ে এগিয়েছে যদিও অসমিয়া ভাষার সংলাপ সরাসরি লিপিবদ্ধ করার জন্য অর্থোদ্ধারে সমস্যা হতে পারে বাংলা উপন্যাসের পাঠকের। বাস্তব প্রেক্ষিতে নান্যপন্থা। উপন্যাসের প্রেক্ষাপটে টানাপোড়েন ও প্রত্যাহবানের মধ্যে দুই বোন পাতা ও লতার বেড়ে ওঠার পাশাপাশি তাদের ভিন্ন ধারার প্রেম-অপ্রেমের কাহিনি যেন কোনও এক সুনিপুণ চিত্রশিল্পীর তুলির টানের মতো পরিস্ফুট হয়েছে। বস্তুতই এক সার্বিক গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসাযোগ্য উপন্যাস।
দ্বিতীয় উপন্যাস ‘লেন্দু রায়ের জিজীবিষা’। এই উপন্যাস ও পরবর্তী ‘আগুনের সেঁক’ উভয় রচনাই কিছুটা হলেও সমপর্যায়ের। উপোদ্‌ঘাতেও সেই কথাটিই লেখা রয়েছে - ‘দুটি উপন্যাসেরই বিষয় রাজনৈতিক হত্যা। এমন দুটি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে যাঁরা মনে করতেন রাজনীতির মাধ্যমে সামাজিক অসাম্যের, অবিচারের, অত্যাচারের অবসান ঘটানো সম্ভব। দুই বোকা মানুষের নৃশংস দুই খুন দিয়েই আবর্তিত হয়েছে দুটির কাহিনিভাগ, যার কেন্দ্রে রয়েছে এক হাভাতে খুনি আর এক তরুণ সাংবাদিক। প্রথমোক্ত উপন্যাসে লেন্দু রায় চরিত্রটিকে এক বিচিত্র আদলে সৃষ্টি করেছেন ঔপন্যাসিক যেখানে নায়ক নিজে খুনি হয়েও নিজের মৃত্যুক্ষণে বাঁচার এক অদম্য ইচ্ছেকে চিত্রায়িত করেছেন লেখক। এবং এই ভাবটিই উপন্যাসের কেন্দ্রভাব। ঘটনার ঘনঘটায় এক এক করে উন্মোচিত হয়েছে তৎকালীন এবং হয়তো আজকেরও রাজনীতির অঙ্গন, রাজনীতির অন্ধকার অধ্যায়। আপাত এলিট সমাজের অন্দরে ভালোর পাশাপাশি যে কতটা কালো লুকিয়ে রয়েছে এবং বেঁচে থাকার স্পৃহা ও সংগ্রাম একটি জীবনকে যে কত ভাবে চালনা করতে পারে তার এক নির্মোহ চরিত্রায়ন। অপরাধের বৃত্তে প্রেম, ভালোবাসা, যৌনতা এসেছে অবাধ অথচ অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়নি কোথাও। সমাজ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যতটা সম্ভব হুবহু তুলে এনেছেন লেখক তাঁর স্বভাবসিদ্ধ লিখনশৈলীতে। দ্বিতীয়োক্ত উপন্যাসেও একই ধারা বজায় থেকেছে তবে অধিক বিস্তৃত হয়ে। যেন এক আত্মকথন। আত্মজৈবনিক থ্রিলারের মতো কাহিনি এগিয়েছে একদিকে ঘটনা পরিঘটনার মধ্য দিয়ে, অন্যদিকে সেই অবাধ প্রেম ও যৌনতার ছোঁয়া বজায় রেখে। তবে এক্ষেত্রে কিছুটা রিপিটিশন পরিলক্ষিত হয়েছে। একদিকে ক্ষয়িষ্ণু সমাজের চিত্রায়ন, অন্যদিকে জীবনযুদ্ধ, এক অনবদ্য জীবনদর্শন - নিক্তি ধরে ধরে পরিবর্তন হয়েছে পট। সব মিলিয়ে এক জমজমাট কাহিনি যার আদ্যোপান্ত ধরা আছে প্রেক্ষাপটের শক্ত সুতোয়। লেখক এক অনায়াস দক্ষতায় নিজেকেও প্রতিবিম্বিত করেছেন অন্যতম চরিত্র হিসেবে। এ এক ভিন্ন আবহ, সুনিপুণ চিত্রকল্প। ভাষা, লিখনশৈলীর উৎকর্ষ এখানেও এতটাই প্রগাঢ় যে, যে বাক্যে যে শব্দটি সবচাইতে বেশি জুতসই সেটিই ব্যবহার করা হয়েছে। শেষটায় রয়েছে অভাবিত এক উপসংহার। সব মিলিয়ে একটা টানাপোড়েন সৃষ্টি হতেই পারে এ নিয়ে - হয়তো এই উপন্যাসটিই হতে পারে সংকলনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। যদিও উপন্যাসের শিরোনাম অন্য বহু কিছুই হতে পারত বা অধিকতর প্রাসঙ্গিক হতো বলেও মনে হতেই পারে।  
‘বিকাশ যে রহস্যকাহিনি লিখতেও সিদ্ধহস্ত, তার প্রমাণস্বরূপ এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘ধাঁধাধন্দ’ উপন্যাসটিও। বাংলাসাহিত্যে মহিলা ডিটেকটিভ অঙ্গুলিমেয়, বিশ্বসাহিত্যেরও একই ছবি; বিকাশসৃষ্ট বিপাশা বিশ্বাস তাঁদেরই একজন, যিনি পরতে পরতে রহস্যোদ্ধার করে পৌঁছেছেন এক চমকপ্রদ আবিষ্কারে।’ - শেষ মলাটের বয়ান। ৮০ পৃষ্ঠার এই গোয়েন্দা উপন্যাসও উপর্যুক্ত বাকি তিনটির মতোই এক নির্দিষ্ট কালসীমার মধ্যে সংঘটিত অঞ্চলভিত্তিক এক সামাজিক চিত্রের খতিয়ান তুলে ধরে যদিও এটি আদ্যন্ত একটি গোয়েন্দা উপন্যাসই যার পরতে পরতে রহস্য ও রহস্য উদ্‌ঘাটনের আবহ। বস্তুত রহস্য বা গোয়েন্দা উপন্যাসে ভাষা সাহিত্যের বিশেষ কোনও অবদান সাধারণ পাঠকের কাছে না থাকলেও পুরো কাহিনির প্রতিটি বাক্যে বুদ্ধিমত্তা ও এক কার্যকারণঘটিত সামঞ্জস্য থাকা আবশ্যিক। এবং এটাই দুঁদে কলমচির মতো রক্ষা করেছেন লেখক। কোথাও হোঁচট খায়নি কাহিনি। বাঁকের পর বাঁক থাকলেও তরতরিয়ে সরলরেখায় চলেছে সমাপ্তির দিকে। অযথা খুনখারাপি বা গুলিবাজির বাহুল্য বর্জিত এক নির্মেদ, টানটান উপন্যাস।
সার্বিক একটি সুখপাঠ্য এবং সুপাঠ্য সংকলন এই উপন্যাস সমগ্র। নগণ্য সংখ্যক বানানবিভ্রাট, ছাপাবিভ্রাট থাকলেও বিশেষ ব্যাহত হয় না সরল পঠন। ছাপার মান, অক্ষর, শব্দ, বাক্য বিন্যাস যথাযথ। দেবাশিস সাহার প্রচ্ছদ নির্মেদ, প্রাসঙ্গিক ও নান্দনিক। লেখক গ্রন্থটি উৎসর্গ করেছেন ‘কৃষ্ণাকে’।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তী

প্রকাশক - পত্রপাঠ, কলকাতা
মূল্য - ৫০০ টাকা 

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...