Skip to main content

উৎকৃষ্টতায় ভরপুর আপন অঙ্গনের শারদীয় সংখ্যা 'শিবালিক লিপি'


নজরকাড়া প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে ছাপা ও কাগজের উন্নত মানসম্পন্ন একটি কুলীন অবাণিজ্যিক শারদীয় সংখ্যা, যা এই উত্তরপূর্ব থেকে প্রকাশিত হয় এবং বিশেষভাবে বলতে গেলে কোনও সাহিত্যমূলক সংস্থা নয়, একটি উন্নয়ন সমিতির তরফ থেকে প্রকাশিত হয় তা এ যাবৎ ক’জন পাঠকের হাতে পৌঁছেছে তা জানা নেই তবে ‘আমাদের কথা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে দুই সম্পাদক সুদীপ্ত দেবরায় ও দেবযানী ভট্টাচার্য লিখছেন এ বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা - ‘এ নিয়ে লাগাতার তৃতীয়বারের মতো পুজোর মরশুমে শিবালিক-লিপি পাঠকদের হাতে তুলে দেওয়া গেল। কোনও এক প্রান্তিক অঞ্চলের একটি উন্নয়ন সমিতি প্রতিবছর একটি পুজোসংখ্যা সাময়িকী প্রকাশ করতে সক্ষম হচ্ছে, এ যদি বা সামান্য আত্মশ্লাঘার বিষয় হয়ে থাকে, এর পিছনে কমিটি সদস্যদের শ্রম, ভালোবাসা ও আত্মনিবেদনের দৃঢ় ভিত্তির কথা স্মরণ করতেই হবে। বহুদিন থেকেই শিবালিক পার্ক শিলচর তথা বরাক উপত্যকার বেশ কিছু স্বনামধন্য, কবি-লেখক-শিল্পীর বাসস্থান। রয়েছেন উদীয়মান আরও অনেকে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁদের লেখা নিয়মিত প্রকাশ হয়ে থাকে। এর পরেও খ্যাত-অখ্যাত এই সবাকার রচনা বছরে একটিবার অন্তত নিজেদের প্রকাশনায় সংবদ্ধ হোক, যাতে আরও প্রতিভা উৎসাহিত ও বিকশিত হবার সুযোগ সৃষ্টি হয় - এই ছিল শিবালিক লিপি প্রকাশের প্রাথমিক উদ্দেশ্য...।’ বলাই বাহুল্য ‘শিবালিক লিপি’ এই উদ্দেশ্যটি পালনে বহুলাংশেই সফল। এর প্রমাণ বর্তমান সংখ্যাটি।
অবধারিতভাবে প্রথমেই চলে আসে প্রত্যাশা ভট্টাচার্যের নান্দনিক ও প্রাসঙ্গিক বিমূর্ত কলার প্রদর্শন। দেশ, ধর্ম, সমাজের এক শৈল্পিক সহাবস্থানের প্রতীক এই প্রচ্ছদ যা পত্রিকার মান বৃদ্ধি করেছে অনেকটাই। লেটার সাইজের ১০৮ পৃষ্ঠার সম্ভার কোনওভাবেই কম নয়। ভিতরের পৃষ্ঠায় তাই রয়েছে পাঠকের পাতে দেওয়ার মতো বৈচিত্রময় আয়োজন। রয়েছে একটি ‘আগমনি’ বিষয়ক নিবন্ধ, ৭টি ছোটগল্প, একটি বড় গল্প, একটি অনুবাদ গল্প, একটি রম্য রচনা, একাধিক বিষয়সংবলিত ৯টি প্রবন্ধ, ১২ জন কবির কবিতা এবং চার চারটি ভ্রমণকথা।
মঙ্গলাচরণ হিসেবে রূপরাজ ভট্টাচার্যের প্রবন্ধ ‘উৎসবের আলোয় পূজার আয়োজন’। পুজোর ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের উপর একটি সত্য-আধারিত মীমাংসাসূচক নিবন্ধ ব্যতিক্রমী হিসেবে আখ্যায়িত করাই যায়। এই বিভাগে রয়েছে নাটক ও চলচ্চিত্র বিষয়ক তিনটি প্রবন্ধ। ড. দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘বাদল সরকার এবং থার্ড থিয়েটার’, ড. দীপেন্দু দাসের ‘শিলচরে মঞ্চ নাটক’ এবং দীপক সেনগুপ্তের ‘পর্বান্তরে ভারতের বাংলা সিনেমা - একটি ভিন্নমাত্রিক পর্যালোচনা’। রয়েছে সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধ তমোজিৎ সাহার ‘শতবর্ষে হলধর নজরুলের লাঙল’। সাময়িকপত্র বিষয়ক দুটি প্রবন্ধ রয়েছে যথাক্রমে ড. দুর্বা দেব লিখিত ‘নারীর স্বক্ষেত্র নির্মাণে সাময়িকপত্রের ভূমিকা’ ও আশিসরঞ্জন নাথ লিখিত ‘বরাক উপত্যকার মহিলা সম্পাদিত পত্রপত্রিকা’। বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ ‘ইনফিনিটি’ লিখেছেন ত্রিদেব চৌধুরী এবং ‘হিমালয় পর্বতের জন্ম, তার বিবর্তন এবং…’ লিখেছেন পূর্ণেন্দুকান্তি দাশ। রয়েছে ‘সাম্প্রতিক অতীত ও প্রত্যাশা’ নিয়ে রাহুল দাশগুপ্তের প্রবন্ধ ‘মেহেরপুর পঞ্চাশ : সেদিন আর আজ’। প্রত্যেক প্রবন্ধকার যথেষ্ট তথ্য ও তত্ত্বের সংমিশ্রণে সুচারু লিখনশৈলীতে উপস্থাপন করেছেন তাঁদের রচনাসমূহ। বহু মূল্যবান তথ্য রয়েছে যা ভাবীকালের গবেষণাভিত্তিক অধ্যয়নে নিশ্চিত ইন্ধন জোগাতে সক্ষম। এমন একটি সুচয়িত ও সমৃদ্ধ বিভাগ সমৃদ্ধ করেছে পত্রিকাকে।
গল্প বিভাগে প্রথমেই রয়েছে সদ্যপ্রয়াত বিশিষ্ট গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্যের গল্প ‘সমাজ দেহ’। শিবালিক পার্কের বাসিন্দা হওয়ার সূত্রে এই পত্রিকা প্রকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছিলেন তিনি। সেই হিসেবে এই গল্পটি তাঁর শেষ প্রকাশিত গল্পসমূহের মধ্যে একটি। প্রান্তিক মানুষের কথা একের পর এক গল্পে তিনি লিখেছেন। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গরিবগুর্বোদের বর্তমান নাজেহাল অবস্থার এক আন্তরিক প্রতিবেদন যদিও এই গল্পের শেষে উন্মোচিত হয়েছে এক ভিন্নতর আবহ। যার রসাস্বাদনের সুযোগ রইল পাঠকদের জন্য। মেঘমালা দে মহন্ত-র গল্প ‘হারানো ফুগই’ অসম্ভব ভালো একটি গল্প। বাস্তব ও প্রতিবেদনধর্মী এই গল্পটি একাধারে ব্যতিক্রমী ও প্রয়োজনীয় একটি বিষয়ের উপর লিখিত। নি:সন্দেহে গল্প বিভাগের অন্যতম শ্রেষ্ট গল্প। ‘দুই আমি, বহু আমি, দেশের সন্ধানে’ গল্পটি লিখেছেন সৌমিত্র বৈশ্য। ব্যতিক্রমী বাঁক ও বুনোটে গ্রথিত গল্পে উন্মোচিত হয়েছে দেশভাগের যন্ত্রণাময় আখ্যান। বিজয়া দেব-এর গল্প ‘মোমবাতি’ একটি সূচকধর্মী গল্প। সুখদু:খের নানা অনুষঙ্গে, সাহিত্যরসসম্পৃক্ত গল্পে ভিন্ন আঙ্গিকে উঠে এসেছে মোমবাতির দহনকথা। পত্রিকা তথা বিভাগের বৈচিত্র হিসেবে ছোটদের নিয়ে একটি নিটোল গল্প ‘মিমোর ভ্যালেন্টিনা’ লিখেছেন শংকু চক্রবর্তী। সুগ্রথিত, সুলিখিত। শর্মিলী দেব কানুনগোর গল্প ‘একদিন হঠাৎ’। শর্মিলী একদিকে যেমন গল্পের জগতে নিজের উপস্থিতি দৃঢ় করে নিচ্ছেন অন্যদিকে ইদানীং তিনি রহস্য গল্পের দিকে খানিকটা ঝুঁকে আছেন। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। এই গল্পটি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার উদাহরণসংবলিত একটি জমাট গল্প। একটি নব্য চিন্তাধারা, আলোর পথে উত্তরণের গল্প সুপর্ণা ভট্টাচার্যের ‘নতুন ভোর’। সুজিৎ দাসের অনুবাদ গল্প সুপাঠ্য। সুপ্রদীপ দত্তরায়ও রহস্য গল্প, থ্রিলারের উপর একাধিক গল্প লিখে চলেছেন। তেমনই পরিচিত আঙ্গিকে লেখা একটি শ্বাসরুদ্ধকারী বড়গল্প ‘হোমস্টে’। সব মিলিয়ে বৈচিত্রে, মানে উন্নত একটি বিভাগ।
সুলেখক মৃন্ময় রায় রম্যরচনায় নিজেকে নিরন্তর সপ্রতিভ করে চলেছেন। ‘মুসাবিদা’ এমনই একটি রচনা। অতীত রোমন্থনের পাশাপাশি রম্যসংলাপের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বক্তব্যটির জোরদার প্রকাশ এখানেও বিদ্যমান যদিও উৎকর্ষে সম্ভবত এটি তাঁর শ্রেষ্ঠতম রচনা এটি নাও হতে পারে।
অপরাপর বহু শারদীয় সংখ্যার মতো কবিতার বিভাগে অযথা ভিড় পরিলক্ষিত হয়নি এখানে। নবীন প্রবীণের যথাযথ অনুপাত বজায় রেখে সুচয়িত কবিদের কবিতা স্থানলাভ করেছে আলোচ্য সংখ্যাটিতে। কবিতায় রয়েছেন তীর্থঙ্কর দাশ পুরকায়স্থ, চন্দ্রিমা দত্ত, সুতপা চক্রবর্তী, কল্লোল চৌধুরী, অরুণাভ রাহারায়, সুরজিৎ প্রামাণিক, শতদল আচার্য, সুদীপ্তা পাল, কিরণ দেবী, শমিতা ভট্টাচার্য, জয়শ্রী ভট্টাচার্য ও স্মৃতি ভট্টাচার্য। স্বভাবতই রয়েছে নানা আঙ্গিকের কিছু সংক্ষিপ্ত, কিছু পৃষ্ঠা জোড়া নানা স্বাদের গুচ্ছ কবিতা। এও এক সমৃদ্ধ বিভাগ নি:সন্দেহে, যা নিয়ে আলাদা আলোচনার পরিসরও গড়ে নেওয়া যায়।
শেষ বিভাগে রয়েছে চার চারটি ভ্রমণ কাহিনি। এ এক নিশ্চিত ব্যতিক্রমী বিভাগ। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় নি:সন্দেহে। কাজিরাঙা, জয়রামবাটী, দক্ষিণ ভারতের কিছু দর্শনীয় স্থান ও বাংলাদেশ ভ্রমণের বিচিত্র বাখান রক্ষিত আছে যথাক্রমে পার্থপ্রতিম সেন, দেবযানী ভট্টাচার্য, অঞ্জন স্বামী ও মানসী ভট্টাচার্যের ভ্রমণবিষয়ক রচনাসমূহে।
সব মিলিয়ে এক পূর্ণতায় ভরপুর সম্ভার - ‘শিবালিক লিপি’। স্পষ্ট ছাপা, যথাযথ অক্ষর বিন্যাস, বানান বিভ্রাটের ন্যূনত্ব সুখপঠনের আকর যদিও পত্রিকার আকার নিয়ে সম্পাদকমণ্ডলী ভবিষ্যতে চাইলে চিন্তা ভাবনা করতে পারেন কারণ আর যাই হোক লেটার সাইজের একটি পত্রিকা পঠনবান্ধব হতে পারে না কিছুতেই। ভেতরের পৃষ্ঠার প্রাসঙ্গিক চিত্রাবলি ও চমৎকার অলংকরণ বাজার চলতি যে কোনও শারদীয় সংখ্যাকে চমকে দিতে পারে যদিও অলংকরণের সৌজন্যে থাকা নাম অজ্ঞাত রইল। অন্যতম সম্পাদক দেবযানী ভট্টাচার্যের একটি রচনা থাকলেও লেখালেখির সম্ভারে অনুপস্থিত অপর সম্পাদক সুদীপ্ত দেবরায়।
এমন একটি পত্রিকা যেমন একটি অঞ্চলের সাহিত্য পরিমণ্ডলকে সমৃদ্ধ করে তোলে তেমনি উদ্‌বুদ্ধ করে পাঠককে বহিরাঙ্গনের চিরায়ত হুজুগ থেকে বেরিয়ে আপন অঙ্গনের উৎকর্ষ উপভোগের। সাহিত্যের অঙ্গনে যে এই উত্তরপূর্ব আর পিছিয়ে নেই তারই এক উৎকৃষ্ট নিদর্শন ‘শিবালিক লিপি’ শারদীয় সংখ্যা ২০২৫।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১৫০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫৫৭৯৫২৬

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...