একটি মুখপত্র
বলতে সাধারণত যেখানে আয়োজক সংস্থার বিবরণ ও উদ্দেশ্যই প্রাধান্য পায় সেখানে সম্প্রতি
প্রকাশিত ‘ত্রিপুরা প্রকাশন মঞ্চ’-এর মুখপত্র
‘বইবার্তা’ নি:সন্দেহে এক
ব্যতিক্রমী প্রকাশ। স্টেটমেন্ট
সাইজের ৭০ পৃষ্ঠার আলোচ্য মুখপত্রের ৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা, খতিয়ান ও উন্নত মানের প্রবন্ধ নিবন্ধ। এরই
নিরিখে মুখপত্রটি স্থান করে নেয় আলোচনার টেবিলে।
‘মুখপত্র সম্পাদকের কথা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে প্রথমেই উঠে আসে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রকাশনা বিষয়ক একগুচ্ছ তথ্যসমৃদ্ধ অতীত ও গরজে প্রত্যয়িত বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের ভাবনা। মুখপত্রের সম্পাদক তথা রাজ্যের সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব গোবিন্দ ধর এই গরজের ফলশ্রুতিতেই একাধারে প্রকাশনা সংস্থাসমূহ, লেখক ও পাঠক প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উন্নতির পথে আগুয়ান হওয়ার আশায় সম্পাদকীয়তে লিখছেন - ‘...ত্রিপুরা একটি ছোট রাজ্য। লোকসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪১.৪৭ লক্ষ। পাঠকের সংখ্যা সেই তুলনায় খুবই কম। এরকম একটি রাজ্যে ৩৭ এর উপর প্রকাশনা সংস্থা বই প্রকাশ করে। ...আরও ৩৭টি বা তারও বেশি প্রকাশনা সংস্থা আসুক ত্রিপুরার বইপত্র প্রকাশনায়। লেখালেখিতে আসুন তরুণেরা। আরও আরও পাঠক তৈরিতে লেখক সম্পাদক ও প্রকাশকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাঠক সংখ্যা বাড়ুক...।’ পাশাপাশি মানসম্পন্ন লেখালেখির উপরও রয়েছে মন্তব্য। রয়েছে আরও বহু কথা। একটি দায়সম্পন্ন সম্পাদকীয়।
পরবর্তী রচনা একই লেখকের ‘প্রকাশনা মঞ্চের মূল ভাবনা’য় আরও প্রাঞ্জল, আরও বিস্তৃত করে রয়েছে প্রকাশনা, লেখালেখি ও পঠনপাঠন বিষয়ক আরও বহু চিন্তাচর্চা ও আলোচনা।
নিবন্ধাদির শুরুতেই রয়েছে একটি ব্যতিক্রমী ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ‘শতবর্ষ অতিক্রান্ত কিছু বই নিয়ে কিছু কথা’। বলাই বাহুল্য - ত্রিপুরা রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে। লেখক রমাপ্রসাদ দত্ত আলোচ্য নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন বেশ কিছু গ্রন্থের কথা যা প্রাচীন ত্রিপুরায় লেখালেখির ইতিহাসকে ফের একবার জানার সুযোগ করে দেয়। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্র কুমার ধর চৌধুরীর ‘ভার্যোপদেশ’ গ্রন্থ থেকে শুরু করে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে রামকানাই দত্ত প্রণীত ‘অভিষেক গাথা’ শীর্ষক প্রায় এক কুড়ি গ্রন্থের হদিশ দিয়েছেন এবং এই পর্যায়ে ত্রিপুরা রাজপরিবারের তৎপরতা ও বদান্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। নিঃসন্দেহে একটি সুখপাঠ্য প্রতিবেদন।
‘প্রতিদিন অনলাইন’-এর সৌজন্যে সংগৃহীত রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘শনিবারের চিঠি কিংবা দুই মুষ্টিযোদ্ধার আখড়া’ শীর্ষক নিবন্ধটি একাধারে সুখপাঠ্য এবং অবশ্যপাঠ্য। কবি, সাহিত্যিক মিলনকান্তি দত্তের ‘এক সময়াচার্যের কথা’ - মাইকেল, কবিগুরু ও জীবনানন্দের সাহিত্যক্রমে জীবনানন্দের সাহিত্যবিষয়ক এক অনাবিল, নির্মোহ গদ্য - যাকে অনায়াসে মিলনকান্তীয় গদ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। জীবনানন্দের রচনা বিষয়ক একাধারে একটি সহজপাঠ্য ও সুখপাঠ্য নিবন্ধ। আবদুর রাজ্জাক-এর নিবন্ধ ‘নৈ:শব্দ্যের নক্ষত্র : জীবনানন্দের কবিতার অন্তর্গত সুর’। শব্দে, আলোচনায় জীবনানন্দের কবিতার এক উৎকৃষ্ট উপস্থাপন।
‘...ত্রিপুরার
প্রকাশনার ইতিহাস ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ পর্বে শুরু হয়। তখন রাজ্য শাসন করতেন
মহারাজা বীরচন্দ্র মাণিক্য (১৮৬২ - ১৮৯৬) যিনি ছিলেন শিল্প সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক।
তাঁর রাজত্বকালেই আগরতলায় প্রতিষ্ঠিত হয় রাজবাড়ি প্রেস, যা ত্রিপুরার ছাপাখানার
প্রথম দৃষ্টান্ত...।’ - দীপেন নাথশর্মার এই নিবন্ধ - ‘ত্রিপুরার প্রকাশনা : একাল
সেকাল’-এ এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে শিরোনামভিত্তিক বিষয়টিকে। মুখপত্রের দীর্ঘতম
নিবন্ধ লিখেছেন বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক মন্টু দাস। শিরোনাম - ‘প্রসঙ্গ : সিলেটি
উপভাষা’। ইতিহাস থেকে বর্তমান অবধি সিলেট ও সিলেটি মানুষের ভাষা, কথন, উচ্চারণ,
সাহিত্য, ডিটান ইত্যাদি সবদিক সামলে এক অবশ্যপাঠ্য নিবন্ধ।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সূত্র ধরে ফরিদা হৃদির ‘লেখক হবার পাঁচ উপায়’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত রচনার পর সুমিতা দেব লিখছেন - ‘প্রকাশনা করব ?’ প্রকাশনা শিল্পের খুঁটিনাটি ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গোছানো এবং সময়োপযোগী একটি নিবন্ধ।
সাহিত্য বিষয়ক এই নিবন্ধগুলির বাইরে নিয়মানুযায়ী রয়েছে প্রকাশনা মঞ্চের নানা তথ্যপাতি ও কর্মকাণ্ডের খতিয়ান। কাগজ, ছাপার মান যথাযথ। ‘প্রায়’ নির্ভুল বানানসমৃদ্ধ মুখপত্রটির নান্দনিক ও দর্শনীয় প্রচ্ছদের সৌজন্যে মিলনকান্তি দত্ত এবং নামলিপির সৌজন্যে রয়েছেন প্রশান্ত সরকার। পরবর্তীতে বছরের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ হিসেবে একাধিক প্রকাশনা সংস্থার কিছু বইপত্রের হদিশ জুড়ে দিলে মুখপত্রের নাম সার্থকতা পাবে হয়তো। সব মিলিয়ে গভীর গরজ ও প্রত্যয়ের এক সুস্পষ্ট আভাস জুড়ে রয়েছে আলোচ্য মুখপত্রটিতে - যা প্রকাশিত হয়েছে ৮ম বর্ষ, ৫ম সংখ্যা হিসেবে।
‘মুখপত্র সম্পাদকের কথা’ শীর্ষক সম্পাদকীয়তে প্রথমেই উঠে আসে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রকাশনা বিষয়ক একগুচ্ছ তথ্যসমৃদ্ধ অতীত ও গরজে প্রত্যয়িত বর্তমান তথা ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের ভাবনা। মুখপত্রের সম্পাদক তথা রাজ্যের সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব গোবিন্দ ধর এই গরজের ফলশ্রুতিতেই একাধারে প্রকাশনা সংস্থাসমূহ, লেখক ও পাঠক প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে সম্ভাব্য উন্নতির পথে আগুয়ান হওয়ার আশায় সম্পাদকীয়তে লিখছেন - ‘...ত্রিপুরা একটি ছোট রাজ্য। লোকসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪১.৪৭ লক্ষ। পাঠকের সংখ্যা সেই তুলনায় খুবই কম। এরকম একটি রাজ্যে ৩৭ এর উপর প্রকাশনা সংস্থা বই প্রকাশ করে। ...আরও ৩৭টি বা তারও বেশি প্রকাশনা সংস্থা আসুক ত্রিপুরার বইপত্র প্রকাশনায়। লেখালেখিতে আসুন তরুণেরা। আরও আরও পাঠক তৈরিতে লেখক সম্পাদক ও প্রকাশকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাঠক সংখ্যা বাড়ুক...।’ পাশাপাশি মানসম্পন্ন লেখালেখির উপরও রয়েছে মন্তব্য। রয়েছে আরও বহু কথা। একটি দায়সম্পন্ন সম্পাদকীয়।
পরবর্তী রচনা একই লেখকের ‘প্রকাশনা মঞ্চের মূল ভাবনা’য় আরও প্রাঞ্জল, আরও বিস্তৃত করে রয়েছে প্রকাশনা, লেখালেখি ও পঠনপাঠন বিষয়ক আরও বহু চিন্তাচর্চা ও আলোচনা।
নিবন্ধাদির শুরুতেই রয়েছে একটি ব্যতিক্রমী ও তথ্যসমৃদ্ধ লেখা ‘শতবর্ষ অতিক্রান্ত কিছু বই নিয়ে কিছু কথা’। বলাই বাহুল্য - ত্রিপুরা রাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে। লেখক রমাপ্রসাদ দত্ত আলোচ্য নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন বেশ কিছু গ্রন্থের কথা যা প্রাচীন ত্রিপুরায় লেখালেখির ইতিহাসকে ফের একবার জানার সুযোগ করে দেয়। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্র কুমার ধর চৌধুরীর ‘ভার্যোপদেশ’ গ্রন্থ থেকে শুরু করে ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে রামকানাই দত্ত প্রণীত ‘অভিষেক গাথা’ শীর্ষক প্রায় এক কুড়ি গ্রন্থের হদিশ দিয়েছেন এবং এই পর্যায়ে ত্রিপুরা রাজপরিবারের তৎপরতা ও বদান্যতার কথা উল্লেখ করেছেন। নিঃসন্দেহে একটি সুখপাঠ্য প্রতিবেদন।
‘প্রতিদিন অনলাইন’-এর সৌজন্যে সংগৃহীত রামকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘শনিবারের চিঠি কিংবা দুই মুষ্টিযোদ্ধার আখড়া’ শীর্ষক নিবন্ধটি একাধারে সুখপাঠ্য এবং অবশ্যপাঠ্য। কবি, সাহিত্যিক মিলনকান্তি দত্তের ‘এক সময়াচার্যের কথা’ - মাইকেল, কবিগুরু ও জীবনানন্দের সাহিত্যক্রমে জীবনানন্দের সাহিত্যবিষয়ক এক অনাবিল, নির্মোহ গদ্য - যাকে অনায়াসে মিলনকান্তীয় গদ্য হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। জীবনানন্দের রচনা বিষয়ক একাধারে একটি সহজপাঠ্য ও সুখপাঠ্য নিবন্ধ। আবদুর রাজ্জাক-এর নিবন্ধ ‘নৈ:শব্দ্যের নক্ষত্র : জীবনানন্দের কবিতার অন্তর্গত সুর’। শব্দে, আলোচনায় জীবনানন্দের কবিতার এক উৎকৃষ্ট উপস্থাপন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার সূত্র ধরে ফরিদা হৃদির ‘লেখক হবার পাঁচ উপায়’ শীর্ষক সংক্ষিপ্ত রচনার পর সুমিতা দেব লিখছেন - ‘প্রকাশনা করব ?’ প্রকাশনা শিল্পের খুঁটিনাটি ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গোছানো এবং সময়োপযোগী একটি নিবন্ধ।
সাহিত্য বিষয়ক এই নিবন্ধগুলির বাইরে নিয়মানুযায়ী রয়েছে প্রকাশনা মঞ্চের নানা তথ্যপাতি ও কর্মকাণ্ডের খতিয়ান। কাগজ, ছাপার মান যথাযথ। ‘প্রায়’ নির্ভুল বানানসমৃদ্ধ মুখপত্রটির নান্দনিক ও দর্শনীয় প্রচ্ছদের সৌজন্যে মিলনকান্তি দত্ত এবং নামলিপির সৌজন্যে রয়েছেন প্রশান্ত সরকার। পরবর্তীতে বছরের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ হিসেবে একাধিক প্রকাশনা সংস্থার কিছু বইপত্রের হদিশ জুড়ে দিলে মুখপত্রের নাম সার্থকতা পাবে হয়তো। সব মিলিয়ে গভীর গরজ ও প্রত্যয়ের এক সুস্পষ্ট আভাস জুড়ে রয়েছে আলোচ্য মুখপত্রটিতে - যা প্রকাশিত হয়েছে ৮ম বর্ষ, ৫ম সংখ্যা হিসেবে।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
'বইবার্তা'
মূল্য ৬০ টাকা, যোগাযোগ - ৮৭৮৭৪৩৭৫৫৯
মূল্য ৬০ টাকা, যোগাযোগ - ৮৭৮৭৪৩৭৫৫৯

Comments
Post a Comment