এক সাধক মহাজীবনের নাক্ষত্রিক মহাপ্রস্থান। তাঁর জীবনচর্চা যেমন নিষ্কলুষ তেমনি তাঁর চিরবিদায়। নিয়মানুবর্তিতা, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেমন ছিল তাঁর পারদর্শিতা ঠিক তেমনি তাঁর চলে যাওয়াটাও ব্যতিক্রমী। কোনও টানাপোড়েন নেই, নেই দীর্ঘদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকার যন্ত্রণা। কোনও হইচই নেই, কাজের শেষে ঘরে ফেরার মতোই একাকী পথে যেন তাঁর এক রাজকীয় মহাপ্রস্থান। তিনি বরাকভূম কিংবা উত্তরপূর্বের গল্পভুবনের অবিসংবাদিত সম্রাট মিথিলেশ ভট্টাচার্য। আমার সৌভাগ্য আমি তাঁর সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলাম, তাঁর বরাভয় হাতের ছায়া পেয়েছিলাম মাথার উপর। ১৯৯০ সাল নাগাদ আমার জন্মভূমি বরাক থেকে আমি যখন বাইরে চলে আসি তার আগে সাহিত্যের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ বা সংস্পর্শ ছিল না। বস্তুত এর ঠিক অব্যবহিত পরেই হাত রাখি লেখালেখির জগতে। ধীরে ধীরে বরাকের সাহিত্য ও সাহিত্যিক, কবিদের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ। কিন্তু মিথিলেশ ভট্টাচার্যের মতো হাই প্রোফাইল সাহিত্যিকদের সঙ্গে কথা বলা কিংবা পরিচয়ের বায়না ধরার মতো কলমের জোর তো আমার ছিল না কোনোদিনই, তাই সসম্ব্রমে এড়িয়েই চলতাম এই ধৃষ্টতা। মিথিলেশদার সঙ্গে আমার পরিচয় সম্ভবত ২০২০ সাল নাগাদ। টেলি...
মৃত্যু জীবনেরই এক অনিবার্য পরিণতি। বস্তুত মৃত্যুই জীবনকে করে তোলে সম্পূর্ণ। এই আপ্তবাক্য স্মরণে রেখেও কিছু মৃত্যু সহজে মেনে নেওয়া যায় না। আশির দোরগোড়ায় পৌঁছে ও সাহিত্য সৃষ্টি এবং সাহিত্যকর্মে কীভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মিথিলেশ ভট্টাচার্য। আচমকাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেল তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ড। প্রকাশিতব্য নতুন গল্পের বই, তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘পরম্পরা’, সদ্যপ্রয়াত জনশিল্পী জুবিন গার্গকে নিয়ে প্রস্তাবিত সংখ্যা - সবকিছুকে ছেড়ে নীরবে পাড়ি দিলেন পরপারে। কিন্তু একজন সাধকের তো মৃত্যু হয় না। কথাকার, সাধক সাহিত্যিক মিথিলেশও তাই হারিয়ে যেতে পারেন না। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমেই। উত্তর পূর্ব তথা বাংলা সাহিত্যের গল্পবিশ্বে যে অবদান তিনি রেখে গিয়েছেন তার রেশ থেকে যাবে কাল থেকে কালান্তরে। গল্প নির্মাণ ও গল্পভাবনায় মিথিলেশ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাঁর একাকী জীবনে আপনজনের মতো যেন গল্পেরা নিজে থেকে এসে ধরা দিত তাঁকে পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে। কেউ কোনোদিন তাঁর কাছে গল্প চেয়ে নিরাশ হননি। তাঁর ঝোলার ভেতর যেন মুঠো মুঠো গল্প উন্মুখ হয়ে থাকত পাঠকের দরবারে পৌঁছে যাবার জন্য। ১৯৬৭ সালে প্রথম...