Skip to main content

Posts

বহমান বাস্তবের বিষাদগাথা - ‘শোকজলের আলেখ্য’

একটি মর্মস্পর্শী গ্রন্থনাম । এই নামে রয়েছে তিনটি শব্দ - শোক , জল ও আলেখ্য । অনুমান করেই নেয়া যায় শোক ও শোকজনিত জল অর্থাৎ অশ্রুবিষয়ক কবিতার এক নিশ্চিত সমাহার এই গ্রন্থ । আবার আলেখ্য শব্দের অভিধানগত অর্থ যেখানে ছবি বা প্রতিমূর্তি সেখানে বাস্তবিক অর্থে বিষয়ভিত্তিক একটি রচনা , সে পদ্য কিংবা গদ্যেই হোক - তাকেই আলেখ্য বলা হয়ে থাকে । যেমন কাব্য আলেখ্য ইত্যাদি । সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে অশ্রু নির্গমনকারী বিষয়ের উপর লেখা একগুচ্ছ কবিতার সমাহার আলোচ্য গ্রন্থটি । এবং এর পরিচয়ও পাওয়া যায় অন্তত প্রথমদিককার অনেকগুলো কবিতায় যেখানে সরাসরি ‘ শোকজল ’ শব্দবন্ধটি এসেছে কবিতার শরীরে দুঃখবোধের দ্যোতক হিসেবে । সঞ্জয় চন্দ্র দাস কবিতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন । এর আগেও তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে এর পরিচয় পাওয়া গেছে । ছন্দ নিয়ে , ছন্দহীনতা নিয়ে , শব্দ ও শব্দের দ্বিত্ব নিয়ে খেলা করা তাঁর কবিতাগত স্বভাব । ৭১ পৃষ্ঠার আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট ৫৯টি কবিতায়ও এমন নিরীক্ষণ প্রত্যক্ষ করা যায় । প্রার্থনা সিরিজের ৩টি কবিতাও আছে এর মধ্যে । প্রায় প্রতিটি কবিতার শিরোনামের মধ্যেও শোকদু...
Recent posts

বিষয়-মানসে প্রকাশিত ‘স্বরিত’ - সপ্তদশ সংখ্যা

কোনও দ্বিধা কিংবা ভয়কে অবলীলায় উড়িয়ে দিয়ে জলকে জল , মাটিকে মাটি কিংবা দেশকে দেশ ( দ্বেষ , দ্যাশ কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্র নয় ) বলতে পারেন যে ক ’ জন , তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি , লেখক , সম্পাদক নারায়ণ মোদক । বরাক উপত্যকার শ্রীভূমি থেকে ২১ মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবসে প্রকাশিত হয়েছে বার্ষিক পত্রিকা ‘ স্বরিত ’- এর সপ্তদশ সংখ্যা । দ্বৈত সম্পাদনায় নারায়ণ মোদক ও গৌতম চৌধুরী। এবারের বিষয় ছিল প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অব্যবস্থা , অত্যাচার , সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিপীড়ন ইত্যাদি নিয়ে প্রতিবেদন ও সহমর্মিতা ইত্যাদি । স্বভাবতই এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত । এই নির্ভীক , বলিষ্ঠ পদক্ষেপের উদ্যোগ কতটা সফল হয়েছে , কতটা সহমর্মিতা বর্ষিত হল , কতটা প্রতিবাদ স্বরিত হল তার এক নির্মোহ বিশ্লেষণ সংখ্যাটির আলোচনার এক অমোঘ অনুষঙ্গ ।   ভূমিকার আধারে ‘এ সংখ্যার বিষয়ে আলোকপাত’ করতে গিয়ে অন্যতম সম্পাদক নারায়ণ মোদক লিখছেন - ‘… আমাদের সমাজে একদল নিজেকে মানবতাবাদী সাজিয়ে নিরাপদ দূরত্বে বসে সমাজ এবং সরকারের সব রকম সুবিধা ভোগ করে বিজ্ঞতার সাথে বলতে থাকেন সারা বিশ্বের যেখানেই সংখ্যালঘু আছে সেখানেই তারা অত্যাচারিত। আমাদ...

প্রত্যাশা ও প্রত্যয়ের বার্তা নিয়ে প্রকাশিত ‘সমন্বয়’

‘এক বৃন্তে দুটি কুসুম’। সমন্বয়ের শ্রেষ্ঠ আঙ্গিক হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত একটি শব্দবন্ধ বা বাক্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে সবার মননে। তবে ভিন্ন বৃন্তের দুটি কুসুমও যে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে সমন্বয়ের বার্তা ছড়িয়ে দিতে সক্ষম এমন ভিন্ন চিন্তার উদ্রেক একজন শিল্পীর বাইরে কে আর করতে পারেন ? এমনই চমৎকার একটি চিন্তাসমন্বিত প্রচ্ছদেই উজান অসমের মার্ঘেরিটা থেকে প্রস্ফুটিত হল বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর লিডু-মার্ঘেরিটা শাখার প্রথম মুখপত্র তথা সাহিত্য পত্রিকা ‘সমন্বয়’। বস্তুত এই প্রচ্ছদ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গেছে সংখ্যাটিকে। সৌজন্যে কবি ও শিল্পী বিকাশ সরকার। ১৩৬ পৃষ্ঠার ত্রিভাষিক এই সংখ্যাটির সম্পাদক আরেক পোড় খাওয়া লেখক শান্তনু সরকার যিনি পেরিয়ে এসেছেন সমাজ-সাহিত্যের বহু ঘাত প্রতিঘাত এবং রাজ্যের প্রধান দুটি ভাষার সাহিত্য জগতে যাঁর সব্যসাচী ভূমিকা অনস্বীকার্য। প্রথম সংখ্যা হিসেবে দুই মলাটের ভিতরে যদিও রয়ে গেছে বহু ত্রুটি, বহু অপরিপক্কতার ছাপ তবু গরজ, প্রয়াস ও শ্রমের উপস্থিতিও সমানভাবেই প্রকট। লেখালেখির সম্ভারও কম নয়, বিশেষ করে প্রতিষ্ঠিত কবি সাহিত্যিকদের পাশাপাশি স্থানীয় কবি লেখকদের উপস্থিতি লিটল ম্যাগাজিনের ধর্...

সম্পর্কের সাতকাহন - ‘মুখের মিছিল মনের মিছিল’

পরিবর্তনশীল সংসারে সুন্দর ও অসুন্দরের ছবি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে নানাভাবে ফুটে উঠে। আর তাই চোখে দেখা স্বপ্ন আর বাস্তবের ভিত কখনও কখনও একেবারেই আলাদা হয়। সংঘর্ষ, লড়াই এসব কিছুই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাতেও শেষ নয়। সমাজ সংসারে মানুষের ব্যবহার ও চেহারা বারবার পালটে যায় সময়ের সাথে সাথে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ বেদনার লহর বয়ে যায় সংসার সমুদ্রে। সংসারের নানা ওঠাপড়া ও ভিন্ন ভিন্ন সময়ে মানুষের পরিবর্তনের নানান কথা তুলে ধরা হয়েছে আমার এই গল্পগ্রন্থে। বলা হয়েছে মানুষের ব্যক্তিসত্তার কথা, মানুষের স্বভাবগত পরিবর্তনের কথা। ….সংসারের ভিন্ন ভিন্ন সত্য রূপের আভাস তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র। আমাদের সম্পূর্ণ জীবনে ভাবনার অস্তিত্ব অনেক সময় শূন্যে বিলীন হয়। তখন সংসারের ছন্দ, সুর ফিরিয়ে আনতে সম্পর্কের ডোর আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই আমরা। কিন্তু সে বাঁধনও সময়ের সাথে সাথে আলগা হয়ে যায়…।’ - ‘আমার কথা’ শিরোনামে গল্পকার অনুপমা পাল এভাবেই আলোচ্য গল্পগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট গল্পসমূহের একটি সারাংশ তথা মূল উপজীব্য বিষয়কে পরিস্ফুট করেছেন। পাকা বাঁধাইয়ে ১২৮ পৃষ্ঠার গ্রন্থের অন্তর্গত ১২০ পৃষ্ঠা জুড়ে মোট ২৩টি গল্পে বস্তুত সংসার...

উপত্যকার ক্রীড়াবিষয়ক এক সংগ্রহযোগ্য দলিল - ‘সাক্ষাতে কথা’

গল্প, কবিতার প্রাচুর্যে গ্রন্থ প্রকাশের জগতে অন্যান্য প্রকাশ অনেকটাই স্তিমিত হয়ে থাকে সচরাচর। মাঝে মাঝে কিছু উপন্যাস এবং কিছু প্রবন্ধ আদির সংকলন প্রকাশিত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেলেও সাক্ষাৎকার সংকলন বস্তুতই এক বিরল ঘটনা আজকের সাহিত্য পরিমণ্ডলে, বিশেষ করে এই উত্তরপূর্বের সাহিত্য জগতে। সেই অর্থে বিষয়ভিত্তিক ‘সাক্ষাতে কথা’ সংকলন গ্রন্থটি প্রকৃতার্থেই এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস। বহু দিনের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ সাংবাদিক (ক্রীড়া সাংবাদিক) দ্বিজেন্দ্রলাল দাস ও ক্রীড়াবিদ তথা ক্রীড়া সংগঠক উত্তম চৌধুরী সংকলিত, সম্পাদিত ও গৃহীত সাক্ষাৎকার সংগ্রহ গ্রন্থটি স্বভাবতই খেলাধুলা ও সাহিত্য জগতে এক বিশেষ স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছে। খেলাধুলা এমন একটি বিষয় যা প্রত্যেকের জীবনেই একটি নির্দিষ্ট বয়সে এক অমোঘ ভালোবাসার আকর হয়ে আসে। কালের আবর্তে সেই জগৎ থেকে অধিকাংশ মানুষই সরে এলে বা সরে আসতে বাধ্য হলেও সেই ভালোবাসার কিছুটা হলেও রেশ থেকে যায় মননে, মগজে। তাই খেলাধুলাবিষয়ক লেখালেখি থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না কারোরই। আর সেই খেলাধুলাবিষয়ক লেখালেখির প্রেক্ষাপট যদি হয় বিস্তৃত এবং চেনা পরিবেশ তাহলে সোনায় সোহাগা। আ...

প্রত্যয়িত পথ চলার অঙ্গীকার - ‘এবং হাঁটছি’

এক খেয়ালি কবির কবিতাযাত্রার বয়ান। ইচ্ছেরা তার ডানা মেলে এমন এক অনুষঙ্গের সৃষ্টি করে যা ‘শুধু কবিতার জন্য’। কবিতার জন্য কবি পথে নেমেছেন এবং পথ হাঁটছেন খেয়ালে, খুশিতে - পৃথিবীর শেষ রাস্তা ধরে পৌঁছে যাবো নিশীথ সূর্যের দেশে, উত্তর মেরুর গায়ে হেলান দিয়ে টানা বসন্ত জুড়ে রাত্রি উদ্যাপন করবো। বসন্ত কেটে গেলে ধীরে ধীরে… হিমবাহে সব ক্ষত খুলে রেখে, সমুদ্রের জলে অস্তি বিসর্জন করে, মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা করবো। (কবিতা - মহাপ্রস্থানের পথে) কিংবা - গাছ, মাটি আর জলের বন্দনা করি, ঘুমের মন্ত্র উচ্চারণে নেমে আসুক পুনর্জন্ম। আমাকে পাতার দেশে নিয়ে চলো বাতাস আমার অসুখ শুষে নিক, আমি মাটির কাছে আনত হবো, পাতার শরীরে এঁকে দেবো চুম্বন। বীজ আহরণ করবো, মন্ত্রপূত সূর্যকণা পুঁতে দেবো মৃত্তিকার গর্ভাশয়ে। (কবিতা - পুনর্জন্ম হোক) শেষোক্ত কবিতায় কবির নিরলস পথ চলার বাইরেও লক্ষ করলে দেখা যায় একগুচ্ছ শব্দাবলি যা কবির কাব্যমনষ্কতার পরিচায়ক। এক ঘোর লাগা পঙ্ক্তিসুখ খুঁজে পাওয়া যায় কবিতায়। এক পাগলপারা ইচ্ছেসুখের আবেগতাড়িত বয়ান, যেখানে পথ ও প্রকৃতিও এসেছে গভীর অনুষঙ্গ হিসেবে। এই কবিতায় আছে গাছ, মাটি জল, পাতা, বাতাস, বীজ, সূর্য...

প্রতিশ্রুতির প্রথম সোপান - ‘অনাদৃতা’

কবি অনন্যা ভট্টাচার্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের প্রতি গ্রন্থকারের এক ব্যতিক্রমী আবেগ, অনুভূতি যে জড়িয়ে থাকে তা অনস্বীকার্য। ‘অনাদৃতা’ গ্রন্থটি হাতে নিলেই দৃষ্টি অবধারিতভাবে আকর্ষিত হবে গ্রন্থের ছিমছাম, নান্দনিক প্রচ্ছদের দিকে। ধারাবাহিকতা বজায় থেকেছে শীতালং পাবলিকেশনের। এবারের প্রচ্ছদ শিল্পী অভিজিৎ দেবনাথ। ৪৪ পৃষ্ঠার কাব্যগ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে ৩৮টি কবিতা। ৪ থেকে ১৬ লাইনের এক একটি কবিতায় ধরা রয়েছে নানা অনুষঙ্গ। প্রকৃতি, অনুভব-অনুভূতি, কল্পনা, বাস্তব, আকাঙ্ক্ষা, প্রতিবাদ ইত্যাদি। কিছু কিছু কবিতায় প্রাথমিক জড়তার ছাপ থাকলেও প্রথম কাব্যগ্রন্থের কবিতা হিসেবে বলা যায় যথেষ্ট পরিশীলিত এবং স্বচ্ছন্দ। অনুভবের অনুরণন ধ্বনিত হয়েছে অধিকাংশ কবিতায়। কবি লিখছেন - একটি গোটা সন্ধ্যা কাটে তারার খোঁজে রাত নামে, হালকা নীল-কালো চাদরে আবৃত চরাচর, সাদা প্যাঁচা ঘুরে রাতে চাঁদের আলোয় ঝলসায় কালপুরুষ সন্ধ্যাতারা করে জায়গা বদল সপ্তর্ষিমণ্ডল আঁকে অনন্ত প্রশ্ন - হারিয়ে যাওয়া তারার খোঁজে আমি রয়ে যাই - একা। (কবিতা - হারানো তারা)। গ্রন্থের প্রথমেই রয়েছে ‘প্রান্তিক’ সিরিজের ১০টি কবিতা। এর কোনো ...

নান্দনিকতার গরজে প্রকাশিত - ‘মনুতট’ - সাহিত্যের অন্যভূমি

১ / ৪ ক্রাউন সাইজে ৩৬ পৃষ্ঠার পত্রিকা । পার্থ দাস - এর ছিমছাম , নান্দনিক একটি প্রচ্ছদ প্রথমেই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম পাঠক / দর্শকের । উত্তর ত্রিপুরার কুমারঘাট শহর একদিকে যেমন ঐতিহাসিক অন্যদিকে তেমনি প্রাকৃতিক প্রেক্ষাপটে এক স্বকীয় স্থান ধরে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। এর বাইরেও দেও-মনু উপত্যকার এই জনপদের সামাজিক ও সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক প্রেক্ষাপটও যথেষ্ট প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। তারই নিদর্শন সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি জগৎ থেকে উঠে আসা বহু বিদগ্ধ গুনীজন। মনুতটের মানুষ গোপালচন্দ্র দাস এক নিরলস সাহিত্যিক তথা কবি ও সাহিত্য-কর্মী। তাঁরই সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে ‘ মনুতট’ পত্রিকা। সম্প্রতি হাতে এসেছে পত্রিকাটির ষোড়শ বর্ষ, ত্রয়োদশ সংখ্যাটি। প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ২০২৫। একগুচ্ছ কবিতা, দুটি ছড়া ও একটি একাঙ্ক অণুনাটকের সমাহারে সমৃদ্ধ হয়েছে এবারের সংখ্যাটি। সম্পাদকীয়টি হৃদয়গ্রাহী হলেও এতটাই সংক্ষিপ্ত যে পুরোটাই তুলে দেওয়া যায় - ‘মনুতট - পাড়ে ছিল অনেক কবিতা গল্প। আজও আছে। জীবন-দর্শনের মতোই আমার নদী দর্শন - থেমে থাকে না। মনু-পাড়ে জমে ওঠে জন্ম-মৃত্যু, ভাঙা-গড়ার খেলা। আমি ধ্যানী হয়ে সেই চক্রটাকে ভালোবেসে ফেল...