Skip to main content

Posts

চিরনিদ্রায় আকাশলীন - গল্পভুবনের নিঃসঙ্গ নায়ক

এক সাধক মহাজীবনের নাক্ষত্রিক মহাপ্রস্থান। তাঁর জীবনচর্চা যেমন নিষ্কলুষ তেমনি তাঁর চিরবিদায়। নিয়মানুবর্তিতা, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেমন ছিল তাঁর পারদর্শিতা ঠিক তেমনি তাঁর চলে যাওয়াটাও ব্যতিক্রমী। কোনও টানাপোড়েন নেই, নেই দীর্ঘদিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকার যন্ত্রণা। কোনও হইচই নেই, কাজের শেষে ঘরে ফেরার মতোই একাকী পথে যেন তাঁর এক রাজকীয় মহাপ্রস্থান। তিনি বরাকভূম কিংবা উত্তরপূর্বের গল্পভুবনের অবিসংবাদিত সম্রাট মিথিলেশ ভট্টাচার্য। আমার সৌভাগ্য আমি তাঁর সান্নিধ্যে আসতে পেরেছিলাম, তাঁর বরাভয় হাতের ছায়া পেয়েছিলাম মাথার উপর। ১৯৯০ সাল নাগাদ আমার জন্মভূমি বরাক থেকে আমি যখন বাইরে চলে আসি তার আগে সাহিত্যের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ বা সংস্পর্শ ছিল না। বস্তুত এর ঠিক অব্যবহিত পরেই হাত রাখি লেখালেখির জগতে। ধীরে ধীরে বরাকের সাহিত্য ও সাহিত্যিক, কবিদের সঙ্গে পরিচয় ও যোগাযোগ। কিন্তু মিথিলেশ ভট্টাচার্যের মতো হাই প্রোফাইল সাহিত্যিকদের সঙ্গে কথা বলা কিংবা পরিচয়ের বায়না ধরার মতো কলমের জোর তো আমার ছিল না কোনোদিনই, তাই সসম্ব্রমে এড়িয়েই চলতাম এই ধৃষ্টতা। মিথিলেশদার সঙ্গে আমার পরিচয় সম্ভবত ২০২০ সাল নাগাদ। টেলি...
Recent posts

প্রয়াত মিথিলেশ : স্তব্ধ গল্পভুবন

মৃত্যু জীবনেরই এক অনিবার্য পরিণতি। বস্তুত মৃত্যুই জীবনকে করে তোলে সম্পূর্ণ। এই আপ্তবাক্য স্মরণে রেখেও কিছু মৃত্যু সহজে মেনে নেওয়া যায় না। আশির দোরগোড়ায় পৌঁছে ও সাহিত্য সৃষ্টি এবং সাহিত্যকর্মে কীভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ মিথিলেশ ভট্টাচার্য। আচমকাই যেন স্তব্ধ হয়ে গেল তাঁর যাবতীয় কর্মকাণ্ড। প্রকাশিতব্য নতুন গল্পের বই, তাঁর সম্পাদিত পত্রিকা ‘পরম্পরা’, সদ্যপ্রয়াত জনশিল্পী জুবিন গার্গকে নিয়ে প্রস্তাবিত সংখ্যা - সবকিছুকে ছেড়ে নীরবে পাড়ি দিলেন পরপারে। কিন্তু একজন সাধকের তো মৃত্যু হয় না। কথাকার, সাধক সাহিত্যিক মিথিলেশও তাই হারিয়ে যেতে পারেন না। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমেই। উত্তর পূর্ব তথা বাংলা সাহিত্যের গল্পবিশ্বে যে অবদান তিনি রেখে গিয়েছেন তার রেশ থেকে যাবে কাল থেকে কালান্তরে। গল্প নির্মাণ ও গল্পভাবনায় মিথিলেশ ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তাঁর একাকী জীবনে আপনজনের মতো যেন গল্পেরা নিজে থেকে এসে ধরা দিত তাঁকে পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে। কেউ কোনোদিন তাঁর কাছে গল্প চেয়ে নিরাশ হননি। তাঁর ঝোলার ভেতর যেন মুঠো মুঠো গল্প উন্মুখ হয়ে থাকত পাঠকের দরবারে পৌঁছে যাবার জন্য। ১৯৬৭ সালে প্রথম...

সাক্ষাৎকারে এক টুকরো উত্তর-পূর্ব - ‘হাওয়াই আড্ডা’

আড্ডা বা মুখোমুখি কথাবার্তা কিংবা সাক্ষাৎকারগুলো নিশ্চিতভাবে মাটিতে পা রেখেই হয়েছিল তবু তার নাম রাখা হয়েছে ‘হাওয়াই আড্ডা’। কেন ? আসলে একটি রচনা কিংবা গ্রন্থের শিরোনাম যথেষ্ট গুরুত্ব পায় পাঠকের মন-মননে। হিন্দিতে বহুল পরিচিত ‘হাওয়াই অড্ডা’ (অর্থাৎ বিমান বন্দর) শব্দটি আমাদেরও মগজস্থ হয়ে গেছে দেশীয় সূত্রে। আবার আড্ডা অর্থে একত্রবাসে উচ্চারিত কথোপকথন। এসব মিলিয়েই এক ব্যঞ্জনাত্মক নামকরণ। তবে এ শুধু এই গ্রন্থেরই শিরোনাম নয় এ হচ্ছে এই অঞ্চলের লেখালেখির ইতিহাস, সমাজ, দর্শন, রাজনৈতিক প্রেক্ষিত, এসব কিছুকে ইনডেপথ অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে ঠিকঠাক তুলে ধরার লক্ষ্যে পূর্ব-প্রকাশিত সাক্ষাৎকার-পর্বেরও শিরোনাম। প্রদীপ মজুমদার ত্রিপুরার এবং স্বভাবতই উত্তর-পূর্ব তথা এর বাইরেও সমকালিক কথাসাহিত্যিক মহলে এক পরিচিত এবং অপ্রতিহত নাম। তাঁর সম্পাদিত ‘হাওয়াই আড্ডা’ শীর্ষক সাক্ষাৎকার সংকলনটি সম্পর্কে প্রথম ব্লার্বে রয়েছে - ‘আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগে ‘কাগজের নৌকা’র বিভিন্ন সংখ্যায় ‘হাওয়াই আড্ডা’ - এই শিরোনামে যে ইন্টারভিউগুলো প্রকাশিত হয়েছিল ‘হাওয়াই আড্ডা’ বইটি তারই সংকলিত রূপ। এই ইন্টারভিউগুলোর একটি লিটারারি ভ্যালু...

বরাকের বাংলা ও হিন্দি কবিতার পারস্পরিক অনুবাদ কবি অশোক বার্মার কাব্যকৃতি

কবি অশোক বার্মা। কবিতার সরণি বেয়ে নিরন্তর সৃষ্টিকর্মে নিমগ্ন এক সাধক কবি। অসম সরকারের সাহিত্য পেমশনপ্রাপ্ত এই কবির কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা প্রায় দুই কুড়ি। এর মধ্যে রয়েছে একক কাব্যগ্রন্থ, কবিতার সংকলন, সম্পাদনা গ্রন্থ এবং কাব্যনাটিকা। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ। প্রথমে বরাক উপত্যকার কবিদের বাংলা কবিতার হিন্দি অনুবাদ গ্রন্থ এবং তারপর বরাকের হিন্দি কবিতার বাংলা অনুবাদ গ্রন্থ। ক্রমানুসারে এগোলে প্রথমেই আসছে পেপারব্যাকে ২০৪ পৃষ্ঠার ‘হিন্দি মে অনূদিত্‌ বরাক ঘাটি কী বাংলা কবিতায়েঁ’ গ্রন্থটি। সূচিপত্র অনুযায়ী এক সুস্পষ্ট বিভাগ বিন্যাসে বিন্যস্ত হয়েছে কবিতাগুলি। প্রতিটি বিভাগে রয়েছে অনেকানেক কবির এক বা একাধিক কবিতা। শ্রীভূমি (করিমগঞ্জ)/বদরপুর বিভাগে রয়েছে যাঁদের কবিতা তাঁরা হলেন - পরমানন্দ সরস্বতী (মৃণাল কান্তি দাস), রসময় দাস, অতুলরঞ্জন দেব, মনোজিৎ দাস, জন্মজিৎ রায়, সরোজ বিশ্বাস, কিরণশংকর রায়, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, দিলীপ বিশ্বাস, দীপক হোমচৌধুরী, দিলীপকান্তি লস্কর, শান্তনু গঙ্গারিডি, মুজিব স্বদেশী, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, নারায়ণ মোদক, বর্ণশ্রী বক্সী, অপর্ণা দেব, ফরিদা পরভীন ‘রুনি’, বনানী ...

ধারে ও ভারে সমৃদ্ধ জীবনানন্দ দাশ বিশেষ সংখ্যা - ‘পরম্পরা’

পরম্পরা শব্দটি বহু ক্ষেত্রে ঐতিহ্য শব্দটির পাশেই ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। উভয়ে মিলে যে অর্থপূর্ণ ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে তা দেশ কাল পাত্র সমাজ সংস্কৃতির এক প্রবহমান ধারাকেই সূচিত করে। কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলা ও বাংলা কবিতার সেই ধারা, সেই ঐতিহ্য। সেই সূত্র ধরেই সম্প্রতি শিলচর থেকে কথাকার মিথিলেশ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ‘পরম্পরা’ পত্রিকার ষষ্ঠ সংখ্যা -  ‘১২৫ বছর পূর্তি জীবনানন্দ দাশ বিশেষ সংখ্যা’। একটি ছোটপত্রিকা-সংখ্যা কতটা সমৃদ্ধ হতে পারে, কতটা গরজের ছাপ লুকিয়ে থাকতে পারে তার পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় এ যেন তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সুচিন্তিত বিভাগবিন্যাস, সুচয়িত রচনাসমূহ এই সংখ্যাটিকে প্রদান করেছে এক অনন্য মর্যাদা। পেপারব্যাকে ১৩৪ পৃষ্ঠার এই পত্রিকার সম্পাদকীয় থেকে কিছু লাইন এখানে উদ্ধৃত করাই যায় - ‘…বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর প্রতিভা জীবনানন্দ দাশ। যাঁর কবিতা পাঠককে মুহূর্তে সম্মোহিত করে চেতনা বিবশ করে দেয়। কবির জাদুকরি মুক্ত ছন্দ, শব্দ চয়ন, দৃশ্যকল্প লহমায় পাঠকের মন আচ্ছন্ন করে দেয়। জীবনানন্দের কবিতায় দৈনন্দিন জীবনের বহু অকাব্যিক শব্দ, দৃশ্য, বাক্য এমন অভাবিত সুর ও ছন্দে বেজে ওঠ...

আত্মবিশ্লেষণে এই দেশ - এই সময় ‘নগ্ন মানচিত্র পুড়ছে, পুড়ুক’

কবি রত্নদীপ দেব-এর সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ ‘নগ্ন মানচিত্র পুড়ছে, পুড়ুক’ প্রকাশিত হয়েছে এ বছরের গোড়ায়। রত্নদীপের কবিতায় সচরাচর যেসব বিষয় প্রাধান্য পায়, আলোচ্য গ্রন্থে তা বিকশিত হয়েছে রাখঢাকহীন কাঠিন্যে অথচ কাব্যিক সুষমামণ্ডিত হয়ে। এই দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা বড় সহজ কথা নয় যদিও সেটাই যথার্থ করে দেখিয়েছেন কবি আপন প্রতিভায়। কবি রত্নদীপ মূলত কবিতাকে ব্যবহার করেন বা বলা যায় কবিতার সৃষ্টি করেন সমাজের অন্যায়, অনাচারকে উদ্‌ঘাটিত করে তার বিরুদ্ধে একদিকে তীব্র শ্লেষ ও অন্যদিকে সোচ্চার প্রতিবাদের ক্ষেত্র হিসেবে। কবিমননে ধরা দেয় যা কিছু অস্বাভাবিকতা তার বিরুদ্ধে শব্দের প্রহার। একজন প্রকৃত কবি কখনও দেশ, কাল, পাত্রের অনিয়মকে উপেক্ষা করে নীরোর মতো বেহালা বাজাতে পারেন না। রত্নদীপও পারেন না। পারিপার্শ্বিকতাকে উপেক্ষা করা একজন কবির শোভা পায় না। যেন সেই দায়িত্ব, সেই গরজ নিয়েই আলোচ্য গ্রন্থে একাধিক বিষয়ে কলম ধরেছেন কবি - যার মধ্যে মূলত আছে স্বদেশ, ছিন্নমূলের দু:খ দুর্দশা, অশান্ত পাহাড়ের গ্লানিময় বাস্তব ইত্যাদি। ৬৪ পৃষ্ঠার ভূমিকাহীন গ্রন্থের ৫৬ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে যে ৫৬টি কবিতা তার অধিকাংশই এই বিষয়ভাবনায়...

কৈশোরের পুজো ও অনামি, অনামা নদীনামা

পুজো মানেই তো স্মৃতিচারণ। মানুষের বয়স যত বাড়ে ততই পুজোর বিবর্তন দেখে দেখে কৈশোরাভিমুখী হয় মন। ফেলে আসা দিন সততই সুখকর। তা সে যতই কঠিন হোক না কেন। কাঠিন্যও যে সদাই ঊর্ধ্বমুখী। পুরোনো কাঠিন্যকেই তাই অগ্রাধিকার দেয় মানুষ। একসময় ওটা আর কাঠিন্য হয়ে না থেকে এক প্রাপ্তি হিসেবে জায়গা করে নেয় অন্তরে। সেই যে কথায় আছে - Failure is the pillar of success. অর্থাৎ এক সময় যা ছিল অপ্রাপ্তি, পরবর্তীতে তাই যেন মনে হয় প্রাপ্তিসোপানের প্রথম ধাপ। এটা এক ধরনের প্রবৃত্তিগত অবস্থান। মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে পুজো দেখার ঝক্কিও তাই আজকের চারচাকার গাড়ি করে পুজো দেখার আরামের চাইতে ভালো বলে বোধ হয়। আমরা যারা ষাট থেকে আশির দশকে জন্মেছি, যারা গ্রাম এবং শহরের পুজোর তারতম্য উপলব্ধি করেছি, যারা সাত্ত্বিকতার অবনমন ও তামসিকতার বাড়বাড়ন্ত দেখে আসছি - আমাদের মননে অতীতের পুজোর গরিবি আয়োজনই ছিল অপেক্ষাকৃত সুখকর। সেই পুজোয় আড়ম্বর হয়তো ছিল না কিন্তু ভক্তি ছিল, পুণ্যার্জনের বাসনা ছিল। অনুভব যত বাড়ছে অনুভূতির পারদও বাড়ছে ততই। এহ বাহ্য। আমাদের কাশফুল ছিল না, ছিল শিউলি বা শেফালি। ছিল ভোরের শিশিরকণায় স্নাত শিউলি কুড়োনোর আনন্দ। চর্চায়...

আমাদের মানুষ - 'ভূপেন-দা’

মহাভারতের চরিত্র ভীষ্মকে আমরা ‘ গঙ্গাপুত্র ’ বলে জানি। কিন্তু আমাদের এই রাজ্যের একজন রক্তমাংসের মানুষও যে সুরের লালিত্যে উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে গেছেন - ‘ গঙ্গা আমার মা …’ তা কি আমরা ভুলতে পারি ? বস্তুত আমরা যারা ষাট থেকে আশির দশকে জন্মেছি , আমাদের কৈশোর যৌবনে এই গান আমাদের বুকে লহর তুলত , আমাদের মননে গুঞ্জন তুলত নিরন্তর। দেশের গুটিকয় নদের মধ্যে একটি বয়ে চলেছে আমাদের রাজ্যের বুক চিরে। এই মহাবাহুর পাড়ের সুসন্তান  ভূপেন হাজরিকা গেয়েছেন - ‘ গঙ্গা আমার মা , পদ্মা আমার মা। আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা মেঘনা যমুনা। একই আকাশ , একই বাতাস - এক হৃদয়ের একই তো শ্বাস। দোয়েল-কোয়েল পাখির ঠোঁটে একই মূর্ছনা … । ’ গানের কথা যেমন , তেমনি সুর আর স্বরের মাধুর্যে এই গান জায়গা করে নিয়েছিল এবং আজও নেয় এপার ওপারের বাঙালি-হৃদয়। অসম-বাংলার গ্রামে শহরে প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে এক বিশ্বজনীনতার আবহ গড়ে তুলেছিল এই গান। ভূপেন হাজরিকার নাম তখন আমাদের মুখে মুখে। পরবর্তীতে ভাষা-ধর্মের মেলবন্ধনে তাঁর অবদান আমরা জেনেছি। জেনেছি ভূপেন-দা একান্তই ‘ আমাদের মানুষ ’ । তাঁর গান , তাঁর জীবনধারা আমাদের বাধ্য করেছে সংকীর্ণতার গণ্ডিকে...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...

‘স্রোত - ত্রিপুরার উপন্যাস সংখ্যা’ বিষয়ভিত্তিক এক উল্লেখযোগ্য সম্পাদনা গ্রন্থ

চর্যাপদ যুগ থেকেই বাংলা সাহিত্যে ত্রিপুরার অবস্থান সুস্পষ্ট। রাজন্য আমলে তা বিকশিত হয়েছে নিরন্তর। পরবর্তীতে রবীন্দ্র-সান্নিধ্যে গরিমান্বিত হয়েছে এই পথচলা। একটি ভাষাসাহিত্যের বয়োবৃদ্ধিতে লেগে যায় বহু কাল। সে ইতিহাস বড়ই সুখপাঠ্য। পদ, কাব্য, গদ্য থেকে শুরু করে কাহিনি ও উপন্যাসের সৃষ্টিকথা একদিকে যেমন অবশ্যজ্ঞাতব্য, অন্যদিকে এই ধারাবাহিকতার ইতিহাস নিজেই হয়ে ওঠে ভাষাসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। সেই সম্পদের পুনরাবলোকনের লক্ষ্যেই সম্প্রতি স্রোত সাহিত্য পরিবারের উদ্যোগে এবং কবি, লেখক, সম্পাদক গোবিন্দ ধরের সম্পাদনায় সংস্থার রজত জয়ন্তী বর্ষে পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কুমারঘাট থেকে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে পাঁচশতাধিক পৃষ্ঠার সম্পাদনা গ্রন্থ - ‘স্রোত - ত্রিপুরার উপন্যাস সংখ্যা’। ত্রিপুরা রাজ্যের উপন্যাস সৃষ্টির গোড়ার কথায় ‘স্রোতকথা’ শীর্ষক অবতরণিকায় রয়েছে সেই ইতিহাসকথা - ‘প্রায় শতবর্ষ আগে একটি উপন্যাস ছাপা হয়েছিল ত্রিপুরায়, এই কথা ভাবলেই ভালো লাগে। ….’রবি’ পত্রিকা সে দায়িত্ব নিয়ে ত্রিপুরাকে গৌরবান্বিত করল। আজও ‘রবি’র এই দায়িত্ব আমাদের সময়কে আলোকিত করে। ...১৮৯০ সালে ত্রিপুরার প্রথম লিটল ম্যাগাজিন ‘ত্রিপুর...

একবার মৌমাছি হয়ে দেখি, হাসনুহানা ফুটেছে কেমন রাতের সরণিতে… সবুজ কবিতার কাব্যগ্রন্থ ‘আঁচল’

ডুয়ার্স থেকে জাটিঙ্গা , বরাকের পথ বেয়ে কবিতার ধারা বয়ে এসেছে যেন । তিস্তাপারের তরুণ কবি সায়ন্তন ধরের প্রথম কবিতার বই ‘ আঁচল ’ নানা রঙের এক কবিতা - কোলাজ , যে কোলাজে সবুজ হয়ে উঠেছে মণি মরকতের মতো উজ্জ্বল । উদ্ভিদবিদ কবি উত্তরপূর্বে , ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কর্মরত । স্বভাবতই বিজ্ঞান , ভাষা , মাতৃভাষা , ফেলে আসা দিনের স্মৃতি রোমন্থন , শান্তি - সম্প্রীতির অন্বেষণ , বন্ধুকৃত্য আদি বিষয়কে কবিতায় ধরে রাখলেও সায়ন্তন যেন গাছগাছালি , ফুল ফল , মাটি , অরণ্য আর প্রকৃতির কাছেই আত্ম - সমর্পিত । প্রকৃতির রূপমাধুর্য , সবুজ , অরণ্য ও নদী , তিস্তা , ডুয়ার্স থেক সান্দাক্ ‌ ফু , মেঘালয় থেকে সুন্দরবন , পাহাড় , বরফ , ডিমা হাসাও থেকে জাটিঙ্গা হয়ে বরাক পর্যন্ত প্রকৃতির নেশায় বিভোর কবির এই কাব্যগ্রন্থটি যেন প্রকৃতির আঁচলে বসে লেখা এক প্রকৃতিবন্দনা । স্বাভাবিক অর্থেই এক সার্থক গ্রন্থনাম । প্রকৃতি ছোঁয়া পেতে কবি তাই ছুটে বেড়ান এদিক ওদিক । ট্রেনের কামরায় জানালার পাশে বসে তিনি লিখেন রূপগাথা - চলন্ত ট্রেনের জানালা যেন এক চলন্ত লাইব্রেরি … পাতা ...