Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2024

উত্তর-পূর্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সাহিত্য পত্রিকা - ‘মৈত্রী’ শারদীয় সংখ্যা

অসম তথা উত্তরপূর্ব থেকে যে ক’টি শারদীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয় - তার মধ্যে, বলতেই হয় শৈলশহর হাফলং থেকে প্রকাশিত ‘মৈত্রী’ দ্বিভাষিক পত্রিকাটি ধারে ও ভারে নিজস্ব একটি স্থান করে নিতে পেরেছে। অথচ সবে সপ্তম সংখ্যা প্রকাশিত হল এই পত্রিকার। প্রাকৃতিক পরিবেশে নৈসর্গিক সৌন্দর্যসমন্বিত ডিমা হাসাও জেলা ভিন্ন ভাষাভাষীদের এক অপূর্ব মিলনস্থল। ভাষাগত পরিসংখ্যান অনুযায়ী দ্বিতীয় ভাষিক সম্প্রদায় বাঙালিদের একটি শারদীয় পত্রিকা একদিকে যেমন অপরিহার্য অন্যদিকে এক কঠিন প্রয়াসও বটে। বিগত সাতটি বছর ধরে এই কাজটিই করে চলেছেন ডিমা হাসাও সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদের সদস্যরা। উত্তর কাছাড় বা অধুনা ডিমা হাসাওয়ে বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা বহু কাল ধরেই নন্দিত ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বন্দিত হয়ে এসেছে। তবু আজকের প্রত্যাহ্বানের যুগে একটি পত্রিকা প্রকাশ - তাও যথেষ্ট গুণমানসমৃদ্ধ - এক প্রয়াসসাধ্য কর্মযজ্ঞ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যথারীতি এবারের সপ্তম সংখ্যার প্রকাশ হয়েছে সময় মতোই। ১/৪ ডিমাই সাইজের পত্রিকায় ৮৬ পৃষ্ঠার লেখালেখি অর্থে এক সম্ভারই বটে। পত্রিকা প্রকাশে সম্পাদকীয় দপ্তরের তৎপরতা ও প্রয়াস তাই এক কথায় গরজ ও মননশীলতার এক উ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

কবিতায় অতলান্ত চেতনার নির্যাস - ‘বীজঘুম’

প্রথম ব্লার্বে বিশিষ্ট গল্পকার মিথিলেশ ভট্টাচার্য লিখছেন - ‘...কবিতার বহিরঙ্গ রূপের পরিবর্তে অমিতাভ’র সবিশেষ ঝোঁক অন্তরঙ্গ রূপের দিকে। তাঁর রচিত কবিতায় মানব জীবনের অতলান্ত ব্যাপ্ততার ছবি ফুটে ওঠে...। চেতনার গভীরতম স্তর থেকে উঠে আসে তাঁর জীবন-অভিজ্ঞতার উপলব্ধির কথা...’। ভূমিকায় তিনিই আবার লিখছেন - ‘...শ্রমবিমুখ হলে যেমন লেখক হওয়া যায় না, কবি হওয়া তো ততোধিক কঠিন। অমিতাভ সেনগুপ্তের নিবিড় ও নিভৃত কবিতা চর্চা এক অসাধারণ শ্রম ও মননলব্ধ প্রয়াস...’।   হুবহু এই আবহে বছর দুয়েক আগে প্রকাশিত হয়েছিল কবি অমিতাভ সেনগুপ্তের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বীজঘুম’। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কবিতা গল্প ও অন্যান্য লেখালেখির সঙ্গে তিনি নিরন্তর যুক্ত করে রেখেছেন নিজেকে । সুতরাং বলাই যায় বহু দেরি হয়েছে তাঁর ববিতার বই বেরোতে বেরোতে। এর বহু আগে থেকেই এদিকে ওদিকে তাঁর অজস্র কবিতার স্বাদ গ্রহণে ঋদ্ধ হয়েছেন পাঠকমহল। অত্যন্ত সার্থকনামা এই গ্রন্থে আছে ৪৯টি ভিন্ন স্বাদের কবিতা। প্রতিটি কবিতাই আপন মাহাত্ম্যে ভাস্বর। অসংখ্য কবিতা দাগ রেখে যায় পাঠকের অন্তরে। বোধের উঠোন মাড়িয়ে আসা পঙ্‌ক্তিসমূহ জাত চিনিয়ে দেয় কবির। অমিতাভের বহু কবি...

জান্তব উল্লাস

এভাবে কি আর পালটে ফেলা যায় মানচিত্র ? সেই তো আকাশ, নদী-পথ-প্রান্তর কেন তবে এত শবের উৎসব, জান্তব উল্লাস ? বারুদের ধোঁয়ায় যদি ছেয়ে যায় আকাশ স্তব্ধ হয় যদি উত্তরপুরুষ, শ্বাস-প্রশ্বাস - কে নেবে তার দায়, যদি মাইলস্টোনে লেখা থাকে বিশ্বাসঘাতকের পরিচয়, তবে ভাবীকালের পাতায় লেখা হবে নতুন ইতিহাস।   তার চেয়ে, হে কাপুরুষ বাহক হও পুনর্জন্মের ইতিহাস আর কৃতজ্ঞতার।

স্বপ্ন-সফর

রোজ রাতে পথ হাঁটি আমি, হেঁটেই চলি সড়ক থেকে গলিপথ ধরে। পথে দেখা হয় কত চেনা অচেনা অবয়ব মাঝেমাঝে কিছু কথা, কখনো নীরবে পাশ কাটিয়ে চলে যাই - কোথা যাই ? কিছু পেতে চাই আমি, কারো দেখা কিংবা বলতে চাই কিছু কথা, অবশিষ্ট আছে যা ।   চেনা মানুষের সাথে - দেরি হয় পথে ভালো থাকা না থাকা নিয়ে দু’চার কথা কিছু অতীতচারণ, কিছু নির্মোহ উচ্চারণ। সময় বয়ে যায় দ্রুত, আমি সামনে তাকাই দেরি হয়ে গেল, বড় দেরি হয়ে গেল পথ এখনও বাকি, সামনে বাড়াই পা কেউ যেন ইশারা করে গেল - ওদিকে ... দিশেহারা আমি ছুটে চলি দিগ্‌বিদি কে।   আমি কথা ভুলে যাই অতঃপর। কী বলব ? আসলে কথা কিছুই ছিল না। কিংবা ছিল যা হারিয়ে গেছে সব । আছে শুধু ইচ্ছে দুর্নিবার   শুধু আরো একবার, হতে পারে শেষবার… আমি দেখতে চাই সেই মুখ, যে মুখ আমাকে নিঃস্ব করে গেছে ক ত বার অথচ… রোজ রাতে স্বপ্নে আসে বারবার।

নক্ষত্র পথে

এ ঘোর অমানিশা রাতে পথ চলি নক্ষত্র আলোকে। আকাশে বিনিদ্র তারারা চলে সাথে সাথে।     এ জীবন চার-আনা সুখের জীবন। দু’পায়ে দাঁড়ানোর কসরতেই সারা।   ফুরিয়ে যাবার ক্ষণে উপরে তাকাই অপলক কোন নক্ষত্রের পাশে ঠাঁই হবে একদিন ? এই পৃথিবীর কেউ ফেলবে না একফোঁটা চোখের জল কোনোদিন।   দ্বারে কেউ দাঁড়াবে এসে হাতে ফরমান সব কাজ রবে পড়ে অকুলান বলবে না কেউ - কোথা যাও ‘তিষ্ঠ ক্ষণকাল’, জন্ম যদি এই পৃথিবীতে রেখে যাও হিসেব, কী দিয়েছ আমাদের ?   নিঃস্ব, রিক্ত আমি ছাপহীন আগাছা ধার দেনায় আকণ্ঠ যাপন বেলায় লিখেছি যতটা মুছেছি তার বেশি রেখে যেতে পারিনি কোনো দস্তাবেজ করে গেছি শুধু কসরত, পারিনি লিখতে একটিও কবিতা কিংবা আপন জীবন গাথা।   নাহয় এভাবেই কেউ ধারণ করুক আমাকে ব্যর্থ পথিকের শিরোপায়, ‘পরাজিত’ অভিধায়।

কেন আস বারবার

কবিতা লিখতে গেলেই কেন আস রোজ রোজ গেছই যদি চলে ফেরা - পথ ধরে ? কত কথা , কত ছবি ওঠে ফুটে সেসবই তো রাখতে চাই ধরে কবিতার পঙ্ ‌ ক্তি ধরে ধরে কেন কর তবে সব তছনছ ?   কেন এক - একটি অনিন্দ্য সকাল অনেকটি সন্ধ্যা বিকাল অগুনতি রাত - মায়াবী পল পল এভাবে ছন্নছাড়া করে দিতে আসো ? আমাকে বারবার ছিন্ন করে দিতেই কি এসেছিলে কাছে, আস আজও সকাল সন্ধ্যা কবিতা-যাপন বেলায়, রাতের মায়া মোহে বিনিদ্র জাগরণে কিংবা স্বপ্ন আবেশে, উছল আবেগে ?

অনন্ত ট্রাপিজ

শেষেও নাকি ফিরে আসে ফের শুরুর বেলা অবিকল , নাহলে এগোতে এগোতে কেন ফিরে দেখা শুধু নিরন্তর ? যতটাই এগোই , পিছিয়ে যেন যেতে থাকি ততটাই । এই অনন্ত ট্রাপিজ - এই কি তবে জীবনের মানে ? শূন্য থেকে শূন্যই যার অতীত কিংবা ভবিতব্য ? এসব শব্দের আয়ুষ্কাল মাত্র একটি জীবন - এই সারসত্য কে জানে , কেই বা বোঝে ? যারা জানে তারা আছে অন্য কোথা , অন্য কোনোখানে ।

এই সুখ ও শোক

অরণ্যময় কিংবা মাঠময় আলছুট জল সে গত হয়েছে হয়তো গতজন্মে গত হয়েছে বহু কথা , বহু বিস্মৃত যাপন তবু যা আছে যত কুড়োনো সুখ ও শোক তাকেই খুচরো পয়সার মতো ছড়িয়ে দিই দিনযাপনে অথবা নির্ঘুম বিছানায় স্বপ্ন দেখার আগে। এরপর স্বপ্নময় যাপন জুড়ে কত আমি , কত সে , কত সখা রাতভর। এ আলসেমি আমার ললাটলিখন এ ফিরে দেখা দিনভর - এই তো স্ব-ভাবে জননী জন্মভূমি আর কিছু সুখমুখ। এ সং-সার যাপন বিধিলিপি শুধু যেন কুড়িয়ে পাওয়া যখের ধনের মতো উপরি পাওনা। মিশে আছি , মিলে আছি এই সঙ্গসুখ এও যেন মনে হয় গতজন্মের শত পুণ্য ফল। লেখা ছিল অগোচরে। এই ছিল সারসত্য। বাকি সব সারস্বত তালগোল মায়ার বাঁধন , মিছে মায়া পল পল , বুক জুড়ে বৃথা সব আলেয়ার আলোড়ন বোধের উঠোনে তবু বৃথা আয়োজন।  

জন্মকথা মৃত্যুকথা

কে আর জানে সব আয়াসলব্ধ জন্মকথা একদিন নদীজলে ভেসে যায় অগোচরে অলক্ষিত জলবিন্দুর মতো উপেক্ষিত লহরে । এরপর জীবনের পথে শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা স্বেদবিন্দু নি : সরণের পালা । জন্মকথা সব কবে আর হয়েছে লেখা পৃথিবীর বুকে সয়েছে যে সেই জানে বেদনার পরিভাষা । প্রাণ থেকে প্রাণের জঠর যাপন বেলা কে আর পেরেছে তারে রাখতে ধরে কবিতার শরীরে ? যেখানে কবিতা নেই সেখানে কথা আছে শুধু নিভৃত গোচরে আর , সেই কথা বয়ে চলে কেউ অনন্ত সময়ের অলিখিত বয়ানপথে আঁকড়ে ধরে নতুনের নব আঙ্গিকে । এভাবেই বেঁচে থাকা , এভাবেই একদিন ফের লেখা হয় মৃত্যুকথা চলমান সময়ের নিক্তি ধরে , যুগে যুগে কালে কালে ঠাঁই পেতে ইতিহাসে … অন্তরালে … ।

আঁধার পেরিয়ে

কলঙ্ক থেকে ভক্তিমার্গ পথে যেতে যতই আসুক বিলম্বিত সন্ধ্যাসুর তবু যায় কি চলে সেইসব পুরোটাই বিস্মৃতির অতল আঁধারে ? এসব অলীক অসম্ভব জেনেও তবু আবছা আঁধারে নতমস্তক হই করুণার ভিক্ষাপাত্র হাতে , যদি হতে পারি বীতশোক , পারি যদি সব অবাঞ্ছিত কথাকে দায়সারা ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে , যদি পারি অফুরান সব কলঙ্ক কথাকে প্রজ্ঞার মোড়কে বন্দি করে যাপনে এনে দিতে নতুন স্বপ্ন , নতুন পথ , নতুন অঙ্গীকার যদিও অগুনতি স্বপ্ন হয়েছে অসার ।   হোক যত জ্বলন্ত পিলসুজ তলে থাকা বিষণ্ণ পরাভব , নিকষ আঁধার অন্তত একটি স্বপ্ন যে করেই হোক হতেই তো পারে সাকার ।

কথা-মৃত

তার ফিরে যাওয়ার পথে , শীতল বাতাসে যে ভিতরকথা ছিল লেখা , তার নির্যাস ছড়িয়ে পড়েনি হাওয়ায় , লাগেনি পালে বিরুদ্ধ - বাতাসের পরশ - এই ছিল ভুল অন্যথা , লেখা হতো নতুন ইতিহাস ।   সব কথা ইতিহাসে লেখা থাকে না যার বুকের ভেতর কোনো একদিন উতল হাওয়া বয়েছে দামাল , হয়েছে উত্তাল চাপা কান্না হয়ে সেইসব অগুনতি কথা রয়ে গেছে অগোচরে , ছাইচাপা চিরতরে ।   মহুয়া - মাতাল সন্ধ্যা আকাশের নীচে কথার জন্মবাসরে বোবা হয়ে কেটেছে প্রহর কে আর জানে সে কথা , হেঁটে গেছে পথ শুধু বৃথা যাপনে , ধরে হাতে হাত কিছুই হয়নি বলা - মৃত ইতিহাস ।   পথ শেষে ঝরে পড়া বৃষ্টিদানার মতো অঝোরে পড়েছে ঝরে হৃদয় - মাঝারে মুক্তোদানার মতো ঝলমলে আখর কথা ছাই হয়ে ভেসে গেছে চিতাজল প্লাবনে আদৌ রাখেনি মনে , কেউ কোনো কালে । 

বিন্দু থেকে বিসর্গ

এইসব অগোছালো সংসার খেলা কার ভাগে আছে লেখা কতটুকু আয়ু বিন্দু থেকে বিসর্গ সবই অজানা বক্ষপিঞ্জরে আছে , সূক্ষ্ম প্রাণবায়ু ।   এই নিয়ে দিন গোনা , পথ চলা সার সাপ - সিঁড়ি হিজিবিজি কথা কাটাকুটি ফুরোতে না ফুরোতেই প্রাণপাখি ওড়ে আগুপিছু বৃথা সব - দাবার ঘুটি ।   অফুরান কথাসুখ মিছেই বিষাদ মিছে শুধু মেলে ধরা জীবন খাতা বৃথা মায়া , সময়ের বৃথাই হিসেব শেষ হবে - বুজে যাবে চোখের পাতা ।   সবই তো আছে লেখা নখ - দর্পণে অপাঠ্য তবু তা শুধু আছে পিছুটান মানব জনম কথা বিচিত্র বাখান পরপারে চোখ রেখে জীবনের গান ।

অরণ্য যাপন

উত্তরের সেই একফালি খোলা বাতায়ন শার্সিবিহীন , গরাদবিহীন । নিমগ্ন পাঠের ফাঁকে একচিলতে অরণ্যযাপন আজো আনে প্রকৃতি প্রত্যয় , আর নিরালা সবুজ - যে একান্তে বসেছে এসে অধিকারে , দিয়েছে সঞ্জীবনী মন্ত্রসুধা জীবন থেকে মহাজীবনের পথে , অঙ্গীকারে ।   কাঞ্চনহারা কামিনী আর কুল হারা বকুলের সমাহারে একদিন কেঁপেছিল ভিত যে দুরন্ত যৌবনের সেই পথে লব্ধ জীবনপাঠ রেখে গেছে নির্মোহ পরিক্রমার সারসত্য ।   সেই সবুজ গন্ধে আজও হয়ে উঠি মাতোয়ারা যখন কেউ অরণ্য হয়ে ওঠে , সামনে দাঁড়িয়ে শোনায় অরণ্যপথের থেকে বেয়ে আসা যাপিত জীবনের অনন্য পাঁচালি । আমি মুঠোভরে পায়ে রাখি তার গুচ্ছ পতঙ্গমথিত অতসীর ডালি ।

বাতিঘর অভিসারে

কেন যে আমি পুড়ে মরি নিশিদিন একটুকরো চাঁদ আজ বাতিঘর হয়ে চরাচর জুড়ে ছড়িয়ে রেখেছে যে জ্যোৎস্না আমি সেই জ্যোৎস্নাভাসি পথিক পরজন আমি আপাদমস্তক অবগাহনে সময়ের যাবতীয় সীমানা পেরিয়ে হয়েছি চিরনিন্দিত এক ভ্রান্ত পথিক গ্রহণ লেগেছে আমার নন্দিত সত্তায় ।   তবু আমি রোজ রাত্তিরে চুপিসারে বাতিঘর অভিসারে শরীর জুড়োই জ্যোৎস্না মেখে এ আমার শেষ পরিণতি , একদিন চাঁদের কলঙ্ক মেখে গায়ে পাড়ি দেব বাতিঘর অভিমুখে শেষ যাত্রা পথে পথিকপ্রবর আমি মিশে যাব ধূলিপথ ধরে সেইখানে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে , বাড়ায়ে দুটি হাত হাসি মুখ বিভঙ্গে - আমার বাতিঘর ।

চাঁদের হাসি

আলতো ঘুমের আবেশে আবছা আঁধার , আবছা আলোতে শুনেছি চাঁদের হাসি । চাঁদ এসে ছলকে পড়েছে আমার দখিন বাতায়ন ধরে । এ কী ভ্রম ? ভেঙেছে ঘুম , সত্যিই সে এসেছে … তাঁর হাসির ছটায় বান ডেকেছে জ্যোৎস্না ।   অভিমানী আমি আহত আপাদমস্তক যাব কি যাব না , এই আলোতে আমি … অন্ধ হয়েছি আচমকা একদিন । জ্যোৎস্না আমাকে টানছে ক্রমেই আমি অসহায় , আবার যাবই ডুবে সেই নীলাভ হাসির রূপমাধুরী মেখে । ব্রাত্য মানুষের অধিকারে আবার হব খ্যাপা , আবার হব পাগল , হোক না সে যতই অনধিকার যতই থাকুক হাসিটুকু জুড়ে নতুন সূর্যের ধার নেওয়া অধিকার ।

অষ্ট প্রহর সংকীর্তন

১ প্রথম প্রহর   রূপ বদলায় কথা বেঁচে আছি আরো একটি দিন আড়মোড়া ভেঙে গাত্রদাহে দেখি তাকিয়ে আপাদমস্তক সব কথা নিজের আওতায় থাকে না অধিকার বাঁধা কারো হাতে তাঁর ইচ্ছেয় বেঁচে থাকা রাতভর বয়সের গ্রাফ কোনমুখী সে বোধ ব্যক্তিগত।   ২ দ্বিতীয় প্রহর   পেয়ালা সঞ্জাত ধোঁয়ায় প্রথম চুমুক চনমনে মন চলে বেহিসেবি পথে গত ও আগামীর চর্বিতচর্বণে মগ্ন কবি, দিন লিখি দিন খাই তবু নির্বিকারে আকাশে ছড়াই ছাই টুকে রাখি নির্ঘণ্ট সারণি নোটপ্যাডে ধরে রাখি নির্বিকল্প কল্পকথার গ্রন্থিত, অলিখিত স্বাচ্ছন্দ্য।   ৩ তৃতীয় প্রহর   খোলস ছেড়ে জেগে উঠি তাড়নায় অন্নচিন্তা চমৎকারা ক্ষণ ক্ষণে বাড়াই পা অযাচিত সংস্থান পথে কে যেন ঘোর বাস্তবের পরাকাষ্ঠা নিয়ে চালায় পা সমান্তরালে আমি ছুটে চলি দূরে দূরান্তে বাঁধা রাখি শ্রম বাঁধা রাখি মন তাহাদের তরে শরণাগত দীনার্তে।   ৪ চতুর্থ প্রহর   তপ্ত দুপুরের অগোছালো বিড়ম্বনা যেন যুবতিবেলার ঋতুপর্ব সৃষ্টিকথা নিয়ে রাখেনি ইচ্ছের দাসখত এ ক্ষণ উড়ন্ত চাকির মতো শুধু ইতস্তত ভেসে বেড়ানোর অনিঃশেষ প্রহর। কোথা আছে একদণ্ড বসে জিরোবার ? স্বস্তিবিহীন আনচান সৃষ্টিকল্পে আকাশমাটির ঘূর্ণিকল্পে...