কোনও দ্বিধা
কিংবা ভয়কে অবলীলায় উড়িয়ে দিয়ে জলকে জল, মাটিকে মাটি কিংবা দেশকে
দেশ (দ্বেষ, দ্যাশ কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্র
নয়) বলতে পারেন যে ক’জন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি, লেখক, সম্পাদক নারায়ণ মোদক। বরাক
উপত্যকার শ্রীভূমি থেকে ২১ মার্চ বিশ্ব কবিতা দিবসে প্রকাশিত হয়েছে বার্ষিক পত্রিকা ‘স্বরিত’-এর সপ্তদশ সংখ্যা। দ্বৈত
সম্পাদনায় নারায়ণ মোদক ও গৌতম চৌধুরী। এবারের বিষয় ছিল প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক
অব্যবস্থা, অত্যাচার, সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিপীড়ন
ইত্যাদি নিয়ে প্রতিবেদন ও সহমর্মিতা ইত্যাদি। স্বভাবতই
এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত। এই নির্ভীক, বলিষ্ঠ পদক্ষেপের উদ্যোগ কতটা সফল হয়েছে, কতটা সহমর্মিতা
বর্ষিত হল, কতটা প্রতিবাদ স্বরিত হল তার এক নির্মোহ বিশ্লেষণ
সংখ্যাটির আলোচনার এক অমোঘ অনুষঙ্গ।
ভূমিকার
আধারে ‘এ সংখ্যার বিষয়ে আলোকপাত’ করতে গিয়ে অন্যতম সম্পাদক নারায়ণ মোদক লিখছেন - ‘…আমাদের সমাজে একদল নিজেকে মানবতাবাদী সাজিয়ে নিরাপদ দূরত্বে বসে সমাজ এবং সরকারের
সব রকম সুবিধা ভোগ করে বিজ্ঞতার সাথে বলতে থাকেন সারা বিশ্বের যেখানেই সংখ্যালঘু
আছে সেখানেই তারা অত্যাচারিত। আমাদের দেশের দিকে তাকান না, সারা পৃথিবীর তুলনায়
ভারতবর্ষের সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ ব্যাবসায়, সরকারি বেসরকারি চাকরিতে,
শিক্ষায়, রাজনীতিতে, সরকারি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে। আমরা যে যে রাজনৈতিক মতবাদেই
বিশ্বাসী হই না কেন, বাঙালি হিন্দুর সমস্যা নিয়ে বলতে গেলেই ভোট রাজনীতি চুপিসারে
মনের গহিনে এসে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে...। ...এবারের এই সংখ্যাটি আমরা নিপীড়িত,
নির্যাতিত বাঙালি হিন্দুদের নিয়ে, তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা জানানোর মাধ্যমে,
তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সবাইকে বলা হয়েছিল লেখা দেবার জন্য। কেউ কেউ বিষয়ের
উপর লেখা দিয়েছেন, অন্যরা মৌলিক লেখা দিয়েছেন, ঠিক আছে। তবে সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয়
তখন সেদিকে দৃষ্টি দেবার অনুরোধ রইল...।’
অর্থাৎ
বিষয়ের উপর লেখা দিয়েছেন ‘কেউ কেউ’ মাত্র। মোদ্দা কথা সার্থক হয়নি সম্পাদকের এই
প্রচেষ্টা। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে - কেন ? বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও
যাঁরা বিষয়ের উপর লিখলেন না তাঁদের সীমাবদ্ধতা কোথায় ? বিষয়টি কি মিথ্যা ছিল?
কাল্পনিক ছিল? কবি, লেখকদের কী সেই দ্বিধা, যা তাঁদের স্বজন,
স্বধর্মী, স্বভাষীদের দু:খ দুর্দশা এসব নিয়ে লিখতে দেয় না?
১০৯ পৃষ্ঠার
পত্রিকায় রয়েছে ৬৯টি কবিতা ও ৮টি গদ্য। এর মধ্যে মাত্র ১১টি কবিতা ও ৩টি গদ্য
বিষয়ভিত্তিক হয়েছে। এর বাইরে ২টি কবিতায় কিছুটা ছোঁয়া রয়েছে বিষয়ের। নানা স্বাদের
গদ্যে পদ্যে এসেছে প্রেম, প্রকৃতি, অনুভব, সমসাময়িক ঘটনাবলি, মনীষীদের নিয়ে।
অনেকেই লিখেছেন একাধিক রচনা - গদ্যে, পদ্যে। সব মিলিয়ে যাঁদের লেখালেখিতে ভরাট হল
পৃষ্ঠা তাঁরা হলেন - গদ্যে সুবল চক্রবর্তী, সন্তোষ কুমার দত্ত, মীনাক্ষী চক্রবর্তী
সোম, ড. গীতা সাহা, বিনোদলাল চক্রবর্তী, অনিন্দিতা চক্রবর্তী, মাশুক আহমদ, ও মাধব
ঘোষ। কবিতায় রয়েছেন - ঋতা চন্দ, সুবল চক্রবর্তী, সুদীপ ভট্টাচার্য, শিখা দাশগুপ্ত,
চান্দ্রেয়ী দেব, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী, গোপালচন্দ্র দাস, বিমলেন্দু চক্রবর্তী, ছন্দা
দাম, প্রতিমা শুক্লবৈদ্য, সৌরভ চক্রবর্তী, রঞ্জিতা চক্রবর্তী, অভিষেক সেন, সমীরণ
চক্রবর্তী, সুমি দাস, গীতাঞ্জলী রায়, পরিমল কর্মকার, জহর দেবনাথ, শতদল আচার্য,
অনুপকুমার বণিক, পি কে রায়, সুস্মিতা দাস, গৌতম চৌধুরী, শিপ্রা শর্মা, জয়শ্রী
ভট্টাচার্য, শঙ্করী চক্রবর্তী, আশুতোষ দাস, রাজকুমার ধর, শিবানী গুপ্ত, সুমিতা
গোস্বামী, জয়ন্তী নাথ, অরূপকুমার ভূঞাঁ, জয়িতা চক্রবর্তী, পিঙ্কু চন্দ, ড. শমিতা
ভট্টাচার্য, বাহারুল ইসলাম মজুমদার, রতন চন্দ, নিবারণ নাথ, দেবলীনা সেনগুপ্ত,
কমলিকা মজুমদার, পার্থ বসু, গীতা মুখার্জি, দুর্গেশ দাস, প্রদীপ কুমার সেন, রাণা
চক্রবর্তী, অনামিকা শর্মা, শৈলেন দাস, ধ্রুবজ্যোতি দাস, মাধব ঘোষ, নারায়ণ মোদক ও
সুচরিতা সিংহ (বেবী)।
পত্রিকার কাগজের মান, ছাপা, অক্ষরবিন্যাস যথাযথ। প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে গৌতম চক্রবর্তী (ভোলা)। কিছু বানান রয়ে গেছে সেকেলে। সুচরিতার কবিতার শিরোনামে এবং শরীরে ‘হওক’ শব্দটি বাংলা অভিধানে নেই এবং শব্দটি ঊর্ধ্বকমার মধ্যেও নয়। সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘কবি ও অধ্যাপক জন্মজিৎ রায় এবং কবি ও সাংবাদিক জ্যোতর্ময় রায়’কে। সব মিলিয়ে ‘বিষয়-ভিত্তিক’ একটি ‘বিষয়-বৈচিত্রময়’ পত্রিকা সংখ্যা - ‘স্বরিত’।
পত্রিকার কাগজের মান, ছাপা, অক্ষরবিন্যাস যথাযথ। প্রাসঙ্গিক প্রচ্ছদের সৌজন্যে গৌতম চক্রবর্তী (ভোলা)। কিছু বানান রয়ে গেছে সেকেলে। সুচরিতার কবিতার শিরোনামে এবং শরীরে ‘হওক’ শব্দটি বাংলা অভিধানে নেই এবং শব্দটি ঊর্ধ্বকমার মধ্যেও নয়। সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘কবি ও অধ্যাপক জন্মজিৎ রায় এবং কবি ও সাংবাদিক জ্যোতর্ময় রায়’কে। সব মিলিয়ে ‘বিষয়-ভিত্তিক’ একটি ‘বিষয়-বৈচিত্রময়’ পত্রিকা সংখ্যা - ‘স্বরিত’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
মূল্য - ১০০ টাকা
যোগাযোগ - ৯৪৩৫০৭৬০৬৯
Comments
Post a Comment