Skip to main content

‘যদি ছুঁতে পারতাম মাথার উপরের খোলা আকাশটাকে…’ আকাশছোঁয়া অনুভব আর অভিমানে ভরপুর - ‘রোদের চিঠি’


এই বয়সে এতটা অনুভব ? অনুভূতির এত সূক্ষ্ম পর্যালোচনা ? সামনে পড়ে রয়েছে এক দীর্ঘ কবি-জীবন। কবি চান্দ্রেয়ী দেব তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘রোদের চিঠি’তে পাতার পর পাতা জুড়ে অনুভবের যে ফিরিস্তি দিয়েছেন কবিতায় কবিতায় তা থেকে একটি কথাই স্পষ্ট যে আখেরে লম্বা রেসের ঘোড়া হওয়ার এক স্পষ্ট ঘোষণা হয়েই গেল এই চেনা কবিতাবিশ্বে। পৃথিবীর বুকে বোধবুদ্ধি জন্মাবার পর যে সামান্য সময়টুকু কবি অতিক্রম করেছেন তাতেই ভরে উঠেছে তাঁর অনুভূতির ভাণ্ডার। জীবন্ত অতীত আর সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের মাঝখানে একাকী দাঁড়িয়ে একদিকে কবি যেমন লিখতে পারেন -
যদি ছুঁতে পারতাম মাথার উপরের খোলা আকাশটাকে
হাজার রকম প্রশ্নেরা ঘুরপাক খেত
সাদামাটা হৃদয়ের দালান জুড়ে...
...দিনগুলো বড্ড বড্ড ভালো ছিল
আলোয় মোড়ানো কল্পনা ছিল
ভাবনাহীন ছোট্ট জগৎ ছিল
এক নির্ভেজাল শৈশব ছিল। (কবিতা মন যেতে চায়)

তেমনি আবার লিখেন -

একা থাকতে শেখো...
সেখানে তুমি হবে রাজার রাজা
সেখানে তুমি হবে আসমানের পূর্ণিমার চাঁদ
তুমি পৌঁছে যাবে সাফল্যের অন্তিম দোরগোড়ায়
তুমি খুঁজে পাবে শ্রেষ্ঠত্বের নিজ ঠিকানা। (কবিতা - একা হয়ে যাও)
শব্দ, কথা ও গল্পদের নিয়ে কবি সাজিয়েছেন তাঁর একের পর এক কবিতা। কবি তাই লিখেন - রাতের প্রহর বিদায় নিলে সকালের আলোয়/ আমির মাঝে জায়গা করে নেওয়া অজস্র শব্দ/ আজও আছে বোবার বেশে শর্বরীর প্রতীক্ষায়...। বলা যায় শব্দের, কথার মোহে আবিষ্ট কবি এমন ইঙ্গিত দিতে সফল যেখানে শব্দের, কথার, কবিতার এক বিশাল জগৎ তাঁর চোখের সামনে নিরন্তর উন্মোচিত হয়ে চলেছে। সেই হিসেবে কবি চান্দ্রেয়ী যে ধীরে ধীরে একটি নির্ধারিত আসনের দিকে ধাবমান তাতে সন্দেহ থাকার কথা নয়। একদিন প্রবীণ কবিদের আসন ছেড়ে দিতেই হয় নবীনের জন্য। সেই দিন কিজানি সমাগত।
৬০ পৃষ্ঠার পাকা বাঁধাই বইয়ের ৫৩ পৃষ্ঠা জুড়ে রয়েছে সমসংখ্যক কবিতা। বহু আধুনিক বানান সন্নিবিষ্ট হলেও বিভ্রাটও রয়ে গেছে বেশ কয়েকটি বানানে। কাগজের মান, ছাপা, অক্ষর বিন্যাস যথাযথ। সব মিলিয়ে নক্ষত্রলোক থেকে যেন এক আশার আলো বয়ে নিয়ে এল ‘রোদের চিঠি’।
বিদ্যুৎ চক্রবর্তী
প্রকাশক - স্কলার পাবলিকেশন, শ্রীভূমি।
মূল্য - ১৫০ টাকা, যোগাযোগ - ৯৯৫৪৫৫৯১৪৯

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

কবির মজলিশ-গাথা

তুষারকান্তি সাহা   জন্ম ১৯৫৭ সাল৷ বাবা প্ৰয়াত নিৰ্মলকান্তি সাহা ও মা অমলা সাহার দ্বিতীয় সন্তান   তুষারকান্তির ৮ বছর বয়সে ছড়া রচনার মাধ্যমে সাহিত্য ভুবনে প্ৰবেশ৷ ‘ ছায়াতরু ’ সাহিত্য পত্ৰিকায় সম্পাদনার হাতেখড়ি হয় কলেজ জীবনে অধ্যয়নকালীন সময়েই৷ পরবৰ্তী জীবনে শিক্ষকতা থেকে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্ৰহণ করেন৷ প্ৰথম ছড়া প্ৰকাশ পায় সাতের দশকে ‘ শুকতারা ’ য়৷ এরপর ‘ দৈনিক যুগশঙ্খ ’ পত্ৰিকার ‘ সবুজের আসর ’, দৈনিক সময়প্ৰবাহ ও অন্যান্য একাধিক কাগজে চলতে থাকে লেখালেখি৷ নিম্ন অসমের সাপটগ্ৰামে জন্ম হলেও বৰ্তমানে গুয়াহাটির স্থায়ী বাসিন্দা তুষারকান্তির এ যাবৎ প্ৰকাশিত গ্ৰন্থের সংখ্যা ছয়টি৷ এগুলো হচ্ছে নগ্ননিৰ্জন পৃথিবী (দ্বৈত কাব্যগ্ৰন্থ) , ভবঘুরের অ্যালবাম (ব্যক্তিগত গদ্য) , একদা বেত্ৰবতীর তীরে (কাব্যগ্ৰন্থ) , প্ৰেমের গদ্যপদ্য (গল্প সংকলন) , জীবনের আশেপাশে (উপন্যাস) এবং শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প সংকলন ‘ গাবুদার কীৰ্তি ’ ৷ এছাড়াও বিভিন্ন পত্ৰপত্ৰিকায় প্ৰকাশিত হয়েছে শিশু কিশোরদের উপযোগী অসংখ্য অগ্ৰন্থিত গল্প৷ রবীন্দ্ৰনাথের বিখ্যাত ছড়া , কবিতা ও একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে লিখেছেন ...

শুদ্ধ বানানচর্চার প্রয়োজনীয়তা ও সচেতনতা

উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসরকে কেউ কেউ অভিহিত করেন তৃতীয় ভুবন বলে , কেউ আবার বলেন ঈশান বাংলা । অনেকেই আবার এই জাতীয় ভুবনায়নকে তীব্র কটাক্ষ করে বলেন - সাহিত্যের কোনও ভুবন হয় না । সাহিত্যকে ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে আটকে রাখা যায় না । কারও ব্যক্তিগত অভিমতের পক্ষে বা বিপক্ষে বলার কিছুই থাকতে পারে না । যে যেমন ভাবতে বা বলতেই পারেন । কিন্তু প্রকৃত অবস্থাটি অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায় বাংলার এই যে অখণ্ড বিশ্বভুবন সেখানে কিন্তু কয়েকটি স্পষ্ট বিভাজন রয়েছে । আঞ্চলিক ভাষায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রটি ধর্তব্যের মধ্যে না আনলেও মান্য বাংলা চর্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই দেখব যে বাংলাদেশের বাংলা ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলার মধ্যে শব্দরূপ তথা গৃহীত বানানের ক্ষেত্রেও বহু তারতম্য রয়েছে । সংলাপ বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী মান্য বাংলারও ভিন্ন ভিন্ন রূপের প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় । যেমন পানি / জল , গোসল / স্নান , নাস্তা / প্রাত : রাশ ইত্যাদি । সেসবের উৎস সন্ধানে না গিয়ে শুধু এটাই বলার যে বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা এক অমোঘ পর্যায় । বিহার / ঝাড়খণ্ডের বাংলা আর নিউইয়র্কের বাংলা এক হলেও সাহিত্যে তা...