Skip to main content

Posts

Showing posts from June, 2025

চিরঞ্জীব হালদারের ‘কবিতাসংগ্রহ ১’ - উদ্‌ঘাটিত কবিতার বর্ণিল স্বরূপ

হে উড়ন্ত আমার প্রেমিকা এ প্রান্তে সবাই রাখাল স্বামীর রুমাল ও নর্তক কুমকুম কলহের পরিপূর্ণ ঘ্রাণ নিতে রাতের নক্ষত্রে আড়ি পাতে অশুদ্ধ জানালায় তখন চাঁদ আলগা বেণীতে ঢেলে দেয় দূরধ্বনি অশোক চেতনা আমি তার অশুদ্ধ বেপথু বর্ণমালা (কবিতা - বর্ণমালার ঠিকানা)। গ্রন্থের শেষ মলাটে কবির সংক্ষিপ্ত পরিচিতির বাইরে দুটি ব্লার্বই খালি। গ্রন্থের নেই কোন সার্বিক ভূমিকা। আসলে এসব কোনও নঞর্থকতা কিংবা কোনও ত্রুটি নয়। একাধিক কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত সব কবিতার ৪৭১ পৃষ্ঠার সংকলন - ‘কবিতাসংগ্রহ ১’-এর বিশালতা নিয়ে ব্লার্বের কীই বা করার থাকে? সূচিপত্রই যেখানে ৭ পৃষ্ঠার সেখানে কয়েক পৃষ্ঠার ভূমিকায়ই বা কত কথা আর লেখা যায়? পেশায় ইঞ্জিনিয়ার কবি চিরঞ্জীব হালদারের আলোচ্য কবিতাসংগ্রহটি হচ্ছে এই ধারার প্রথম পর্ব, যেখানে সন্নিবিষ্ট আছে ১১টি কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া শিরোনামযুক্ত ৪৩২টি কবিতার বাইরে ১১৩ পৃষ্ঠাব্যাপী একের পর এক শিরোনামহীন কবিতা। কবিতার যাত্রাপথ শুরু হয়েছে ১৯৯০-১৯৯৫ এর মধ্যে লেখা কবিতার সমাহার - ‘দু’পায়ের মূর্খ তুমি হাঁটতে শেখো’ গ্রন্থটির অন্তর্গত কবিতা দিয়ে। এরপর ক্রমান্বয়ে আসছে ১৯৯৬-২০০৩ সময়ে প্রকাশিত ‘বাহান্নট...

বিবিধ ভাবনার যৌথ প্রকাশ - মুঠোয় বকুল ফুল

গল্পের জগৎ বড়ই বিচিত্র। কিছু কথা, কিছু ভাবনাকে গদ্যে প্রকাশ করার এই শিল্প এতটাই বিস্তৃত যে সাহিত্যের অন্যতম এই শাখাটি সাহিত্য-ভুবনে আপন মহিমায় সততই মহিমান্বিত। বিস্তৃতি অনুযায়ী গল্পের আবার স্বীকৃত তিনটি ভাগ আছে। বড়গল্প, ছোটগল্প এবং অণুগল্প। বড়গল্প এবং ছোটগল্পে যেখানে ভাবপ্রকাশের বিস্তৃত সুযোগ থাকে সেখানে অণুগল্পের সেই বিস্তৃত পরিসর না থাকায় স্বল্প কথায় ফুটিয়ে তুলতে হয় কাহিনি। তাই অনেকের মতে অণুগল্পেই লেখার মুনশিয়ানার প্রয়োজন সবচাইতে বেশি। গল্পের ভাব, ভাষা, চরিত্র, সংলাপ, বুনোট, উপসংহার সবকিছুকেই সংকুচিত আকারে প্রকাশ করার জন্য প্রকৃতার্থেই প্রয়োজন এক ভিন্নতর মুনশিয়ানা। উত্তরপূর্বের বাংলা সাহিত্যে গল্প অর্থাৎ ছোটগল্পের উপস্থিতি যথেষ্ট উপলব্ধ হলেও অণুগল্প বা অণুগল্পের সংকলন তেমন নেই। আজকের দিনে অণুগল্পে মুনশিয়ানা দেখাতে পারছেন যে ক’জন গল্পকার তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম মঞ্জরী হীরামণি রায়। অজস্র অণুগল্পের স্রষ্টা এই লেখকের রয়েছে অণুগল্পের সংকলনও। মৌপিয়া চৌধুরী নিয়মিত লেখক না হলেও গল্প, কবিতায় তাঁর উপস্থিতি অনস্বীকার্য। স্বাতন্ত্র্য আছে লেখায়। স্বল্পদৈর্ঘের গল্পের সংকলন রয়েছে তাঁরও। সম্প...

ব্যতিক্রমী ধাঁচের গল্প সংকলন - ‘জমিন আসমান’

হাতে এল উত্তর - পূর্বের ত্রিপুরা রাজ্যের বাসিন্দা কবি , গল্পকার , ঔপন্যাসিক দিব্যেন্দু নাথ - এর গল্প সংকলন ‘ জমিন আসমান ’ । মানুষ দিব্যেন্দু এবং তাঁর লেখালেখির সঙ্গে যতটুকু পরিচয় তাতে মাটির সঙ্গে তাঁর আজন্ম হার্দ সম্পর্কের কথা উঠে এসেছে নানাসময়ে , নানা আঙ্গিকে । গ্রামপাহাড়ের মাটি , মানুষ ও তাদের নিত্য দিনের সুখ দুঃখের সতত অংশীদার দিব্যেন্দু । স্বভূম , স্বজাতি থেকে উঠে আসা তৃণমূল স্তরের মানুষদের নিয়েই তাঁর লেখালেখির বিস্তৃত জগৎ । সুতরাং গল্প সংকলনের শিরোনাম যে এমনই সার্থকতায় স্থিরীকৃত হবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কথা নয় । সংকলনের গল্পসমূহ নিয়ে ভূমিকায় বিশিষ্ট কথাকার , ঔপন্যাসিক শ্যামল বৈদ্য লিখছেন - ‘… আজকাল ছোটগল্প নিয়ে অনেক পরীক্ষা - নিরীক্ষা হচ্ছে । কাহিনি ছেড়ে গল্প অন্য খাতে বইছে । কখনও শুধুই মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ বা সামান্য অনুভূতি গল্পের মোড় বদলে দিচ্ছে । ‘ জমিন আসমান ’ গল্প সংকলনে লেখক কাহিনির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু গল্প বারবার নানাদিকে স্বত:স্ফুর্ত বিচরণ করেছে। কাহিনির অবয়ব দিয়েছেন বাউল, চাষি থেকে সাধারণ মানুষ - সবাই আমাদের খুব চেনা স্বজন। সমাজের বি...

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

‘দক্ষিণের বারান্দা’ জুড়ে কবিতার ফুরফুরে হাওয়া

আমার ভাবনা রোজ তোমাতে মিশুক। দ্বিধা নেই খুঁজুক না সে অন্তহীন পথ, হয়তো মিলবে কোথাও মুক্ত আকাশ, অথবা সুবর্ণের সেই দক্ষিণের বারান্দা... তবু আমার একরাশ ভালোবাসা আবারও সেই তোমাতেই মিশুক। ঘটুক না ছন্দ পতন, ভাঙুক না পুরোনো প্রেমের শ্যাওলাযুক্ত প্রাচীর... তবু আমার খাপছাড়া আমি নির্দ্বিধায় তোমাকেই আবার খুঁজুক। (কবিতা - তোমাতে মিশুক)   হাল আমলে কবিতার পঙ্‌ক্তিসংখ্যা কমতে কমতে ১-এ এসে পৌঁছেছে। অর্থাৎ কিনা এক লাইনের কবিতা। মনে যা এল, সেই কথাটি কয়েকটি মাত্র শব্দে অবোধ্য করে পাঠকের দরবারে ছেড়ে দেওয়া। আবার শিরোনামবিহীন, যতিচিহ্নবিহীন কবিতারও প্রাচুর্য - বলা ভালো আতিশয্য। এবার সব দায় পাঠকের - আহা, আহা করার বাইরে যাঁদের গত্যন্তর নেই। এসব অক্ষম বাহাদুরি, লুকোচুরি কিংবা ধাঁধা-ধন্দ নয়, ১০ লাইন থেকে পৃষ্ঠা ছাড়ানো মাত্রই ১৪টি অনবদ্য কবিতার সমাহার - ইপ্সিতা দেব-এর ‘দক্ষিণের বারান্দা’। সহজ, সরল, সপাট শব্দে কীভাবে ভাবনাকে উন্মুক্ত করে কাব্যিক শব্দবন্ধনে বেঁধে রাখতে হয় তা বিলক্ষণ জানেন কবি। তাই প্রতিটি কবিতায় রয়েছে এক অনাবিল পঠনসুখ। কবিতার প্রথম বই। স্বভাবতই এক শঙ্কা থেকে যায় মন জুড়ে। সম্ভবত সেই দ্বিধাতেই স...

কবিতাপথের যাত্রারম্ভে স্বাতীলেখা

‘সামান্য সামনাসামনি’র সূত্র ধরে ‘পথের পরিচয়ে চেনা’ মানুষরাই এক সময় হয়ে উঠতে পারে একান্ত আপন কেউ। এ প্রতিষ্ঠিত সত্য। সম্পর্ক সৃষ্টির ইতিকথাও বড় কম নয়। মানুষ যেদিন থেকে সাক্ষর হয়েছে, জ্ঞানের আলোকে ঋদ্ধ করতে শিখেছে নিজেকে; সেদিন থেকেই একদিকে যেমন ভাবনার অতলে তলিয়ে যেতে শিখেছে তেমনি অক্ষরমালায় সাজিয়ে রাখতে পেরেছে সম্পর্কের সাতকাহন, প্রবৃত্ত হয়েছে অন্তরের ভাবনাকে কাব্যগুণে ধরে রাখতে কাগজের পৃষ্ঠায়। আর এভাবেই কাগজের পর কাগজ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক একটি বই কিংবা গ্রন্থ। আপাতকথায় গ্রন্থ বলতে সাধারণত গায়ে-গতরে হৃষ্টপুষ্ট একটি বইকে বোঝায় যদিও আভিধানিক সূত্রে পুস্তক, বই ও গ্রন্থের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। অভিধানে গ্রন্থকে বলা হয়েছে বই, বইকে গ্রন্থ এবং পুস্তককে বই, গ্রন্থ ইত্যাদি। তবে আলোচনা, সমালোচনার স্বার্থে গ্রন্থ শব্দটিই অধিক ব্যবহৃত হয় উচ্চারণ সৌকর্যের সূত্র ধরে। উত্তরপূর্বের বরাক উপত্যকার বাসিন্দা কবি স্বাতীলেখা রায়ের সঙ্গে পাঠক, আলোচকের পরিচয় বেশি দিনের নয়। কোভিড সময়ে সামাজিক মাধ্যমের সূত্র ধরেই তাঁর আত্মপ্রকাশ বলা যায়। সম্প্রতি ২০২৫ এর গোড়ার দিকে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর দুটি কাব্যগ...

প্রেম-বিরহের অনবদ্য গুঞ্জন - ‘ঝরা কথাদের সিম্ফনি এবং নীলাঞ্জন’

প্রথমেই মোদ্দা কথাটি বলে নেয়া যায় অনায়াসে এবং সেটা হল - প্রেম-বিরহ বিষয়ক একটি উচ্চস্তরীয় কাব্যগ্রন্থ বহুদিন পর প্রকাশিত হল আমাদের এই একান্ত আপন সাহিত্যবিশ্বের সম্পদ হিসেবে। শ্রীভূমি থেকে উঠে আসা কবি ছন্দা দাম কবিতা লিখে চলেছেন এক অনায়াসলব্ধ দক্ষতায়, বহুদিন ধরে। কবির শেষতম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা কথাদের সিম্ফনি এবং নীলাঞ্জন’ তাঁর সার্বিক কাব্যচর্চার উৎকৃষ্টতম প্রকাশ বলতে কোনও দ্বিধা থাকার কথা নয়। গ্রন্থের ৫৯টি কবিতাই এক নির্দিষ্ট সুরে গ্রথিত হলেও কবিতাসমূহকে কবি স্পষ্ট দুটি ভাগে বিন্যস্ত করতে চেয়েছেন। বলা যায় প্রথম ভাগে রয়েছে এক তীব্র না পাওয়ার বেদনা, আপশোশ, অভিমান এবং শেষভাগে রয়েছে এক সমর্পণ, উৎসর্গের ইঙ্গিত। কবিতাগুলোর মধ্যে কিছু ভিনভাষার শব্দের, পঙ্‌ক্তির, শায়েরির প্রয়োগ এক কথায় অনবদ্য। অন্যদিকে আঞ্চলিক কথ্য বাংলায় লেখা হয়েছে দুটি আস্ত কবিতা। বৈচিত্রের প্রতি, অগতানুগতিকতার প্রতি কবির এক ঝুঁকে থাকা, পরীক্ষা নিরীক্ষার অভিলাষ স্পষ্ট। শব্দের অমোঘ প্রয়োগ কবিতার মান বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। কিছু পঙ্‌ক্তি উল্লেখযোগ্য - ‘...চাও যদি দিতে পারি কৃষ্ণচূড়া মাখা বৃষ্টি ভেজা দিন/ আর একমুঠো পলাশের অভিমান,/ আর ...

বহমান বাস্তবের বিষাদগাথা - ‘শোকজলের আলেখ্য’

একটি মর্মস্পর্শী গ্রন্থনাম । এই নামে রয়েছে তিনটি শব্দ - শোক , জল ও আলেখ্য । অনুমান করেই নেয়া যায় শোক ও শোকজনিত জল অর্থাৎ অশ্রুবিষয়ক কবিতার এক নিশ্চিত সমাহার এই গ্রন্থ । আবার আলেখ্য শব্দের অভিধানগত অর্থ যেখানে ছবি বা প্রতিমূর্তি সেখানে বাস্তবিক অর্থে বিষয়ভিত্তিক একটি রচনা , সে পদ্য কিংবা গদ্যেই হোক - তাকেই আলেখ্য বলা হয়ে থাকে । যেমন কাব্য আলেখ্য ইত্যাদি । সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে অশ্রু নির্গমনকারী বিষয়ের উপর লেখা একগুচ্ছ কবিতার সমাহার আলোচ্য গ্রন্থটি । এবং এর পরিচয়ও পাওয়া যায় অন্তত প্রথমদিককার অনেকগুলো কবিতায় যেখানে সরাসরি ‘ শোকজল ’ শব্দবন্ধটি এসেছে কবিতার শরীরে দুঃখবোধের দ্যোতক হিসেবে । সঞ্জয় চন্দ্র দাস কবিতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে ভালোবাসেন । এর আগেও তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থে এর পরিচয় পাওয়া গেছে । ছন্দ নিয়ে , ছন্দহীনতা নিয়ে , শব্দ ও শব্দের দ্বিত্ব নিয়ে খেলা করা তাঁর কবিতাগত স্বভাব । ৭১ পৃষ্ঠার আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে সন্নিবিষ্ট ৫৯টি কবিতায়ও এমন নিরীক্ষণ প্রত্যক্ষ করা যায় । প্রার্থনা সিরিজের ৩টি কবিতাও আছে এর মধ্যে । প্রায় প্রতিটি কবিতার শিরোনামের মধ্যেও শোকদু...