Skip to main content

শিক্ষক স্মরণে



নদী চিরপ্রবহমান তবু অনন্ত এই ফল্গুধারায়ও কতই না বৈচিত্র অগুনতি জলধারার মতোই কিছু জীবন যেমন সমাহিত ছায়ায় থেকে যায় লোক জীবনের অলক্ষ্যে ঠিক তার বিপরীতে কিছু জীবন আমৃত্যু সম্মুখীন হয়ে চলে সার্বিক সাফল্যের নিত্য নতুন সোপান বেয়ে জীবনভর শুধু উত্তরণের কল্পকথা

হঠাৎ করে দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর আগের স্মৃতির সরণিতে এভাবে প্রবেশ করতে হবে তা ভাবিনি কখনো ১৯৮২ ইংরেজিতে প্রবেশিকা পাশ করার পর নিজের কল্পজগৎটাকে ছেড়ে এসে উচ্চ শিক্ষার আশায় পাড়ি জমিয়েছিলাম তখনকার এবং অবশ্যই এখনকারও নামী শিক্ষানুষ্ঠান গুরুচরণ কলেজে চোখে তখন দীর্ঘ জীবনের স্বপ্ন কিন্তু স্বপ্নপূরণে মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়ালো ফেলে আসা জীবনের হাতছানি এবং সম্ভবত ভুল বিষয় নির্বাচন তখন কি আর জানতাম যে আমার মনোজগতে বিজ্ঞান নয়, ছিল কলাবিষয়ের অপ্রচ্ছন্ন হাতছানি তাই সামলে উঠতে পারিনি পড়াশোনার চাপ বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাসে সবকিছু ছিল আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে

কিন্তু বিভ্রান্ত আমার মননে তখন যা কিছু আগ্রহ অবশিষ্ট ছিল তা ছিল শুধু একটি মাত্র বিষয়ের একজন মাত্র শিক্ষকের শিক্ষাদান আমার সেই পরম পূজ্য শিক্ষকের প্রবহমানতা আজ রুদ্ধ সাগরে মিশে গেছে সেইসব পেরেছির শিক্ষক অধ্যাপক পার্থসারথি চন্দের জীবনধারা

এতগুলো বছর পেরিয়েও আজো চোখ বুজলেই অনায়াসে মানস নয়নে এসে ধরা দেয় তাঁর অনবদ্য শিক্ষাদানের ভঙ্গি কলেজে বহু শিক্ষক ছিলেন তখনো, আজো জ্ঞানের জীবন্ত মূর্তি সবাই কিন্তু ছাত্রমনে শিক্ষার বুভুক্ষা চাগিয়ে তোলার এমন অসাধারণ প্রয়াস অধ্যাপক চন্দের মতো কজনের মধ্যে পেয়েছি বলতে পারবো না বিদেশি ভাষার রসমাধুর্যটাকে এত উপাদেয় করে চালান করে দিতে পেরেছিলেন অন্তরে যে একটা সময় মনে হয়েছিল একে সম্বল করেই গড়ে তুলি নিজের জীবনের চলার পথ

পথ যদিও কালের নিয়মে হয়েছে ভিন্ন তবু মনের মণিকোঠায় আজো অম্লান হয়ে আছেন চন্দ স্যর অধ্যাপনার শেষেও যেখানেই পা দিয়েছেন, সাফল্য তাঁকে অনুসরণ করেছে আজ তাই তাঁর বিদায় বেলায় আমার অন্তরের সবটুকু সম্মান উজাড় করে দিতে চাই তাঁকে অমৃতলোকে বিরাজ করুক তাঁর চিরশুদ্ধ আত্মা

Comments

Popular posts from this blog

শেকড়ের টানে নান্দনিক স্মরণিকা - ‘পরিযায়ী’

রামকৃষ্ণনগর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবহে বরাক উপত্যকার এক ঐতিহ্যময় শহর । বিশেষ করে শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে চিরদিনই এক অগ্রণী স্থান হিসেবে উচ্চারিত হয়ে আসছে এই নাম । বৃহত্তর রামকৃষ্ণনগরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বহুদিনের । দেশভাগের আগে ও পরে , উত্তাল সময়ে স্থানচ্যূত হয়ে এখানে থিতু হতে চাওয়া মানুষের অসীম ত্যাগ ও কষ্টের ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে এক বিশাল বাসযোগ্য অঞ্চল । শুধু রুটি , কাপড় ও ঘরের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রই নয় , এর বাইরে শিক্ষা অর্জনের ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে মমনশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেইসব মহামানবেরা । ফলস্বরূপ এক শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল যদিও উচ্চশিক্ষার জন্য পরবর্তী প্রজন্মকে বেরোতে হয়েছিল নিজ বাসস্থান ছেড়ে । শিলচর তখন এ অঞ্চলের প্রধান শহর হওয়ায় স্বভাবতই শিক্ষা ও উপার্জনের স্থান হিসেবে পরিগণিত হয় । এবং স্বভাবতই রামকৃষ্ণনগর ছেড়ে এক বৃহৎ অংশের মানুষ এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করেন এই শিলচরে । এই ধারা আজও চলছে সমানে । শিলচরে এসেও শেকড়ের টানে পরস্পরের সাথে যুক্ত থেকে রামকৃষ্ণনগর মূলের লোকজনেরা নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলেন এক সৌহার্দমূলক বাতাবরণ । এবং সেই সূত্রেই ২০০০ সালে গঠিত হয় ‘ ...

নিবেদিত সাহিত্যচর্চার গর্বিত পুনরাবলোকন - ‘নির্বাচিত ঋতুপর্ণ’

সাধারণ অর্থে বা বলা যায় প্রচলিত অর্থে একটি সম্পাদনা গ্রন্থের মানে হচ্ছে মূলত অপ্রকাশিত লেখা একত্রিত করে তার ভুল শুদ্ধ বিচার করে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনার পর গ্রন্থিত করা । যেমনটি করা হয় পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে । অপরদিকে সংকলন গ্রন্থের অর্থ হচ্ছে শুধুই ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাসমূহ এক বা একাধিক পরিসর থেকে এনে হুবহু ( শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম সংশোধনসাপেক্ষে ) একত্রীকরণ । সেই হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থটি হয়তো সম্পাদনা গ্রন্থ নয় , একটি সংকলন গ্রন্থ । বিস্তারিত জানতে হলে যেতে হবে সম্পাদক ( সংকলক ) সত্যজিৎ নাথের বিস্তৃত ভূমিকায় । পুরো ভূমিকাটিই যদি লেখা যেতো তাহলে যথাযথ হতো যদিও পরিসর সে সায় দেয় না বলেই অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো এখানে - ‘ সালটা ১৯৯০ । ‘ দৈনিক সোনার কাছাড় ’- এ একবছর হল আসা - যাওয়া করছি । চাকরির বয়স হয়নি তাই চাকরি নয় , এই ‘ আসা - যাওয়া ’ । …. হঠাৎ করেই একদিন ভূত চাপল মাথায় - পত্রিকা বের করব । ‘… সেই শুরু । অক্টোবর ১৯৯০ সালে শারদ সংখ্যা দিয়ে পথচলা শুরু হল ‘ঋতুপর্ণ’র। পরপর দুমাস বের করার পর সেটা হয়ে গেল ত্রৈমাসিক। পুরো পাঁচশো কপি ছাপাতাম ‘মৈত্রী প্রকাশনী’ থেকে।...

মহানিষ্ক্ৰমণ

প্রায় চল্লিশ বছর আগে গ্রামের সেই মায়াময় বাড়িটি ছেড়ে আসতে বেজায় কষ্ট পেয়েছিলেন মা ও বাবা। স্পষ্ট মনে আছে অর্ঘ্যর, এক অব্যক্ত অসহায় বেদনার ছাপ ছিল তাঁদের চোখেমুখে। চোখের কোণে টলটল করছিল অশ্রু হয়ে জমে থাকা যাবতীয় সুখ দুঃখের ইতিকথা। জীবনে চলার পথে গড়ে নিতে হয় অনেক কিছু, আবার ছেড়েও যেতে হয় একদিন। এই কঠোর বাস্তব সেদিন প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করতে পেরেছিল অর্ঘ্যও। সিক্ত হয়ে উঠছিল তার চোখও। জন্ম থেকে এখানেই যে তার বেড়ে ওঠা। খেলাধুলা, পড়াশোনা সব তো এখানেই। দাদাদের বাইরে চলে যাওয়ার পর বারান্দাসংলগ্ন বাঁশের বেড়াযুক্ত কোঠাটিও একদিন তার একান্ত ব্যক্তিগত কক্ষ হয়ে উঠেছিল। শেষ কৈশোরে এই কোঠাতে বসেই তার শরীরচর্চা আর দেহজুড়ে বেড়ে-ওঠা লক্ষণের অবাক পর্যবেক্ষণ। আবার এখানে বসেই নিমগ্ন পড়াশোনার ফসল ম্যাট্রিকে এক চোখধাঁধানো ফলাফল। এরপর একদিন পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চ পদে চাকরি পেয়ে দাদাদের মতোই বাইরে বেরিয়ে যায় অর্ঘ্য, স্বাভাবিক নিয়মে। ইতিমধ্যে বিয়ে হয়ে যায় দিদিরও। সন্তানরা যখন বড় হয়ে বাইরে চলে যায় ততদিনে বয়সের ভারে ন্যুব্জ বাবা মায়ের পক্ষে আর ভিটেমাটি আঁকড়ে পড়ে থাকা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহু জল্পনা কল্পনার শেষে ত...